ঝিন্টি ফুল: শরৎ এর মরসুমে প্রচুর ফুল পেতে কি ভাবে পরিচর্যা করবেন

Last updated on November 21st, 2023 at 06:07 pm

শরৎ মরসুমে সেরা ফুলের মধ্য ঝিন্টি (Jhinṭi) অন্যতম। আপনি যদি কম যত্নে অধিক ফুল চান, তবে ঝিন্টির বিকল্প অন্য কোন গাছ হতে পারে না। ঝিন্টি ফুল অনেক বর্ণের হয় যেমন- সাদা, বেগুনি এবং হলুদ। এটি তার প্রাণবন্ত রঙের জন্য পরিচিত, যা উষ্ণ জলবায়ু অঞ্চলে জন্মায় । এটি বাড়ির বাইরে পূর্ন সূর্যের আলো সহ উষ্ণ এবং আর্দ্র অবস্থা পছন্দ করে।

আজকের প্রতিবেদন থেকে আপনারা মাটিতে অথবা টবে ঝিন্টি ফুল গাছ প্রতিস্থাপন এবং যত্ন সম্পর্কে জানতে পারবেন। ঝিন্টির বৈজ্ঞানিক নাম Barleria cristata , এটি Lamiales পরিবারের অর্ন্তভুক্ত , ইংরেজি নাম -Philippine Violet, Crested Philippine Violet। ঝিন্টি গুল্মজাতীয়, বহুবর্ষজীবী এবং চকচকে সবুজ পাতার সাথে, এই উদ্ভিদটি নবীন এবং অভিজ্ঞ উদ্যানপালক উভয়ের জন্যই প্রিয়। গাছটি ফিলিপাইন ভায়োলেট নামে পরিচিত হলেও ফিলিপাইনের স্থানীয় উদ্ভিদ নয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দক্ষিণ চীন সহ ভারতবর্ষ এবং মায়ানমার পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলে স্থানীয় উদ্ভিদ।

ঝিন্টি ফুল: শরৎ এর মরসুমে প্রচুর ফুল পেতে কি ভাবে পরিচর্যা করবেন

ঝিন্টি ফুলের গাছ ৪ থেকে ৫ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয় । পাতা গাড় সবুজ বর্নের। অক্টবর থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ফুল ফোঁটে। অনেক গাছ আবার গরম এবং বর্ষার মরসুমেও ফুল দিয়ে থাকে। পাঁচ-পাঁপড়ি বিশিষ্ট ঝিন্টি অত্যন্ত অল্প পরিচর্যাতে ছাদবাগানে অথবা ব্যালকনিতে প্রচুর ফুল দেয়। ফুল শেষ হয়ে যাওয়ার পরে গোড়া থেকে ৮ ইঞ্চি রেখে উপরের অংশ হার্ড প্রুনিং করতে হবে। দিন ১৫ পরে দেখবেন নতুন শাখাপ্রশাখা তৈরী হতে শুরু করেছে, এই সময় গাছের গোড়ায় খাবার প্রয়োগ করতে হবে। প্রত্যেক মাসে একবার করে জৈব সার: দুমুঠো গোবর সার অথবা ভার্মি কম্পোস্ট এবং ১ চামচ করে Micronutrients:Top Gold,Agromin Gold, Agromin Max একত্রে মিশিয়ে ব্যাবহার করলে দেখবেন গরমের মরসুমেও গাছে প্রচুর কুঁড়ি আসতে শুরু করেছে। এছাড়াও কলার খোসা, ডিমের খোসা, হাঁড় গুড়ো, শিং কুঁচি , পাতাপচা সার প্রভৃতি একত্রে মিশিয়ে ব্যাবহার করলে প্রচুর ফুল পাওয়া যায় ।

ঝিন্টি নার্সারিতে পাওয়া যায় না আপনাকে কোন ব্যাক্তির থেকে চারা সংগ্রহ করতে পারেন, দ্বিতীয়ত আপনি ঝিন্টি গাছের ডাল থেকে চারা তৈরী করতে পারেন। ঝিন্টি গাছের ডাল থেকে কিভাবে চারা প্রস্তুত করতে হয় তা পরে আলোচনা করছি।

ঝিন্টি ফুল: শরৎ এর মরসুমে প্রচুর ফুল পেতে কি পরিচর্যা করবেন

স্থান নির্বাচন:-

ঝিন্টি গাছের বৃদ্ধির জন্য উজ্জ্বল, পরোক্ষ আলোর প্রয়োজন। সমতল অথবা ঢালু উভয় স্থানেই ঝিন্টি গাছ প্রতিস্থাপন করা যেতে পারে। গাছটি সরাসরি মাটিতে প্রতিস্থাপন করলে মাটি প্রস্তুতের প্রায়াজন হয় না কিন্তু টবে প্রতিস্থাপন করলে গাছের চাহিদা অনুযায়ী জৈব সার মাটির সাথে ভালকরে মিশিয়ে প্রতিস্থাপন করা উচিত।

টব নির্বাচন:-

ঝিন্টি কষ্ট সহিষ্ণু এবং চিরস্থায়ী উদ্ভিদ তাই ভালো হয় বড় টব নির্বাচন করলেI চারাগাছ প্রতিস্থাপন করলে প্রথমে ৮ ইঞ্চি টব নির্বাচন করবেন , পরবর্তী সময়ে ১০ ইঞ্চি অথবা ১২ ইঞ্চি টব সংগ্রহ করতে হবে।

মাটি প্রস্তুত:-

ঝিন্টি গাছ টবে করবার জন্য সুনিষ্কাশিত উর্বর মাটি তৈরী করতে হবে। মাটির জল নিষ্কাশন ব্যাবস্থা বেশি ভাল প্রয়োজন হয় না। এই গাছের জন্য দোঁয়াশ মাটি একদম আদর্শ, ভারীমাটি অর্থাৎ কাঁদামাটি বা যে মাটিতে কাদার ভাগ বেশি থাকলে বালি মিশিয়ে ব্যাবহার করতে হবে। টবের ক্ষেত্রে, দুভাগ বেলে দোঁয়াশ মাটির সাথে জৈব সার: একভাগ একবছরের বা তারও বেশি পুরনো গোরব সার, অথবা ভার্মিকম্পোস্ট, বা পাতাপচা সার নিতে হবে, তার সাথে হাড়গুড়ো এবং নিমখোল মিশিয়ে মাটি তৈরি করতে হবে। গাছ ফুল কেমন হবে তার অনেকটা নির্ভর করে মাটি তৈরীর উপড়ে। যে কোন গাছ টবের তুলনায় মাটিতে খুবই ভালো হয়।

তবে বছরে একবার হলেও গাছের মাটি পরিবর্তন এবং শিকড় ছাঁটার প্রয়োজন আছে, তবে গাছটি যদি টবে প্রতিস্থাপন করতে চান, তাহলে গাছটির চাহিদা অনুযায়ী খাবার,আলো,জল, কীটনাশাক এর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলি খেয়াল করতে হবেI

আলো :-

ঝিন্টি বা ফিলিপাইন ভায়োলেটের বিকাশের জন্য উজ্জ্বল, পরোক্ষ আলোর প্রয়োজন। এটি সরাসরি সূর্যের আলোতে স্থাপন না করাই ভাল, কারণ গ্রীষ্মের সময়ে এর পাতাগুলিকে ঝলসে যায়। ফিলিপাইন ভায়োলেটের জন্য আদর্শ তাপমাত্রা হল ৬৫ থেকে ৭৫ ডিগ্রী ফারেনহাইট / ১৮ থেকে ২৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস । ঝিন্টি গাছ ছায়া স্থানে প্রতিস্থাপন করেও প্রচুর ফুল পাওয়া যায়। এটি ব‍্যালকনিতে ও সুন্দর ভাবে বেড়ে উঠতে সক্ষম।

জল প্রয়োগ:-

গরমের সময়ে টবের গাছে নিয়মিত জল দেওয়া দরকার, অতিরিক্ত জল দিলেও গাছ সহজে মাড়া যায় না। মাটি আর্দ্র হওয়া উচিত তবে ভেজা নয়। মাটির উপরের ২ থেকে ৩ ইঞ্চি স্পর্শে শুকিয়ে গেলে গাছে গভীরভাবে জল দিতে হবে। তবে শীতের সময়ে এই গাছে জল তুলনামূলক কম লাগে। বর্ষার সময়ে, অন্য গাছের ন্যায় ঝিন্টি সেডের নীচে রাখবার প্রয়োজন হয় না।

সতর্কতা “গরমের সময়ে জল কম দেওয়ার কারণ গাছ মাড়া যেতে পারে”।

creativity gardening

পরিচর্যা:-

শীতের পরে এই গাছের বিশেষ খাবারের প্রয়োজন হয় না, কারন ফুল শেষ হয়ে যাওয়ার পরে হার্ড প্রুনিং করতে হয়। কিছু দিন পরে নতুন শাখাপ্রশাখা তৈরী হতে শুরু করলে গাছে খাবার প্রয়োগ করতে হবে। প্রত্যেক মাসে একবার করে জৈব সার ব্যাবহার করলে দেখবেন গরমের মরসুমেও গাছে প্রচুর কুঁড়ি আসতে শুরু করেছে। ঝিন্টি গাছের দুবার হার্ড প্রুনিং করতে হয়, প্রথমবার ফুল শেষ হয়ে যাওয়ার পরে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ, দ্বিতীয় বার আগস্ট মাসের শেষে অথবা সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে। মরসুম প্রচুর ফুল পেতে সেপ্টেম্বর মাস থেকে গাছের পরিচর্যা শুরু করে দিতে হবে।

ফুল ফোঁটার সময়:-

পুরো শরৎ কাল ধরে ঝিন্টি গাছে ফুল ফোঁটে, সেপ্টেম্বর মাসে এদের খাবারের চাহিদা বেশি থাকে কারণ অক্টবর মাস থেকে গাছে প্রচুর কুঁড়ি আসতে শুরু করে। সঠিক যত্ন এবং পরিচর্যা করলে টানা গরমকাল পর্যন্ত এই গাছ থেকে প্রচুর ফুল পাওয়া যায়।

সার প্রয়োগ:-

মরসুমের আগে অর্থাৎ গাছে কুঁড়ি তৈরী হওয়ার আগে ফিলিপাইন ভায়োলেট বা ঝিন্টি গাছে সার প্রয়োগ করার প্রয়োজন হয়। ফুলের মরসুমে আগে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর মাসে একবার গাছটিকে একটি সুষম তরল সার অথবা কঠিন জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। শরত্কালে এবং শীতকালে ঝিন্টি গাছে সার দেবেন না।

কাঁটাই- ছাঁটাই:-

ঝিন্টি গাছে দুবার হার্ড প্রুনিং করতে হয়, প্রথমবার ফুল শেষ হয়ে যাওয়ার পরে দ্বিতীয় বার আগস্ট মাসের শেষে অথবা সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে। এই গাছকে প্রায়শই ছাঁটাই করার দরকার নেই, তবে আপনি তার আকৃতি এবং আকার বজায় রাখতে গাছটিকে আবার ছাঁটাই করতে পারেন। কোন মৃত, মৃত, বা রোগাক্রান্ত পাতা এবং ডালপালা গাছ থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। ডাল ছাঁটাই করবার পাশাপাশি বছরে এক বার টবের মাটি পরিবর্তন শিকড় ছাঁটাই হবে।

ঝিন্টি গাছের ডাল ছাঁটা

সাধারণ কীটপতঙ্গ এবং রোগ:-

ঝিন্টি গাছ কীটপতঙ্গ এবং রোগের বিরুদ্ধে তুলনামূলকভাবে প্রতিরোধী, তবে এটি মেলিবাগ, মাকড়সার মাইট এবং এফিডের জন্য সংবেদনশীল হতে পারে। আপনি যদি আপনার গাছে কোনও কীটপতঙ্গ দেখতে পান তবে এটিকে অন্যান্য গাছ থেকে আলাদা করুন এবং গাছগুলিকে কীটনাশক তেল স্প্রে করতে হবে।

ফিলিপাইন ভায়োলেট ছত্রাকজনিত রোগের জন্যও সংবেদনশীল হতে পারে যেমন পাউডারি মিলডিউ এবং শিকড় পচা। আপনি যদি ছত্রাকজনিত রোগের কোন লক্ষণ দেখতে পান তবে গাছটিকে ছত্রাকনাশক দিয়ে স্প্রে করতে হবে।

[আরও পড়ুন: হলুদ স্থলপদ্ম গাছের প্রতিস্থাপণ এবং পরিচর্যা | How To Care For Yellow Rosemallow]

সমস্যা এবং সমাধান:-

এখানে কিছু সাধারণ সমস্যা রয়েছে যা আপনি ফিলিপাইন ভায়োলেট বা ঝিন্টি গাছ বাড়ানোর সময় সম্মুখীন হতে পারেন:

পাতা হলুদ হয়ে যাচ্ছে: এটি সাধারণত অতিরিক্ত পানি বা ডুবো পানির লক্ষণ। মাটির আর্দ্রতার স্তর পরীক্ষা করুন এবং সেই অনুযায়ী আপনার জল দেওয়ার সময়সূচী সামঞ্জস্য করুন।

পাতা ঝরে যাচ্ছে: এটি অনেকগুলি কারণের কারণে ঘটতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত জল, জলের নিচে থাকা, কীটপতঙ্গ বা রোগ। কীটপতঙ্গ বা রোগের কোনো লক্ষণের জন্য উদ্ভিদ পরিদর্শন করুন। যদি আপনি কোন খুঁজে পান, সেই অনুযায়ী গাছের চিকিত্সা করুন।

ফুল না ফোটে : খুব কম আলো, খুব বেশি সার বা ভুল তাপমাত্রা সহ অনেকগুলি কারণের কারণে এটি হতে পারে। নিশ্চিত করুন যে উদ্ভিদটি পর্যাপ্ত আলো পাচ্ছে এবং তাপমাত্রা আদর্শ পরিসরে রয়েছে। উদ্ভিদকে অতিরিক্ত সার দেওয়া এড়িয়ে চলুন।

প্রিয় পাঠক, এই প্রতিবেদনটি পঠন করবার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার মতো পাঠকের সহযোগিতা “ক্রিয়েটিভিটি গার্ডেনিং” সর্বদা কার্ম করে। গাছই আমাদের একমাত্র সম্পদ যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষিত করতে পারে, বাঁচিয়ে রাখতে পারে। নিঃস্বার্থে গাছ ভালবাসুন, সকলকে গাছ লাগাতে উৎসাহিত করুন।

আপনাদের যদি এই বিষয়ে কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সের মাধ্যমে আমাকে জানাতে জানাবেন। সেগুলোর সমাধান করাবার আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব। আপনার মূল্যবান রেটিং দিয়ে উৎসাহিত করুন, সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, সবাই খুব ভালো থেকো নমস্কার।

আপনার মূল্যবান রেটিং দিয়ে উৎসাহিত করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *