নীল অপরাজিতার পরিচর্যা | How to grow & care Blue Aparajita Flower Plant

Last updated on August 7th, 2022 at 02:46 pm

গাঢ় নীল ফুলের তালিকায় আছে আমার আপনার সকলের পরিচিত অপরাজিতা। আজকে এই প্রতিবেদন থেকে আপনি নীল অপরাজিতা ফুল গাছ প্রতিস্থাপন পদ্ধতি ও পরিচর্যা সম্পর্কে জানতে পারবেন।

নীল অপরাজিতার পরিচর্যা | How to grow & care Blue Aparajita Flower Plant অপরাজিতা ফুলের ইংরেজি নাম বাটারফ্লাই পি , এটি Popilionaceae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত, বোটানিক্যাল নাম Clitoria ternatea। অপরাজিতা ছাড়াও ইংরেজিতে এর অনেক নাম আছে যেমন- Blue Pea, Butterfly Pea, Asian pigeonwings, Darwin Pea, Gokarna প্রভৃতি। বাংলাতে একে নীলকণ্ঠ নামেও ডাকা হয়। কেরালায় একে বলে শঙ্খপুষ্পী। এই ফুল এসেছে মালাক্কা দ্বীপ থেকে। টারনেটি বা মালাক্কা থেকে এসেছে বলে অপরাজিতার বৈজ্ঞানিক নাম ক্লিটোরিয়া টারনেটিকা। ক্লিটোরিয়া অর্থ যোনীপুষ্প।

নীল অপরাজিতার পরিচর্যা | How to grow & care Blue Aparajita Flower Plant

বৈশিষ্ট্য(Characteristics):-

অপরাজিতা ফুল নীল ছাড়াও সাদা, হালকা গোলাপী ও হালকা বেগুনি রঙের হয়ে থাকে। অপরাজিতা লতানো ঝোঁপের ন্যায়, বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ এবং সবুজ পাতা বিশিষ্ট গাছে সুন্দর দেখতে সিঙ্গেল এবং ডাবল পেটালের ফুল হয়ে থাকে। তবে ফুলে কোনো গন্ধ নেই, তবুও রঙের বাহারে এবং সোন্দর্যে ফুলটি অনন্য। বহুবর্ষজীবী এ লতানো প্রকৃতির গাছ ২০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়।

অপরাজিতা গাছের জন্য স্থান নির্বাচন:-

অপরাজিতা গ্রীষ্মমন্ডলীয় স্থানে দ্রুত বৃদ্ধি পায়। প্রতিদিন ৪ থেকে ৬ ঘন্টা সূর্যের আলো পায় তেমন স্থান নির্বাচন করতে হবে। অপরাজিতা যে কোন মাটিতেই সুন্দর ভাবে বেড়ে ওঠে তবে যে স্থানে জল দাঁড়ায় না তেমন স্থান নির্বাচন করতে হবে।

গাছটি মাটিতে অথবা টবে উভয় স্থানেই করা যায়,গাছটি টবে করবার জন্য বেশি জায়গার প্রয়োজন হয় না আপনি আপনার বাগানের ছোট্ট একটি জায়গার মধ্যে অপরাজিতা গাছের পরিচর্যা করতে পারেন। তবে আলম্বের প্রয়োজন।

নীল অপরাজিতার পরিচর্যা | How to grow & care Blue Aparajita Flower Plant
নীল অপরাজিতার পরিচর্যা | How to grow & care Blue Aparajita Flower Plant

টব নির্বাচন:-

অপরাজিতা একটি Parmanent Plant তাই ভালো হয় বড় টব নির্বাচন করলে। মাটি থেকে সঠিক মাত্রায় পুষ্টি উপাদান পেলে কিছু মাসের মধ্য গাছ ঝোঁপে পরিণত হয়। টবে নির্বাচনের ক্ষেত্রে ১০ ইঞ্চি অথবা ১২ ইঞ্চি টব সংগ্রহ করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। গাছের গোড়ায় যেন জল না জমতে পারে তার জন্য টবের নীচে ফুটো করে জলনিকাশির ব্যবস্থা করতে হবে। বর্ষাকালে টবগুলি এমন জায়গায় রাখবেন, যাতে গাছের গোড়ায় জল না দাঁড়ায়। গাছের গোড়ায় জল জমলে গাছটি মাড়া যেতে পারে।

মাটি প্রস্তুত:-

অপরাজিতা গাছের জন্য উর্বর মাটিি প্রস্তুত করতে হবে তা না হলে গাছের বৃদ্ধি থেমে থাকবে। এছাড়াও যেটি প্রয়োজন তা হল ভাল জল নিষ্কাশন ব্যাবস্থা। মাটি প্রস্তুতের ক্ষেত্রে উর্বর দোআঁশ মাটির সাথে নিতে হবে কোকো পিট ,এক বছরের পুরনো গোবর সার অথবা ভার্মি কম্পোস্ট এবং নিতে হবে পরিমান মতো হাড়গুড়ো, সিংকুচি এবং নিম খোল। এগুলি দ্বারা মাটি প্রস্তুত করে গাছটি টবে প্রতিস্থাপন করতে হবে। টবে প্রতিস্থাপন করলে গরমের সময়ে মাটির ময়েশ্চার ধরে রাখার জন্য ব্যবহার করতে হবে কোকোপিট অথবা কাঠের গুঁড়ো।

অপরাজিতা ফুল গাছ যেকোনো ধরনের মাটিতে হয়। তবুও এটি অম্লীয় মাটি পছন্দ করে, এমনকি বেলে, পুষ্টিহীন মাটিও যথেষ্ট হবে।

[আরও পড়ুন: How To Grow & Care Blue Cluster Vine – Jacquemontia Pentantha]

আলো:-

গাছটি প্রতিস্থাপনের পর এক সপ্তাহ জন্য একটু ছায়াতে রেখে দিতে হবে। এক সপ্তাহ পর সকালের হালকা রোদে পায় তেমন স্থানে টবটি রাখতে হবে। এই গাছ ব‍্যালকনিতে সুন্দর ভাবে বেড়ে ওঠে, যেখানে উজ্জ্বল আলো আসে সেখানে। অপরাজিতা দেশীয় গ্রীষ্মমন্ডলীয় উদ্ভিদ হিসাবে অপরাজিতা ফুল গাছ ঝলমলে রোদ ভীষণপছন্দ করে এবং এটি পূর্ণ রোদে সুন্দর ভাবে বেড়ে ওঠে, যদিও এটি আংশিক ছায়া সহ্য করতে পারে। সামান্য আলোতে গাছটি ভালোভাবেই বৃদ্ধি পেলেও ফুলের পরিমান কমে যায়।

জল প্রয়োগ:-

অপরাজিতা গাছটি আসলে খরা সহনশীল উদ্ভিদ। একবার মাটিতে ভালোভাবে লেগে গেলে সহজে মাড়া যায় না। তবে তীব্র রৌদে, নতুন চারা গাছে নিয়মিত জল দেওয়া দরকার। গাছটি মাটিতে থাকলে বেশি জলের প্রয়োজন হয় না কিন্তু টবে থাকলে মাটি পরীক্ষা করে তবেই জল দিতে হবে। টবে জল জমলে গাছ মাড়া যেতে পারে, তাই বর্ষাকালে টবে জল জমতে দেওয়া যাবে না। বর্ষাকালে ১৫ দিন গাছের গোড়ায় কিছু পরিমান ছত্রাকনাশক ছিঁটিয়ে দেবেন।

আদ্রতা ও তাপমাত্রা:-

মাঝারি আর্দ্রতা এবং কম আর্দ্রতা যুক্ত স্থানে গাছটি সব থেকে ভাল বেড়ে ওঠে। অপরাজিতা ফুল গাছটি ৫০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় বেঁচে থাকে। তবে এর ওপরে তাপমাত্রা উঠে গেলে গাছটি মাড়া যায়। ঝলমলে আবহাওয়া এবং ২২ থেকে ৩২ ডিগ্রি তাপমাত্রায় গাছে ফুল, ফল আসে।

[আরও পড়ুন: লন্ঠন জবা গাছের পরিচর্যা | How to grow and care Lanthan jaba]

পরিচর্যা:-

অপরাজিতা গাছে কমবেশি সারা বছর গাছে ফুল ফুটলেও মার্চ মাস থেকে অক্টোবর, নভেম্বর মাসে সব থেকে অধিক ফুল ফোঁটে। তাই ফুলের মরসুম শুরু হওয়ার আগে থেকে গাছের যত্ন এবং পরিচর্যা আরম্ভ করে দিতে হবে, যত দিন না গাছের ফুল শেষ হচ্ছে।

নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী মাস গাছের ডরম‍্যান্সি পিরিয়ড, এই সময়ে গাছের খাবার সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে হবে। শুধু জল দিয়ে গাছ বাঁচিয়ে রাখতে হবে এবং প্রয়োজনমতো কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। ডরম‍্যান্সি পিরিয়ড শেষ হবার কিছু দিন পরে গাছটির শুকনো ডাল-গুলি ছেটে দিতে হবে, দেখবেন কিছুদিনের মধ্যই নতুন নতুন কুঁসি বার হতে শুরু করেছে। প্রয়োজনে এই সময়ে টবের মাটি পরিবর্তন ও শিকড় কাঁটাই-ছাঁটাইও সম্পূর্ণ করে ফেলতে পারেন। গরমের মাঝামাঝি সময় থেকে গাছে একটি দুটি করে কুঁড়ি আসতে শুরু করে।

অপরাজিতা গাছের জন্য সব থেকে ভাল খাবার জৈব সার, এটির ব্যাবহারে গাছ বেশ দিন স্থায়ী হয়, গাছে ফুলের পরিমান বৃদ্ধি পায়, কুঁড়ি ঝড়া রোধ হয়। অনেক সময় আপনি দেখেছেন গাছের পাতা হলুদ হয়ে যেতে,যেটি ম্যাগনেশিয়ামের অভাবে হয়ে থাকে সেটিও হবে না। ১০ থেকে ১২ ইঞ্চি টবের গাছের জন্য দুমুঠো পরিমাণ জৈব সার সাথে হাঁড় গুড়ো, শিং কুঁচি ,পাতাপচা সার, সরিষার খোল এবং অনুখাদ্য প্রভৃতি মিশিয়ে প্রতি দুমাস অন্তর ব্যাবহার করতে হবে। অনুখাদ্য গাছের জন্য একটি প্রয়োজনীয় উপাদান বিস্তারিত জানতে নিচের দেওয়া লিঙ্কে ক্লিক করুন।

[আরও পড়ুন: এলামুন্ডা গাছের সম্পূর্ণ পরিচর্যা | Complete Care Of Allamanda Plant]

কীটনাশক প্রয়োগ:-

কয়েকটি কীটপতঙ্গ এবং রোগ রয়েছে যা গাছটিকে প্রভাবিত করতে পারে যার মধ্যে এফিড, মাকড়সা, শুঁয়োপোকা,ঘাসফড়িং ইত্যাদি। প্রতি সপ্তাহে নিম তেল ব্যবহার করে এফিড এবং মাকড়সার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণ করা যায়। হাত দিয়ে বড় পোকামাকড় তুলে নিন এবং আক্রান্ত পাতা ছিঁড়ে ফেলুন।

[আরও পড়ুন: Micro Nutrients বা অনুখাদ্য গাছের জন্য কতটা প্রয়োজনীয়]

[আরও পড়ুন: হাড়ের গুঁড়ো বা Bone Meal কি ?]

[আরও পড়ুন: শিং কুচি বা Horn meal কি ?]

[আরও পড়ুন: Micro Nutrients বা অনুখাদ্য গাছের জন্য কতটা প্রয়োজনীয়]


প্রিয় পাঠক, এই প্রতিবেদনটি পঠন করবার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার মতো পাঠকের সহযোগিতা “ক্রিয়েটিভিটি গার্ডেনিং” সর্বদা কার্ম করে। গাছই আমাদের একমাত্র সম্পদ যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষিত করতে পারে, বাঁচিয়ে রাখতে পারে। নিঃস্বার্থে গাছ ভালবাসুন, সকলকে গাছ লাগাতে উৎসাহিত করুন।

আপনাদের যদি এই বিষয়ে কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সের মাধ্যমে আমাকে জানাতে জানাবেন। সেগুলোর সমাধান করাবার আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব। আপনার মূল্যবান রেটিং দিয়ে উৎসাহিত করুন, সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, সবাই খুব ভালো থেকো নমস্কার।

3.2/5 - (5 votes)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *