ডিমের খোসার জৈব সার তৈরীর প্রদ্ধতি এবং উপকারিতা | Eggshell Fertilizer

Last updated on November 22nd, 2023 at 07:34 pm

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে পুষ্টির উৎস হিসাবে মুরগির ডিম বা হাঁসের ডিম আমরা ব্যাবহার করে থাকি। আর সেই ডিম খাওয়ার পর ডিমের খোসা অপ্রয়োজনীয় মনে করে আমরা ফেলে দিই। কিন্তু এই ডিমের খোসা ফেলে না দিয়ে তা দিয়ে আমরা সহজেই উৎকৃষ্টমানের জৈব সার তৈরী করতে পারি। তবে ডিমের খোসা দ্বারা উৎকৃষ্টমানের জৈব সার ব্যাবহারে আগে এটি তৈরীর পদ্ধতি এবং গুনাগুন জেনে নেওয়া প্রয়োজন।

ডিমের খোসার জৈব সার তৈরীর প্রদ্ধতি এবং উপকারিতা | Eggshell Fertilizer

ডিমের খোসা গাছের ম্যাক্রো নিউট্রিয়েন্টস এর অভাব পূরণ করে । ডিমের খোসার মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, যা গাছের কোষ গঠনে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। ডিমের খোসায় ৯৬% ক্যালসিয়াম কার্বনেট (CaCO3) থাকে যা গাছের কোষ গঠনের প্রধান উপাদান । এ ছাড়াও ডিমের খোসায় আছে নাইট্রোজেন, ফসফরিক অ্যাসিড,আয়রন, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, জিঙ্ক, ফ্লোরিন, ক্রোমিয়াম ও মলিবডেনামের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। উদ্ভিদের প্রথম ক্যালসিয়ামের অভাব জনিত লক্ষন দেখা যায় পাতায়।

ক্যালসিয়ামের অভাবে যে সমস্যা গুলি হয়:

১. ক্যালসিয়ামের অভাবে গাছের নতুন পাতায় এবং অন্তর্বতীকালীন পাতায় ছিঁটে ছিঁটে হলুদাভ দাগ দেখতে পাওয়া যায়।
২. প্রাথমিক অবস্থায় নিয়ন্ত্রন না করা হলে পরবর্তী পর্যায়ে তা মারাত্মক আকার ধারণ করে, পাতার কিনারা ভাঁজ হয়ে কুঁকড়ে যায় এবং কিছুদিন পর তা ঝলসানো ভাব তৈরী হয়।
৩. বেশি মাত্রায় ক্যালসিয়ামের অভাবে শিকড় দুর্বল হয়ে পড়ে এবং গাছ নেতিয়ে পড়ে।
৪. ক্যালসিয়ামের অভাবে ফুল ঝড়ে পড়ে, কাণ্ড ও শিকড়ের বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয়। এছাড়াও পাতা বিকৃতি হয়ে কিনারা বরাবর এবং মাঝ বরাবর হলুদাভ দাগ দেখতে পাওয়া যায়।
৫. শসা, লঙ্কা, টমেটো,স্কোয়াস প্রভৃতিতে ব্লজম রট রোগ হয়।

[আরও পড়ুন: শামুক ঝিনুকের দ্বারা তৈরি জৈব সার]

ডিমের খোসা দিয়ে জৈব সার বা কম্পোস্ট সার তৈরির পদ্ধতি:

প্রথমেই ডিমের খোসাকে ব্যাবহারের উপযোগী করে তুলতে হবে। প্রথমে ডিমের খোসা সংগ্রহ করতে হবে, সংগ্রহকৃত ডিমের খোসা গুলিকে প্রথমে ভালভাবে জলে ধুয়ে, দুই থেকে তিন দিন রোদে বিছিয়ে শুঁকিয়ে নিতে হবে। শুঁকিয়ে যাওয়ার পর শুকানো ডিমের খোসা গুলকে ব্লেন্ডারে, মিক্সচারে বা হামলদিস্তাতে গুড়ো করে পাউডারে পরিণত করতে হবে। গুড়ো করবার সময় খেয়াল রাখবেন খোসা গুলো জেন ভালভাবে মিহি হয়, দানা দানা যেন না থাকে। বড় দানার চেয়ে পাউডার দ্রুত মাটির সাথে মিশে মিনারেলস গাছের গ্রহনোপযোগী হয়ে উঠে। কিন্তু দানা থেকে গেলে সেগুলো টবে প্রয়োগের পর তা মাটির সাথে মিশতে অনেক সময় লাগে ফলে পোকার আক্রমণ দেখা দিতে পারে (তাই প্রথমেই জানিয়েছি ডিমের খোসা ব্যাবহারের আগে ভালভাবে জলে ধুয়ে শুঁকিয়ে নিতে হবে)। কিন্তু না ধুয়ে ব্যাবহার করলে মাটিতে পিঁপড়ে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ হতে পারে। ডিমের খোসা থেকে তৈরি সার যে কোন গাছে ব্যাবহার করা যায়। জৈব সারের ব্যাবহার এবং জৈব সারের উপকারিতা সম্পর্কে জনতে দেখুন জৈব সারের উপকারিতা

ডিমের খোসার জৈব সার তৈরীর প্রদ্ধতি এবং উপকারিতা
ডিমের খোসার জৈব সার তৈরীর প্রদ্ধতি এবং উপকারিতা

টবের গাছে ব্যাবহারের ক্ষেত্রে:

টবের মাটিতে ডিমের খোসার সার ব্যাবহারের আগে টবের কিছুটা মাটি আলগা করে নিতে হবে। তারপর পরিমান মত (৮ ইঞ্চি টবের ক্ষেত্রে ১ চামচ,১০ ইঞ্চি টবের ক্ষেত্রে ১.৫ চামচ এবং ১২ ইঞ্চি টবের ক্ষেত্রে ১.৫ থেকে ২ চামচ) টরের চারিদিক দিয়ে ছিটিয়ে দিতে হবে। ডিমের খোসার না ধুঁয়ে ব্যাবহার করলে মাটিতে পিঁপড়ে আক্রমনের আশংকা থাকে তাই খোসার সারের সাথে কিছুটা পরিমান নিম খৈল মিশিয়ে ব্যাবহার করা যেতে পারে। এই ভাবে সমস্ত গাছে মাসে ১ বার ডিমের খোসার সার ব্যাবহার করা যাবে।

[আরও পড়ুন: শিং কুচি বা Horn meal কি ?]

ডিমের খোসার সার ব্যাবহারের ফলে অনেক সময় মাটিতে পিঁপড়ে ও পোকামাকড় আক্রমণের আশঙ্কা থাকে। তাই ডিমের খোসার সারের সাথে অল্প পরিমান নিম খোল গুঁড়ো মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে, তাতে ক্ষতিকর কীট পতঙ্গের আক্রমণ অনেকটাই কম হয়।

creativitygardening

মাটিতে থাকা গাছে ব্যাবহারের ক্ষেত্রে:

গাছ যদি সরাসরি মাটিতে বসানো থাকে তা হলে নিরুনির দ্বারা গোড়ার মাটি ৩ থেকে ৪ ইঞ্চি গভির ভাবে খুঁড়ে নিতে হবে। মনে রাখবেন, মাটি খুঁড়বেন গাছের গোড়া থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে। তারপর প্রতিটি গাছের চারিদিক দিয়ে ডিমের খোসার ডাস্ট ছিটিয়ে দিতে হবে। এই ডিমের খোসার ডাস্ট সারা বছর ধরে ব্যাবহার যায়।

ডিমের খোসা দিয়ে তরল সার তৈরির পদ্ধতি:

প্রথমেই ডিমের খোসাকে তরল সার ব্যাবহারের উপযোগী করে তুলতে হবে। প্রথমে ডিমের খোসা সংগ্রহ করতে হবে, সংগ্রহকৃত ডিমের খোসা গুলিকে প্রথমে ভালভাবে জলে ধুয়ে নিতে হবে। ধোয়ার পর ডিমের খোসা গুলকে ব্লেন্ডারে, মিক্সচারে বা হামলদিস্তাতে ভাল ভাবে গুড়ো করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে ডিমের খোসা দানা দানা থাকলেও কোন সমস্যা নেই। এবার ডিমের খোসার গুড়ো জলের মধ্য ৪৮ থেকে ৭২ ঘন্টার ভিজিয়ে রেখে সেই জল গাছে ব্যাবহার করতে হবে।

[আরও পড়ুন: Micro Nutrients বা অনুখাদ্য কি ?]

গাছে ক্যালসিয়াম অভাব পুরনে ডিমের খোসার ব্যাবহার বিশেষ উপযোগী, ডিমের খোসা ছাড়াও হাঁড়ের গুড়ো,শামুক, ঝিনুক এবং শিংকুঁচিতেও প্রচুর মাত্রায় ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। এছাড়াও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ পদার্থ পোড়াচুন, ডলোমাইট, জিপসাম, চুনাপাথর প্রভৃতিও ব্যাবহার করা যেতে পারে ডিমের খোসার পরিবর্তে।

creativitygardening

ডিমের খোসা ছাড়াও, আপনি অনেক ভাবেই জৈব সার তৈরী করতে পারেন। প্রয়োজন শুধু উপাদান, তাহলেই আপনি বাড়ি বসেই জৈব সার তৈরি করতে পারবেন। রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার ব্যাবহার করলে গাছের কোন ক্ষতি হয়, মাটি সর্বদা উর্বর থাকে। নিম্মে উল্লেখ করা হল কোন কোন উপায়ে আপনারা জৈবসার তৈরী করতে পারবেন।

[আরও পড়ুন: Flower Booster কি ? | কখন ব্যাবহার করা উচিত ?]

জৈব সার তৈরির অন্যান্য পদ্ধতি :

1) জৈব সার তৈরিতে ডিমের খোসার ব্যাবহার।
2) চা পাতা দ্বারা তৈরি জৈব সার।
3) জৈব সার তৈরিতে কলার খোসার ব্যাবহার।
4) জৈব সার তৈরিতে পঁচা পাতার ব্যাবহার।
5) জৈব সার তৈরিতে গোবরের ব্যাবহার ।
6) জৈব সার তৈরিতে রান্না ঘরের সবজীর খোসার ব্যাবহার।
7) জৈব সার তৈরিতে সরিষার খৈলের ব্যাবহার ।
8) জৈব সার তৈরিতে ভাতের ফ্যানের ব্যাবহার ।
9) জৈব সার তৈরিতে চাল ধোয়া জলের ব্যাবহার ।
10) জৈব সার তৈরিতে বেলের ব্যাবহার।

5/5 - (1 vote)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *