Palash full: ছাদবাগানে অরণ্যের অগ্নিশিখা পলাশ ফুল গাছের যত্ন

বসন্তের মরসুমে গ্রাম বাংলার অধিকাংশ স্থানে দেখা যায় পলাশ ফুল গাছ। বসন্ত এলেই এই ফুলের সৌন্দর্যে ভরে ওঠে মন। পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম সহ বিভিন্ন স্থানে পলাশ গাছ দেখতে পাওয়া যায়। এই পলাশ ফুল বিভিন্ন বর্ণের হয় যেমন লাল পলাশ, হলুদ পলাশ এবং সাদা পলাশ । সাদা পলাশ ফুলকে শ্বেত পলাশ (White Palash) বলা হয়।

পলাশ ফুল গাছ বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন নামে পরিচিত। এর বৈজ্ঞানিক নাম Butea monosperma, এটি Fabaceae পরিবারের সদস্য। পলাশ ফুল সুন্দর হওয়ার পাশাপাশি ঔষধি গুণে পরিপূর্ণ, যার কারণে বাজারে চাহিদা রয়েছে অনেক। তাই আজকের প্রতিবেদন থেকে আমরা পলাশ ফুলের চাষ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আলোচনা করব।

ছাদবাগানে অরণ্যের অগ্নিশিখা পলাশ ফুল গাছের যত্ন

পলাশ ফুলের রং হলুদ, লাল ও লালচে কমলা এবং সাদা এই তিন থেকে চার রকম হয়। পলাশ গাছ বসন্তের মরসুমে ফুলের জন্যই সবচেয়ে বেশি পরিচিত লাভ করেছে, তবে এর পাশাপাশি আশোক, বাসক প্রভৃতি ফুলের সমারোহ আর ফুল মানেই রঙের মিলন মেলা। ফাল্গুনের হাত ধরেই ঋতুরাজ বসন্তের আগমন তাই ঋতুরাজকে স্বাগত জানাতে প্রকৃতির পলাশ ফুল বর্ণিল সাজে সেজেছে। পলাশ ফুল বিভিন্ন নামে পরিচিত উদাহরণস্বরূপ, পারসা, ঢাক, কিশক, সুপকা, ব্রহ্মবৃক্ষ এবং অরণ্যের অগ্নিশিখা নামে পরিচিত। ইংরেজীতে বলে Bastard teak, Parrot tree, Bastard Teak। সংস্কৃতে বলে – পলাশ/কিংশুক, হিন্দীতে বলে – তেসুকাপেড়, ধাক পলাশ, চিরা। নেপালে বলে – পলাশী বুলচেত্র।

পলাশ গাছ সর্বোচ্চ ১৫ মিটার (৫০ ফুঁট) পর্যন্ত উঁচু হতে পারে, গাছের শাখা-প্রশাখাগুলো আঁকাবাঁকা হয় এবং নতুন পাতাগুলি রেশমের মতো সূক্ষ্ম। প্রতিটি পলাশ ফুল ২ – ৪ সেঃ মিঃ লম্বা হয়। পলাশ গাছ বহুবর্ষজীবী এবং পর্ণমোচী অর্থাৎ শীতের মরসুম শুরু হতে গাছের সব পাতা ঝরে যায় এবং গ্রীষ্মের ছোয়ায় নতুন পাতা তৈরী হতে শুরু করে। বসন্তের মরসুমে শুধু ফুল থাকে গাছ কোন পাতা থাকে না। দূর থেকে দেখে মনে হয় অরণ্যের অগ্নিশিখা।

উপযুক্ত স্থান নির্বাচন:

সরাসরি সূর্যের আলো সহ সমতল স্থান পলাশ ফুল গাছের জন্য আদর্শ মোটামুটি দিনে ৬ ঘটা আলো পাই তেমন স্থান নির্বাচন করতে হবে, এতে গাছের বৃদ্ধি ভালো হয় ।

টবেগাছ করবার জন্য ১০.-১২ ইঞ্চি বড় পাত্র নিতে হবে, টবে বসানোর ৭ থেকে ৮ মাস পরেই গাছে ফুল আসে। ‘পলাশ’ বর্ধনশীল কাষ্টল ও পর্ণমোচী উদ্ভিদ। সুনিষ্কাশিত উর্বর দোঁয়াশ মাটিতে পলাশ গাছ প্রাতস্থাপনের পূর্বে টবের ড্রেনেজ সিস্টেম দেখে নিতে হবে।

মাটি প্রস্তুত:

পলাশ ফুল গাছের জন্য উচ্চ জলনিষ্কাশন ক্ষমতা সহ উর্বর মাটি প্রয়োজন।

আলো:

চারাগাছ রোপণের পর, কিছু দিনের জন্য সামান্য ছায়াযুক্ত স্থানে এবং রাতে খোলা আকাশের নিচে দুই দিন রেখে দিতে হবে। তিন থেকে চার দিন পরে অল্প অল্প করে রৌদ্র রাখতে হবে।

পালাশ গাছের পরিচর্যা:

বসন্তের মরসুমেপলাশ গাছে প্রচুর ফুল পেতে শীতের শুরু থেকে পরিচর্যা শুরু করে দিতে হবে। শীতের শুরুতে টবের কিছুটা মাটি তুলে নিতে হবে, মাটি তোলার পূর্বে কিছু পরিমান মাটির সাথে পুরানো গোবর সার , এক মুঠো অনুখাদ্যের দানা, হাফ মুঠো হাড়গুড়ো, হাফ মুঠো সিংকুচি এবং হাফ মুঠো নিম খোল মিশিয়ে গাছের গোড়ায় দিয়ে দিতে হবে। এই ভাবে প্রতিমাসে একবার করে খাবার দিতে থাকবেন যতদিন না কুঁড়ি আসছে।

পোকা-মাকড় দমন করতে প্রতি ৭ থেকে ১০ দিন অন্তর নিম অয়েল জলের সাথে মিশিয়ে সন্ধায় স্প্রে করতে হবে।

বসন্তের মরসুমে পলাশ ফুলের অরণ্যের অগ্নিশিখা দেখে মন জুড়িয়ে যায়। বসন্ত মানেই রঙ বে রঙের ফুলের সমারোহ। মরসুমের এই সময়ে পেয়েছে বসন্তের ছোঁয়া। দীর্ঘ একবছর প্রতীক্ষার পর সকলে সাদরে বরণ করেছে ঋতুরাজ বসন্তকে। আর প্রকৃতিতে আগুন ঝরা অগ্নিশিখা পলাশ ফুল জানান দিচ্ছে বসন্ত চলে চলছে। বসন্তের মরসুমে পলাশ ফুলের সুন্দর্য দূর থেকে আগুনের মতো জ্বলতে দেখা যায়, আর বসন্ত এলেই সবার মনের মাঝে দোলা দেয় পূদোল র্ণিমার আগমন। এ যেন বসন্তে পলাশের স্বর্গ রাজ্য।

[আরও পড়ুন: নীলমণি লতা গাছের সম্পূর্ণ পরিচর্যা | Easy to Grow & Care Petrea Volubilis]

পলাশের ব‍্যবহার :

পলাশের বিভিন্ন অংশ ভেষজ শিল্পে ও অন‍্যান‍্য নানা কাজে ব‍্যবহার হয়ে থাকে। পলাশ কাঠের রস – কষায়, উষ্ণ ও কৃমিনাশ হিসাবে ব্যাবহার করা হয়। পলাশের ফুল – উষ্ণ এবং কুষ্ঠরােগ দূর করে এছাড়াও ফুল থেকে যে হলুদ রঙ পাওয়া যায় তা দোলের রঙ তৈরীতে কাজে লাগে। পলাশের বীজ – কণ্ডু, দদ্র ও ত্বক দোষ নাশক হিসাবে ব্যাবহার করা হয়। পলাশ গাছের শিকড় দিয়ে একসময় মজবুত দড়ি তৈরী করা হতো। পলাশের পাতা দিয়ে তৈরী হয় থালা,বাটি।  এছাড়া পলাশ পাতা উদরাময় অজীর্ন,জ্বরে ব‍্যবহার করা হয়ে থাকে। কাঠ,হোম ও উপনয়ন অনুষ্ঠানের উপকরণ হিসাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে পলাশ অত‍্যন্ত পবিত্র একটি গাছ। হিন্দু ধর্মমতে গাছের ত্রিপত্র ব্রক্ষ্মা, বিষ্ণু ও শিবের প্রতীক। এছাড়াও সরস্বতী পুজোর অন‍্যতম প্রধান উপকরণ এই পলাশ ফুল।

প্রিয় পাঠক, এই প্রতিবেদনটি পঠন করবার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার মতো পাঠকের সহযোগিতা “ক্রিয়েটিভিটি গার্ডেনিং” সর্বদা কাম্য করে। গাছই আমাদের একমাত্র সম্পদ যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষিত করতে পারে, বাঁচিয়ে রাখতে পারে। নিঃস্বার্থে গাছ ভালবাসুন, সকলকে গাছ লাগাতে উৎসাহিত করুন।

আপনাদের যদি এই বিষয়ে কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সের মাধ্যমে আমাকে জানাতে জানাবেন। সেগুলোর সমাধান করাবার আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব। আপনার মূল্যবান রেটিং দিয়ে উৎসাহিত করুন, সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, সবাই খুব ভালো থেকো নমস্কার।

আপনার মূল্যবান রেটিং দিয়ে উৎসাহিত করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *