তরল সার: গরমকালে সমস্ত গাছের জন্য অমৃত এই জৈব তরল সার | Best Liquid Fertilizer for Summer

আমরা বাগান ভাল রাখার জন্য অনেক ধরনের সার ব্যবহার করে থাকি তবে, আজ আমি আপনাদের এমন দশটি তরল সার সম্পর্কে জানাবো যার ব্যাবহারে কিছুদিনে গাছ ফুলে ভরে যাবে, এছাড়া আপনার গাছ সবুজ সতেজ এবং প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে। গাছের জীবনধারণের পাশাপাশি গাছের ফুল এবং ফল উৎপাদনের জন্য বিশেষ পুষ্টি উপাদানের প্রয়োজন হয় সেটি আমরা প্রত্যেকেই জানি।

আজকের প্রতিবেদন থেকে আমরা জানব কিছু অপ্রয়োজনীয় বা ফেলে দেওয়া উপাদান থেকে কীভাবে সহজেই তরল সার তৈরি করা যায়। এই তরল সারের মধ্যে গাছের বৃদ্ধি, বিকাশ এবং ফুল উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এই তরল সার আপনারা বাড়িতে খুব সহজেই বানাতে পারবেন। সমস্ত লিকুইড ফার্টিলাইজার গুলির মধ্যে গাছের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান বর্তমান।

তরল সার: গরমকালে সমস্ত গাছের জন্য অমৃত এই জৈব তরল সার

তরল সারের মধ্যে অনেকগুলি ম্যাক্রো নিউট্রিয়েন্টস এবং ম্যাইক্রো নিউট্রিয়েন্টস (অনুখাদ্য) রয়েছে যা গাছের জন্য ভীষণ প্রয়োজন, আপনি যদি সেই সমস্ত ম্যাইক্রো নিউট্রিয়েন্টস ব্যবহার না করেন, তাহলে আপনার গাছ নানা সমস্যার সম্মুখীন হবে।

বিভিন্ন রাসায়নিক সারে ভিন্ন ভিন্ন অনুপাতে NPK থাকে কিন্তু তরল জৈব সারে মধ্যে উচ্চ মাত্রার নাইট্রোজেন , ফসফরাস এবং পটাসিয়াম থাকে এছাড়াও পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ থাকে যা গাছের জন্য জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই অনুখাদ্যের অভাবে সময়ে ফুল না আসা, ফুলের সংখ্যা কমে যাওয়া, পাতা হলুদ হয়ে ঝড়ে পড়া, ফুলের আকার ছোট হওয়া, বৃন্ত থেকে ফুল ঝড়ে পড়া, কান্ড দুর্বল প্রভৃতি সমস্যা। এই ধরনের সমস্যা থেকে নিন্তার পেতে ব্যাবহার করতে হবে তরল সার।

তরল সার কি?

তরল সার বলতে বোঝায় যেকোন ধরনের উপাদান দ্বারা প্রস্তুত তরল দ্রবণ যা উদ্ভিদকে খাদ্য হিসেবে প্রদান করা হয় । তরল সার হল জৈব, অজৈব এবং অণুজীব- দ্বারা প্রস্তুত উপাদান যা মাটির উর্বরতা, উদ্ভিদের বৃদ্ধি এবং বিকাশে ব্যবহৃত হয়।

তরল সার কত প্রকারের হয়?

জৈব উপাদান দ্বারা প্রস্তুত সারকে জৈব তরল সার বলা হয় এবং অজৈব (খনিজ) উপাদান দ্বারা প্রস্তুত সারকে অজৈব তরল সার বলা হয়| অজৈব(খনিজ) সার রাসায়নিক উপাদান দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করা হয়, যার কারণে এই সারগুলি উদ্ভিদ প্রয়োজনীয় পুষ্টির সঠিক পরিমাণে সরবরাহ করতে পারে। জৈব সার সরাসরি গবাদি পশুর বর্জ উপাদান, উদ্ভিদের অবশিষ্টাংশ বা অনুরূপ প্রাকৃতিক উৎস থেকে তৈরি করা হয়।

ডিমের খোসার সার:

ডিমের খোসায় সব থেকে বেশি মাত্রায় ক্যালসিয়াম থাকে এবং অল্প মাত্রায় পটাসিয়াম থাকে। ডিমের খোসারগুলিকে চূর্ণ করবার পরএকটি পাত্রে রাখুন এবং জল দিয়ে পূর্ণ করুন। পাত্রটিকে এক সপ্তাহের জন্য রেখে দিয়ে ডিমের খোসা ভেজানো জল গাছের গোড়ায় ঢেলে দিন।ক্যালসিয়াম ফুলের শেষ পচা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

পেঁয়াজের খোসার সার:

পেঁয়াজ এবং রসুনের খোসা ভেজানো জল উদ্ভিদের কম্পোস্টে পুষ্টি যোগ করার একটি দুর্দান্ত উপায়। তাই এগুলি ফেলে দেবেন না, আপনার বাড়ির ভিতরে বা বাইরে বেড়ে ওঠা সমস্ত ফল এবং ফুল গাছের জন্য জৈব ফসফরাস, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, জিঙ্ক সমৃদ্ধ সার তৈরি করতে ব্যবহার করুন। পেঁয়াজ এবং রসুনের খোসা ব্যবহার করলে গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

কলার খোসার সার:

গাছ ভর্তি ফুল আমার সকলেই ভালবাসি কিন্তু আপনারা কখনো খেয়াল করেছেন গাছ ভর্তি ফুলের আসল রহস্য কি? চলুন আজ আমরা জেনে নিই…

কলার খোসার তরল সার ব্যবহারে গাছে ফুলের পরিমাণ বৃদ্ধির পাশাপাশি গাছের কাঠামো যথেষ্ট মজবুত হয়। এই তরল সারে N.P.K এর অনুপাত ০:৩:৪১, এই তরলসারে নাইট্রোজেনের পরিমাণ নেই বললেই চলে, এতে আছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম এবং সামান্য পরিমাণ ফসফরাস এছাড়াও আছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, এবং ম্যাঙ্গানিজের মত উপাদান।

আলুর খোসার সার:

এই তরল সার ব্যবহারে গাছে ফুলের পরিমাণ বৃদ্ধির পাশাপাশি গাছের বৃদ্ধি এবং কোষ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা করে। আলুর খোসার তরল সারে নাইট্রোজেন ফসফরাস এবং পটাশিয়াম পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে যা গাছের জন্য খুবই ভালো। তরল সার প্রস্তুত প্রনালী: আলু ছাড়ানোর পর যে অবশিষ্ট অংশ থাকে সে অংশগুলোকে ফেলে না দিয়ে একটি পাত্রের মধ্যে রেখে তাতে কিছুটা পরিমাণ জল দিয়ে দুই থেকে তিন দিনের জন্য রেখে দিতে হবে। দুদিন পরে ওই জলের সাথে আর কিছু পরিমাণ জল মিশ্রিত করে গাছের গোড়ায় দিয়ে দিতে হবে।

চা পাতার তরল সার

এই তরল সার ব্যাবহারে গাছ দ্রুত বৃদ্ধি পাবে এবং গাছ সর্বদা সবুজ এবং সতেজ থাকবে। এক লিটার জলে চা চামচের দুই চামচ চা পাতা ডেলে, দুদিনের জন্য রেখে দিতে হবে। এক থেকে দুই দিন বসতে দেওয়ার পর ছাকনি দিয়ে ছেকে কিছু পরিমাণ জল মিশিয়ে পাতলা করে গাছের গোড়ায় দিতে হবে । এটি গোলাপ গাছের জন্য উত্তম তরল সার।

গরুর গোবরের তরল সার

গাছেরপ্রয়োজনীয় প্রথম সারির পুষ্টি উপাদান গুলির মধ্য যা যা প্রয়োজন, সবকিছুই গোবরের তরল সারে আছে। এটি একটি চমৎকার সার যা মাটির বায়ুচলাচল উন্নত করতে এবং সংকুচিত মাটি ভেঙ্গে দিতে সাহায্য করে।

সরিষার খোলের তরল সার:

সারা বছর ধরে গাছকে সবুজ, সতেজ রাখতে সরিষার খোলের বিকল্প কিছু হতে পারে না। গ্রীস্মকালে গাছের গোড়ায় সরাসরি সরিষার খোল ব্যাবহার না করে তরলকারে গাছের গোড়ায় ব্যাবহার করবেন। গরম কালে গাছের গোড়ায় সরাসরি সরিষার খোল ব্যাবহার করবেন না তা গাছের জন্য ক্ষতিকারক। এক লিটার জলে ২৫০ গ্রাম সরিষার খোল ৫ দিনের জন্য ভিজিয়ে রেখে দিতে হবে। প্রত্যক দিনে একবার কোন কিছুর দ্বারা খোল জল নাড়াচাড়া করতে হবে, এই সময়ে যদি মনে হয় জল কম আছে, তাহলে জল মিশিয়ে নিতে হবে, জল থিতিয়ে গেলে উপরে পাতলা জল নিয়ে গাছের গোড়ায় নিতে হবে।

[আরও পড়ুন: ডিমের খোসার জৈব সার তৈরির পদ্ধতি এবং প্রয়োজনীয়তা]

প্রিয় পাঠক, এই প্রতিবেদনটি পঠন করবার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার মতো পাঠকের সহযোগিতা “ক্রিয়েটিভিটি গার্ডেনিং” সর্বদা কার্ম করে। গাছই আমাদের একমাত্র সম্পদ যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষিত করতে পারে, বাঁচিয়ে রাখতে পারে। নিঃস্বার্থে গাছ ভালবাসুন, সকলকে গাছ লাগাতে উৎসাহিত করুন।

আপনাদের যদি এই বিষয়ে কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সের মাধ্যমে আমাকে জানাতে জানাবেন। সেগুলোর সমাধান করাবার আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব। আপনার মূল্যবান রেটিং দিয়ে উৎসাহিত করুন, সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, সবাই খুব ভালো থেকো নমস্কার।

আপনার মূল্যবান রেটিং দিয়ে উৎসাহিত করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *