নীলঘন্টা গাছের পরিচর্যা | How To Care Thunbergia Erecta Flower Plant

Last updated on August 24th, 2023 at 08:13 pm

নীল ফুলের তালিকায় আছে আমাদের সকলের পরিচিত নীলমণি বা নীলঘন্টা। অনেকে আবার নীলকান্ত-ও বলে থাকে। নীলঘন্টা অনেকটা ঘন্টা আকৃতির ন্যায় দেখতে বলে এর নাম নীলঘন্টা।

নীলঘন্টা গাছের পরিচর্যা | How To Care Thunbergia Erecta Flower Plant ,নীলঘন্টা যে শুধু নীল রঙের হয় সেরকম নয়,সাদা, নীল, বেগুনী রঙের হয়ে থাকে। তবে আমাদের এই গ্রীষ্মমন্ডলীয় স্থানে নীল ও বেগুনি রঙটাই বেশি দেখা যায়।

নীলঘন্টা Acanthaceae পরিবারের অন্তর্গত, এর বৈজ্ঞানিক নাম Thunbergia erecta .অন্যান্য নামের মধ্যে bush clock vine, king’s mantle উল্লেখযোগ্য। আজকে এই প্রতিবেদন থেকে আপনি নীলঘন্টা ফুল গাছ প্রতিস্থাপন পদ্ধতি ও পরিচর্যা সম্পর্কে জানতে পারবেন।

নীলঘন্টা গাছের পরিচর্যা | How To Care Thunbergia Erecta Flower Plant

Characteristics (বৈশিষ্ট্য):-

গাছটি বহুবর্ষজীবী অর্ধ লতানো বা আরোহী উদ্ভিদ। গাছটি সাধারনত ৪-৬ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। ফুলের ভিতরের অংশ হালকা হলুদাভ, গাছের পাতা গাঢ় সবুজ রঙের ও ত্রিকোনাকৃতি বিশিষ্ট, তবে বেশ কিছু গাছের পাতা লম্বাটে আকৃতিরও হয়ে থাকে। শীতকাল ছাড়া প্রায় সারা বছর গাছে ফুল ফুটে , তবে বসন্তের শুরু থেকে গরমের মাঝামাঝি সময়ে অধিক ফুল ফোঁটা , দ্বিতীয় বার ফুল ফোঁটে শরৎ এর মরসুমে। নীলঘন্টা সরাসরি মাটিতে বা টবে সুন্দর ভাবে বেড়ে ওঠে। ডাল কাটিং এর মাধ্যমে নীল ঘন্টা ফুলের বংশ বিস্তার ঘটে থাকে।

নীলঘন্টা গাছের পরিচর্যা | How To Care Thunbergia Erecta Flower Plant
নীলঘন্টা গাছের পরিচর্যা | How To Care Thunbergia Erecta Flower Plant

Place Selection (স্থান নির্বাচন):-

নীলঘন্টা গাছ রৌদ ভীষন পছন্দ করে, মোটামুটি দিনে ৬ থেকে ৮ ঘটা সূর্যের আলো পাই তেমন স্থানে গাছ প্রতিস্থাপন করা উচিত, এতে গাছের বাড়বাড়ন্ত ভালো হয় এবং রোগে আক্রান্ত কম হয়। গাছ মাটিতে বা টবে প্রতিস্থাপন করবার ৬ থেকে ৭ মাসের মধ্যই ফুল আসে। ‘নীলঘন্টা’ সুনিষ্কাশিত যে কোনো ধরনের মাটিতেই ভাল হয়, তবে খেঁয়াল রাখাতে হবে গরমকালে গাছের মাটি যেন শুঁকিয়ে না যায় কারন এই গাছে জলের চাহিদা বেশি থাকে। গাছটি যদি টবে প্রতিস্থাপন করতে চান, তাহলে গাছটির চাহিদা অনুযায়ী খাবার,আলো,জল, কীটনাশাক এর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলি খেয়াল করতে হবে।

Soil Preparation (মাটি প্রস্তুত):-

যে কোন গাছের ফুল, ফল নির্ভর করে মাটির উপর, মাটি একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গাছটি মাটিতে প্রতিস্থাপনের পূর্বে কিছু পরিমান গোবর সার, একমুঠো সরিষার খোল,একমুঠো হাঁড়গুড়ো, একমুঠো শিংকুঁচি, একমুঠো নিমখোল এবং অল্প পরিমান অ্যামোনিয়াম সালফেট মাটির সাথে ভালকরে মিশিয়ে ১৫ থেকে ২০ দিনের জন্য ডেকে রেখে দিতে হবে, তার পরে গাছটিকে প্রতিস্থাপন করতে হবে।

Pot Selection(টব নির্বাচন):-

নীলঘন্টা বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ তাই ভালো হয় বড় টব নির্বাচন করলেI প্রথম অবস্থাতে গাছটি ৬ ইঞ্চি টবে প্রতিস্থাপন করলেও এক থেকে দেড় বছর পারে ৮ ইঞ্চি অথবা ১০ ইঞ্চি টবে স্থানন্তিরিত করতে হবে। বড়ো পাত্র বা টব নিলেই যে প্রচুর ফুল হবে সে-রকম নয়। নীলঘন্টা গাছের পরিচর্যা |

Substitution Method (প্রতিস্থাপন পদ্ধতি):-

টব নির্বাচন করবার সময় টবের তলানিতে এবং পাশে অবশ্যই যেন ছিদ্র থাকে, তা না হলে বাড়তি জল টবে জমে গাছটি মাড়া যেতে পারে। তাই বেশি ছিদ্র যুক্ত টব দেখে নিতে হবে, এবং প্লাস্টিকের টব ব্যাবহার না করাই ভাল এতে জল নিকাশি ব্যাবস্থা ভাল হয় না।

➧ প্রথমে টবের ছিদ্র গুলোকে ইটের টুকরো/ টব ভাঙা টুকরো দিয়ে আটকে দিতে হবে।

➧ ছিদ্র গুলোকে আটকে দেওয়ার পর কিছু বালি-নুড়ি টবের মধ্যে বিছিয়ে দিয়ে এক ইঞ্চি বেড তৈরি করতে হবে যাতে অতিরিক্ত জল ড্রেনেজ সিস্টেম থেকে টবের বাইরে বেরিয়ে যাবে।

➧টবের ড্রেনেজ সিস্টেম করার পর কিছু পরিমান মাটি টবের মধ্য দিয়ে একটি লেয়ার তৈরী করে দিতে হবে, তা হলে মাটির মধ‍্যে থাকা বাতাস বেরিয়ে যাবে ফলে গাছের শিকড় পচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।

➧ এর পর টবে অল্প করে মাটি দিয়ে গাছটা টবের ঠিক মাঝখানে বসিয়ে দিতে হবে।

➧তারপর যতটা মাটি প্রয়োজন ততটা মাটি টবে চেপে চেপে দিতে হবে। মাটি দেওয়ার সময় অবশ‍্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন টবের ওপর থেকে 2 ইঞ্চি ফাঁকা থাকে।

Care (পরিচর্যা):-

নীলঘন্টা গাছের পরিচর্যা | How To Care Thunbergia Erecta Flower Plant : গাছটি প্রতিস্থাপনের পর এক সপ্তাহ জন্য একটু ছায়া স্থানে রেখে দিতে হবে। এক সপ্তাহ পর সকালের হালকা রোদে পায় তেমন স্থানে টবটি রাখতে হবে। তবে বর্ষাকালে প্রতিস্থাপন করলে ছায়া স্থানে রাখবার প্রয়োজন নেই। প্রতিস্থাপনের এক থেকে দেড় মাসের মধ্য কোন ধরনের জৈব বা রাসায়নিক সার প্রয়োগ করবেন না, দুমাস পর থেকে কিছু পরিমান জৈব প্রয়োগ করবেন। চারাগাছ প্রতিস্থাপনের ৬ থেকে ৭ মাসের মধ্যই ফুল আসে।

পরিচর্যার মূল আলোচনায় যাওয়ার আপনাকে জানতে হবে এই গাছের flowering season সম্পর্কে। মার্চ মাসের শেষ থেকে অক্টোবর, নভেম্বর মাস পর্যন্ত গাছে প্রচুর ফুল ফোঁটে, তাই গাছে যখন ফুল আসতে শুরু করবে তার আগে থেকে গাছের যত্ন এবং পরিচর্যা শুরু করে দিতে হবে , তা না হলে অনেক অংশেই ফুল কমে যাবে। অন্যান্য টবের গাছের ক্ষেত্রে বছরে এক বার শেঁকড় কাঁটাই- ছাঁটাই করলেই হয় কিন্তু এই এই গাছের ক্ষেত্রে বছরে দুবার শেকড় কাঁটাই-ছাঁটাই ও মাটি পরিবর্তন করতে হবে তা না হলে আপনি কখনোই মনের মতো ফুল পাবেন না।

Light (আলো):-

গাছটি বেড়ে ওঠার জন্য বেশি আলোর প্রয়োজন হয় না, অল্প ছায়াযুক্ত স্থানে গাছটি সুন্দর ভাবে বেড়ে ওঠে। কম আলোতেও নীলঘন্টা গাছে ফুল ফোঁটে, তবে দিনে ৪ থেকে ৬ ঘন্টা সূর্যের আলোতে রাখলে ভাল হয়।

Watering (জলপ্রয়োগ):-

নীলঘন্টা গাছটি খরা, জল সহনশীল উদ্ভিদ, সহজে মাড়া যায় না। তবে তীব্র রৌদে, নতুন চারা গাছে নিয়মিত জল দেওয়া দরকার। গাছটি মাটিতে থাকলে বেশি জলের প্রয়োজন হয় না কিন্তু টবে থাকলে গরমকালে প্রতিদিন জল হিতে হবে জল দিতে হবে। টবে বেশ জল দিলে, বা টবে জল জমলে সহজে মাড়া যায় না।

Temperature (তাপমাত্রা):-

তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে হলে গাছ ছায়াযুক্ত জায়গায় রাখার ব্যাবস্থা করতে হবে। এবং শীতের সময়ে গাছগুলিকে সরাসরি সূর্যের আলোতে রাখতে হবে।

Humidity (আদ্রতা):-

সব ধরনের আর্দ্রতা যুক্ত স্থানে গাছটি বেড়ে ওঠে।

Fertilizer (সারপ্রয়োগ):-

চারা গাছ প্রতিস্থাপনের ১ থেকে ২ মাসের মধ্য কোন জৈব বা রাসায়নিক সার প্রয়োগ না করাই ভাল, কিছু মাস পর থেকে অল্প জৈব সার দিলে ভালো হয়।শীতকালে এই গাছের বিশেষ খাবারের প্রয়োজন হয় না কিন্তু গরমের শুরু থেকে এদের খাবারের চাহিদা বেশি থাকে কারণ এ সময় গাছে প্রচুর কুঁড়ি আসতে শুরু করে। সঠিক যত্ন এবং পরিচর্যা করলে টানা শীতের আগে পর্যন্ত এই গাছ থেকে প্রচুর ফুল পাওয়া যায়। গরমের মরসুমে এবং বর্ষার মরসুমে গাছ ভর্তি ফুল পেতে চাইলে প্রতি মাসে একবার করে অল্প পরিমাণ সার প্রয়োগ করতে হবে।

জৈব সারের মধ্য গোবর সার,পাতাপচা, ডিমের খোসা, কলার খোসা, হাঁড়গুড়ো, শিংকুঁচি, হাঁফ চামচ সরষের খোল, Micronutrients, প্রভৃতি একত্রে মিশিয়ে ব্যাবহার করা যেতে পারে। প্রত্যেক মাসে একবার করে এটি ব্যাবহার করলে অন্য কোন সারের প্রয়োজন হবে না এতে গাছ সারা বছর সুস্থ এবং সতেজ থাকবে এবং গাছে ফুলের পরিমান অনেক গুন বৃদ্ধি পাবে। অথবা গাছ বড় হয়ে গেলে প্রতি এক মাস অন্তর ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি টবের জন্য ৮ থেকে ১৫ টি ডি.এ.পি দানা ছিটিয়ে দিতে হবে এবং ডি.এ.পি ব্যাবহারের ১৫দিন পর এক চামচ পটাশ সার গোড়া থেকে দূরে টবের মাটিতে দিয়ে দিতে পারেন। রাসায়নিক সার ব্যাবহারের ১৫- ২০ দিন পর যে কোন কম্পোস্ট সার মাটিতে দেওয়া যেতে পারে। মনে রাখবেন প্রতি এক থেকে দেড় মাস অন্তর অনুখাদ্য বা Micronutrients ব্যাবহার করতেই হবে।

[আরও পড়ুন: Top 10 BEAUTIFUL BLUE FLOWERS CARE WITH NAMES & PICTURES]

Pruning (ডালপালা কাঁটাই- ছাঁটাই):-

শীতের এবং বর্ষার মাঝামাঝি সময়ে ডালগুলি বেশি বড় হলে কাঁটাই- ছাঁটাই সম্পূর্ণ করে ফেলতে হবে। যদি টবের মাটি পরিবর্তনের দরকার পড়ে তবে ডালপালা কাঁটাই- ছাঁটাই করবার সময় করে নিন।

Breeding (বংশবিস্তার):-

নীলঘন্টা গাছের চারা তৈরী করা হয় বা বংশবিস্তার ঘটানো হয় কাটিং পদ্ধতির মাধ্যমে এবং বীজ থেকে। কাটিং থেকে চারা তৈরীর আদর্শ সময় জুলাই থেকে আগষ্ট এবং ফেব্রুয়ারী থেকে মার্চ।

Insect Control (রোগ ও পোকামাকড়ের দমন):-

নীলঘন্টা গাছে রোগ ও পোকামাকড়ের উপদ্রব হয় না বললেই চলে।


প্রিয় পাঠক, এই প্রতিবেদনটি পঠন করবার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার মতো পাঠকের সহযোগিতা “ক্রিয়েটিভিটি গার্ডেনিং” সর্বদা কার্ম করে। গাছই আমাদের একমাত্র সম্পদ যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষিত করতে পারে, বাঁচিয়ে রাখতে পারে। নিঃস্বার্থে গাছ ভালবাসুন, সকলকে গাছ লাগাতে উৎসাহিত করুন।

আপনাদের যদি এই বিষয়ে কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সের মাধ্যমে আমাকে জানাতে জানাবেন। সেগুলোর সমাধান করাবার আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব। আপনার মূল্যবান রেটিং দিয়ে উৎসাহিত করুন, সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, সবাই খুব ভালো থেকো নমস্কার।

4/5 - (1 vote)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *