টব ভর্তি প্রচুর ফুল পেতে কামিনী গাছের বিশেষ পরিচর্যা | 5 Top Tips To Get Maximum Flowers On Madhu Kamini

Last updated on September 21st, 2022 at 11:59 am

কামিনী ফুলের (Kamani Flower) কোনো স্থানীয় নাম নেই। এর বৈজ্ঞানিক নাম Murraya Paniculata। গরমের সময়ে দু একটি ফুল হলেও বর্ষাকালে গাছে প্রচুর ফুল ফোটে। এটি Rutaceae পরিবারের একটি ফুল।

সামান্য যত্নেও টব ভর্তি প্রচুর ফুল পেতে কামিনী গাছের বিশেষ পরিচর্যা | 5 Top Tips To Get Maximum Flowers On Madhu Kamini শুধু বাগান সাজাতে নয়, বাণিজ্যিক ক্ষেত্রেও এই ফুলের চাহিদা যথেষ্ট রয়েছে।

টব ভর্তি প্রচুর ফুল পেতে কামিনী গাছের বিশেষ পরিচর্যা | 5 Top Tips To Get Maximum Flowers On Madhu Kamini

কামিনীর একটি আশ্চর্য বিষয় লক্ষণীয়। ফুল যখন ফোটে তখন সারাদেশের সব গাছে একই দিন ফোটে, অবাক করা যোগাযোগ। অন্যান্য গাছের ক্ষেত্রে অবশ্য কিছুটা হেরফের লক্ষ্য করা যায়। তখন পরিপূর্ণ পুষ্পিত কামিনী অসংখ্য ফুলের ভারে নুয়ে পড়ে। সুগন্ধি ছড়িয়ে দেয় বাতাসে। কামিনীর অল্পবয়সী গাছ যেমন আছে তেমনি পরিণত গাছও আছে। এ গাছ এখনও ততটা দুর্লভ হয়ে ওঠেনি। কিন্তু প্রতিনিয়তই গাছগুলো মানুষের হিংস্রতার শিকার হচ্ছে। ফুল বিক্রেতারা ফুলের ঝুড়ি সাজাতে কামিনীর ডালপালা ব্যবহার করে। প্রায় সব পার্ক ও উদ্যানে এমনকি কারও কারও ব্যক্তিগত বাগানেও কামিনী চোখে পড়ে।

স্থান নির্বাচন:-

গাছটি মোটামুটি দিনে ৬ থেকে ৮ ঘন্টা রৌদ পাই তেমন স্থানে প্রতিস্থাপন করা উচিত, এতে গাছের বাড়বাড়ন্ত ভালো হয় এবং রোগে আক্রান্ত কম হয়। গাছটি কে মাটিতে বসানোর ৭-৮ মাস পরেই ফুল আসা শুরু হয়। কামিনী সুনিষ্কাশিত বেলে-দোঁয়াশ মাটিতেই ভাল হয়।

টব নির্বাচন ও মাটি প্রস্তুত:-

কামিনী বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ তাই ভালো হয় বড় গামলা জাতীয় টব নির্বাচন করলেI টব ভর্তি প্রচুর ফুল পেতে কামিনী গাছের বিশেষ পরিচর্যা করতে হবে, গাছ টবে প্রতিস্থাপন করলে ১০  ইঞ্চি অথবা ১২ ইঞ্চি টব নির্বাচন করতে হবে। গাছটি টবের তুলনায় মাটিতে খুব ভালো হয় প্রথমেই বলেছিলাম তাই গাছটি টবে বড় হওয়ার জন্য প্রচুর পরিমাণে খাদ্যের প্রয়োজন হয়। কামিনী গাছ প্রতিস্থাপনের জন্য উর্বর দোঁয়াশ মাটি সব থেকে আদর্শ। এই গাছটি প্রতিস্থাপনের পূর্বে দু ভাগ মাটি নিতে হবে আর নিতে হবে একভাগ জৈব সার (এক বছরের পুরনো গোবর সার/ পাতা পঁচা/ভার্মিকম্পোস্ট), আর নিতে হবে হাঁড় গুড়ো, শিং কুঁচি এবং পরিমাণ মতো নিম খোল দ্বারা মাটি প্রস্তুত করে গাছটি টবে প্রতিস্থাপন করতে হবে। টবে মাটিতে ময়েশ্চার ধরে রাখার জন্য মাটির সাথে কিছু পরিমান কোকোপিট অথবা কাঠের গুঁড়ো ব্যবহার করতে পারেন।

[আরও পড়ুন: টেকোমা গাছের প্রতিস্থাপন এবং পরিচর্যা যে ভাবে করবেন | Tecoma Plant Care]

টব ভর্তি প্রচুর ফুল পেতে কামিনী গাছের বিশেষ পরিচর্যা | 5 Top Tips To Get Maximum Flowers On Madhu Kamini
টব ভর্তি প্রচুর ফুল পেতে কামিনী গাছের বিশেষ পরিচর্যা | Kamini Flower

উপযুক্ত জমি ও মাটিঃ

যে কোন গাছ রোপণ/ প্রতিস্থাপনের পূর্বেই সঠিক জায়গা ও মাটি নির্বাচন করা উচিত। পর্যাপ্ত সূর্যালোক পায় এবং যেখানে জল না জমে এমন উঁচু জায়গা নির্বাচন করে জায়গাটি ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। সঠিক মাটি নির্বাচনের জন্য উপরের বিশেষ বৈশিষ্ট্য থেকে এ বিষয়ে ধারনা নেয়া যেতে পারে। টবে রোপণ করা গাছের ক্ষেত্রে প্রতি সপ্তাহে টবের মাটি খুঁচিয়ে আলগা করে দেয়া ভাল, এতে গাছের শিকড় সহজে বাড়বে।

[আরও পড়ুন: এলামুন্ডা গাছের সম্পূর্ণ পরিচর্যা | Complete Care Of Allamanda Plant]

জল প্রয়োগ:-

গাছের গোড়ায় অতিরিক্ত জল প্রয়োগ এবং অতি কম দেওয়া উভয়ই গাছের জন্য ক্ষতিকর। মাত্রারিক্ত জল দেয়ার ফলে বিভিন্ন রোগে গাছ আক্রান্ত হয়, এমনকি মারা যায়। এ জন্য গাছের গোড়ায় জল দেওয়ার পূর্বে পর্যবেক্ষণ করে, তবেই জল প্রয়োগ করবেন, গোড়া ভেজা থাকলে কোনো মতেই তাতে জল দেয়া যাবে না।

বি:দ্র:—টবে মাটি দেওয়ার সময় অবশ‍্যই খেয়াল রাখতে হবে যাতে টবের ওপর 2 ইঞ্চি ফাঁকা জায়গা থাকে।

creativity gardening
কামিনী গাছের বিশেষ পরিচর্যা

কামিনী ফুল গাছ মূলত ক্রান্তীয় এশিয়া, ভারত, মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার প্রজাতি। চিরসবুজ ছোটখাটো ধরনের গাছ, ৩ থেকে ৪ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। কখনও কখনও গুল্ম আকৃতিরও হতে পারে। যৌগপত্র ১-পক্ষল, পত্রিকা ৫ থেকে ৯টি, সাড়ে তিন সেন্টিমিটার লম্বা ও লেবুগন্ধী। গ্রীষ্ম ও বর্ষায় সারা গাছ সাদা ও সুগন্ধি ফুলের থোকায় ভরে ওঠে। ফুল ২ সেন্টিমিটার চওড়া, ৫টি খোলা পাপড়ি, বাসি হলে ঝরেপড়ে। ফল ছোট ও ডিম্বাকার, পাকলে লাল-কমলা রঙের হয়। কিছুটা বড় আকারের পাতা ও ফুলের থোকার আরেকটি ভারতীয় প্রজাতি আছে।

প্রথাগতভাবে, কামিনী বেদনানাশক হিসেবে ঐতিহ্যগত ঔষধ এবং কাঠের জন্য ব্যবহার করা হয়। কামিনীর পাতার অশোধিত ইথানলীয় সার, ডায়রিয়া এবং অন্যান্য জ্বলনশীল ব্যথার নিরাময় হিসেবে কাজ করে।

[আরও পড়ুন: প্রচুর ফুল পেতে বেলি ফুল গাছের যত্ন যে ভাবে করবেন | Mogra Plant Care]

সার প্রয়োগ:-

টবে গাছ প্রতিস্থাপনের ১ থেকে ২ মাসের মধ্য কোন জৈব বা রাসায়নিক সার প্রয়োগ না করাই ভাল, কিছু মাস পর থেকে অল্প জৈব সার দিলে ভালো হয়।শীতকালে এই গাছের বিশেষ খাবারের প্রয়োজন হয় না কিন্তু গরমের শুরু থেকে এদের খাবারের চাহিদা বেশি থাকে কারণ এ সময় গাছে প্রচুর কুঁড়ি আসতে শুরু করে। সঠিক যত্ন এবং পরিচর্যা করলে টানা বর্ষা পর্যন্ত এই গাছ থেকে প্রচুর ফুল পাওয়া যায়। গরমের মরসুমে এবং বর্ষার মরসুমে গাছ ভর্তি ফুল পেতে চাইলে প্রতি মাসে একবার করে অল্প পরিমাণ সার প্রয়োগ করতে হবে।

জৈব সারের মধ্য গোবর সার / পাতাপচা, ডিমের খোসা,কলার খোসা, হাঁড় গুড়ো, শিং কুঁচি, হাঁফ চামচ সরষের খোল, Micronutrients, প্রভৃতি একত্রে মিশিয়ে ব্যাবহার করা যেতে পারে। প্রত্যেক মাসে একবার করে এটি ব্যাবহার করলে অন্য কোন সারের প্রয়োজন হবে না এতে গাছ সারা বছর সুস্থ এবং সতেজ থাকবে এবং গাছে ফুলের পরিমান অনেক গুন বৃদ্ধি পাবে। অথবা গাছ বড় হয়ে গেলে প্রতি এক মাস অন্তর ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি টবের জন্য ৮ থেকে ১৫ টি ডি.এ.পি দানা ছিটিয়ে দিতে হবে এবং ডি.এ.পি ব্যাবহারের ১৫দিন পর এক চামচ পটাশ সার গোড়া থেকে দূরে টবের মাটিতে দিয়ে দিতে পারেন। রাসায়নিক সার ব্যাবহারের ১৫- ২০ দিন পর যে কোন কম্পোস্ট সার মাটিতে দেওয়া যেতে পারে।

[আরও পড়ুন: গাছ ভর্তি প্রচুর ফুল পেতে জবা গাছের যত্ন যে ভাবে করবেন | Hibiscus Plant Care]

বেশি ফুল পাবার জন্য ১ লিটার জলে ২৫০ গ্রাম সরিষার খোল ৩ থেকে ৪ দিনের জন্য ভিজিয়ে রাখে হবে , গাছে খোঁল জল গাছে দেওয়ার ২৪ ঘটা আগে ১০ ইঞ্চি থেকে ১২ ইঞ্চি টবের জন্য ১২ থেকে ১৫টি (DAP/TSP) দানা জলের সাথে বা খোল জলে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। তবে তীব্র গরমে গাছের গোড়ায় সরাসরি সরিষার খোল ব্যাবহার করবেন না। এছাড়াও সারা বছর NPK 10:26:26 হাফ চামচ করে মাসে একবার ব্যাবহার করা যেতে পারে এতে গাছের ফুল ও হবে এবং গাছের কান্ড ও পাতার বিকাশ হবে | পটাসিয়াম নাইট্রেট ( 13:00:45) হাফ চামচ করে দু মাসে একবার ব্যাবহার করতে হবে এতে গাছ রোগ আক্রান্ত কম হবে এবং কুঁড়ি ঝরা ও রোধ হবে। প্রত্যেক দেড় দু মাস অন্তর এক চামচ গুঁড়ো অনুখাদ্য প্রয়োগ করতে হবে। এভাবে সার প্রয়োগ করলে টানা বর্ষা পর্যন্ত উন্নত মানের ফুল সরবরাহ অব্যাহত থাকে।

বংশবিস্তার:-

কামিনী গাছের চারা তৈরী করা হয় বা বংশবিস্তার ঘটানো হয় গুটি কলম বা বীজের মাধ্যমে। গুটি কলম থেকে চারা তৈরীর আদর্শ সময় জুলাই থেকে আগষ্ট এবং ফেব্রুয়ারী থেকে মার্চ। এবং বীজ থেকে চারা তৈরীর আদর্শ সময় মার্চ মাস থেকে নভেম্বর।

কামিনী গাছের প্রচলিত নাম:

NamePositionCommon Name
কামিনীবাংলায়Orange Jessamine
कामिनीহিন্দিOrange Jessamine
Kemuningইন্দোনেশীয়Orange Jessamine
Kamini kusumমণিপুরীOrange Jessamine

FAQ [Frequently Asked Questions]

কামিনী গাছ দ্রুত বেড়ে ওঠার জন্য কি সার প্রয়োগ করা উচিত ?

কামিনী গাছ দ্রুত বৃদ্ধির জন্য, উর্বর, সুনিষ্কাশিত মাটিতে এমন জায়গায় রোপণ করুন যাতে দিনে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা পূর্ণ সূর্যের আলো পায় বা তার বেশি পায়। গরমের সময়ে দিনে দু বেলা জল দিন, মাটি আর্দ্র রাখুন এবং প্রতি মাসে একবার সার দিন।

কামিনী গাছ কি সরাসরি সূর্যের আলো পছন্দ করে ?

প্রতিদিন ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা পূর্ণ সূর্যের আলো পায় বা তার বেশি সরাসরি সূর্যালোক পায়, তেমন স্থানে গাছ রাখত হবে। কামিনী গাছের জন্য উপযুক্ত তাপমাত্রা ২২ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

গাছে ফুল আনতে কোন সার ব্যাবহার করা উচিত ?

গাছে ফুল আসার আগে থেকে পটাসিয়াম এবং ফসফরাস সমৃদ্ধ সার মাসে একবার করে ব্যাবহার করতে হবে। বিশেষ করে বসন্তের শুরু থেকে।

প্রিয় পাঠক, এই প্রতিবেদনটি পঠন করবার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার মতো পাঠকের সহযোগিতা “ক্রিয়েটিভিটি গার্ডেনিং” সর্বদা কার্ম করে। গাছই আমাদের একমাত্র সম্পদ যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কে সুরক্ষিত করতে পারে, বাঁচিয়ে রাখতে পারে। নিঃস্বার্থে গাছ ভালোবাসুন, সকলকে গাছ লাগাতে উৎসাহিত করুন।

আপনার মূল্যবান রেটিং দিয়ে উৎসাহিত করুন

5/5 - (4 votes)