টবে সুগন্ধি হাসনুহানা ফুল গাছের পরিচর্যা

বর্ষা এবং শরৎ এই মরসুমের সুগন্ধী ফুলের তালিকার রয়েছে হাসনুহানা ফুল। রাতের আধারে তীব্র সুমিষ্ট গন্ধে এই ফুল গুলি ফোঁটে। এই ফুলের আদি নিবাস ওয়েষ্ট ইন্ডিজ হলেও বর্তমানে এটি ভারত, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, মায়ানমার, মালয়েশিয়া সহ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে এই গাছগুলি দেখতে পাওয়া যায়। অবাধ সূর্যালোক পায় এমন উঁচু অথবা ঢালু দোঁয়াশ মাটি হাসনুহানা চাষের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট। টবে প্রতিস্থাপন করলে যথাসময়ে সারপ্রয়োগ, জলসেচন ও ডাল কাঁটাই-ছাঁটাই এর প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে।

আজকের প্রতিবেদন থেকে আপনারা টবে হাসনুহানা ফুল গাছের প্রতিস্থাপন প্রদ্ধতি এবং যত্ন সম্পর্কে জানতে পারবেন। হাসনাহানা বৈজ্ঞানিক নাম Cestrum nocturnum, এটি Solanaceae পরিবারের অর্ন্তভুক্ত , ইংরেজি নাম -Night-blooming cestrum, Night blooming jasmine, Night flower jasmine।

টবে সুগন্ধি হাসনুহানা ফুল গাছের পরিচর্যা

সারা বছরই মূলত এই গাছে দু-একটি করে ফুল ফোটে তবে গরমের মাঝামাঝি থেকে টানা শরৎকাল প্রযন্ত হাসনুহানা গাছ ফুলে পরিপূর্ন থাকে। শীতকালে এটি ফুটতে দেখা যায় না। বহু দূর থেকে এই ফুলের গন্ধ পাওয়া যায়। গুল্ম জাতীয় এই ফুল গাছ বহু মানুষ বাড়ির টবেও চাষ করে থাকেন। হাসনুহানা ফুলগুলি সাদা, হলুদ এবং গোলাপী বর্ণের পাঁচ পাপড়ি বিশিষ্ট হয়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাদা রঙেরই পাপড়ি হয়। কোথাও কোথাও আবার আবার ঘিয়ে রংয়ের পাপড়ির হাসনুহানাও দেখতে পাওয়া যায়। নলাকার এই ফুলের পাপড়ি সাধারণত ২ সেন্টিমিটার লম্বা হয়ে থাকে। এই গাছের আরো অনেক নাম আছে, যার মধ্যে রয়েছে , নাইট কুইন, নাইট ব্লুমিং জেসমিন , নাইট ফ্র্যাগ্রান্ট জেসমিন , নাইট ফ্র্যাগ্রান্ট সেস্ট্রাম , পয়জনবেরি, রাতের দেবী ইত্যাদি। হাসনুহানা ফুল রাতে প্রখর সুগন্ধি দেওয়ার ক্ষমতা এবং দিনের বেলা ফুল ঝরে যাওয়ার জন্য পরিচিত। তীব্র সুগন্ধির কারনে কীট-পতঙ্গদের আকর্ষণ করে। গাছটিতে বসন্তের শেষের দিকে এবং গ্রীষ্মের পুরো মাসগুলিতে ফুল ফোটে। সুগন্ধি এই ফুলটিতে প্রায় দুই ইঞ্চি ব্যাসের এবং পাঁচটি সাদা থেকে হালকা গোলাপী পাপড়ি থাকে।

হাসনুহানা ফুল গাছের পরিচর্যা

সুগন্ধি হাসনুহানা গাছ দশ থেকে পনের ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে এবং এটি কোন বাগান বা প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্য একটি চমৎকার সংযোজন। যখন হাসনা হেনা গাছে ফুল ফোটে, তখন এটি একটি সুগন্ধি নির্গত করে যা কস্তুরীর মতো গন্ধ ছড়ায়। এই ফুলটির সুন্দর সুবাসের জন্য দামী পারফিউম এবং লোশনে সিন্থেটিক কস্তুরীর পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়েছে।

নাইট-ফ্লাওয়ার জেসমিন গুটি কলম বা বীজ থেকে বংশ বিস্তার করা হয়ে থাকে। সাধারণত বীজ সংগ্রহ করা হয় যখন ফুল ইতিমধ্যেই মারা যায় এবং গ্রীষ্মকালে গাছ থেকে পড়ে যায়। বীজগুলি ভালভাবে নিষ্কাশন করে মাটিতে রোপণ করা উচিত এবং আর্দ্র রাখা উচিত যতক্ষণ না তারা অঙ্কুরিত হওয়া শুরু করে, তাপমাত্রা কতটা উষ্ণ তার উপর নির্ভর করে কয়েক সপ্তাহ বা এমনকি কয়েক মাস সময় নিতে পারে।

টব নির্বাচন:

টবে হাসনাহেনা ফুল চাষের জন্য ২৫ সেমি উচ্চতা বিশিষ্ট অথবা ১২ ইঞ্চি মাপের টব সংগ্রহ করতে হবে।

মাটি প্রস্তুত:

উর্বর দোঁআশ মাটি হাসনুহানা চাষের জন্য একদম আদর্শ। সরাসরি মাটিতে বসালে সব ধরনের মাটিতে হাসনুহানার চাষ করা যায়। টবে হাসনুহানা চাষ করতে হলে দোঁয়াশ মাটির সাথে জৈব সার: হাঁফ মুঠো পরিমাণে হাঁড়ের গুঁড়ো এবং সিংকুচি, সুপার ফসফেট ও দু’মুঠো ছাই ও নিম খোল মিশিয়ে নিতে হবে। এতে টবের মাটি ভালো থাকবে। মাটির সাথে পাতা পচা সার, গোবর, খোল ও কিছুটা টিএসপি সার মিশিয়ে মাটি প্রস্তুত করলেও বেশ ভালো ফল মেলে।

গাছের বিশেষ পরিচর্যা :

এই গাছের Flower Season সেপ্টম্বর মাসের মাঝামাঝি থেকে নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় অব্ধি ( বর্ষার এর শুরু থেকে হেমন্ত), তাই গরমের মরসুমের শুরু থেকে গাছের যত্ন এবং পরিচর্যা শুরু করে দিতে হবে। চেষ্টা করবেন টবের গাছগুলিকে সম্পূর্ণ সূর্যের আলোতে রাখবার তবে গরমকালে টবের গাছগুলিকে দুপুরের তীব্র রোদ থেকে বাঁচিয়ে রাখবেন, তা নাহলে তীব্র রোদে গাছ রাখতে পাতার কিনারা গুলি হলুদ হয়ে বা পুঁড়ে যাবে। চেষ্টা করবেন গাছগুলি সকালের সূর্যের আলো পায় এবং বিকালে সূর্যের আলো পায় এমন স্থানে রাখবার। গরমকালে টবের গাছে দিন দু বেলা জল দেওয়া খুবই প্রায়াজন ,তবে শীতকালে এই গাছে খুব বেশি জলের প্রায়াজন হয না, কারন এই সময় হাসনাহেনা গাছ ডেরমেনসিও থাকে।

ভাল ফুল পেতে প্রতি মাসে একবার একমুঠো হাঁড়ের গুঁড়ো, কিছুটা সুপার ফসফেট ও শিংকুঁচি ,এর সঙ্গে কিছুটা পরিমান পাতা পচা সার, গোবর, খৈল ও কিছুটা অনুখাদ্য সার একত্রে মিশিয়ে টবের মাটিতে দিলে ভাল ফুল পাওয়া যাবে।

[আরও পড়ুন: রাতের রানী নাইট কুইন গাছের পরিচর্যা]

জলবায়ু :

মোটামুটি মাটি সর্বদা আর্দ্র থাকবে এমন মাটি হাসনুহানা গাছ রোপনের জন্য আদর্শ। মাটি অতিরিক্ত ভিজে অর্থাৎ স্যাঁতস্যাতে থাকলে চলবে না। মাটি কোনও কারণে স্যাঁতসেঁতে থাকলে জল দেওয়ার দরকার নেই। এছাড়া গ্রীষ্মকালে প্রতিদিন নিয়ম মেনে হাসনুহানা গাছে জল দেওয়া যাবে।

ডাল ছাঁটাই:

গাছের সুন্দর্য বৃদ্ধি করতে বা সেফ দিতে এবং মরসুমের শুরু থেকে গাছ ভর্তি ফুল পেতে শীতের পরপরই গাছের ডালপালা কাঁটাই- ছাঁটাই সম্পূর্ণ করে ফেলতে হবে। সুস্থ সতেজ গাছ তৈরির প্রথম প্রক্রিয়া হল সময় মতো খাবার প্রয়োগ তেমনি গাছের সুন্দর্য বৃদ্ধি দ্বিতীয় প্রক্রিয়া হল ডাল ছাঁটাই। ডাল ছাঁটাই এর কয়েক দিন পর থেকেই কান্ডের পাশ থেকে নতুন নতুন শাখা বের হবে শুরু হবে, তাদের মধ্যে কয়েকটি শাখা রেখে বাকীগুলি ছিড়ে ফেলুন। শীতকালের শেষে গাছের অর্দ্ধেক উচ্চতা থেকে ছেঁটে ফেলতে হবে। সময়মতো গাছের গোড়ায় মাটি দিন। যদি টবের মাটি পরিবর্তনের দরকার পড়ে তবে ডালপালা কাঁটাই- ছাঁটাই করবার সময় করে নিন।

বংশবিস্তার পদ্ধতি:

হাসনুহানা গাছের বংশবিস্তার নানা ভাবে করা সম্ভব। ফুলের মরসুম শেষ হয়ে যাবার পরে যে বীজ তৈরী হয়, তার মাধ্যমে বংশবিস্তার সম্ভব। গুটি কলম পদ্ধতিতেও হাসনুহানার বংশবিস্তার করানো সম্ভব। বর্ষাকালে পরিপক্ক, মোট গোঁড়ার ডাল সংগ্রহ করে কাঁদামাটিতে পুঁতে দিলে কয়েক সপ্তাহ পরে হাসনুহানা চারা তৈরী হয়ে যায়।

প্রিয় পাঠক, এই প্রতিবেদনটি পঠন করবার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার মতো পাঠকের সহযোগিতা “ক্রিয়েটিভিটি গার্ডেনিং” সর্বদা কার্ম করে। গাছই আমাদের একমাত্র সম্পদ যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষিত করতে পারে, বাঁচিয়ে রাখতে পারে। নিঃস্বার্থে গাছ ভালবাসুন, সকলকে গাছ লাগাতে উৎসাহিত করুন।

আপনাদের যদি এই বিষয়ে কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সের মাধ্যমে আমাকে জানাতে জানাবেন। সেগুলোর সমাধান করাবার আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব। আপনার মূল্যবান রেটিং দিয়ে উৎসাহিত করুন, সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, সবাই খুব ভালো থেকো নমস্কার।

5/5 - (1 vote)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *