পাকা বেল থেকে তৈরী তরল সার | Liquid Fertilizer

Last updated on November 22nd, 2023 at 07:53 pm

পাকা বেল থেকে তৈরী তরল সার | Liquid Fertilizer

জৈব সার হচ্ছে মাটির প্রাণ,জৈব সার ব্যবহারে মাটির উর্বরতা বাড়ে ফলে গাছে ফুল এবং ফলের পরিমান অনেক গুন বৃদ্ধি পাই। গাছের বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নাইট্রোজেন, ফসফেট এবং পটাশ। এগুলি হল গাছের প্রথম সারির খাদ্য উপাদান যা গাছের জন্য গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। জৈব সার ব্যবহারে মাটির উর্বরতা অনেক গুন বেড়ে যায় অর্থাৎ মাটির গঠন ও গুণাগুণ মান উন্নত হয়। জৈব সার ব্যবহারে মাটির উপকারী জীবাণুর ক্রিয়া বেড়ে যায় ফলে গাছ দ্রুত মাটি থেকে খাদ্য উপাদান গ্রহন করে দ্রুত বড় হতে পারে।

আমরা ফল, ফুল এবং চাষের জমিতে জৈব এবং রাসায়নিক দুভাবেই গাছে সার ব্যাবহার করতে পারি, তবে জৈবিক পদ্ধতিতে ফল, ফুল বা সবজী চাষ যেমন গাছের জন্য ভাল তার থেকেও ভাল পরিবেশ এবং সমস্ত জীব কূলের জন্য। রাসায়নিক সারের ব্যবহারে ফসলের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটালেও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে। প্রতিটি বাড়িতে সবজীর উচ্ছিষ্ট অংশ এবং ফলের খোসা থেকে সৃষ্ট আবর্জনা আমাদের চারপাশের পরিবেশকে ক্রমাগত দূষণ করে চলছে। অথচ আমরা যদি একটু সচতেন হয় তাহলে এইসব শাক সবজীর উচ্ছিষ্ট অংশ এবং ফলের খোসা দ্বারা জৈব সার তৈরি করে গাছের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে পারি। ছোট ছাদবাগানের জন্য অথবা সখে দু-একটি গাছের জন্য সারের দোকান থেকে অথবা নার্সারি থেকে সার কেনার প্রয়োজন নেই , আপনি বাড়িতেই অনেক ভাবেই জৈব সার তৈরী করতে পারেন।

পাকা বেল থেকে তৈরী তরল সার | Liquid Fertilizer
পাকা বেল থেকে তৈরী তরল সার | Liquid Fertilizer

জৈব সার তৈরির পদ্ধতি :

আপনি অনেক ভাবেই জৈব সার তৈরী করতে পারেন। প্রয়োজন শুধু উপাদান, তাহলেই আপনি বাড়ি বসেই জৈব সার তৈরি করতে পারবেন,তবে অনেক সময় জৈবসার তৈরীর পদ্ধতি একটু দির্ঘ মেয়াদি হতে পারে। নিম্মে উল্লেখ করা হল কোন কোন উপায়ে আপনারা জৈবসার তৈরী করতে পারবেন

1) জৈব সার তৈরিতে ডিমের খোসার ব্যাবহার
2) চা পাতা দ্বারা তৈরি জৈব সার।
3) জৈব সার তৈরিতে কলার খোসার ব্যাবহার।
4) জৈব সার তৈরিতে পঁচা পাতার ব্যাবহার।
5) জৈব সার তৈরিতে গোবরের ব্যাবহার ।
6) জৈব সার তৈরিতে রান্না ঘরের সবজীর খোসার ব্যাবহার।
7) জৈব সার তৈরিতে সরিষার খৈলের ব্যাবহার ।
8) জৈব সার তৈরিতে ভাতের ফ্যানের ব্যাবহার ।
9) জৈব সার তৈরিতে চাল ধোয়া জলের ব্যাবহার ।
10) জৈব সার তৈরিতে বেলের ব্যাবহার।

[আরও পড়ুন: মিরাকুলান পি জি আর (ট্রায়াকন্টানল ০.০৫%) এর ব্যাবহার | Plant Growth Regulator]

জৈব সার তৈরিতে বেলের ব্যাবহার:

আজকের এই ব্লগে জৈব সার তৈরিতে বেলের ব্যাবহার আমরা জানব, যা গাছের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বেশিরভাগ ছাদ-বাগানি অর্থাৎ বাড়ীর বাগানে বা টবে যারা গাছপালা চাষ করেন তারা সাধারণত তরল সার (liquid fertilizer) ব্যবহার করেন। তাই আজ আমি আপনাদের জন্য একটি উন্ন্যত মানের তরল সার তৈরীর পদ্ধতি দেখাতে চলেছি।

এই পরিপক্ক বেলে এমন বিশেষ কিছু উপাদান আছে, যা গাছের বৃদ্ধি, বিকাশ এবং গাছের ফুল এবং ফলের পরিমান বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। অর্থাৎ গাছের কোষকে মজবুত করে এবং ফসল, ফল এবং ফুল গাছকে তাপ সহনশীল করে তোলে, গাছের শেকড় বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে প্রভৃতি।এই বেলে আছে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম এবং আয়রন মত মূল্যবান পুষ্টি উপাদান।

ফসফরাস গাছের কোষ বিভাজনে অংশগ্রহণ করে এছাড়াও শর্করা উৎপাদন ও আত্তীকরণে সাহায্য করে। শিকড়ের বৃদ্ধি বিস্তার উৎসাহিত করে। গাছের কাঠামোকে মজবুত করে এবং গাছকে নেতিয়ে পড়া থেকে রক্ষা করে। রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ রোধ করে। ফুল, ফল ও বীজে গুণগতমান বাড়ায়।

পটাসিয়াম সারের ব্যাবহারে গাছের কান্ড শক্তিশালী হয়, জলাবদ্ধতা আটকাতে, এছাড়াও খরা, ঠান্ডা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াই এই পটাসিয়াম।

গাছে ক্যালসিয়ামের অভাবে শেকড়ের বৃদ্ধি থেমে যায়, গাছ নেতিয়ে পড়ে, পাতার কিনারা কুঁকড়ে যায়। বেশি গুরুতর হলে গাছ থেকে ফুল ঝড়ে পড়ে এবং নতুন পাতা তৈরীর সময় পোঁড়া দাগ দেখতে পাওয়া যায়।

জৈব সার তৈরির পদ্ধতি

তরল সার তৈরীর পদ্ধতি:-

প্রথমে আপনি একটি বা দুটি পাকা বেল সাগ্রহ কারবেন তারপর সেই বেল দুটি ফাঁটিয়ে সরবত বা জুস করবার জন্য যতটা শাঁশের প্রয়োজন তা নিনে নেব। বাকি অংশ ফেলে না দিয়ে আমরা তরল জৈব সার তৈরী করব। দুটি পাঁকা বেলের অবশিষ্ট অংশ দিয়ে ১০লিটার তরল জৈব সার তৈরী সম্ভব এবং একটি সম্পূর্ণ বড় পরিপক্ক বেল দ্বারা ১০লিটার তরল জৈব সার তৈরী সম্ভব। এবার বেলের অবশিষ্ট অংশ গুলি বালতির জলে ডেলে দিয়ে, বালতির মুখ ডেকে দিয়ে ২৪ ঘন্টার জন্য রেখে দিতে হবে।

২৪ ঘন্টা পর বালতির মুখ খুলে, সম-পরিমান জল মিশিয়ে ভালভাবে জল ঘুলিয়ে নিতে হবে। এরপর সেই জল গাছে দিতে হবে। প্রত্যক ১৫ দিনে একবার বেলের তরল সার ব্যাবহারে গাছ আবার সবুজ, সতেজ এবং ফুলে, ফলে ভরে যাবে। জৈব সারের ব্যাবহার এবং জৈব সারের উপকারিতা সম্পর্কে জনতে দেখুন জৈব সারের উপকারিতা

[আরও পড়ুন: মিরাকুলান পি জি আর (ট্রায়াকন্টানল ০.০৫%) এর ব্যাবহার | Plant Growth Regulator]

 

 

[আরও পড়ুন: Micro Nutrients বা অনুখাদ্য কি ?]

প্রিয় পাঠক, এই প্রতিবেদনটি পঠন করবার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার মতো পাঠকের সহযোগিতা “ক্রিয়েটিভিটি গার্ডেনিং” সর্বদা কাম্য করে। গাছই আমাদের একমাত্র সম্পদ যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষিত করতে পারে, বাঁচিয়ে রাখতে পারে। নিঃস্বার্থে গাছ ভালবাসুন, সকলকে গাছ লাগাতে উৎসাহিত করুন।

আপনাদের যদি এই বিষয়ে কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সের মাধ্যমে আমাকে জানাতে জানাবেন। সেগুলোর সমাধান করাবার আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব। আপনার মূল্যবান রেটিং দিয়ে উৎসাহিত করুন, সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, সবাই খুব ভালো থেকো নমস্কার।

আপনার মূল্যবান রেটিং দিয়ে উৎসাহিত করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *