টবে বাগানবিলাসের পরিচর্যা ও বেশি ফুল পাওয়ার উপায় | Bougainvillea Care

Last updated on August 24th, 2023 at 08:07 pm

বাগানবিলাস ফুলের ইংরেজী নাম Bougainvillea  এবং এর বৈজ্ঞানিক নাম Bougainvillea spectabilis। বাগানবিলাস লতানো ও গুল্মজাতীয় গাছ। উষ্ণমণ্ডলীয় দেশগুলিতে এই গাছ সব থেকে ভাল হয় (ভারত,বাংলাদেশ, ইথিওপিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন,  থাইল্যান্ড,  পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, চীন, তাইওয়ান, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, অস্ট্রেলিয়া, গ্রিস, স্পেন, তুরস্ক, সাইপ্রাস, সিঙ্গাপুর, ভূ-মধ্যসাগরীয় অঞ্চল, ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ, মধ্য আমেরিকা, মেক্সিকো, দক্ষিণ আফ্রিকা, কুয়েত, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চল দেশে বুগেনভেলিয়া ভীষন প্রচলিত গাছ।)।  ফরাসী বিজ্ঞানী লুই অটোইন ডি বোগেইনভিলিয়া’র নাম অনুসারে এ গাছের নামকরণ করা হয়েছিল বোগেইনভিলিয়া বা বাগানবিলাস। গৃহসজ্জ্বা কিংবা বাড়ীর সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিতে ল এই বাগানবিলাস জুরী মেলা ভার।

সরাসরি মাটিতে বসানো গাছে বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয়না কিন্তু টবে থাকা বাগানবিলাসের পরিচর্যার একটু ভিন্ন। আসুন তবে জেনে নিই।

টবে বাগানবিলাসের পরিচর্যা ও বেশি ফুল পাওয়ার উপায়
টবে বাগানবিলাসের পরিচর্যা ও বেশি ফুল পাওয়ার উপায়

স্থান নির্বাচন:-

বসন্তের শুরু থেকে বাগানবিলাস গাছে ফুল ফোঁটা শুরু হলেও গরমের মরসুমে অধিক ফুলফোঁটে, তবে গাছ রোপণের পূর্বে সঠিক জায়গা ও মাটি নির্বাচন করা উচিত। সারা দিন সূর্যের আলো পায় তেমন স্থান নির্বাচন করতে হবে। যত রোদ তত ফুল। এই গাছ রোদ ভীষণ ভালোবাসে, বাড়ির ছাদের জন্য এই গাছ খুব ভালো। ব্যালকনিতে গাছ করতে চাইলে যেখানে অন্তত পক্ষে দিনে ঘন্টা চারেক রোদ আসে সেখানে গাছে রাখলে ফুল পাবেন ।

টব নির্বাচন:-

গাছ টবে প্রতিস্থাপন করলে সবার প্রথমে সঠিক মাপের টব নির্বাচন করতে হবে। ছোট গাছ ৮ ” টবে বসাবেন তবে দেড়, দু বছর পরে ১২” বা তার থেকে বড় টবে পরিবর্তন করতে হবে। বোগেনভেলিয়া রাক্ষুসে গাছ যত দেবেন সব হজম করে দেবে,তাই টব বড় হলেই ভালো। বাগানবিলাস গাছের গোড়ায় কোনভাবে যেন জল না জমে, টবে গাছ প্রতিস্থাপনের পূর্বে জল নিষ্কাসন ব্যবস্থা দেখে নেওয়া ভীষণই জরুরি। তাই টবের নিচে ছিদ্র না থাকলে তা করে নিতে হবে এবং মাটিতে যেন জল না দাঁড়ায় সেই ভাবে মাটি প্রস্তুত করে নিতে হবে।

মাটি প্রস্তুত:-

গাছ  টবে প্রতিস্থাপনে ক্ষেত্রে অবশ্যই  মাটি তৈরির কিছু নিয়ম মেনে করতে হবে। প্রথম কথা হচ্ছে বাগানবিলাস গাছ দোআঁশ মাটিতে সবথেকে ভালো হয় এ জন্য বাগানের দুভাগ উর্বর দোঁয়াশ মাটি , একভাগ গোবরসার ( কমপক্ষে ৬ মাসের পুরোনো ) অথবা ১ বছরের পুরোনো পাতা পাঁচা সার  অথবা ভার্মি কম্পোস্ট নিতে হবে ,একমুঠো হাড়গুড়ো ,একমুঠো শিং কুচি ,এক চামচ নিমখাল,এক চামচ আবদাগোল্ড (টব প্রতি) একসাথে মিশিয়ে অল্প জল দিয়ে পনের দিনের জন্য পলিথিন দিয়ে ডেকে রাখতে হবে। ১৫ দিন পর পলিথিন থেকে বার করে ভালো করে শুকিয়ে নিয়ে ব্যাবহার করতে হবে।

জল প্রয়োগ:-

অন্যান্য গাছের ক্ষেত্রে বড় কুঁড়ি উৎপাদনের জন্য নিয়মিত গাছের গোড়ায় জল প্রয়োগ করতে হয়, কিন্তু এই গাছে যত জল দেবেন এর ডাল তত বার হবে তাই জলের হিসেবেই এর ফুলের তারতম্য হয়। গ্রোথ পিরিয়ডে (অগাস্ট-অক্টোবর) জল কন্টিনিউ হবে কিন্তু ফুলের সময়ে ( জানুয়ারী- জুলাই) জলের ব্যাবহার পরিমিত হবে। এই গাছকে স্ট্রেস না দিলে ফুল দেয় না সুতরাং জানুয়ারী থেকে জুলাই বাগানবিলাস গাছের আসল দেখাশোনা করতে হয়। প্রতি ডালে পাতার পরিমান বেড়ে গেলে মাটি শুকনো করে গাছের গোড়ায় জল দিতে হবে, এইভাবে গাছকে স্ট্রেস না দিলে গাছে ফুল আসবেনা। এই ভাবে ৭ থেকে ১০ দিন করলেই গাছের সমস্ত পাতা ঝড়ে যাবে এবং গাছে ফুল আসবে। গাছে কুঁড়ি আশা শুরু হলেই নিয়মিত গাছে জল দিতে হবে।

আলোর প্রয়োজনীয়তা:-

সারা দিন সূর্যের আলো পায় তেমন স্থানে গাছগুলি রাখতে হবে । যত রোদ তত ফুল। এই গাছ রোদ ভীষণ ভালোবাসে, বাড়ির ছাদের জন্য এই গাছ খুব ভালো। ব্যালকনিতে গাছ করতে চাইলে যেখানে অন্তত পক্ষে দিনে ঘন্টা চারেক রোদ আসে সেখানে গাছ রাখলে ফুল পাবেন। দিনে কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ ঘটা সূর্যের আলো না পেলে গাছে আশানুরূপভাবে ফুল আসবে না। এছাড়া বাগানবিলাস গাছ জিরো ডিগ্রীর নিচে তাপমাত্রার নেমে গেলে ঠিক ভাবে বাঁচতে পারে না এজন্য তাপমাত্রা যদি খুব কম হয় তবে গাছগুলি ঘরে এনে রাখতে হবে।

সার প্রয়োগ:-

বাগানবিলাস গাছে প্রচুর পরিমাণ ফুল পেতে চাইলে প্রতি মাসে একবার করে টবে সার প্রয়োগ অত্যাবশ্যকীয়।  সার প্রয়োগের ক্ষেত্রে জৈব সার বা শুকনো গোবর জলে ভিজিয়ে রেখে লিকুইড আকারে প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে গাছ থেকে সমস্ত পাতা ঝড়িয়ে ফেলবার পর প্রতি টবের ক্ষেত্রে দুমুঠো গোবরসার অথবা পাতা পাঁচা সার  অথবা ভার্মি কম্পোস্ট দিতে হবে ,একমুঠো হাড়গুড়ো ,একমুঠো শিং কুচি ,এক চামচ নিমখাল,এক চামচ আবদাগোল্ড এবং এক চামচ বাদাম খোল একসাথে মিশিয়ে গাছের গোড়ায় দিতে হবে। এবং প্রতি ৪৫দিন অন্তর একবার অনুখাদ্য দিতে হবে।

মার্চ- জুন মাসের মধ্য পচা খোল জল বা সরিষার গুড়ো খোল দেবেন না। গরম কমে গেলে সরিষার গুড়ো খোল ব্যাবহার করতে পারেন তবে গাছে ফুল শেষ হয়ে যাওয়ার পরে। যখন দেখবেন গাছের প্রতি ডালে কুঁড়ি আসতে শুরু করেছে তখন দু তিন দিন অন্তর জল দেবেন। দেখবেন ৭ থেকে ১০ দিনেই  গাছের সমস্ত পাতা ঝড়ে পড়তে শুরু করেছে, এই প্রক্রিয়াকে ডিলিফিং বলে। গাছে কুঁড়ি আশা শুরু হলেই নিয়মিত গাছে জল দিতে হবে। এই প্রক্রিয়টি খুব সাবধানে করতে হবে, রিস্ক রয়েছে। আপনারা চাইলে এই প্রক্রিয়া কে স্কিপ করতে পারেন। গাছে ফুল চলে এলে শুধুই জল দিতে হবে কোন রকম সার ব্যাবহার করা যাবে না।

রাসায়নিক সারের মধ্যে  টিএসপি / ডিএপি এবং এমওপি  সার মিলিয়ে এক চা চামচ পরিমাণ সার জলের সাথে মিশিয়ে টবের চারদিকে দিতে হবে। গাছে ফুল শেষ হয়ে যাওয়ার পরে এক চামচ ইউরিয়া ব্যাবহার করতে পারেন। শীত আসার আগের মুহূর্তে গাছের নতুন ভাবে পরিচর্যা শুরু করতে হবে, গাছে জল দেওয়া কমিয়ে দিন শুকনো নিম খোলের গুড়ো ও ফসফেট মিশিয়ে অল্প পরিমাণে গাছের টবে বা মাটির চারদিকে দিয়ে দিন।

গরমের সুন্দর ফুলের মধ্য বুগেনভেলিয়া অন্যতম হলেও এটি গন্ধহীন কিন্তু গরমের এমন অনেক সুন্দর এবং সুগন্ধীন ফুল রয়েছে যার সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবেই , জানতে দেখুন:- কিছু গরমের ফুলগাছ

বি:দ্র:— ডিলিফিং প্রক্রিয়টি খুব সাবধানে করতে হবে আপনাদের , রিস্ক রয়েছে। আপনারা চাইলে এই প্রক্রিয়া নাও করতে পারেন। গাছে ফুল চলে এলে শুধুই জল দিতে হবে কোন রকম সার ব্যাবহার করা যাবে না।

creativity gardening

পিনচিং:-

গাছের সুন্দর্য আনার জন্য পিনচিং ভীষণ প্রয়োজন। বোগেনভেলিয়ার আসল সৌন্দর্য তার শেপের ওপরই নির্ভর করে,তাই টবে গাছ বাড় নেয়া শুরু করলেই নতুন ডাল ছয় সাত ইঞ্চি হলেই ওর মাথা পিনচিং করে দিতে হবে। এতে গাছ ঝাঁকড়া হবে এবং ফুলের পরিমান বৃদ্ধি পাবে।

গাছের মাটি পরিবর্তন:-

জুলাই থেকে অগাস্ট গাছ লাগানোর সবচেয়ে আদর্শ সময়। অথবা যাঁরা রিপটিং করতে চান তাঁরাও এই সময়টি বেছে নিতে পারেন। কমপক্ষে বছরে একবার গাছ রিপটি বা মাটি বদলে দিলে গাছ ভাল থাকবে এবং গাছে সময় মতো ফুলও আসবে, রিপটিং এর সময়ে গাছের ৭৫% শিকড় রেখে বাকি ২৫% শিকড় ছেটে দিতে হবে। এবং বর্ষা শেষ হবার পর গাছের মোটা ডাল গুলি ছেটে দিতে হবে।

রোগব্যাধি :- 

অন্যান্য গাছের তুলনায় বাগানবিলাস গাছে তেমন একটা রোগব্যাধি লক্ষ করা যায় না বললেই চলে। তবে ভালো গাছ করতে হলে নিয়মিত  ১৫ দিনে একবার যেকোন কীটনাশক স্প্রে করতে হবে এবং বর্ষাকালে ১৫ দিনে একবার যেকোন ফাঙ্গিসাইড স্প্রে করতে হবে।

NamePositionKingdom
BougainvilleaEnglish
কাগজফুল, বাগানবিলাসBengali
বুগেনভেলিয়ার বৈজ্ঞানিক নাম Bougainvillea spectabilis পরিবার Nyctaginaceae

 

বোগেনভিলিয়া গাছে কি বারো মাস ফুল থাকে?

বোগেনভিলিয়া ফুলের মরসুম প্রায় সারা বছর ধরে থাকে, প্রচণ্ড ঠান্ডা এবং তুষারপাতের সময় ছাড়া। ডিসেম্বর, জানুয়ারী এবং ফেব্রুয়ারী মাসের ঠান্ডায় গাছপালা সামান্য ফুল ফোটে। গরমের মরসুমে সব থেকে অধিক ফুল ফোঁটে। আপনার বাড়িতে বা আশেপাশের এমন জায়গায় গাছটি স্থাপন করা ভাল যেখানে এটি ক্রমাগত প্রস্ফুটিত হওয়ার জন্য কমপক্ষে 6 থেকে 8 ঘন্টা আলো পায়।

বোগেনভিলিয়া কোথায় ভালো হয়?

বোগেনভিলিয়া ঢালু জমিতে রোপণ করা উচিত,যেখানে জল জমে না । বোগেনভিলিয়া ঝোঁপের ন্যায়, লতানো প্রকৃতির হয় তাই ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা দেওয়া হলে তারা ভালভাবে বেড়ে উঠবে এবং এমন জায়গায় রোপণ করা উচিত যাতে প্রতিদিন ন্যূনতম ৬ থেকে৮ ঘন্টা সূর্যালোক পেতে পারে।

বারান্দায় বা ব্যালকনিতে বোগেনভিলা চাষ করা সম্ভব?

হ্যা সম্ভব, বোগেনভিলিয়া গাছের বৃদ্ধির জন্য, একটি গভীর পাত্র চয়ন করুন, উচ্চতা কমপক্ষে 30 সেমি এবং তার বেশি হওয়া উচিত। গাছের বৃদ্ধির জন্য মাটির সাথে পর্যাপ্ত পরিমানে জৈব সার যোগ করে বোগেনভিলিয়া চারাগাছ রোপণ করুন। মরসুমে প্রচুর ফুল পেতে গাছটিকে জানালার দক্ষিন-পূর্ণ স্থানে রাখুন।

বোগেনভিলিয়া গাছ পোঁকা মাকাড়র দ্বারা আক্রান্ত হয়?

বোগেনভিলিয়া সাধারণত পোঁকা মাকাড়র দ্বারা আক্রান্ত কম হয়, তবে বর্ষার মরসুমে পাতা এবং আগার কঁচি কান্ড ছত্রাকের দ্বারা আক্রান্ত হয়।

বোগেনভিলিয়া কি যুক্তরাজ্যে চাষ করা যায়?

প্রাণবন্ত, উজ্জ্বল বর্ণের বোগেনভিলিয়া ফুল পেতে ঢালু জমি নির্বাচন করতে হবে এবং যে স্থানে প্রতিদিন ন্যূনতম ৬ থেকে৮ ঘন্টা সূর্যালোক পায় তেমন স্থান নির্বাচন করতে হবে। উষ্ণমণ্ডলীয় যুক্তরাজ্যে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চল দেশে বুগেনভেলিয়া ভীষন প্রচলন আছে। সে স্থানে বোগেনভিলিয়াস জন্মাতে পারেন – আপনাকে কেবল তাদের হিম থেকে রক্ষা করতে হবে।

5/5 - (1 vote)