KOROBI: করবী ফুল গাছের যত্ন এবং প্রতিস্থাপন প্রদ্ধতি

Last updated on October 30th, 2023 at 08:05 pm

করবী অত্যন্ত সুন্দর, শোভাময়, বহুবর্ষজীবী এবং গুল্ম জাতীয় ফুলের উদ্ভিদ।করবী সাদা, গোলাপী, হালকা হলুদ, ফিকে লাল, পিংক প্রভৃতি রঙের হয়। এই গাছে সারা বছর ধরে ফুল ফোটে, তবে বেশি ফোটে শরৎ থেকে বসন্ত এবং গ্রীষ্ম ঋতুতে। তবে বর্তমানে করবী অন্যান্য প্রজাতির গাছ গুলিতে সব সময়েও এই ফুল ফুটতে দেখা যায়। গোলাপী এবং লাল রঙের ফুলগুলি গাছে থোকায় থোকায় হয়ে থাকে।

করবীর বৈজ্ঞানীক নাম Nerium oleander বা Nerium indicum, এটি Apocynaceae পরিবারের অন্তর্গত। গাছটি Nerium গোত্রীয় মধ্য বিষাক্ত, তাই শিশু বা পোষ্য প্রাণী থেকে গাছগুলিকে দূরে রাখা প্রয়োজন।.। করবী ফুল গাছ বিভিন্ন নামে পরিচিত যেমন শ্বেত করবী, রক্ত করবী, স্বর্ণ করবী ইত্যাদী। উদ্ভিদের দীর্ঘ, সরু, গাঢ় সবুজ পাতা রয়েছে যা উষ্ণ আবহাওয়ায় চিরহরিৎ। ফুলগুলি সাধারণত শাখার অগ্রভাগে গুচ্ছ আকারে জন্মায় ।

KOROBI: করবী ফুল গাছের যত্ন এবং প্রতিস্থাপন প্রদ্ধতি

আপনার ছাদ বাগানের শখ থাকলে টবের প্রতিস্থাপন করতে পারেন করবী ফুল গাছ। এই গাছ একটু বড় আকারের হয় তাই বড় আকারের টব অথবা পাত্র নির্বাচন করতে পারেন। ওলেন্ডার ভূমধ্যসাগরীয় এবং এশিয়ার মহাদেশের বিভিন্ন্য অঞ্চলে গাছগুলি দেখতে পাওয়া যায়। বর্তমানে এটি থাইল্যান্ড,চীন, বাংলাদেশ, ভারত,মালয়েশিয়া সহ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিস্তির্ণ এলাকা, ইউরোপ ও আমেরিকার বেশ কিছু এলাকা জুড়ে দেখতে পাওয়া যায়। ওলেন্ডার বা করবী খুব কষ্ট সহিষ্ণু উদ্ভিদ যা মাটির ধরন এবং অবস্থার একটি পরিসীমা সহ্য করতে পারেন। করবী গাছ প্রতিস্থাপনের জন্য উচ্চ জল নিকাশি যুক্ত উর্বর মাটি প্রস্তুত করতে হবে। তার জন্য প্রয়োজন বাগানের মাটি, জৈব সার, কোকোপিট অথবা বালি এগুলিকে ভাল করে মিশিয়ে নিয়ে মাটি প্রস্তুত করতে হবে।

করবীর বৈশিষ্ট্য:-

  • এটি একটি চিরহরিৎ গুল্ম জাতীয় ।
  • করবী বহুবর্ষজীবী।
  • এর পাতা সরু ও লম্বাটে।
  • করবীর ফুল বাইরের দিকে ফোটে। প্রান্তিক ও ঘন।
  • কামিনীর ফুল সুগন্ধীযুক্ত।
  • এর ফুলে মধু থাকে।
  • এর ফল ডিম্বাকার ও বিষাক্ত।
  • গাছটির সর্বঙ্গ তীব্র বিষযুক্ত।
  • শাখা-প্রশাখার অগ্রভাগে ফুল ধরে।
  • ফল শাঁসযুক্ত হয়।
  • ফল কাঁচা সবুজ, পাকলে ধূসর রঙের হয়।
  • সাধারণত ফুল সতেজ থাকে ৪-৫ দিন পর্যন্ত।
করবী ফুল গাছের যত্ন এবং প্রতিস্থাপন প্রদ্ধতি

চারা নির্বাচন:

নার্সারি থেকে কোন ভাল জাতের চারা, পারলে ফুল দেখে করবী গাছের চারা কিনে নিয়ে এসে মাটিতে অথবা টবে প্রতিস্থাপন করবেন। এই গাছ রোদ খুব ভালবাসে। তাই আপনার ছাদ বাগানে যেখানে সারাদিন রোদ পাবে সেই জায়গায় প্রতিস্থাপন করবেন।

করবীর গাছের জন্য স্থান নির্বাচন:

করবীর পূর্ন সূর্যালোক পছন্দ করে, তবে এটি আংশিক ছায়াময় স্থানে ভাল জন্মে তবে ফুলের পরিমান কমে যায়। দিনে ৬ থেকে ৮ ঘটা সূর্যের আলো পাই তেমন স্থানে গাছ টিকে প্রতিস্থাপন করা উচিত। চারা গাছ মাটিতে বা টবে প্রতিস্থাপন করবার প্রথম বছরেই ফুল আসে। করবীর সুনিষ্কাশিত যে কোনো ধরনের মাটিতে বিস্তার লাভ করে, এটি সমতল অথবা ঢালু উভয় স্থানে চাষের উপযুক্ত।

করবীর গাছের জন্য মাটি তৈরি

করবী সুনিষ্কাশিত সব ধরণের মাটিতেই ভালো হয়। কিন্তু গোড়ায় জল জমা একদম পছন্দ করে না। করবী গাছের জন্য জৈবসারসমৃদ্ধ বেলে-দোআঁশ মাটি আদর্শ। এই ধরণের মাটি তৈরি করতে দু’ভাগ দোআঁশ মাটি, এক ভাগ বালি, এক ভাগ এক বছরের পুরনো গোবর সার অথবা পাতাপচা সার অথবা ভার্মি কম্পোস্ট (প্রতি টব হিসেবে হাফ চা-চামচ ফাঙ্গিসাইড, এক চামচ নিমখোল, এক চামচ শিংকুচি, এক চামচ হাড়গুঁড়ো) ভালো করে মিশিয়ে নিলেই করবীর জন্য এক্কেবারে আদর্শ মাটি তৈরি হয়ে যাবে। এই মাটি আপনি নতুন চারা বসানো অথবা রিপটিং-এর জন্য ব্যবহার করতে পারেন।

টব নির্বাচন:

করবী ফুল গাছের জন্য বড় আকারের টব নিলে ভাল হয়। গাছ প্রতিস্থাপনের পূর্বে দেখে নেবেন টবের তলানিতে এবং সাইডে ছিদ্র আছে কিনা! না থাকলে কোন কিছুর দ্বারা ছিদ্র করে নেবেন।

জল প্রয়োগ

করবী গাছের জন্য খুব বেশী নয় হালকা আর্দ্র মাটি প্রয়োজন। তবে মাটি যাতে বেশী ভিজে বা কাদা কাদা না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর কোনো কারণে মাটি স্যাঁতসেঁতে থাকলে কয়েক দিনের জন্য জল দেওয়ার প্রয়োজন নেই। পারলে মাটি কোন কিছুর দ্বারা খুঁড়ে দিলে ভাল হয়।

[আরও পড়ুন: টবভর্তি ফুল পেতে জারবেরা গাছের পরিচর্যা]

গরমের মরসুমে গাছে দুবেলা জল দেবেন। খেঁয়াল রাখবেন গাছের মাটি যেন শুঁকিয়ে না যায় কারন এই গাছ আর্দ্র মাটি পছন্দ করে, জলের অভাবের কারণে কুঁড়ি, ফুল এবং পাতা ঝড়ে যেতে পারে। বর্ষার সময়ে সেডের নীচে রাখতে পারেন, এই গাছ খরা সহ্য করতে সক্ষম, তবে জলাবদ্ধ নয়, তিন চার দিন টবে জল জমে থাকলেও গাছ মাড়া যায় ।

রৌদ্র এবং তাপমাত্রা:

করবী রোদ খুব ভালোবাসে। তাই কমপক্ষে ছয় থেকে আট ঘন্টা রোদে এই গাছ ভালো ফুল দেয়। গরম হোক বা বর্ষা এই গাছ সারাদিনের রৌদ্র উপভোগ করে। কম রৌদ্র পেলে এই গাছ একেবারেই ভালো ফুল দেবে না। কররী গাছের জন্য আদর্শ তাপমাত্রা ২৫ থেকে ৩৫ ডিগ্রি।

পরিচর্যা:

এই গাছে সাধারণত প্রায় সারা বছর ফুল ফোটে। তবে বেশি ফোটে বসন্ত ও গ্রীষ্ম ঋতুতে। স্থীয়ী ফুল গাছে সর্বদা জৈব সার ব্যাবহার করবেন: জৈব সার হিসেবে গোবরসার, এক মুঠো হাড়গুঁড়ো এবং অনুখাদ্য একত্রে মিশিয়ে গাছের গোড়ায় ব্যাবহার করবেন। করবী গাছে জল দেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে গোড়ায় জল না জমে। বর্ষার সময়ে এবং অন্যান্য সময়ে মাটি খুঁচিয়ে দিতে হবে। করবী ফুল গাছে রোগ বা পোকার আক্রমণ খুব কম ও বেশি পরিচর্যাও করা লাগে না। মরসুমের শুরুতে মাটি তুলে ফেলে এক মুঠো বেলে-দোআঁশ মাটি, এক মুঠো হাড়গুঁড়ো ,এক মুঠো সিংকুঁচি,এক মুঠো নিমখোল এবং এক মুঠো কম্পোস্ট সার একসঙ্গে মিশিয়ে সেই মাটি ফেলা অংশটা ভরাট করে দেবেন। গাছের স্বাস্থ্য ভালো, ফুলের বৃদ্ধির জন্য পটাশ সার গাছে অল্প মাত্রায় ব্যাবহার করবেন, তার সঙ্গে জল একটু টান করে দেবেন। অথবা সরিষার খোল পচা সার দিতে পারেন। ১৫ দিন অন্তর অন্তর সরিষার খৈল পচা জলের সাথে টবপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টি dap/ tsp ব্যাবহার করবেন।

রোগবালাই ও পোকামাকড়:-

করবী গাছে রোগবালাই তেমন হয় না। তবে শীতের মরসুমের শেষে মিলিবাগ বা দয়ে পোকার উপদ্রব দেখা যায়। এছাড়াও পাতা হলুদে হয়ে যাওয়া ও কুঁকড়ে যাওয়া সমস্যা দেখা যায়।

মিলিবাগ/Mealybug:

মিলিবাগ দেখা মাত্রই ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করতে হবে, ইমিডাক্লোরোপিড নামক মূল উপাদানের তৈরি কীটনাশক বাজারে পাওয়া যায়, এটি ১ লিটার জলে পাঁচ ফোঁটা মিশিয়ে সূর্য অস্তের যাবার ঠিক আধ ঘন্টা আগে গাছে স্প্রে করবেন। মিলিবাগর আক্রমন হলে ৫ দিন অন্তর অন্তর মোট ৭ বার স্প্রে করতে হবে। এটি বাজারে মিডিয়া,কনসফিডার নামেও পাওয়া যায়। কনফিডার বাংলাদেশেও পাওয়া যায়।

এছাড়াও যে কোন গাছে মিলিবাগ বা দয়ে পোকার (Mealybug / White insects) আক্রমণ দেখা মাত্রই Bayer কোম্পানির এডমায়ার (Admire) ২ গ্রাম এর প্যাকেট থেকে ৫ লিটার জল তৈরী করতে পারবেন। এটি ভারতবর্ষ এবং বাংলাদেশে এডমায়ার নামে পাওয়া যায়।

এছাড়াও এক লিটার জলে যে-কোন কোম্পানির ডিটারজেন্ট হাফ চা-চামচ অথবা যে-কোন কোম্পানির শ্যাম্পু তিন এমএল বা ইমিডাক্লোরোপিড-জাতীয় কীটনাশক তিন গ্রাম ভালো করে মিশিয়ে মেঘমুক্ত দিনে পর পর দু’ থেকে তিন দিন স্প্রে করে দেবেন , তাতেই কাজ হয়ে যাবে।

Spider Mites: এটি এক ধরণের ক্ষুদ্র পোকা যা পাতার নিচে থাকে। এরা ডালের ডগায় এবং পাতার নীচে ছোট ছোট জাল তৈরি করে । এদের আক্রমণ হলে পাতা হলদে হয়ে যায় ও কুঁকড়ে যায়। পাতা হলুদে হয়ে যাওয়া ও কুঁকড়ে যাওয়া রোধ করতে Oberon, Rolex, Xmite এর মধ্যে যেকোনো একটির ২ ml এক লিটার জলে ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে মেঘমুক্ত দিনে স্প্রে করবেন । এটি ১০/১২ দিন অন্তর চালিয়ে যেতে হবে যতদি ন না পুরোপুরি প্রতিকার হচ্ছে ।

[আরও পড়ুন: ঝিন্টি গাছে প্রচুর ফুল পেতে কি ভাবে পরিচর্যা করবেন]

ডাল ও শিকর ছাঁটাই:

একটি সতেজ গাছ তৈরির প্রক্রিয়াটি হল গাছটি বড় হলে ডালের অনেকটা ছেটে দিতে হবে। শীতের শেষে ডাল ছাঁটাই করতে হয়। ছাঁটাই এর পরে চাউবান্টিয়া পেন্ট ব্যবহার করুন। আর শিকরের ক্ষেত্রে এক বছর অন্তর ছাঁটতে হয়। এর জন্য টব থেকে মাটি সমেত গাছ বের করে শিকড় ছেঁটে কাটা জায়গায় বোর্দোপেস্ট লাগিয়ে আবার মাটি সমেত গাছ টবে ঢুকিয়ে দিতে হবে।

প্রিয় পাঠক, এই প্রতিবেদনটি পঠন করবার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার মতো পাঠকের সহযোগিতা “ক্রিয়েটিভিটি গার্ডেনিং” সর্বদা কার্ম করে। গাছই আমাদের একমাত্র সম্পদ যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষিত করতে পারে, বাঁচিয়ে রাখতে পারে। নিঃস্বার্থে গাছ ভালবাসুন, সকলকে গাছ লাগাতে উৎসাহিত করুন।

আপনাদের যদি এই বিষয়ে কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সের মাধ্যমে আমাকে জানাতে জানাবেন। সেগুলোর সমাধান করাবার আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব। আপনার মূল্যবান রেটিং দিয়ে উৎসাহিত করুন, সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, সবাই খুব ভালো থেকো নমস্কার।

আপনার মূল্যবান রেটিং দিয়ে উৎসাহিত করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *