সিঙ্গল সুপার ফসফেট, যেটিকে আমরা ফসফেট সার বা এসএসপি সারও বলে থাকি। এই সার উদ্ভিদের পুষ্টির অপরিহার্য উপাদান, যার মধ্যে 16% ফসফরাস, সালফার থাকে 12% এবং ক্যালসিয়াম থাকে 21%। যে কোনো গাছের সম্পুর্ণ বৃদ্ধির জন্য ১৭টি পুষ্টিমৌল প্রয়োজন। যার মধ্যে প্রধান তিনটি পুষ্টিমৌল হচ্ছে- নাইট্রোজেন, ফসফরাস এবং পট্যাশিয়াম, যেটাকে আমরা NPK বলে থাকি।ফসফরাস, সালফার এবং ক্যালসিয়াম সমন্বিত উপাদান সুস্থ উদ্ভিদের বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফসফরাস একটি প্রথম সারির খাদ্য উপাদান, এবং ক্যালসিয়াম একটি অপরিহার্য গৌণ পুষ্টি উপাদান যা মূলের বিকাশ এবং কোষ প্রাচীর গঠনে সহায়তা করে। সিঙ্গল সুপার ফসফেট সার আমরা গাছে কেন ব্যবহার করবো, কিভাবে ব্যবহার করবো, এই প্রতিবেদনের বিস্তারিত আলোচনা করবো।
রাসায়নিক সার : সিঙ্গেল সুপার ফসফেট সারের ব্যাবহার এবং উপাকারিতা
সিঙ্গল সুপার ফসফেট সারের মধ্যে কোন পুষ্টিমৌল বিদ্যমান?
এসএসপি (সিঙ্গল সুপার ফসফেট ) সারের মধ্যে ১৬% থাকে ফসফরাস, ১২% থাকে সালফার এবং ক্যালসিয়াম থাকে ২১%। যেকোনো উদ্ভিদের সঠিক বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য ১৭ টি পুষ্টিমৌল প্রয়োজন, তার মধ্যে প্রধান তিনটি পুষ্টিমৌল হচ্ছে- নাইট্রোজেন, ফসফরাস এবং পট্যাশিয়াম, যেটাকে আমরা NPK বলে থাকি।
ফসফরাস:– সিঙ্গল সুপার ফসফেটের মধ্যে ১৬% থাকে ফসফরাস । ফসফরাসের কাজ হচ্ছে- যে কোনো উদ্ভিদের কোষকে মজবুত করা এবং শিকড়গুলোকে ভালো রাখা। একটা গাছের কোষ এবং শিকড় যত ভালো থাকবে, সেই গাছ মাটি থেকে তত বেশি খাদ্য গ্রহন করতে পারবে এবং পর্যাপ্ত পরিমানে ফল ও ফুল দেবে। যেটা গাছের সর্বাঙ্গীন বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে ।
সালফার:– সিঙ্গল সুপার ফসফেটের মধ্যে ১২% সালফার উপস্থিত থাকে, সালফার একটা সেকেন্ডারি খাদ্য উপাদান। যেটার কাজ হচ্ছে- ফোটোসিনথেসিসে সাহায্য করে, একই সাথে ফাঙ্গাস বা ছত্রাকের বিরুদ্ধে গাছকে রক্ষা করে। লক্ষ করবেন অনেক ফাঙ্গিসাইট বা ছত্রাকনাশকে সালফার মেশানো থাকে। তো সালফার প্রয়োগ করার ফলে গাছে খুব একটা ফাঙ্গাস বা ছত্রাকের আক্রমণ ঘটবে না।
ক্যালসিয়াম:– সিঙ্গল সুপার ফসফেটের মধ্যে ২১% ক্যালসিয়াম থাকে। ক্যালসিয়াম যেকোনো গাছের ডালপালাকে শক্ত করতে সাহায্য করে। একটা গাছের ডালপালা যত বেশি শক্ত হবে, সেই গাছের ভেঙ্গে পড়ে যাওয়ার চান্স ততই কমে যায়। ফুল ও ফলের বোঁটাগুলোকে শক্ত করতে, গাছের কান্ড আরও মোটা করতে গাছের ক্যালসিয়ামের দরকার পড়ে।
SSS সিঙ্গল সুপার ফসফেট দেখতে কেমন:
সিঙ্গল সুপার ফসফেট দুটি ফর্মে দেখতে পাওয়া যায় শুকানো পাউডার আকারে এবং দানাদার আকৃতিতে। সিঙ্গেল সুপার ফসফেট সারের পছন্দসই ফর্ম তৈরি করতে চূড়ান্ত পণ্যটি শুকিয়ে দানাদার বা শুকানো পাউডার আকারে বিক্রয় করা হয়।
গাছে এসএসপি সারের ব্যবহার:
এই সারটা আমরা আমাদের গাছে যেকোনো সময়ে যেকোনো অবস্থায় দিতে পারি। যখন কোনো গাছ একদম ছোট অবস্থায় থাকে বা নতুন গাছ আমরা কিনে বসাই, সেই সময় শিকড়গুলো যাতে খুব তাড়াতাড়ি গ্রোথ নেয়, তখন আমরা এই সিঙ্গল সুপার ফসফেট ব্যবহার করে থাকি।
ধরুন, আমরা কোনো নতুন একটি গাছ কিনে আনলাম, তো এই গাছ বসানোর সময় যখন আমরা মাটি তৈরি করি, যদি ঐ মাটিতে এক চামচ সুপার ফসফেট সার দিয়ে দিই, তাহলে গাছের শিকড়গুলো খুব তাড়াতাড়ি গ্রোথ নেবে এবং গাছের গ্রোথ ভালো হবে।
একইভাবে আমরা যখন জমিতে ধান, গম, লঙ্কা, বেগুন চাষ করি, এই গাছগুলি যখন ছোট অবস্থায় থাকে, তখন আমরা চাইলে এই সিঙ্গল সুপার ফসফেট দিতে পারি। তাহলে গাছের শিকড় খুব ভাল গ্রোথ নেবে এবং কোনো ফাঙ্গাস বা ছত্রাকের আক্রমণ হবে না।
আমাদের বাড়িতে যে পুরাতন গাছগুলো থাকে, সেই গাছগুলোতে আমরা প্রত্যেক মাসে বা প্রত্যেক দু-মাস অন্তর একবার করে সিঙ্গল সুপার ফসফেট ব্যবহার করতে পারি। তাহলে সেই গাছগুলো খুব ভালো অবস্থায় থাকবে। তাছাড়া এই সিঙ্গল সুপার ফসফেটকে অন্য সারের সাথে মিশিয়েও ব্যবহার করা যায়। যেমন- ইউরিয়া বা MOP বা অন্য যেকোনো সার মিক্স করতে পারি।
গাছে এসএসপি সার ব্যাবহারের পরিমান:
আমরা সরাসরি এই সিঙ্গল সুপার ফসফেট গাছের টবে দিতে পারি। তো এরজন্য আমরা টবের সাইজ অনুযায়ী সিঙ্গল সুপার ফসফেট ব্যাবহার করবো। একটা চার ইঞ্চি টবের জন্য এক চামচ সারের চারভাগের একভাগ এসএসপি ব্যাবহার করবো।
কোনো নতুন গাছ কিনে এনে বসানোর পর বা ছোট চারা গাছে প্রত্যেক মাসে একবার করে এই সিঙ্গল সুপার ফসফেট দিতে পারি। তাহলে এই গাছগুলোর শিকড় গুলো খুব তাড়াতাড়ি ডেভেলপমেন্ট হবে এবং সেই ক্ষেত্রে গাছটা খুব তাড়াতাড়ি বেড়ে উঠবে। এই সিঙ্গল সুপার ফসফেট দেওয়ার পর আমরা টব ভর্তি করে জল দিয়ে দেব। যাতে এই সারটা মাটির সাথে খুব তাড়াতাড়ি মিশে যায় এবং গাছ খুব তাড়াতাড়ি নিজের খাবার নিতে পারে।
যাঁরা জমিতে ফসলে ব্যবহার করবেন, আপনারা এক একর জমিতে 50 থেকে 60 কেজি অবধি এই সিঙ্গল সুপার ফসফেট ব্যবহার করতে পারেন। যাদের মাটিতে জবা ফুলের গাছ আছে, আপনারা একটা গাছের জন্য এক মুঠো এই সিঙ্গল সুপার ফসফেট ব্যবহার করতে পারেন। এই ফার্টিলাইজারটা দেওয়ার পর অতি অবশ্যই জল দিয়ে দেবেন, এটা কিন্তু খুবই দরকারি।
দ্বিতীয়তঃ আমরা সিঙ্গেল সুপার ফসফেট ব্যবহার করতে পারি, সেটা হচ্ছে জলের সাথে গুলে আমরা এই সিঙ্গল সুপার ফসফেট দিতে পারি। এর জন্য আমরা এক মগ জল নেব এবং এর মধ্যে অর্ধেক চামচ সিঙ্গল সুপার ফসফেট দিয়ে দেবো।
এরপরে এই মিশ্রণ আমরা ভাল করে মিশিয়ে 5 মিনিট একটু অপেক্ষা করবো, যাতে এই সারটা পুরোপুরি জলের সাথে মিশে যায়। 5 মিনিট হয়ে গেলে, আমরা একবার যেকোনো জিনিস দিয়ে এই মিশ্রণটি ভালো করে নেড়ে নেবো। তারপর আমাদের গাছের টবে দিয়ে দেব। এইভাবে আমরা আমাদের যেকোনো গাছেই সিঙ্গল সুপার ফসফেট দিতে পারি।
গাছের বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধান সম্পর্কে জানার জন্য, আমাদের WhatsApp চ্যানেলের সঙ্গে থাকুন। আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য, আমাদের WhatsApp এবং Telegram চ্যানেলটা অবশ্যই সাবস্ক্রাইব করতে হবে এবং বেল আইকনটি ক্লিক করতে হবে। এর পাশাপাশি লাইক, কমেন্ট এবং শেয়ার করতে হবে।
প্রিয় পাঠক, এই প্রতিবেদনটি পঠন করবার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার মতো পাঠকের সহযোগিতা “ক্রিয়েটিভিটি গার্ডেনিং” সর্বদা কাম্য করে। গাছই আমাদের একমাত্র সম্পদ যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষিত করতে পারে, বাঁচিয়ে রাখতে পারে। নিঃস্বার্থে গাছ ভালবাসুন, সকলকে গাছ লাগাতে উৎসাহিত করুন।
আপনাদের যদি এই বিষয়ে কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সের মাধ্যমে আমাকে জানাতে জানাবেন। সেগুলোর সমাধান করাবার আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব। আপনার মূল্যবান রেটিং দিয়ে উৎসাহিত করুন, সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, সবাই খুব ভালো থেকো নমস্কার।