টবে জবা গাছ করবার সহজ কিছু টিপস্ | How To Grow Joba Flower Plant In Pots

Last updated on October 28th, 2023 at 07:26 pm

জবা গাছের ইংরেজি নাম Hibiscus এবং এর বৈজ্ঞানিক নাম ক্যারলাস লিনেয়াস (Carolus Linnaeus) টবে জবা গাছ করবার সহজ কিছু টিপস্ | How To Grow Joba Flower Plant In Pots।

জবা বাঙালির অতি পরিচত একটি ফুল। সঠিক যত্ন এবং পরিচর্যা করলে এই জবা ফুলের সৌন্দর্য গোলাপ ফুল কেও হার মানাবে। রূপে রঙে অপূর্ব সৌন্দর্য ফুলগুলি সবারই মন কেড়ে নেয়।

টবে জবা গাছ করবার সহজ কিছু টিপস্ | How To Grow Joba Flower Plant In Pots

জবা ফুল(China Rose/Chinese Hibiscus) হল মালভেসি গোত্রের অন্তর্গত চিরসবুজ,পুষ্পধারী গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ, যার উৎপত্তি পূর্ব এশিয়াতে। ভারতীয় উপমহাদেশে জবা গাছ বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন বাংলায় জবা,তামিলে সেম্বারুথি, হিন্দিতে জবা, কুসুম, মালয়লমে সেম্পারাত্তি ইত‍্যাদি।

বর্তমানে কৃষি বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে অনেক ধরনের হাইব্রিড জবা ফুল গাছ আমরা দেখতে পায়, তার মধ্যে ভারতবর্ষের পুনে জবা এবং ব্যাঙ্গালোর জবা খুবই আকর্ষণীয় যা আমরা বিভিন্ন নার্সারি তে দেখতে পাই, এছাড়াও অস্ট্রেলিয়ান জবা , ক্রান্তীয় জবা ( Tropical Hibiscus ) আর সাথে আমাদের দেশী জবার বৈচিত্রও কম নয়।

➧ বৈজ্ঞানিক নাম – Carolus Linnaeus
➧ পরিবার – Malvaceae
➧ শ্রেণী – Eudicots
➧ মহাজাতি – Hibiscus
➧ উপজাতি – Hibisceae

টবে জবা গাছ করবার সহজ কিছু টিপস্ | 6 secret tips to grow joba flower plant in pots

স্থান নির্বাচন:-

দিনে মোটামুটি ৬ থেকে ৮ ঘটা রৌদ পাই তেমন স্থানে জবা গাছ প্রতিস্থাপন করা উচিত, এতে গাছের বাড়বাড়ন্ত ভালো হয় এবং রোগে আক্রান্ত কম হয়। উর্বর দোঁয়াশ মাটি অথবা বেলে-দোঁয়াশ জাতীয় সুনিষ্কাশিত মাটিতে এই গাছ ভাল হয়।

টবে জবা গাছ করবার সহজ কিছু টিপস্ | How To Grow Joba Flower Plant In Pots

মাটি প্রস্তুত:-

মাটি একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনার গাছ কেমন হবে তা অনেকটাই নির্ভর করে মাটির উপার। তাই গাছ টবে বড় হওয়ার জন্য প্রচুর পরিমাণে খাদ্যের প্রয়োজন হয়। প্রথমে মাটি তৈরী
• ৫০ % উর্বর দোআঁশ মাটি
• ৪০ % এক বছরের পুরনো গোবর সার / এক বছরের পুরনো পাতা পচা সার / ভার্মিকম্পোস্ট
• ১০ % নদীর সাদা বালি
• ৫০ গ্রাম হাড় গুঁড়ো
• ৫০ গ্রাম সিং কুচি
• হাফ চামচ সরিষার খোল
• এক চামচ নিম খোল 10 ইঞ্চি প্রতি টবের জন্য। বর্ষাকালে জবা গাছ প্রতিস্থাপন করলে এক চামচ ফাঙ্গিসাইড মাটির সাথে মিশিয়ে নেবেন।

এই সব উপাদান গুলি ভালো করে মিশিয়ে নিন–এবার আপনার মাটি তৈরী। জবা গাছ বসানোর জন্য কম করে ১০ ইঞ্চির টব ব্যবহার করা উচিত, তবে বড় টব হলে আরো ভাল হয়। টব নির্বাচন করবার সময় বেশি ছিদ্রযুক্ত মাটি টব নির্বাচন করবেন, তাতে ড্রেনেজ সিস্টেম ভাল হবে। এছাড়াও টবে বেশি মাত্রায় জল প্রয়োগ হলেও অতিরিক্ত জল মাটির পাত্র সোপ করে নেয়। গাছ এক দেড় বছর পুরানো হয়ে গেলে তখন ১২ ইঞ্চি অথবা আরো বড় কোনো জায়গায় প্রতিস্থাপন করতে পারেন। যে কোনো গাছ বসানোর জন্য সবসময় মাটির টব ব্যবহার করবেন ।

প্রতিস্থাপন পদ্ধতি:-

প্রথমে টবটি নিন। টবের নিচে যে ছিদ্র আছে তার ওপরে একটি খোলামকুচি রেখে তার ওপর কিছুটা ইটের টুকরো দিয়ে ভর্তি করে দেবেন, তারপরে মাটি দিতে হবে । এতে কি হয় অত্যাধিক জল সহজেই বেরিয়ে যায় আর আপনার গাছের সুসাস্থ্য বজায় থাকে। এবার জবা গাছের চারা লাগিয়ে দিযে অল্প জল দিয়ে দিন । এবার টবটিকে একটি ছায়াযুক্ত স্থানে দুই থেকে পাঁচ দিনের জন্য রেখে দিন। প্রত্যেক বছরে বর্ষার পর পর প্রতিটি টবের শোঁকড় কাটাই ছাঁটাই এবং মাটি পরিবর্তন করতে হবে। জবা গাছের কাটিং থেকে চারা করার সময় মার্চ থেকে অক্টবর।

জবা গাছের পরিচর্যা:-

শীতকালে জবা গাছের পরিচর্যা করতে টবের গাছগুলিকে সম্পূর্ণ সূর্যের আলোতে রাখতে হবে এবং গরমকালে দুপুরের তীব্র সূর্যের আলো না পায় তেমন স্থানে টবের গাছ গুলি রাখবেন, চেষ্টা করবেন সকালের সূর্যের আলো পায় এবং বিকালে সূর্যের আলো পায় এমন স্থানে গাছগুলি রাখবার। শীতকালে জবা গাছে যেমন খাবারের প্রায়াজন হয় না তেমনি জলেরও প্রায়াজন হয় না, তবে গরমকালে টবের গাছে দিন দু বেলা জল দেওয়া খুবই প্রায়াজন। শীতকালে, জবা গাছের ডরম‍্যান্সি পিরিয়ড শুরু হয় জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত। যে গাছের বয়স দু বছরের অধিক হয়ে গেছে এই সময় সেই গাছের খাবার সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে হবে। শুধু জল দিয়ে গাছ বাঁচিয়ে রাখতে হবে এবং প্রয়োজনমতো কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। ডরম‍্যান্সি পিরিয়ড শেষ হবার কিছু দিন পরে গাছটিকে ছেটে দিতে হবে।বর্ষাকালে একটু খেয়াল রাখবেন টানা বৃষ্টি হলে টবটিকে গাছসুদ্ধু কাত করেও রেখে দিতে পারেন অথবা সেডের নিচে রেখে দিতে পারেন। বৃষ্টির কিছুদিন পর পর টবের মাটি একটু খুঁড়ে দিয়ে ফাঙ্গিসাইট ছিঁটিয়ে দেবেন এবং গাছটিকে রৌদ্রে রেখে দেবেন। বর্ষাকালের টবের গাছগুলোতে ১০ থেকে ১২ দিন অন্তর অন্তর ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে।

জবা গাছের সার প্রয়োগ:-

টবে গাছ বসানোর ১ থেকে ২ মাসের মধ্য কোন জৈব বা রাসায়নিক সার ব্যাবহার না করাই ভাল, কিছু মাস পর অল্প জৈব সার দিলে ভালো হয়। জৈব সারের মধ্য কলার খোসা, ডিমের খোসা, হাঁড় গুড়ো, শিং কুঁচি , পাতাপচা সার প্রভৃতি ব্যাবহার করা যেতে পারে । জৈব সারের পরবর্তে NPK- ১৯:১৯:১৯ সার এক চামচ গোড়ার থেকে দূরে টবের ধারে মাটিতে দিয়ে দিতে পারেন। ফুলের মরসুমে ডি.এ.পি/ টি. এস.পি সার ব্যাবহারের ১৫ থেকে ২০ দিন পরে এক চামচ পটাশ ব্যাবহার করবেন। বর্ষাকালে গাছের গ্রোথ ভাল থাকলে ডি.এ.পি/ টি. এস.পি এবং পটাশ সারের পরিবর্তে NPK- ১০:২৬:২৬ ব্যাবহার করবেন। রাসায়নিক সার ব্যাবহারের ১৫- ২০ দিন পর যে কোন কম্পোস্ট সার মাটিতে দেওয়া যেতে পারে। রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার ব্যাবহারেও ভাল ফল পাওয়া যায়। প্রতি ৪০ থেকে ৪৫দিন অন্তর ২ মুটো গোবর সার, হাফ চামচ সরিষার খোল,২ চামচ হাড় হাঁড় গুড়ো,২ চামচ শিং কুঁচির সাথে ১ চামচ অনুখাদ্য বা Micronutrients ব্যাবহার করতে হবে। মনে রাখবেন, অতিরিক্ত রাসায়নিক সার গাছের জন্য বিপদজনক। গাছের সঠিক পরিচর্যা করতে পারলে সারাবছর ফুল পাওয়া যাবে।

জবা গাছের পরিচর্যা

প্রয়োজনীয় কীটনাশক:-

ক) মিলিবাগ বা দয়ে পোকার আক্রমণ (White insects/ Mealybug):

১| জবা গাছে নানা ধরনের পোকামাকড়ের পাশাপাশি মিলিবাগ এর আক্রমণ খুব হয়, তাই দেখা মাত্রই ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করতে হবে। ইমিডাক্লোরোপিড নামক মূল উপাদানের তৈরি কীটনাশক বাজারে পাওয়া যায়, ১ লিটার জলে পাঁচ ফোঁটা মিশিয়ে গাছে স্প্রে করবেন। মিলিবাগর আক্রমন হলে ৫ দিন অন্তর অন্তর মোট ৭ বার স্প্রে করতে হবে। এটি বাজারে মিডিয়া,কনসফিডার নামেও পাওয়া যায়। কনফিডার বাংলাদেশেও পাওয়া যায়।

2| যে কোন গাছে মিলিবাগ বা দয়ে পোকার (White insects/ Mealybug) আক্রমণ দেখা মাত্রই Bayer কোম্পানির এডমায়ার (Admire) ব্যাবহার করবেন, ২ গ্রাম এর প্যাকেট থেকে ৫ লিটার জল তৈরী করা যাবে। এটি ভারতবর্ষ ছাড়াও বাংলাদেশেও পাওয়া যায়।

[আরও পড়ুন:গাছের শত্রু মিলিবাগের বংশ ধ্বংস | Easy Tricks To Control White Insects or Mealybug]

 How To Grow Hibiscus Flower Plant In Pots
Hibiscus Plant Care

৩| মিলিবাগ বা দয়ে পোকার (White insects/ Mealybug) জন্য তৃতীয় রাসায়নিক কীটনাশক রেনোভা(Renova), ৫ গ্রাম এর প্যাকেট থেকে ১০ লিটার জল তৈরী করা যাবে। এটি চার দিন অন্তর মোট ২ বার ব্যাবহারেই মিলিবাগ বা দয়ে পোকা শেষ হবে যাবে।

৪| কার্বোসালফান নামক মূল উপাদানের তৈরি এমন যে কোন কীটনাশক মিলিবাগ বা দয়ে পোকা দমনে ব্যাবহার করা যাবে, বাজারে যেটা মার্শাল নামে পাওয়া যায়। তবে এটি বাংলাদেশেও পাওয়া যেতে পারে। এই কীটনাশক প্রতি লিটার জলে ২ml দিয়ে ভালো করে ঝাঁকিয়ে ৫ দিন অন্তর ৩ বার স্প্রে করতে হবে।

খ)গাছের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করতে ও কুঁড়ি ঝরা রোধ করতে

গাছের পাতায় ১৫ দিন অন্তর Epsome Salt ( মেগ্নেসিয়ান সালফেট MgSo4) এক লিটার জলে এক চামচ মিশিয়ে স্প্রে করবেন। এটি ওষুধের দোকানে যেখানে পশু পাখির ওষুধ বিক্রি হয় ওখানে পাবেন। মাসে একবার ১ লিটার জলে এক চামচ গুঁড়ো খোল ভাল ভাবে মিশিয়ে টবের মাটিতে দেবেন।

[আরও পড়ুন: মিরাকুলান পি জি আর (ট্রায়াকন্টানল ০.০৫%) এর ব্যাবহার | Plant Growth Regulator]

গ) টবে বা গাছে পিঁপড়ের আক্রমন হলে:

১| মাটিতে কোনো পোকা দেখলে বা পিঁপড়ে দেখলে দানা বিষ ( Furadon Insecticide ) ব্যাবহার করবেন। হাফ চামচ মাটির ওপরে ছড়িয়ে জল ডেলে দেবেন ।
২| এছাড়াও Dursban insecticide ব্যক্তিগতভাবে আমি ব্যবহার করে থাকি, এই কীটনাশক প্রতি লিটার জলে ২ml মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

[আরও পড়ুন: জবা গাছের কাটিং থেকে চারা তৈরির সহজ পদ্ধতি]

ঘ)পাতা হলুদে হয়ে যাওয়া ও কুঁকড়ে যাওয়া রোধ করতে:

Spider Mites : এটি এক ধরণের ক্ষুদ্র পোকা যা সাধারণত পাতার নিচে থাকে । জবা ডালের ডগায় ছোট ছোট জাল তৈরি করে । এদের আক্রমণ হলে পাতা হলদে হয়ে যায় ও কুঁকড়ে যায় ।
প্রতিকার — Rolex, Oberon, Xmite এর মধ্যে যেকোনো একটির ২ ml এক লিটার জলে ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে স্প্রে করবেন । এটি ১০/১২ দিন অন্তর চালিয়ে যেতে হবে যতদিন না পুরোপুরি প্রতিকার হচ্ছে ।

সারা বছর টব ভর্তি প্রচুর ফুল পেতে ২ মুটো গোবর সার, ১ চামচ সরিষার খোল,১ চামচ হাড় হাঁড় গুড়ো,১ চামচ শিং কুঁচির সাথে ১ চামচ অনুখাদ্য বা Micronutrients ব্যাবহার করতে হবে। বছরে দু’বার ফাল্গুন থেকে চৈত্র ও ভাদ্র থেকে আশ্বিন মাসে গাছটিকে ছেটে দেওয়ার কাজ করতে হবে।

Creativity Gardening

প্রিয় পাঠক, এই প্রতিবেদনটি পঠন করবার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার মতো পাঠকের সহযোগিতা “ক্রিয়েটিভিটি গার্ডেনিং” সর্বদা কার্ম করে। গাছই আমাদের একমাত্র সম্পদ যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষিত করতে পারে, বাঁচিয়ে রাখতে পারে। নিঃস্বার্থে গাছ ভালবাসুন, সকলকে গাছ লাগাতে উৎসাহিত করুন।

আপনাদের যদি এই বিষয়ে কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সের মাধ্যমে আমাকে জানাতে জানাবেন। সেগুলোর সমাধান করাবার আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব। আপনার মূল্যবান রেটিং দিয়ে উৎসাহিত করুন, সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, সবাই খুব ভালো থেকো নমস্কার।?

5/5 - (2 votes)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *