Last updated on November 26th, 2023 at 06:42 pm
চন্দ্রমল্লিকা শীতের মরসুমের জনপ্রিয় ফুল, এই গাছের উৎপত্তি পূর্ব এশিয়া সহ ইউরোপ এবং এই ফুলের বৈচিত্র্যের কেন্দ্রস্থল হল চিন। চন্দ্রমল্লিকা বিশ্বব্যাপি অত্যন্ত জনপ্রিয় যা গোলাপের পরই এর স্থান। নানা আকার, বাহারি রং, আকার আকৃতির জন্য বাগানীদের পছন্দের গাছ চন্দ্রমল্লিকা।
চন্দ্রমল্লিকা ফুল টবে, উদ্যানে, বিশেষ সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলে। কিন্তু শীত শেষ হতেই ফুলগুলি শুঁকিয়ে যেতে থাকে, অপেক্ষা করতে হয় আগামী শীতের জন্য। চন্দ্রমল্লিকা কাটিং হল অযৌন বংশবিস্তারের সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি। গাছের বিভিন্ন অংগ, যেমন – কান্ড, শিকড়, পত্রকুড়ি প্রভৃতি মাতৃগাছ থেকে আলাদা করে শিকড় গজানোর মাধ্যমে মাতৃগাছের অনুরুপ নতুন গাছ উৎপাদনকে কাটিং বলা হয়।
চন্দ্রমল্লিকা গাছ কি ভাবে সংরক্ষণ করবেন আগামী বছরের জন্য
চারা তৈরির পদ্ধতি:
ফেব্রুয়ারি মাসের দিকে যখন ফুল দেওয়া শেষ হয়ে যায়; তখন গাছগুলোকে গোড়া থেকে কেটে দিতে হবে। কিছুদিন পর ওসব কাটা জায়গার গোড়া থেকে কিছু সাকার বের হয়। এসব সাকার ৫-৭ সেন্টিমিটার লম্বা হলে মাদার গাছগুলিকে আলাদা করে ছায়াময় জায়গায় স্থাপন করতে হবে। মে-জুলাই মাসে চারাকে বৃষ্টি ও কড়া রোদ থেকে বাঁচানোর ব্যবস্থা করতে হবে।যদি সম্ভব হয় গাছগুলিকে একটি শেডের নিচে রাখার ব্যবস্থা করুন অথবা ত্রিপল দিয়ে গাছগুলিকে রাখার ব্যবস্থা করুন।
শাখা কলম থেকে চন্দ্রমল্লিকার চারা তৈরি করা সবচেয়ে সোজা| জুলাই – আগস্ট মাসের মাঝামাঝি থেকে শাখা কলম করা শুরু হয়| একবছর বয়সী সবল ডাল থেকে ৮-১০ সেন্টিমিটার লম্বা ডাল তেরছাভাবে কেটে রুট হরমোন নিঃসৃত জলের মধ্যে দু’ঘণ্টা ডাল গুলি কে রেখে দিন |
একটি বড় পাত্রের আকার নিন এবং প্রয়োজন অনুসারে লাল বালি যোগ করুন বা লাল বালির পরিবর্তে আপনি কোকো ডাস্ট এবং 50-50 সাদা বালি মিশিয়ে একটি বড় পাত্রে রাখতে পারেন। দুই ঘন্টা পর, বালিতে খুব সাবধানে সমস্ত স্প্রাউটগুলি রাখুন।
দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে আপনি প্রতিটি অঙ্কুর থেকে নতুন অঙ্কুর গঠন লক্ষ্য করবেন।
[আরও পড়ুন: টবে চন্দ্রমল্লিকা ফুল গাছের সম্পূর্ন পারিচর্যা]
কাটিং থেকে চারা তৈরির কোনো বিশেষ সময় বলে কিছু হয়না, আপনি যেকোনো সময়ই কাটিং করতে পারেন, তবে বেশি গরমে না করাই ভালো।
কাটিং করার সময় যে ডাল থেকে করবেন সেটা যেন অবশ্যই নতুন ডাল (সবুজ এবং নমনীয় ) হয়। যে ডাল গুলো পুরনো ( ব্রাউন/হালকা ব্রাউন ও শক্ত) সেগুলো থেকে কটিং করবেন না।
পুরানো ডাল গুলো গোড়া থেকে ১ ইঞ্চি বাদ দিয়ে কেটে দিন, কারণ ওখান থেকেই নতুন ডাল বেরোবে।
নতুন ডাল থেকে ৩-৪ ইঞ্চির কাটিং করে, কাটিং এর নিচের অংশের ( যে অংশটি বালির ভিতরে বসানো থাকবে) কয়েকটি পাতা কেটে বাদ দিন, কারণ ওখান থেকেই রুট বেরোবে।
কাটিং গুলোকে বালির মধ্যে বসানোর আগে বালি টা ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। অনেকে হয়তো বালির পরিবর্তে মাটি ব্যাবহার করবনে, তবে বলে রাখি, বালির porosity মাটির থেকে বেশি বলে, বালিতে রুট এর বৃদ্ধি মাটির থেক ভালো হয়।
কাটিং গুলির নিচের অংশে রুটিং পাউডার লাগানো আবশ্যক নয়, রুটিন পাউডার না লাগালেও হবে ( Optional )।
যদি রুটিন পাউডার লাগাতে হয় তাহলে একটি জায়গায় পাউডার টি গুলে নিয়ে,তার মধ্যে কাটিং এর নিচের ১-২ ইঞ্চি ডুবিয়ে বালিতে বসিয়ে দিন।
বালিতে বসানোর আগে ভিজে বালিতে একটি কাঠি দিয়ে hole করে নিয়ে তার পর কাটিং গুলো পুতে দিন। এক্ষেত্রে বলে রাখি কম thickness /চেটানো জাতীয় টব নিয়ে, টবের নিচের ছিদ্র টি কোনো ঢেলা দিতে আটকে দিতে হবে,নাহলে ছিদ্র দিয়ে বালি বেরিয়ে যাবে।
কাটিং গুলো বালিতে বসিয়ে SAAF পাউডার জলে গুলে ( ১ চামচ/৫লি. জল) বালির মধ্যে দিন তাহলে কাটিং গুলোতে ব্যাক্টেরিয়া জাতীয় কিছু লাগবেনা ( Optional )।
বালিতে বসানোর পর কোনো ছায়ার মধ্যে রেখে দিন ২০-২৫ দিন, আর রোজ একটু করে জল বালিতে দিন যাতে বালি টা ভিজে থাকে। সম্ভব হলে কাটিং বসানোর পর পর কয়েক দিন, দিনে ২-৩ বার করে জল দিন।
[আরও পড়ুন: অ্যালিসাম ফুল গাছের প্রতিস্থাপন এবং যত্ন]
প্রিয় পাঠক, এই প্রতিবেদনটি পঠন করবার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার মতো পাঠকের সহযোগিতা “ক্রিয়েটিভিটি গার্ডেনিং” সর্বদা কার্ম করে। গাছই আমাদের একমাত্র সম্পদ যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষিত করতে পারে, বাঁচিয়ে রাখতে পারে। নিঃস্বার্থে গাছ ভালবাসুন, সকলকে গাছ লাগাতে উৎসাহিত করুন।
আপনাদের যদি এই বিষয়ে কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সের মাধ্যমে আমাকে জানাতে জানাবেন। সেগুলোর সমাধান করাবার আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব। আপনার মূল্যবান রেটিং দিয়ে উৎসাহিত করুন, সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, সবাই খুব ভালো থেকো নমস্কার।