ছাদবাগানে টেকোমা ফুল গাছের পরিচর্যা এবং প্রতিস্থাপন প্রদ্ধতি | Tecoma Plant Care

Last updated on October 31st, 2023 at 08:11 pm

টেকোমা ফুল গাছ একটি বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ, পাশাপাশি গাছটি লতানো বা ঝোঁপের ন্যায়ও হতে পারে। ভারতবর্ষ সহ বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কাতে গ্রীষ্মকাল থেকে শুরু করে শরৎকাল পর্যন্ত এই গাছে প্রচুর পরিমাণে ফুল ফোঁটে, গাছের ডালের প্রতিটি আগাতে গুচ্ছ আকারে Red, Yellow, Orange, Pink, White প্রভৃতি রঙের ফুল দেখতে পাওয়া যায়। এই গাছের অনেক গুলি প্রজাতি রয়েছে তারই মধ্যে আজ আমি আলোচনা করবো অরেঞ্জ,রেড, হোয়াইট ,পিঙ্ক কালারের (Red, Orange, Pink, White Color) টেকোমা গাছের প্রতিস্থাপন এবং পরিচর্যা নিয়ে|

হলুদ টেকোমা গাছের পরিচর্যা সম্পূর্ণ ভিন্ন কারন গাছটি বৃক্ষজাতীয় হয় এবং গাছের উচ্চতা প্রায় কুঁড়ি থেকে চল্লিশ ফুট হতে পারে। ছাদ বাগান করবার জন্য অরেঞ্জ,রেড, হোয়াইট ,পিঙ্ক ,টেকোমা সব থেকে ভাল। শীতের পর পর গাছের ডালপালা কাঁটাই- ছাঁটাইয়ের পাশাপাশি মাটি পরিবর্তন করে দিলে গরমের শুরু থেকে গাছগুলোতে প্রচুর সংখ্যায় ফুল পাওয়া যায়| এই গাছটি টেকোমা ছাড়াও বিভিন্ন নামে পরিচিত যেমন চাইনিজ ট্রাম্পেট, কমলা ট্রাম্পেট, হানিসাকল ফ্লাওয়ার,চন্দ্রপ্রভা প্রভৃতি। তবে বাংলা এবং হিন্দিতে গাছটি টেকোমা বলেই পরিচিত। বসন্তের শেষ এবং গরমের শুরু থেকে গাছে ফুল ফোটা শুরু হয় এবং শীত আসতেই গাছে ফুল কমে যেতে থাকে অর্থাৎ এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর অক্টোবর মাস গাছের flowering season। গাছের প্রতিটি ফুল ৪-৫ দিন স্থায়া হয় তবে টেকোমা ফুলের কোন গন্ধ নেই।

ছাদবাগানে টেকোমা ফুল গাছের পরিচর্যা এবং প্রতিস্থাপন প্রদ্ধতি | Tecoma Plant Care

স্থান নির্বাচন:-

টেকোমা গাছটি রৌদ ভীষন পছন্দ করে, মোটামুটি দিনে ৬ থেকে ৮ ঘটা সূর্যের আলো পাই তেমন স্থানে গাছ প্রতিস্থাপন করা উচিত, এতে গাছের বাড়বাড়ন্ত ভালো হয় এবং রোগে আক্রান্ত কম হয়। গাছটিকে মাটিতে প্রতিস্থাপন করবার কিছু মাস পরেই ফুল আসা শুরু হয়। ‘টেকোমা’ সুনিষ্কাশিত যে কোনো ধরনের মাটিতেই ভাল হয়, তবে খেঁয়াল রাখাতে হবে গরমকালে গাছের মাটি যেন শুঁকিয়ে না যায়। গাছটি যদি টবে প্রতিস্থাপন করতে চান, তাহলে গাছটির চাহিদা অনুযায়ী খাবার,আলো,জল, কীটনাশাক এর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলি খেয়াল করতে হবেI আর সেই সম্পূর্ণ ব্যবস্থাপনা নিম্নে বর্ণিত হলো।

ছাদবাগানে টেকোমা ফুল গাছের পরিচর্যা এবং প্রতিস্থাপন প্রদ্ধতি
Tecoma Plant Care

টব নির্বাচন:-

টেকোমার একটি বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ তাই ভালো হয় বড় গামলা জাতীয় টব নির্বাচন করলেI প্রথম অবস্থাতে গাছটি ৮ ইঞ্চি টবে প্রতিস্থাপন করলেও এক থেকে দেড় বছর পারে ১০ ইঞ্চি অথবা ১২ ইঞ্চি টব স্থানন্তিরিত করতে হবে। বড়ো পাত্র বা টব নিলেই যে প্রচুর ফুল হবে সে-রকম নয়, বড় টব নিলে এক থেকে দেড় বছর অন্তর গাছের শেঁকড় কাঁটাই- ছাঁটাই করতে হয়, তবে আপনি চাইলে বড়ো পাত্রও নিতে পারেন। টব নির্বাচন করবার সময় টবের তলানিতে এবং পাশে অবশ্যই যেন ছিদ্র থাকে, তা না হলে বাড়তি জল টবে জমে গাছটি মাড়া যেতে পারে। তাই বেশি ছিদ্র যুক্ত টব দেখে নিতে হবে, এবং প্লাস্টিকের টব ব্যাবহার না করাই ভাল এতে জল নিকাশি ব্যাবস্থা ভাল হয় না।


➧ প্রথমে টবের ছিদ্র গুলোকে ইটের টুকরো/ টব ভাঙা টুকরো দিয়ে আটকে দিতে হবে।
➧ ছিদ্র গুলোকে আটকে দেওয়ার পর কিছু বালি-নুড়ি টবের মধ্যে বিছিয়ে দিয়ে এক ইঞ্চি বেড তৈরি করতে হবে যাতে অতিরিক্ত জল ড্রেনেজ সিস্টেম থেকে টবের বাইরে বেরিয়ে যাবে।

[আরও পড়ুন: জবা গাছের কাটিং থেকে চারা তৈরির সহজ পদ্ধতি | Grow hibiscus in water]

মাটি প্রস্তুত:-

মাটি একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনার গাছ কেমন হবে তার অনেকটা এর ওপর নির্ভর করে মাটির উপর। যে কোন গাছ টবের তুলনায় মাটিতে খুবই ভালো হয় | গাছটি মাটিতে প্রতিস্থাপনের পূর্বে কিছু পরিমান গোবর সার, একমুঠো হাঁড়গুড়ো, একমুঠো শিংকুঁচি, একমুঠো নিমখোল এবং অল্প পরিমান সুফলা মাটির সাথে ভালকরে মিশিয়ে ১৫ থেকে ২০ দিনের জন্য ডেকে রেখে দিতে হবে, তার পরে গাছটিকে প্রতিস্থাপন করতে হবে| এবং গাছটিকে টবে করবার জন্য প্রচুর পরিমাণে খাবারের প্রয়োজন হয়। টেকোমা গাছটি টবে প্রতিস্থাপনের জন্য উর্বর দোঁয়াশ মাটি সব থেকে আদর্শ। তবে অনেক স্থানে দোঁয়াশ মাটির পরিবর্তে শুধু এঁটেল মাটি পাওয়া যায়, এমন অবস্থাতে ৬০ শতাংশ এঁটেল মাটির সাথে ৪০ শতাংশ সাদা বালি মিশিয়ে নেবেন | গাছটিকে প্রতিস্থাপনের পূর্বে ৫০ শতাংশ উর্বর দোঁয়াশ মাটি নিতে হবে আর নিতে হবে ৩০ শতাংশ জৈব সার (এক বছরের পুরনো গোবর সার/ পাতা পঁচা/ভার্মিকম্পোস্ট), হাফ মুঠো হাঁড়গুড়ো, হাফ মুঠো শিংকুঁচি এবং হাফ মুঠো নিম খোল, এগুলিকে মাটির সাথে ভালকরে মিশিয়ে গাছটি টবে প্রতিস্থাপন করতে হবে। টবে মাটিতে ময়েশ্চার ধরে রাখার জন্য মাটির সাথে কিছু পরিমান কোকোপিট অথবা কাঠের গুঁড়ো ব্যবহার করতে পারেন । গরম কালে যখন গাছে প্রচুর পরিমাণে ফুল আসে সেই সময়ে মাঝে মাঝে জলের অভাবে অনেক সময় ফুল ঝরে যায় , কিন্তু মাটির সাথে কোকোপিট ব্যাবহার করলে গরম কালে ফুল ঝড়ে যাওয়া অনেক অংশেই কমে যার

টবে মাটি ভরা ও গাছ লাগানো :-

মাটি প্রস্তুত হয়ে গেলে অল্প অল্প করে মাটি টবে দিতে হবে আর হাত দিয়ে চেপে দিতে হবে তা হলে মাটির মধ্যে এয়ার গ্যাপ থাকবে না। টবে অর্ধেক মাটি ভরা হলে প্লাস্টিক থেকে চারা গাছ বার করে অর্ধেক মাটির ওপর গাছটাকে সোজা ভাবে বসিয়ে দিতে হবে। এরপর টবের কানা থেকে এক থেকে দেড় ইঞ্চি খালি রেখে বাকি মাটি দিয়ে ভরাট করে দিতেহবে এবং পর্যান্ত পরিমান মতো জল দিতে হবে। জল দেওয়ার পর যদি দেখেন যে- কিছুক্ষণ পর জল বেরিয়ে যাচ্ছে, তাহলে বুঝবেন যে টবের ড্রেনেজ ব্যবস্থা সঠিক হয়েছে।

টেকোমা গাছের প্রতিস্থাপন এবং পরিচর্যা
ছাদবাগানে টেকোমা ফুল গাছের পরিচর্যা এবং প্রতিস্থাপন প্রদ্ধতি | Tecoma plant care

পরিচর্যা :-

Pink, White লতানো ফুল গাছগুলিতে শীতের মরসুমের কম বেশি ফুল দেখতে পাওয়া যায় কিন্তু অন্যান্য গাছগুলিতে শীতকালে ফুল একদমই দেখতে পাওয়া যায় না, সেই সমস্ত গাছের ক্ষেত্রে শীতের মরসুম শেষ হলেই পরিচর্যা শুরু করে দিতে হবে| মার্চ মাসের শুরু থেকে প্রতি মাসে একবার করে গাছে খাবার দিতে হবে| গরমকালে টবের গাছে দিন দু বেলা জল দেওয়া খুবই প্রায়াজন। বর্ষাকালে একটু খেয়াল রাখবেন টানা বৃষ্টি হলে টব টিকে কাত করেও রেখে দিতে পারেন । বৃষ্টির কিছুদিন পর পর টবের মাটি একটু খুঁড়ে নিমখোল দেবেন ও গাছটিকে রৌদ্রে রেখে দেবেন। বর্ষাকালের টবের গাছগুলোতে ১০ থেকে ১২ দিন অন্তর অন্তর ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে।

[আরও পড়ুন: সারা বছর ধরে জবা গাছের পরিচর্যা যেভাবে করবেন]

সার প্রয়োগ:-

টবে গাছ প্রতিস্থাপনের ১ থেকে ২ মাসের মধ্য কোন রাসায়নিক সার ব্যাবহার না করাই ভাল, কিছু মাস পর অল্প জৈব সার দিলে ভালো হয়। জৈব সারের মধ্য গোবর সার, কলার খোসা, ডিমের খোসা, হাঁড় গুড়ো, শিং কুঁচি, পাতাপচা প্রভৃতি একত্রে মিশিয়ে ব্যাবহার করা যেতে পারে । গাছ ছোট থাকলে টবের চারিধার দিয়ে কিছু দানা সুফলা ছিটিয়ে দিতে পাবেন এবং গাছটি বড় হয়ে গেলে প্রতি এক মাস অন্তর অন্তর ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি টবের জন্য ৮ থেকে ১৫ টি ডি.এ.পি দানা ছিটিয়ে দিতে হবে এবং ডি.এ.পি ব্যাবহারের ১৫দিন পর এক চামচ পটাশ সার গোড়া থেকে দূরে টবের ধারে মাটিতে দিয়ে দিতে পারেন। রাসায়নিক সার ব্যাবহারের ১৫- ২০ দিন পর যে কোন কম্পোস্ট সার মাটিতে দেওয়া যেতে পারে। শীতকালে ৭ থেকে ১০ দিন পর সরষের খৈল জল গাছের গোড়ায় দেওয়া যেতে পারে। মনে রাখবেন, অতিরিক্ত রাসায়নিক সার গাছের জন্য বিপদজনক। গাছের সঠিক পরিচর্যা করতে পারলে সারাবছর ফুল পাওয়া যাবে।

বেশি ফুল পাবার জন্য ১ লিটার জলে ২৫০ গ্রাম সরিষার খোল ৩ থেকে ৪ দিনের জন্য ভিজিয়ে রাখতে হবে, গাছে খোঁল জল গাছে দেওয়ার ২৪ ঘটা আগে ১০ ইঞ্চি থেকে ১২ ইঞ্চি টবের জন্য ১২ থেকে ১৫টি (DAP/TSP) দানা জলের সাথে বা খোল জলে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। তবে তীব্র গরমে গাছের গোড়ায় সরাসরি সরিষার খোল ব্যাবহার করবেন না। এছাড়াও সারা বছর NPK 10:26:26 হাফ চামচ করে মাসে একবার ব্যাবহার করা যেতে পারে এতে গাছের ফুল ও হবে এবং গাছের কান্ড ও পাতার বিকাশ হবে | পটাসিয়াম নাইট্রেট ( 13:00:45) হাফ চামচ করে দু মাসে একবার ব্যাবহার করতে হবে এতে গাছ রোগ আক্রান্ত কম হবে এবং কুঁড়ি ঝরা ও রোধ হবে। প্রত্যেক দেড় দু মাস অন্তর এক চামচ গুঁড়ো অনুখাদ্য প্রয়োগ করতে হবে।

জল প্রয়োগ:-

শীতকালে টেকোমা গাছে তুলনামূলক কম জল প্রয়োজন হয়| কিন্তু গরমকালে গাছে কুঁড়ি উৎপাদনের জন্য নিয়মিত গাছের গোড়ায় জল প্রয়োগ করতে হবে, গাছে প্রচুর ফুলের জন্য মার্চ মাসের মাঝামাঝি থেকে গাছের পরিচর্যা শুরু করে দিতে হবে অর্থাৎ নিয়মিত গাছের গোড়ায় সার প্রয়োগ, জল প্রয়োগ করতে হবে

রোগবালাই :-

অন্যান্য গাছের তুলনায় টেকোমা গাছে পোঁকা- মাকড়ের আক্রমন কম দেখা যায়। তবুও গাছকে সুস্থ সবল রাখতে প্রতি ১৫ দিন অন্তর নিম অয়েল জলের সাথে মিশিয়ে সন্ধাতে স্প্রে করতে হবে| নিয়মিত মাটিতে রোপণ করা গাছ বা টবের রোপণ করা গাছগুলো পরীক্ষা করে দেখতে হবে। অনেক সময় পাতার নিচের ভাগে পোকামাকড় অবস্থান করে আবার অনেক ক্ষেত্রে বয়স্ক পাতায় পোকামাকড় বেশি দিন আশ্রয় নেয়। এ জন্য পাতা হলুদ হওয়া মাত্রই ছিঁড়ে ফেলে দিতে হবে। পোকা-মাকড়ের উপদ্রব বেশি হলে রাসারনিক কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে। এবং বর্ষাকালে প্রতি ১৫ দিন অন্তর যে কোন কোম্পানির ফাংগিসাইড জলের সাথে মিশিয়ে সমস্ত গাছে স্প্রে করতে হবে ।

কাঁটাই- ছাঁটাই / মাটি পরিবর্তন :-

প্রায় প্রতিটি টেকোমা গাছের flower season আলাদা হয়, তাই গাছ বুঝে ডালপালা কাঁটাই- ছাঁটাই এবং মাটি পরিবর্তন করে ফেলতে হবে।

[আরও পড়ুন: প্রচুর ফুল পেতে বেলি ফুল গাছের যত্ন যে ভাবে করবেন | Mogra Plant Care]

বংশবিস্তার:-

টেকোমা গাছের চারা তৈরী করা হয় বা বংশবিস্তার ঘটানো হয় গুটি কলম বা কাটিং পদ্ধতির মাধ্যমে। কাটিং থেকে বা কলম থেকে চারা তৈরীর আদর্শ সময় জুলাই থেকে আগষ্ট এবং ফেব্রুয়ারী থেকে মার্চ। ডাল কলম করার জন্য ২০ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার আকারের পুরাতন ডালের অংশ কেটে নিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে সেই অংশটিতে যেন তিন থেকে চারটি চোখ থাকে। ডালটির সমস্ত পাতা ফেলে দেবেন, ডালগুলি বসানোর আগে নিচের দিকের অংশে সেরা ডেস্ক( রুট) হরমোন লাগিয়ে নিলে খুব সহজেই দ্রুত শেকড় গজায়। তবে কাটিং থেকে চারা তৈরি করার সময় কাটিং গুলোকে অবশ্যই ছায়াযুক্ত স্থানে রাখতে হবে।

প্রিয় পাঠক, এই প্রতিবেদনটি পঠন করবার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার মতো পাঠকের সহযোগিতা “ক্রিয়েটিভিটি গার্ডেনিং” সর্বদা কার্ম করে। গাছই আমাদের একমাত্র সম্পদ যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষিত করতে পারে, বাঁচিয়ে রাখতে পারে। নিঃস্বার্থে গাছ ভালবাসুন, সকলকে গাছ লাগাতে উৎসাহিত করুন।

আপনাদের যদি এই বিষয়ে কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সের মাধ্যমে আমাকে জানাতে জানাবেন। সেগুলোর সমাধান করাবার আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব। আপনার মূল্যবান রেটিং দিয়ে উৎসাহিত করুন, সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, সবাই খুব ভালো থেকো নমস্কার।

5/5 - (1 vote)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *