জুঁই ফুল গাছের যত্ন: গ্রীষ্ম, বর্ষা দুই মরসুমে সুগন্ধী ফুলের মধ্য জুঁই অন্যতম। জুঁই সাধারনত গুল্ম জাতীয়, বহুবর্ষজীবি উদ্ভিদ এবং উচ্চতা সর্বাধিক দু মিটার (৫থেকে ৬ ফুট) পর্যন্ত হতে পারে। আমাদের দেশে গ্রীষ্মকাল থেকে শুরু করে শরৎকাল পর্যন্ত এই গাছে প্রচুর ফুল ফোটে। গাছের ডালে আগাতে থোকায় থোকায় প্রচুর ফুল ফোটে । প্রতিটি জাতই মৃদুমন্দ সুমিষ্ট গন্ধের জন্য মন কাড়ে।
সুগন্ধি ফুলের মধ্যে জেসমিন গোত্রের বেশ কিছু প্রজাতি আছে, তার মধ্য জুঁই এবং বেলি অন্যতম। বর্ষায় প্রচুর ফুল পেতে যে ভাবে জুঁই ফুল গাছের যত্ন নেবেন তা আপনার এই প্রতিবেদন থেকে জানতে পারবেন। জুঁই ফুলের মৃদুমন্দ সুমিষ্ট গন্ধের জন্য এই ফুলের জনপ্রিয়তা সব থেকে বেশি, বেলি ন্যায় জুঁই ফুলের পাপড়ি হতে সুগন্ধি তেল নিষ্কাশিত করে বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রী তে ব্যবহার করা হয়। যে কোনও মাটিতে জুঁই ফুলের চাষ করা সম্ভব,তবে কাঁকরযুক্ত, নুঁড়িযুক্ত বা বেলে মাটিতে চাষ না করাই শ্রেয় ৷ জুই ফুল গাছের জন্য আদর্শ উর্বর দোঁয়াশ মাটি।
স্থান নির্বাচন
গরম এবং বর্ষাতে প্রচুর ফুল পেতে চারা গাছ রোপণের পূর্বে সঠিক জায়গা ও মাটি নির্বাচন করা উচিত। গরমকালে দিনে ২ থেকে ৩ ঘন্টা সূর্যের আলো পায় তেমন স্থান নির্বাচন করতে হবে, অতিরিক্ত সূর্যের তাপ জুঁই গাছের জন্য বিপজ্জনক৷ বসন্তের শুরু থেকে যত দিন না গাছে কুঁড়ি আসছে তত দিন বিশেষ যত্ন এবং পরিচর্যার প্রয়োজন। গ্রীষ্ম কালে গাছের গোড়ার মাটি সর্বদা ভেঁজা থাকে তেমন স্থান নির্বাচন করতে হবে।
টব নির্বাচন
গাছের সাইজ অনুযায়ী পাত্র নির্বাচন করতে হবে। জুই গাছের জন্য বড়( ১০ ইঞ্চি থেকে ১২ ইঞ্চি মাটির ) টব উত্তম, কারণ এই গাছগুলি বহুবর্ষজীবি অর্থাৎ দীর্ঘ বছর ধরে বেঁচে থাকে। তলানিতে ছিদ্র যুক্ত টবে আবশ্যক যেন বাড়তি জল জমে না থেকে বেড়িয়ে যায়। কেননা টবে জল জমে থাকলে তা গাছের জন্য ক্ষতিকর।
মাটি প্রস্তুত:
গাছর সঠিক বৃদ্ধি এবং মরসুমে প্রচুর ফুল পেতে হলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাটি প্রস্তুত। বেলে মাটি ও ভারী এঁটেল মাটি ছাড়া প্রায় সব ধরনের মাটিতে জুঁই ফুল চাষ করা সম্ভব। আমাদের এমনভাবে মাটি প্রস্তুত করতে হবে যাতে আর্দতাও থাকবে অথচ জল দাঁড়াবে না। উর্বর দোআঁশ মাটি নিতে হবে ৫০ শতাংশ, নিতে হবে ১ বছরের পুরোনো গোবরসার অথবা ১ বছরের পুরোনো পাতা পাঁচা সার অথবা ভার্মি কম্পোস্ট ৩০ শতাংশ, কোকোপিট মেশাতে হবে ২০ শতাংশ ( অথবা নদীর সাদা বালি) আর সাথে বড় চামচের এক চামচ নিমখোল, দুই চামচ হাড়গুড়ো,দুই চামচ সিংকুচি আর মাটির সাথে ২ চামচ পাতা পোড়ানো ছাই মেশাতে পারলে ভালো হয় ওটা যেমন গাছকে পটাসিয়াম এর যোগান দেবে গাছকে রোগ মুক্ত রাখবে এবং মাটিকে অম্লিক বা এসিডিক হতে দেবে না। এই উপাদানগুলিকে মাটির সাথে ভালো করে মেশানো হয়ে গেলে আমাদের গাছ টবে প্রতিস্থাপন করতে হবে। অথবা
দোআঁশ মাটিতে ইউরিয়া, (DAP/TSP) ও পরিমান মতো গোবর সার মিশিয়ে পলিথিন দিয়ে ১৫ দিনের জন্য ডেকে ফুলের চাষ করা যায় ।
গাছের খাবার প্রয়োগ:
রাসায়নিক ও জৈবিক পদ্ধতি
গাছ বসানোর ৩০ থেকে ৪০ দিন পর থেকে মাসে দুইবার সরিষার খোল ভেজানো জল গাছের গোড়ায় দিতে হবে। প্রথমে ১ লিটার জলে ২৫০ গ্রাম সরিষার খোল ৩ থেকে ৪ দিনের জন্য ভিজিয়ে রাখতে হবে পারে সেই জল গাছে দিতে হবে। গাছে কঁড়ি আসার ১ মাস আগে থেকে খোঁল জল গাছে দেওয়ার ২৪ ঘটা আগে ১০ ইঞ্চি থেকে ১২ ইঞ্চি টবের জন্য ১২ থেকে ১৫টি (DAP/TSP) দানা জলের সাথে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। তবে গরম কালে গাছের গোড়ায় সরাসরি সরিষার খোল ব্যাবহার না করাই ভাল । এছাড়াও NPK 10:26:26 হাফ চামচ বা 30 দানা দেবেন মাসে একবার এতে গাছের ফুল ও হবে এবং গাছের কান্ড পাতার বিকাশ ও সমপরিমানে হবে আর পটাসিয়াম নাইট্রেট ( 13:00:45) হাফ চামচ পরের মাসে একবার এতে গাছের রোগবালাই থেকে নিজেকে বাঁচানোর ক্ষমতা বাড়বে তার দরুন কুঁড়ি ঝরা রোধ হবে। প্রত্যেক তিন মাস অন্তর এক চামচ গুঁড়ো অনুখাদ্য প্রয়োগ করতে হবে।
জৈবিক পদ্ধতি
গাছের কুঁড়ি আসার আগে গোড়ার কিছুটা মাটি সরিয়ে নিতে নেওয়ার পরে ১০ ইঞ্চি অথবা ১২ ইঞ্চি টবের এর জন্য দু মুঠো গোবর সার অথবা ভার্মিকম্পোস্ট অথবা পাতা পচা সার এর সাথে নিতে হবে এক চামচ সরিষার খোল এবং নিতে হবে দু’চামচ হাড়গুড়ো, দু’চামচ সিংকুঁচি এবং এক চামচ নিমখোল, সম্ভব হলে ১ থেকে ২ চামচ বাদাম খোল নেবেন।
গাছকে রোগমুক্ত এবং বেশি ফুল পেতে প্রতি মাসে একবার করে ১ থেকে ২ চামচ মাইক্রোটিউনস বা অনুখাদ্য গাছে ব্যবহার করতে হবে। এইটুকু যত্ন নিলেই আপনার ছাদ বাগানে জুঁই ফুলে ভরে যাবে।
জল প্রয়োগ
জুঁই ফুল গাছের বড় কুঁড়ি উৎপাদনের জন্য নিয়মিত গাছের গোড়ায় জল প্রয়োগ করতে হবে, জুঁই গাছে প্রচুর ফুলের জন্য ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে গাছের পরিচর্যার অর্থাৎ নিয়মিত গাছের গোড়ায় সার প্রয়োগ এবং গরমে দু বেলা জল প্রয়োগ করতে হবে। বর্ষাকালে জুঁই গাছে প্রচুর ফুল হওয়ার কারণ হল স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত, তবে বর্ষাকালে প্রয়োজন ছাড়া গাছে জল দেবন না।
রোগবালাই
জুঁই ফুল গাছে কম বেশি ১২ মাসই পোঁকা-মাকড়ের উপদ্রব দেখা যায়। গাছে মাকড়ের আক্রমণ হলে পাতায় সাদা আস্তরণ পড়ে, আক্রান্ত পাতাগুলো কুঁকড়ে যায় ও গোল হয়ে পাঁকিয়ে যায়। এছাড়াও গাছে ফুলের সময় ল্যাদাপোকার কম বেশি আক্রমন ঘটে, ল্যাদার আক্রমনে কুঁড়ি অকালেই গাছ থেকে ঝড়ে পড়ে এবং কুড়িগুলিতে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এছাড়াও পাতায় হলদে বর্ণের ছিটে ছিটে দাগযুক্ত এক প্রকার ছত্রাক রোগ দেখা যায়, যা ছত্রাক নাশক দ্বারা দমন করা সম্ভব।
ঘরোয়া পদ্ধতি
তবে গাছে পোকা উপদ্রব দেখা দিলে ১ লিটার জলের মধ্যে যে কোন সাবান ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে অথবা ১০ ফোঁটা শ্যাম্পু ভাল করে জলে মিশিয়ে নিতে হবে আর নিতে হবে ১ চামচ গুঁড়ো হলুদ এগুলিকে জলে ভাল করে মিশিয়ে গাছে স্প্রে করতে হবে। দশ দিন অন্তর অন্তর সরষের খোল পচা সার দিন।
কাঁটাই- ছাঁটাই/ মাটি পরিবর্তন
জুঁই গাছের ডালপালা কাঁটাই- ছাঁটাই এর উপর ফুল আশা নির্ভর করে। জুঁই গাছের ডালপালা কাঁটাই- ছাঁটাই এবং মাটি পরিবর্তন ফেব্রুয়ারী থেকে মার্চ মাসের ১৫ তারিখের মধ্য সম্পূর্ন করে ফেলতে হবে। তাহলে নতুন ডাল ও পাতা বের হয়ে গাছে প্রচুর ফুল ফুঁটবে।
বংশবিস্তার:
জুঁই গাছের চারা তৈরী করা হয় বা বংশবিস্তার ঘটানো হয় গুটি কলম বা কাটিং পদ্ধতির মাধ্যমে। কাটিং থেকে বা কলম থেকে চারা তৈরীর আদর্শ সময় জুলাই থেকে আগষ্ট এবং ফেব্রুয়ারী থেকে মার্চ। ডাল কলম করার জন্য ২০ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার আকারের পুরাতন ডালের অংশ কেটে নিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে সেই অংশটিতে যেন তিন থেকে চারটি চোখ থাকে। ডালটির সমস্ত পাতা ফেলে দেবেন, ডালগুলি বসানোর আগে নিচের দিকের অংশে সেরা ডেস্ক( রুট) হরমোন লাগিয়ে নিলে খুব সহজেই দ্রুত শেকড় গজায়। তবে কাটিং থেকে চারা তৈরি করার সময় কাটিং গুলোকে অবশ্যই ছায়াযুক্ত স্থানে রাখতে হবে ।
Name | Position | Office |
---|---|---|
Erica Romaguera | Coach | Audi |
Caleigh Jerde | Lawyer | Pizza Hut |
Lucas Schultz | Librarian | Burberry |
Carole Marvin | Massage Therapist | Division 4 |
FAQ [Frequently Asked Questions]
জুঁই গাছ কি পোঁকা মাকড়ের দ্বারা আক্রান্ত হয়?
জুঁই ফুল গাছে কম বেশি ১২ মাসই পোঁকা-মাকড়ের উপদ্রব দেখা যায়। গাছে মাকড়ের আক্রমণ হলে পাতায় সাদা আস্তরণ পড়ে, আক্রান্ত পাতাগুলো কুঁকড়ে যায় ও গোল হয়ে পাঁকিয়ে যায়। বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ন প্রতিবেদন পড়ুন।
গাছে ফুল আনতে কোন সার ব্যাবহার করা উচিত?
গাছে ফুল আসার আগে থেকে পটাসিয়াম এবং ফসফরাস সমৃদ্ধ সার মাসে একবার করে ব্যাবহার করতে হবে। বিশেষ করে বসন্তের শুরু থেকে।
ফুলের মরসুমে কিভাবে আপনি জুঁই গাছের যত্ন নেবেন?
বসন্তের শুরু থেকে নিয়মিত গাছের যত্নের প্রয়োজন। মরসুমে গাছ ভর্তি ফুল পেতে বসন্তের শুরুতে ডাল ছাঁটাই ও নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে। গাছের বৃদ্ধি ও ফুলের জন্য পূর্ণ সূর্যালোকের প্রয়োজন হয়। দিনে 5-6 ঘন্টা সরাসরি সূর্যালোক পেলে গাছের ভালভাবে বৃদ্ধি ঘটবে এবং রোগে আক্রান্ত কম হবে।
জুঁই গাছ কি ব্যালকনিতে করা যেতে পারে?
হ্যা, জুঁই যেহেতু জেসমিন গোত্রের তাই এদের ডালপালা বেশি বৃদ্ধি পায়। তবে, জুঁই গাছ ব্যালকনিতে করতে হলে নিয়মিত ডাল ছাঁটাইয়ের প্রয়োজন আছে।
জুঁই ফুল কখন ফোটে?
জুঁই বসন্তের শেষ থেকে শরৎ পর্যন্ত থোঁকায় থোঁকায় ফোটে। সারা বছর কিছু সংক্ষক ফুল ফুঁটলেও, মরসুমে গাছ ফুলে ভরে যায়।
কিভাবে জুঁই গাছের বংশবিস্তার ঘটাবেন?
জুঁই গাছের বংশ বিস্তারের জন্য, স্টেম কাটিং, লেয়ারিং দুটি পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে।