জৈব সার: জৈব সারের ব্যাবহার এর প্রকারভেদ এবং জৈব সারের উপকারিতা

Last updated on April 20th, 2024 at 07:43 am

বিভিন্ন প্রাকৃতিক উৎস যেমন গাছের পাতা এবং অবশিষ্ট অংশ, পশুপক্ষীর রেচন পদার্থ ও দেহাংশ দিয়ে যে সার তৈরী হয় তাকে বলে জৈব সার বলা হয়।

এই সব প্রকৃতি জাত উপাদান দ্বারা তৈরী জৈব পদার্থ মাটির গঠন, উর্বরতা, বায়ু চলাচলের ক্ষমতা এবং জল ধারণ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। গাছকে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে, জৈব সারে যেমন নাইট্রোজেন, পটাশিয়াম, ফসফরাস ইত্যাদিতে সমৃদ্ধ। তাছাড়া বিভিন্ন গৌণ উপাদানও এবং অণুজীবও থাকে।

জৈব সার: জৈব সারের ব্যাবহার এর প্রকারভেদ এবং জৈব সারের উপকারিতা

জৈবসার, ব্যাকটেরিয়া সার এবং অণুজীব সার প্রভৃতি নামে পরিচিতা প্রকৃতিতে পাওয়া জৈব ও পশুর বর্জ্য পদার্থের মাধ্যমে জৈবসার প্রস্তুত করা হয়। যা সবদিক দিয়েই গাছের জন্য আদর্শ। জৈব সার আজ অনেক উপায়ে তৈরি করা হয়। কেঁচো সার, কম্পোস্ট সার, গোবর, নাদেপ সার, গাছের পাতা মোট কথা পচনশীল সব কিছুই জৈব্য সার।

বর্তমানে কৃষির জন্য জৈব সারের ওপর কৃষকদের নির্ভরতা বাড়ছে। কারণ জৈব সার ব্যবহার করে কৃষক ভাইরা কম খরচে জমি থেকে বেশি উৎপাদন পাচ্ছেন। আর এর পাশাপাশি বাড়ছে খামারের মাটির সার ক্ষমতাও। এ ছাড়া এগুলো পরিবেশের জন্যও উপকারী। উর্বর থাকার জন্য এক গ্রাম মাটিতে প্রায় দুই থেকে তিন বিলিয়ন অণুজীবের প্রয়োজন। যার পরিমাণ রাসায়নিক সারেরnb চেয়ে জৈব সারে বেশি পাওয়া যায়।

জৈব সারে উদাহরণ:

গোবরসার, কম্পোষ্ট সার, খইল, শিং কুঁচি, পাতা পচা, হাড়গুড়ো, পোন্টলিটার, কাঠেরছাই প্রভৃতি খুবই পরিচিত জৈবসার। ধৈঞ্চা সবুজ সারও একটি উত্‍কৃষ্ট জৈবসার।

জৈব সারের ব্যাবহার এর প্রকারভেদ এবং জৈব সারের উপকারিতা

জৈব সারের মধ্যে কি কি আছে:

গাছের বেড়ে ওঠার জন্য ১৬ টি মৌলিক উপাদানের প্রয়োজন । গাছ কার্বণ, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন পায় বাতাস ও জল থেকে। বাকী ১৩ টি উপাদান সংগ্রহ করে মাটি থেকে। তারমধ্যে নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশ হল মুখ্য খাদ্য উপাদান। ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও সালফার হল গৌন খাদ্য উপাদান। আর বোরন, তামা, লোহা, ম্যাঙ্গানিজ, জিঙ্ক, মলিবডেনাম ও ক্লোরিণ এই সাতটি হল Micronutrients বা অনুখাদ্য। জৈব সারে উদ্ভিদখাদ্যের প্রতিটিই কম বেশী থাকে। জৈবসার প্রয়োগের পর পচে গেলে গাছ মাটি থেকে ঐ সকল খাদ্য উপাদান গ্রহন করে।

জৈব সারের উপকারিতা:

জৈব সার ব্যবহার করার বেশ কয়েকটি সুবিধা রয়েছে, যেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল –

জৈব সারের উপকারিতা

১). মাটির গঠন কাঠামো ঠিক করে:

জৈব পদার্থ হ’ল মাটির প্রাণবন্ত। জৈব সারে মৌল এবং গৌন দু ধরনের উপাদান বর্তমান যা মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ বাড়িয়ে মাটির উর্বরতা বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে মাটির মধ্যে বায়ু চলাচলের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়, মাটির কাঠামো এবং গুণমান উন্নত হয়। বালুকাময় মাটি সরস হয়ে যায়, জলের ধারন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, তাছাড়া কাদামাটি কিছুটা দোলা তৈরি করে মাটিকে আরও উর্বর করে তোলে।

২). মাটিতে অনুজীবের সংখ্যা বৃদ্ধি করে:

জৈব সারে বিভিন্ন প্রকার অণুজীব থাকে। এইসব অণুজীব মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অণুজীবেরা জৈব সারে থাকার জন্য মাটির জৈব উপাদান কে বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন পরিপোষক পদার্থ উৎপন্ন করে। অণুজীবের সংখ্যা বাড়লে মাটির উর্বরতা স্বাভাবিক ভাবে বাড়ে, যার ফলে মাটির উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ে।

৩). মাটিকে স্থিতিশীল ভাবে সরবরাহ করা:

জৈব সার ধীরে ধীরে মাটিতে বিভিন্ন প্রকার পরিপোষক উপাদান মুক্ত করে, যার ফলে গাছ ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে।

৪). পরিবেশ বান্ধব:

জৈব সার জৈব উপাদান দ্বারা তৈরি হয়, যা অজৈব সারের ব্যবহৃত সংশ্লেষিত রাসায়নিক পদার্থ থেকে অনেক বেশি নিরাপদ। এটি পরিবেশবান্ধব এবং পরিবেশের কোন ক্ষতি করে না বরং পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ করে পরিবেশের উপকার করে।

৫). মাটিতে বায়ু সঞ্চালনে বিশেষ ভূমিকা:

জৈব সার গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং কোষকে মজবুত করতে সহায়তা করে। পিঁপড়া, কেঁচো প্রভৃতি মাটিতে গর্ত তৈরি করে, ফলে মাটিতে জৈব পদার্থ প্রয়োগ করা হলে তা সহজেই গাছের শিকড়ে যায় এবং মাটিতে অক্সিজেন দেয় এবং মাটিতে বায়ু সঞ্চালনে সহায়তা করে। ফলস্বরূপ, গাছটি সতেজ হয়ে উঠেছে।

৬). রাসায়নিক সারের ক্ষতিকারক প্রভাব কমায়:

জমিতে বা টবের মাটিতে অধিক মাত্রায় রাসায়নিক সার ব্যাবহার করবার ফলে গাছের উপর খাবার প্রভাব পড়ে, মাটির অম্লতা বা ক্ষারকত্বের মাত্রা হ্রাস বা বৃদ্ধি পায় । জৈব সার মাটিতে রাসায়নিক সারের আধিক্যজনিত কারণে যে ক্ষতি হয় তা হ্রাস করতে সহায়তা করে। এমনকি অধিক মাত্রায় জৈব সার ব্যবহার করা হয় তবে মাটির কোনও ক্ষতি হয় না।

৭). মানবজাতির জন্য নিরাপদ:

অজৈব সারে ফসলের থেকে জৈব সারে ফলানো ফসল মানুষের জন্য অনেক বেশি নিরাপদ। এতে কোন বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ থাকে না। ফলতঃ জৈব সার ব্যবহার করে ফসল শাকসবজি এবং অন্যান্য শস্য ফলানো নিরাপদ।

[আরও পড়ুন: ডিমের খোসা দিয়ে জৈব সার তৈরির পদ্ধতি | Eggshell Fertilizer]

[আরও পড়ুন: পাকা বেল থেকে তৈরী তরল সার | Liquid Fertilizer]

প্রিয় পাঠক, এই প্রতিবেদনটি পঠন করবার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার মতো পাঠকের সহযোগিতা “ক্রিয়েটিভিটি গার্ডেনিং” সর্বদা কার্ম করে। গাছই আমাদের একমাত্র সম্পদ যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষিত করতে পারে, বাঁচিয়ে রাখতে পারে। নিঃস্বার্থে গাছ ভালবাসুন, সকলকে গাছ লাগাতে উৎসাহিত করুন।

আপনাদের যদি এই বিষয়ে কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সের মাধ্যমে আমাকে জানাতে জানাবেন। সেগুলোর সমাধান করাবার আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব। আপনার মূল্যবান রেটিং দিয়ে উৎসাহিত করুন, সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, সবাই খুব ভালো থেকো নমস্কার।

আপনার মূল্যবান রেটিং দিয়ে উৎসাহিত করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *