বেলি ফুলের ইংরেজি নাম Arabian jasmine এবং বৈজ্ঞানিক নাম হল Jasminum Sambac। বাংলায় এই গাছটি বেলি (Beli) নামে পরিচিত এবং হিন্দিতে বলা হয় মুগরা। বেলি ফিলিপাইনের জাতীয় ফুল যা সেই দেশে sampaguita নামে পরিচিত ।
গরমের সুগন্ধি ফুলের মধ্যে জেসমিন গোত্রের ফুল গুলি সবথেকে অন্যতম, তবে জেসমিন গণের অন্তর্ভুক্ত ফুল গুলির মধ্য বেলি ফুলের মৃদুমন্দ সুমিষ্ট গন্ধের জন্য এই ফুলের জনপ্রিয়তা সব বেশি, বেলি ফুলের পাপড়ি হতে সুগন্ধি তেল নিষ্কাশিত করে বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রী তে ব্যবহার করা হয়। সেইজন্য বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বেলি ফুলের চাষ খুব লাভজনক।
মরসুমে বেলি ফুল গাছের যত্ন যে ভাবে করবেন | Mogra Plant Care
বেলি ফুলের আদি নিবাস এশিয়ার ক্রান্তীয় অঞ্চলে। ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে শুরু করে সমস্ত দক্ষিণ এশিয়াতেই এই বেলি ফুল গাছ জন্মেতে দেখা যায়। এছাড়াও মাদাগাস্কার,মরিশাস,মধ্য আমেরিকা, কিউবা এবং পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এই বেলি ফুল গাছ চাষ হতে দেখা যায়। বাংলায় এই গাছ গুলি বেলি নামে পরিচিত এবং হিন্দিতে বলা হয় মুগরা। বেলি ফিলিপাইনের জাতীয় ফুল যা সেদেশে sampaguita নামে পরিচিত ।
বেলি ফুল গাছ সাধারনত গুল্ম জাতীয় হয় এবং গাছটির উচ্চতা সর্বাধিক এক মিটার পর্যন্ত হতে পারে। তবে কোনো কোনো জাত লতানো এবং অনেক লম্বা হতে পারে। আমাদের দেশে গ্রীষ্মের শুরু থেকে বর্ষার শেষ পর্যন্ত ফুল ফোটে। গাছের ডালে থোকায় থোকায় প্রচুর ফুল ফোটে । প্রতিটি জাতই মৃদুমন্দ সুমিষ্ট গন্ধের জন্য মন কাড়ে।
বেলীর জাত বা বেলী ফুলের প্রজাতি
আমরা সাধারণত চারটি জাতের বেলি ফুল দেখে থাকি।
- মতিয়া – এই প্রজাতির বেলী ফুল আকারে বড়, অসংখ্য পাপড়ি ও সুগন্ধযুক্ত হয়।
- খয়েবেলী- এই প্রজাতির বেলী ফুল আকারে ছোট হয় ও তীব্র সুগন্ধযুক্ত হয় ।
- রাইবেলী- এই প্রজাতির বেলী ফুলের পাপড়ি সুসজ্জিত, ফুল খুব ছোট ও তীব্র গন্ধযুক্ত হয়।
- ভরিয়াচেলী- এই প্রজাতির বেলী ফুলকে রাজবেলীও বলে যার ফুল বড়, সিঙ্গেল ও অধিক গন্ধযুক্ত হয়।
স্থান নির্বাচন:-
গরম এবং বর্ষাতে প্রচুর ফুল পেতে চারা গাছ রোপণের পূর্বে সঠিক জায়গা ও মাটি নির্বাচন করা উচিত। প্রতিদিন ৬ থেকে ৮ ঘন্টা সূর্যের আলো পায় তেমন স্থান নির্বাচন করতে হবে। বসন্তের শুরু থেকে যত দিন না গাছে কুঁড়ি আসছে তত দিন বিশেষ যত্ন এবং পরিচর্যার প্রয়োজন। গ্রীষ্ম কালে গাছের গোড়ার মাটি সর্বদা ভেঁজা থাকে তেমন স্থান নির্বাচন করতে হবে।
[আরও পড়ুন: টেকোমা গাছের প্রতিস্থাপন এবং পরিচর্যা যে ভাবে করবেন | Tecoma Plant Care]
টব নির্বাচন:-
ফুল গাছের আকার অনুযায়ী টব নির্বাচন করতে হবে, গাছ যদি ছোট হয় তাহলে ৮ ইঞ্চি টব নিতে হবে এবং বড় গাছের জন্য ছোট ( ১০ ইঞ্চি থেকে ১২ ইঞ্চি মাটির ) টব উত্তম। তলানিতে এবং সাইডে ছিদ্র আছে কি না তা নিশ্চিত করতে হবে । টবে জল জমে থাকলে তা গাছের জন্য ক্ষতির কারণ।
মাটি প্রস্তুত:-
যে কোন গাছ থেকে বেশি পরিমাণে ফল এবং ফুল পেতে গেলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাটি প্রস্তুত। বেলে মাটি ও ভারী এঁটেল মাটি ছাড়া প্রায় সব ধরনের মাটিতে বেলি ফুল চাষ করা সম্ভব। আমাদের এমনভাবে মাটি প্রস্তুত করতে হবে যাতে আর্দতাও থাকবে অথচ জল ও দাঁড়াবে না | উর্বর দোঁয়াশ মাটি নিতে হবে ৫০ শতাংশ, ১ বছরের পুরোনো গোবরসার অথবা ১ বছরের পুরোনো পাতা পাঁচা সার অথবা ভার্মি কম্পোস্ট নিতে হবে 40 শতাংশ ,বালি মেশাতে হবে ১০ শতাংশ (একটু মোটা দানার লাল বালি জলে ধূয়ে নিতে হবে অথবা যেমন বালি পাবেন) আর সাথে ১ চামচ নিমখোল, ২ চামচ হাড়গুড়ো, ২ চামচ সিংকুচি এর মিশ্রণ আর মাটির সাথে ২ চামচ পাতা পোড়ানো ছাই মেশাতে পারলে ভালো হয় ওটা যেমন গাছ কে পটাসিয়াম এর যোগান দেবে গাছ কে রোগ মুক্ত রাখবে এবং মাটিকে অম্লিক বা এসিডিক হতে দেবে না। এই উপাদানগুলিকে মাটির সাথে ভালো করে মেশানো হয়ে গেলে আমাদের গাছ টবে প্রতিস্থাপন করতে হবে।
অথবা দোআঁশ মাটিতে ইউরিয়া, (DAP/TSP) ও পরিমান মতো গোবর সার মিশিয়ে পলিথিন দিয়ে ১৫ দিনের জন্য ডেকে ফুলের চাষ করা যায়।
[আরও পড়ুন: গাছ ভর্তি প্রচুর ফুল পেতে জবা গাছের যত্ন যে ভাবে করবেন | Hibiscus Plant Care]
গাছের খাবার প্রয়োগ:-
গাছ লাগানোর ৪৫ দিন পর থেকে মাসে দুইবার ১ লিটার জলে ২৫০ গ্রাম সরিষার খোল ৭ থেকে ১০ দিনের জন্য ভিজিয়ে রাখে হবে, খোঁল জল গাছে দেওয়ার ২৪ ঘটা আগে ১০ ইঞ্চি থেকে ১২ ইঞ্চি টবের জন্য ১২ থেকে ১৫টি (DAP/TSP) দানা জলের সাথে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। তবে গরম কালে গাছের গোড়ায় সরাসরি সরিষার খোল ব্যাবহার করবেন না। এছাড়াও NPK ১০:২৬:২৬ হাফ চামচ বা ৩০ দানা দেবেন মাসে একবার এতে গাছের ফুল ও হবে এবং গাছের কান্ড পাতার বিকাশ ও সমপরিমানে হবে আর পটাসিয়াম নাইট্রেট ( ১৩:০০৪৫) হাফ চামচ পরের মাসে একবার এতে গাছের রোগবালাই থেকে নিজেকে বাঁচানোর ক্ষমতা বাড়বে তার দরুন কুঁড়ি ঝরা রোধ হবে। প্রত্যেক তিন মাস অন্তর এক চামচ গুঁড়ো অনুখাদ্য প্রয়োগ করতে হবে।
জল প্রয়োগ:-
বেলি ফুল গাছের বড় কুঁড়ি উৎপাদনের জন্য নিয়মিত গাছের গোড়ায় জল প্রয়োগ করতে হবে, বেলি গাছে প্রচুর ফুলের জন্য ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি থেকে গাছের পরিচর্যা অর্থাৎ নিয়মিত গাছের গোড়ায় সার প্রয়োগ করতে হবে
রোগবালাই :-
বেলি ফুল গাছে কম বেশি ১২ মাসই পোঁকা- মাকড়ের উপদ্রব দেখা যায়। তবে মাকড়ের আক্রমণ হলে পাতায় সাদা আস্তরণ পড়ে, আক্রান্ত পাতাগুলো কুঁকড়ে যায় ও গোল হয়ে পাঁকিয়ে যায়। গাছে ফুলের সময় ল্যাদাপোকার কম বেশি আক্রমন ঘটে। বেলি ফুলের পাতায় হলদে বর্ণের ছিটে ছিটে দাগযুক্ত এক প্রকার ছত্রাক রোগ দেখা যায়।
কাঁটাই- ছাঁটাই / মাটি পরিবর্তন :-
বেলি গাছের ডালপালা কাঁটাই- ছাঁটাই এর উপর ফুল আশা নির্ভর করে। বেলি গাছের ডালপালা কাঁটাই- ছাঁটাই এবং মাটি পরিবর্তন ফেব্রুয়ারী থেকে মার্চ মাসের ১৫ তারিখের মধ্য সম্পূর্ন করে ফেলতে হবে। তাহলে নতুন ডাল ও পাতা বের হয়ে গাছে প্রচুর ফুল ফুঁটবে।
বেলি ফুল গাছের চারা তৈরি/বংশবিস্তার:-
বেলি ফুল গাছের চারা তৈরী করা হয় বা বংশবিস্তার ঘটানো হয় গুটি কলম, দাবা কলম ও ডাল কলম পদ্ধতির মাধ্যমে। কাটিং থেকে বা কলম থেকে চারা তৈরীর আদর্শ সময় জুলাই থেকে আগষ্ট এবং ফেব্রুয়ারী থেকে মার্চ।
প্রুনিং-এর সময় ডাল ছাঁটলে যে অবশিষ্ট অংশ থাকে তা যে কোন মাসেই, ছায়াযুক্ত স্থানের যে-কোন ধরণের ভেজামাটিতে ডাল পুঁতে দিলেই অল্পদিনে প্রতিটি কাটা ডাল থেকে এক-একটি নতুন চারা পাওয়া যায়। ফলত, একটি গাছ থেকে এইভাবে খুব সহজেই যতগুলো ইচ্ছে বেলফুল গাছ নিজে নিজেই তৈরি করে নেওয়া যায়। নতুন চারা তৈরীর আদর্শ সময় শীতের পরে এবং বর্ষার সময়ে।
[আরও পড়ুন: জবা গাছের কাটিং থেকে চারা তৈরির সহজ পদ্ধতি | Grow Hibiscus in Water]
বেলি গাছের প্রচলিত নাম
Name | Position |
---|---|
বেলি,বনমল্লিকা, মালশি, নগরা | বাংলায় |
Arabian jasmine | ইংরেজিতে |
মুগরা | হিন্দি |
sampaguita | ফিলিপাইনে |
FAQ [Frequently Asked Questions]
বেলি গাছের যত্ন কিভাবে করবেন ?
উর্বর দোঁয়াশ মাটির সাথে জৈব সার মিশিয়ে ভাল-নিষ্কাশিত মাটি প্রস্তুত করে বেলি ফুল গাছ প্রতিস্থাপন করতে হয়। মাটি সর্বদা সামান্য আর্দ্র হওয়া উচিত, তবে স্যাঁতস্যাঁতে নয় এবং মাটি কখনই শুকাতে দেওয়া উচিত নয়।
বেলি ফুলকে ইংরেজিতে কী বলা হয় ?
ইংরেজিতে বেলি ফুলকে বলা হয় আরবিয়ান জেসমিন (Arabian jasmine) । জেসমিন/আরবিয়ান বেলি ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম হল জেসমিনাম সাম্বাক (Jasminum sambac)।
গাছে ফুল আনতে কোন সার ব্যাবহার করা উচিত ?
গাছে ফুল আসার আগে থেকে পটাসিয়াম এবং ফসফরাস সমৃদ্ধ সার মাসে একবার করে ব্যাবহার করতে হবে। বিশেষ করে বসন্তের শুরু থেকে।
বেলি গাছ কি সরাসরি সূর্যের আলো পছন্দ করে ?
প্রতিদিন ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা পূর্ণ সূর্যের আলো পায় বা তার বেশি সরাসরি সূর্যালোক পায়, তেমন স্থানে গাছ রাখত হবে। বেলি গাছের জন্য উপযুক্ত তাপমাত্রা ২২ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বেলি ফুল কখন ফোটে?
বেলি বসন্তের শেষ থেকে শরৎ পর্যন্ত থোঁকায় থোঁকায় ফোটে। সারা বছর কিছু সংক্ষক ফুল ফুঁটলেও, মরসুমে গাছ ফুলে ভরে যায়।
কিভাবে বেলি গাছের বংশবিস্তার ঘটাবেন?
বেলি গাছের বংশ বিস্তারের জন্য, স্টেম কাটিং, লেয়ারিং দুটি পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে। তবে স্টেম কাটিং সব থেকে সহজ প্রদ্ধতি।
প্রিয় পাঠক, এই প্রতিবেদনটি পঠন করবার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার মতো পাঠকের সহযোগিতা “ক্রিয়েটিভিটি গার্ডেনিং” সর্বদা কার্ম করে। গাছই আমাদের একমাত্র সম্পদ যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কে সুরক্ষিত করতে পারে, বাঁচিয়ে রাখতে পারে। নিঃস্বার্থে গাছ ভালোবাসুন, সকলকে গাছ লাগাতে উৎসাহিত করুন।