শীতের ফুল: অ্যালিসাম ফুল গাছের প্রতিস্থাপন এবং যত্ন

Last updated on November 21st, 2023 at 06:05 pm

নানা বর্ণের আকর্ষণীয় অ্যালিসাম ফুলগুলো দেখতে ছোট আকারের হয়। বিদেশি এই ফুলগুলি গুচ্ছকারে প্রচুর সংখ্যায় ফোঁটে। বাগানের শোভা বর্ধনের জন্য সাদা অ্যালিসাম, হলুদ অ্যালিসাম, গোলাপী অ্যালিসাম, বেগুনি বর্ণের অ্যালিসামের তুলনা হয় না, বাগানের ছোট্ট একটি স্থানে, টবে বা মাটিতে বা হ্যাঙ্গিন পাত্রে বাগানের শোভা বাড়াতে গাছগুলি প্রতিস্থাপন করা যেতে পারে।

অ্যালিসামের প্রায় ১৭০টি প্রজাতির আছে যার মধ্য কিছু একবর্ষী এবং বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ আছে, যা শীতের শুরু থেকে গুচ্ছকারে সাদা, হলুদ, গোলাপী, বেগুনি বর্ণের প্রচুর ফুল দেয়। শীতপ্রধান অঞ্চলে অ্যালিসাম প্রজাতির ফুলগুলি প্রায়শই শরৎ থেকে শীতকাল প্রযন্ত প্রস্ফুটিত হয়, তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য অংশে অ্যালিসাম আক্রমণাত্মক ভাবে বৃদ্ধি পায়। গাছগুলি ৩ থেকে ১০ ইঞ্চি লম্বা, ২ থেকে ৩ ইঞ্চি চওড়া হয়। অ্যালিসামের বিজ্ঞানসম্মত নাম Lobularia maritima (লোবুলিয়া মারিটিমা), এটি ব্রাসিকেসি (Rubiaceae) পারিবারের অন্তর্গত, আদি নিবাস ইউরোপ মহাদেশে।

শীতের ফুল: অ্যালিসাম ফুল গাছের প্রতিস্থাপন এবং যত্ন:

অ্যালিসাম ফুল প্রায়শই ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে ল্যান্ডস্কেপিংয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। তবে বর্তমানে এটি ইউরোপ সহ সমগ্র এশিয়া এবং উত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন উদ্যানে বা বাড়িতে দেখা যায়য়। কিছু জাতের ফুলে সুবাস রয়েছে। আপনার বাগানে সুগন্ধ এবং ছোট্ট একটি স্থানে, টবে বা মাটিতে বা হ্যাঙ্গিন পাত্রে বাগানের শোভা বর্ধনের জন্য আদর্শ । যত্নের সুবিধার জন্য মিষ্টি অ্যালিসাম প্রায় অতুলনীয়। এটি শীতল তাপমাত্রা সহ্য করে। এবং যদিও গ্রীষ্মের উত্তাপের সময় এটি ফুলের গতি কমিয়ে দিতে পারে, তবে তাপমাত্রা ঠান্ডা হলে এটি আবার ফুলে ফেটে যায়।

ফুলগুলির একটি প্রাণবন্ত, মধুর মতো সুগন্ধ রয়েছে এবং এটি বাঁধাকপি এবং সরিষার সাথে সম্পর্কিত। তারা স্ব-বপন করবে এবং হালকা জলবায়ুতে বছরের পর বছর উজ্জ্বল রঙ দেবে। মিষ্টি অ্যালিসাম সাধারণত সমস্যা-মুক্ত, যদিও উদ্ভিদের চাপের মধ্যে এফিডগুলি দৃশ্যে উপস্থিত হবে ।

অ্যালিসাম ফুল গাছের প্রতিস্থাপন এবং যত্ন

আলো

অ্যালিসাম চারাগাছ প্রতিস্থাপনের পর টবগুলিকে ৪ থেকে ৫ দিনের জন্য একটু ছায়াতে রেখে দিতে হবে। ৫ দিন পর সকালের হালকা রোদ্দুর পায় এমন একটা জায়গায় টবটি রাখতে হবে। অ্যালিসাম শীতের মরসুমে পূর্ণ সূর্য পছন্দ করে, তবে এটি দীর্ঘায়িত শুষ্ক সময় পছন্দ করে না। যদি বাইরে রােপণ করা হয় তবে এটি এমন কোনও স্থানে রোপন করা প্রয়ােজন যেখানে প্রতিদিন কমপক্ষে ৬ থেকে ৮ ঘন্টা সরাসরি সূর্যের আলাে পায়। আলিসাম বেশি গরম আবহাওয়া সহ্য করতে পারে।

গাছগুলিতে পর্যাপ্ত সূর্যের আলাে না পেলে ফুলের আকার ছোট হতে পারে এবং গাছের বৃদ্ধি থমকে যেতে পারে। একইভাবে খুব বেশি সূর্যের তাপে ফুলগুলি ঝরে পড়তে পারে।

মাটি

অ্যালিসাম সুনিষ্কাশিত, আর্দ্র এবং উর্বর মাটি পছন্দ করে যা গ্রীষ্মে আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। টবে অ্যালিসাম প্রতিস্থাপনের জন্য মাটির সাথে প্রায় সম পরিমান জৈব সার ও কোকোপিট মিশিয়ে মাটি প্রস্তুত করতে হবে। অ্যালিসাম গাছের জন্য মাটির Ph মান ৬.৫ থেকে ৭ এর মধ্যে হওয়া দরকার । ঝুলন্ত ঝুড়ি, ব্যাককনি এবং ছোট পাত্রে সর্বদা একটি প্রিমিয়াম স্ট্যান্ডার্ড পটিং মিশ্রণ ব্যবহার করে এই গাছ প্রতিস্থাপন করা যায়।

[আরও পড়ুন: টবে ডালিয়া ফুল গাছের সম্পূর্ন পরিচর্যা]

জল

শীতের মরসুমে অ্যালিসাম গাছগুলিতে প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে এক ইঞ্চি জল সরবরাহ করতে হবে, কিন্তু বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদের ক্ষেত্রে গ্রীষ্মের দিনে বা শুকনো আবহাওয়াতে আরও ঘন ঘন জল দিতে হবে। জল ভালভাবে নিষ্কাশন করবার জন্য প্রতিস্থাপনে পূর্বে আদর্শ মাটি প্রস্তুত করতে হবে। প্রতিস্থাপনের প্রথম কয়েক সপ্তাহের জন্য যতক্ষণ না গাছগুলি শিকড় বিস্তার করছে, ততদিন গভীর ভাবে জল দেওয়ার যাবে না ।

তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা

অ্যালিসাম নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ায় বেড়ে উঠতে সক্ষম, যদিও গাছগুলি স্বল্পস্থায়ী হয়। সাধারণত, কিছু বহুবর্ষজীবী অ্যালিসাম প্রজাতি আছে যেগুলি শক্তিশালী স্ব-বীজকারী, তবে কিছু হাইব্রিড প্রজাতি আছে যা একবর্ষী। ভারতবর্ষে শীতের শুরু থেকে ফুল ফোটা শুরু হয়। নাতিশীতোষ্ণ (Tropical) অঞ্চলে এ গাছ গুলি সারা বছর রেখে চাষ করা হয়।

অ্যালিসাম ফুল গাছের যত্ন

[আরও পড়ুন: WINTER FLOWERS: শীতের সেরা ১৮টি বিদেশী ফুল]

গাছে সার প্রয়োগ

গাছ বসানোর পরে নতুন শিকড় গজানো শুরু হবার এক মাস পরে সুষম তরল সার প্রয়োগ করতে হবে। গাছের বৃদ্ধিকে তরান্বিত করতে ও গাছ থেকে প্রচুর ফুল পেতে নভেম্বর মাস থেকে সার প্রয়োগ করতে হবে। ফুলের ফ্লাশ ডেডহেড করার পরে তরল সার ব্যাবহার করলে দ্রুত পুনঃবৃদ্ধি এবং পুনরাবৃত্ত ফুল ফোটাতে উৎসাহিত করবে।

পোকামাকড় এবং রোগ

এটি সাধারণ পোকামাকড় এবং যে কোন রোগে আক্রান্ত হয় না , তবে ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতি কারনে এটি mealybugs দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। আমাদের দেশে শীতের মরসুমে এই একবর্ষী উদ্ভিদ গুলি জন্মায় এবং ফুল শেষে মাড়া যায়। সুতরাৎ শীতের মরসুমে এই গাছ সাধারণ পোকামাকড় এবং রোগে আক্রান্ত হয় না।

[আরও পড়ুন: টবভর্তি ফুল পেতে জারবেরা গাছের পরিচর্যা]

[আরও পড়ুন: চন্দ্রমল্লিকা গাছ কি ভাবে সংরক্ষণ করবেন আগামী বছরের জন্য]

প্রিয় পাঠক, এই প্রতিবেদনটি পঠন করবার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার মতো পাঠকের সহযোগিতা “ক্রিয়েটিভিটি গার্ডেনিং” সর্বদা কার্ম করে। গাছই আমাদের একমাত্র সম্পদ যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষিত করতে পারে, বাঁচিয়ে রাখতে পারে। নিঃস্বার্থে গাছ ভালবাসুন, সকলকে গাছ লাগাতে উৎসাহিত করুন।

আপনাদের যদি এই বিষয়ে কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সের মাধ্যমে আমাকে জানাতে জানাবেন। সেগুলোর সমাধান করাবার আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব। আপনার মূল্যবান রেটিং দিয়ে উৎসাহিত করুন, সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, সবাই খুব ভালো থেকো নমস্কার।

আপনার মূল্যবান রেটিং দিয়ে উৎসাহিত করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *