রাতের রানী নাইট কুইন গাছের পরিচর্যা | How To Care For Queen Of The Night Flower

Last updated on August 12th, 2022 at 11:50 pm

নিশিপদ্ম’ বা ‘নাইট ক‍্যুইন’ নামটি শুনে সহজেই অনুমান করা যায় যে রাতের আঁধার আলো করে ফোটে এই ফুলটি। রাতের অন্ধকারে নিশিপদ্মের অপূর্ব সৌন্দর্য, সৌরভ,প্রস্ফুটন সব মিলে ফুলটিকে দিয়েছে রাণীর আসন, তাই তো এর অপর নাম ‘নাইট কুইন’ বা ‘রাত কী রানি’ নামকরণ ও সার্থক।

আজকের এই প্রতিবেদন থেকে আপনি জানতে পারবেন রাতের রানী নাইট কুইন গাছের পরিচর্যা | How To Care For Queen Of The Night Flower সম্পর্কে। প্রত্যক বাগানিদের কাছে নাইট কুইন বা নিশিপদ্ম খুবই পছন্দের গাছ।

রাতের রানী নাইট কুইন গাছের পরিচর্যা | How To Care For Queen Of The Night Flower

এই ফুলকে অনেকেই নিশিপদ্ম বা নিশিগন্ধা নামে জানেন। নিশিপদ্ম সৌভাগ‍্যের প্রতীক বলা হয়। মনে করা হয় যে বাড়ীতে ফুলটি ফোটে তাঁর বাড়ীতে সৌভাগ‍্য বয়ে আনে। সন্ধ‍্যা থেকেই এর ফুল ফোটা শুরু হয়। একসময় সবগুলো পাপড়ি ছড়িয়ে অপার সৌন্দর্য বিলিয়ে দেয় চারদিকে। ক‍্যাকটাস জাতীয় এই গাছের আদি নিবাস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চল ও মেক্সিকো।তবে ভারতবর্ষের উত্তর-পূর্ব পার্বত্য অঞ্চলেও এই ফুলের বিচরণ অবাধ। ফুলপ্রেমীদের হাত ধরে এই ফুল আমাদের দেশে বিস্তার লাভ করেছে। এর ইংরাজী নাম Dutchmans pipe ও Queen of The Night.উদ্ভিদ তাত্ত্বিক নাম Epiphyllum oxypetalum।

রাতের রানী নাইট কুইন গাছের পরিচর্যা | How To Care For Queen Of The Night Flower
রাতের রানী নাইট কুইন গাছ পরিচর্যা

নিশিপদ্ম বা নাইট ক্যুইনকে সৌভাগ্যের প্রতীক বলে মনে করা হয়, যে বাড়িতে ফুলটি ফোটে তাঁর বাড়িতে সৌভাগ্য বয়ে আনে। সন্ধ্যা পর থেকে ফুলগুলি ফোটা শুরু হয়,এক সময় সবগুলো পাপড়ি ছড়িয়ে অপার সৌন্দর্যে বিলিয়ে দেয় এই ফুলগুলি। তবে গাছ লাগালেই সহজে গাছ থেকে ফুল পাওয়া যায় না। অপেক্ষা করতে হয় বছরের পর বছর। আমি নার্সারি থেকে একটা ছোট গাছ নিয়ে এসে প্রতিস্থাপন করেছিলাম,প্রতিস্থাপনের চার বছর পরে গাছে ফুল আসা শুরু হয়েছে, সুতরাং বুঝতেই পারছেন নাইট ক্যুইন গাছে ফুল ফোঁটা দৃশ্য দেখতে হলে আপনাকে কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হবে।

তবে এ ফুল ফোটার নির্দিষ্ট সময় আছে। সারা দিন কিন্তু ফুলের দেখা মেলে না। সন্ধ্যার পর থেকেই একটু একটু করে পাপড়ি মেলতে শুরু করে। যত রাত বাড়ে, তত পাপড়ি খোলে। এ ফুল ফোটা দেখার জন্য সবচেয়ে ভালো সময় রাত ১২টা থেকে ২টা। ফুল পুরো ফুটতে ফুটতে প্রায় মাঝ রাত। সকাল হলেই একেবারে কুঁকড়ে যায়।

বৈশিষ্ট্য(Characteristics):-

নিশিপদ্ম মূলত ক্যাকটাস প্রজাতির উদ্ভিদ। গাছটির সমস্ত অংশ মসৃণ আর কণ্টকহীন, পাতা নেই, রূপান্তরিত কান্ড পাতার কার্য সম্পাদন করে। গাছের গোড়া ডাঁটার মতো শক্ত। গাছের গোড়া থেকে অনেকগুলো শাখা-প্রশাখা বার হয়। গ্রীষ্মের শেষভাগে অর্থাৎ বর্ষার শুরু থেকে প্রায় নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত গাছে ফুল ফোটে, একপশলা বৃষ্টির ছোঁয়া পেলেই ফুলগুলি প্রস্ফুটন প্রস্তুতি শুরু হয়। যে রাতে ফুলগুলি ফুটবে তার ৭২ ঘন্টা আগে থেকেই কলিগুলো অদ্ভুত সাজে সেজে ওঠে, তখনই বোঝা যায় ওর ফোটার সময় আসন্ন। রাত যত বাড়ে, তত পাপড়ি খোলে। ফুল ফোটা দেখার জন্য সবচেয়ে ভালো সময় রাত ১২টা থেকে ২টা। তখন ফুলের পাঁপড়ি গুলো সেঁজে ওঠে আবার সকাল হওয়ার সাথে সাথে এই ফুল নিজেকে গুটিয়ে নিতে থাকে এবং একসময় ঝরে যায়।

এই ফুলগুলি শুধু সৌন্দর্যের প্রতীক তাই নয়, এর আরও অনেক বিশেষত্ব আছে যেমন ক‍্যান্সার,টিউমার ছাড়াও অ‍্যান্টিফাঙ্গাল, অ‍্যান্টিব‍্যাকটেরিয়াল, অ‍্যান্টিইনফ্ল‍্যামেটরি হিসাবে এর ব‍্যবহার প্রচুর। নিশিপদ্ম ফুলের রং সাদা। এই গাছ ছায়া ও রোদ দুটো স্থানেই সুন্দর ভাবে বেড়ে ওঠে। এই গাছের বংশবিস্তার করা হয় রূপান্তরিত কান্ড থেকে।

বংশবিস্তার (Breeding):-

পাথরকুঁচি গাছের বংশবিস্তার যেমন পাতা থেকে হয়, এ গাছও বংশবিস্তার সে ভাবেই হয়। এ গাছের রূপান্তরিত কান্ড যা পাতার ন্যায় দেখতে তা মাটিতে পুঁতে দিতে হবে। দিনকয়েক অপেক্ষা করলে দেখা যাবে শিকড় বার হতে শুরু করেছে। তখন সেই শিকড়সহ ছোট চারা গাছটিকে বড় টবে পরিবর্তন করতে হবে। গাছটির প্রতিস্থাপন থেকে ফুল আসতে সময় লাগবে ৩ থেকে ৪ বছর, তবে অনেকের ক্ষেত্রে আগে বা পরে হতে পারে। ব্রহ্মকমল এবং নিশিপদ্ম আলাদা।

চারা সংগ্রহ:-

স্থানীয় নার্সারিতে নিশিপদ্ম গাছের চারা কিনতে পাওয়া যায়। তবে কেনার সময়ে পরিষ্কার, রোগমুক্ত, নিখুদ চারা সংগ্রহ করতে হবে। কোনোরকম হলুদ বা মরচে ধরা দাগ যেন না থাকে, সেটা দেখে নিতে হবে।

স্থান নির্বাচন:-

নিশিপদ্ম গাছের জন্য উঁচু এবং ঢালু স্থান নির্বাচন করতে হবে, যেখানে সহজে জল দাঁড়াতে না পারে এবং রৌদ্রোজ্জ্বল স্থানে নিশিপদ্ম গাছের জন্য অনুকূল।

টব নির্বাচন:-

যেহেতু এটি পারমানেন্ট(স্থায়ী) গাছ এবং রুট বাউন্ড খুবভালোবাসে তাই গাছ প্রতিস্থাপনের জন‍্য সবসময় ১০ ইঞ্চি বা ১২ ইঞ্চি টব নির্বাচন করতে হবে, এর কম নয়। টব ছাড়াও মাটিতে গাছটি সুন্দর ভাবে বেড়ে ওঠে, তবে উভয় ক্ষেত্রেই গাছের জন্য উর্বর মাটি ও জল নিস্কাশনের সুবিধাযুক্ত রৌদ্রোজ্জ্বল স্থান নির্বাচন করতে হবে।

মাটি প্রস্তুত:-

এই গাছের জন‍্য উত্তম জলনিকাশী ব্যবস্থাযুক্ত ও বায়ুচলাচলের উপযোগী মাটি প্রস্তুত করতে হবে। এর জন‍্য দরকার দু ভাগ গার্ডেন সয়েল (বেলে দোঁয়াশ মাটি), এক ভাগ ভার্মিকম্পোস্ট বা একবছরের পুরোনো পচানো গোবর সার বা পাতাপচা সার এবং মাটির ময়েশ্চার ধরে রাখার জন‍্য এক ভাগ কোকোপিট। এর সাথে নিতে হবে ১০ ইঞ্চি টবের জন‍্য হাফ মুঠো হাড়গুঁড়ো, হাফ মুঠো শিংকুচি, এক চামচ ফসফেট এবং দু চামচ নিমখোল। এগুলিকে ভাল করে মিশিয়ে চারা গাছ প্রতিস্থাপন করতে হবে।

তবে সরাসরি মাটিতে বসালে, উপাদান গুলির সাথে দু চামচ সরিষার খোল মিশিয়ে ১৫ থেকে ২০ দিনের জন্য রেখে চারা গাছ প্রতিস্থাপন করা উচিত।

[আরও পড়ুন: Micro Nutrients বা অনুখাদ্য গাছের জন্য কতটা প্রয়োজনীয়]

আলো :-

এই গাছ ছায়া ও রোদ দুটো স্থানেই সুন্দর ভাবে বেড়ে ওঠে। তবে গরমের মরসুমে তীব্র রৌদ্রে গাছ না রাখায় ভাল, তাতে করে গাছ হলুদ হয়ে। গরমকালে গাছ বারান্দার বা সেডের নিচে রেখে দিতে হবে। কিন্তু একদম অন্ধকার জায়গায় না রাখাই ভালো। যেখানে সকালের হালকা রোদ পায় কিন্তু দুপুরের তীব্র রৌদ্র না পায় তেমন জায়গাতেই গাছটা রাখা ভালো। এটি ঘরের মধ্যে অথবা বারান্দার এক কোণে অথবা ব্যালকনিতে খুব সহজে গাছটি বেড়ে উঠতে পারে। যে ভাবে আমরা indoor plants এর পরিচর্যা করে থাকি, ঠিক সেই ভাবেই নাইট কুইন গাছেও পরিচর্যা করতে হবে।

SNAKE PLANTS

[আরও পড়ুন: Sansevieria Coppertone | Snake Plant Care]

[আরও পড়ুন: Sansevieria Trifasciata & Twisted Sister | Snake Plant Care]

জল :-

এই গাছ হালকা ময়েশ্চার মাটি ভালোবাসে। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে যেন কোনভাবেই গাছের গোড়ায় যেন জল জমতে না পারে। গোড়ায় জল জমলে পাতা ও ফুল আসার ওপর প্রভাব পড়বে। তাই এমনভাবে জল দিতে হবে যাতে সবসময় মাটির ময়েশ্চার বজায় থাকে। বর্ষাকালে টবে জল জমলে গাছের গোড়া পচে যাবে, অবশেষে গাছটি মারা যাবে। বর্ষার মরসুমে এই গাছে ফাঙ্গাল ইনফেকশন হতে পারে, অনেকসময় পোকাও আক্রমনও হতে পারে।

[আরও পড়ুন: নন্দিনী ফুল গাছের প্রতিস্থাপন ও সম্পূর্ন পরিচর্যা | Easy to Grow and Care Nandini Flower Plant]

খাবারের ব্যবস্থাপনা :-

এই গাছ যেহেতু টবে হয়, তাই দেড়, দু মাসে একবার সার দিলেই চলে। নিশিপদ্ম গাছ কম নাইট্রোজেন যুক্ত খাবার ভালোবাসে, তাই দু মাসে একবার গাছের গোড়ায় খোল জল দিলে ভালো হয়। টবের গাছের জন্য দেড়, দু মাসে একবার একমুটো গোবর সার, এক চামচ হাড়গুঁড়ো, এক চামচ শিংকুঁচি, হাফ চামচ পটাশ, এক চামচ অনুখাদ্য ভালো করে মিশিয়ে গাছের গোড়ায় দিতে হবে। মাটির পিএইচ ব্যালান্স ৫.৫ -৬.৫-এর মধ্যে থাকে, এমন ভাবে মাটি তৈরি করতে হবে এবং সার প্রয়োগ করতে হবে। গাছে রাসায়নিক সার ব্যাবহারে ফলে মাটিতে পিএইচ ব্যালান্স কম বেশি হতে পারে, তাই গাছে জৈব সার প্রয়োগ করায় ভাল। সার দেওয়ার আগের দিন অবশ‍্যই মাটি ভিজিয়ে দিতে হবে।

[আরও পড়ুন: হাড়ের গুঁড়ো বা Bone Meal কি ?]

[আরও পড়ুন: শিং কুচি বা Horn meal কি ?]

[আরও পড়ুন: ডিমের খোসা দিয়ে জৈব সার তৈরির পদ্ধতি | Eggshell Fertilizer]

রোগপোকার নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি :-

এই গাছে তেমন পোকার আক্রমণ দেখা যায় না। তবে বর্ষাকালে গাছের পাতায় দাগ দেখা যায়, ফলে কিছুদিন পর পাতা পচে যায়। পাতা পচে যাওয়ার কারণ হল মাটিতে জলের আধিক্য। পাতায় দাগ হয় ফাঙ্গাস আক্রমণের জন‍্য। এর জন‍্য সাফ/ম‍্যানসার/ ম্যান্ডার/ব্লাইটক্স/M45 এক লিটার জলে এক গ্রাম দিয়ে ভালো করে ঝাঁকিয়ে সাতদিন বা দশদিন পর পর গাছে স্প্রে করতে হবে। বর্ষাকালে এই ধরনের সমস্যা বেশি দেখা যায়। এছাড়াও প্রতি সাতদিন বা দশদিন অন্তর নিমওয়েল (Neem Oil) জলের সাথে মিশিয়ে সন্ধ্যাতে গাছে স্প্রে করলে ভাল হয়।

[আরও পড়ুন: গাছ ভর্তি প্রচুর ফুল পেতে কামিনী গাছের বিশেষ পরিচর্যা | Kamini Flower]


FAQ [Frequently Asked Questions]

নিশিপদ্ম ফুল গাছে কতক্ষণ স্থায়ী হয় ?

সন্ধ্যার পর থেকেই একটু একটু করে পাপড়ি মেলতে শুরু করে। যত রাত বাড়ে, তত পাপড়ি খোলে। এ ফুল ফোটা দেখার জন্য সবচেয়ে ভালো সময় রাত ১২টা থেকে ২টা। ফুল পুরো ফুটতে ফুটতে প্রায় মাঝ রাত। সকাল হলেই একেবারে কুঁকড়ে যায়।

নিশিপদ্মের চারা গাছ প্রতিস্থাপনের কত বছর পরে ফুল ফোঁটে ?

সাধারণত আড়াই থেকে তিন বছরের মধ্য গাছে ফুল ফোঁটে, তবে কোন কোন গাছের ক্ষেত্রে ছয়, সাত বছরও লেগে যায়।

নিশিপদ্ম গাছে কোন সময়ে ফুল ফোঁটে ?

গ্রীষ্মের শেষভাগে অর্থাৎ বর্ষার শুরু থেকে প্রায় নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত গাছে ফুল ফোটে, একপশলা বৃষ্টির ছোঁয়া পেলেই ফুলগুলি প্রস্ফুটন প্রস্তুতি শুরু হয়।


প্রিয় পাঠক, এই প্রতিবেদনটি পঠন করবার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার মতো পাঠকের সহযোগিতা “ক্রিয়েটিভিটি গার্ডেনিং” সর্বদা কার্ম করে। গাছই আমাদের একমাত্র সম্পদ যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষিত করতে পারে, বাঁচিয়ে রাখতে পারে। নিঃস্বার্থে গাছ ভালবাসুন, সকলকে গাছ লাগাতে উৎসাহিত করুন।

আপনাদের যদি এই বিষয়ে কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সের মাধ্যমে আমাকে জানাতে জানাবেন। সেগুলোর সমাধান করাবার আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব। আপনার মূল্যবান রেটিং দিয়ে উৎসাহিত করুন, সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, সবাই খুব ভালো থেকো নমস্কার।

2.3/5 - (3 votes)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *