গরমের ফুল ভুটান মল্লিকা বা ভুটান জুঁই গাছের সম্পূর্ন যত্ন

ভুটান জুঁই গুল্ম জাতীয়, বহুবর্ষজীবি উদ্ভিদ যা 1.5 মিটার(৫ ফুঁট) পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। শীতের মরসুমে অল্প সংক্ষক ফুল ফুটলেও গরমের শুরু থেকে সাদা রঙের প্রচুর ফুল ফোটে। গাছটির বোটানিক্যাল নাম রাইটিয়া অ্যান্টিডিসেন্টেরিকা (Wrightia antidysenterica) , এটি Apocynaceae (Oleander) পরিবারের অন্তর্গত। এটি সংস্কৃতে কুটজ বা অম্বিকা নামেও পরিচিত।

আজকের প্রতিবেদন থেকে আপনারা ভুটান মল্লিকা বা ভুটান জুঁই গাছের পরিচর্যা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারবেন। কীভাবে মাটি প্রস্তুত এবং প্রতিস্থাপন করতে হবে, কোন সময়ে সার ও কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে, সমস্ত কিছুই আজকের প্রতিবেদনে আলোচনা করবো।

গরমের ফুল ভুটান মল্লিকা বা ভুটান জুঁই গাছের সম্পূর্ন যত্ন

ভুটান জুঁই এর অপর নাম ভুটান মল্লিকা, কুটাজা এবং অম্বিকা। ইংরেজি নাম Arctic Snow, White angel, Snowflake, Milky way, Sweet Indrajao, Pudpitchaya, Winter Cherry Tree প্রভৃতি। যদিও এই গাছের সঠিক তথ্য এখনও প্রযন্ত সঠিক ভাবে পাওয়া যায় নি। আমি আমার YouTube Channel এ ভুটান জুঁই গাছের পরিচর্যা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আপনাদের সাথে সেয়ার করেছি।

মনে করা হয় এই গাছের আদি বাসস্থান এশিয়ার – শ্রীলঙ্কা এবং ভারতের দাক্ষিণাত্য অঞ্চলে। অনেকে. গাছটিকে শ্রীলঙ্কা জুঁই ও বলে থাকে, বহু প্রাচীনকাল থেকেই ভারতীয় আয়ুর্বেদে বিভিন্ন ঔষুধ প্রস্তুত করতে কুটাজা এবং অম্বিকার ব্যবহার হয়ে আসছে।

ভুটান জুঁই সাধারণত পাঁচ পাঁপড়ি বিশিষ্ট সাদা বর্নের হয়, ফুলের মাঝখানে সূক্ষ অসংখ্য সাদা রঙের পুংকেশর থাকে। ফুলগুলি ৪ থেকে ৫ দিন স্থায়ী হয়। এই গাছের জন্য অলম্বের প্রয়োজন হয় না।

ভুটান জুঁই বা ভুটান মল্লিকার চারা গাছ সংগ্রহ:

নার্সারি থেকে চারা গাছ সংগ্রহের সময় আপনাকে গুরুত্ব দিতে হবে রোগমুক্ত ও সুস্থ সবল চারা নির্বাচনের জন্য। যেকোনো নার্সারি থেকে আপনি স্বল্প টাকার বিনিময়ে ভাল মানের চারা পেয়ে যাবেন। ভুটান জুঁই বা ভুটান মল্লিকার চারা ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাসে প্রতিস্থাপন করতে হয়।

মাটি প্রস্তুত:

মাটির জলনিষ্কাশন ব্যাবস্থা উন্ন্যতএবং জৈব উপাদান দ্বারা মাটি উর্বর করতে হবে।

দোআঁশ মাটির সঙ্গে নিতে হবে কোকো পিট ,এক বছরের পুরনো গোবর সার অথবা ভার্মি কম্পোস্ট এবং নিতে হবে হাড়গুড়ো, সিংকুচি এবং পরিমাণ মতো নিম খোল।

মাটির সাথে মিশ্রন গুলি ভাল করে মিশিয়ে, জল ছিটিয়ে কোন কিছু দিয়ে ১০ দিনের জন্য ঢেকে দেবেন। ১০ দিন পর মাটি আলগা করে ১ দিনের জন্য রৌদ্রে রেখে দেবেন, তার পরে প্রতিস্থাপন করবেন। গরমের সময়ে মাটির ময়েশ্চার ধরে রাখার জন্য কোকোপিট অথবা কাঠের গুঁড়ো ব্যবহার করতে হবে।

টব নির্বাচন:

ভুটান জুঁই গাছ ছাদবাগান অথবা ব্যালকনিতে করার জন্য মাঝারি সাইজের টব (১০ থেকে ১২ ইঞ্চি) অথবা হাফ ড্রাম সংগ্রহ করতে পারেন। এছাড়াও বাড়ির আঙ্গিনায় বা বাগানের স্বল্প পরিসরে আপনি সহজে ভুটান জুঁই ফুল গাছ করতে পারেন।

ভুটান জুঁই করবার জন্য টব নির্বাচন

জল প্রয়োগ:

মাটির আর্দ্রতা পরীক্ষা করতে আঙুল মাটিতে ঠেলে দিন, ভেজা থাকলে জল দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

মাটির উপরের (1-2 ইঞ্চি) শুকিয়ে যাবার পরে, মনে হলে জল দিন।

গ্রীষ্মের সময়ে দুবেলা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জল দিতেহবে এবং শীত ও বর্ষায় জল কমিয়ে দিতে হবে, প্রয়োজনে সেডের নীচে টবগুলিকে রাখবেন।

রি-পটিং:

ভুটান মল্লিকা বা ভুটান জুঁই অথবা অন্যান্য গাছ পাত্রে থাকলে প্রতি এক থেকে দেড় বছর অন্তর পাত্রের মাটি এবং শিকড় ছাঁটাই করে সার দিয়ে পুনরায় পাত্রে চুড়ান্ত প্রতিস্থাপন করতে হবে।

সন্ধ্যায় পুনঃ-পাটিং করুন এবং গাছটিকে ২ থেকে ৩ দিনের জন্য ছায়াযুক্ত জায়গায় রাখুন এবং তারপরে গাছটিকে প্রতিদিন সকাল ২ ঘন্টার জন্য রেখে কিছুদিন পর উপযুক্ত আবহাওয়ায় স্থানান্তর করুন।

সার প্রয়োগ:

প্রচুর ফুল পেতে ফেব্রুয়ারী মাস থেকে গাছের যত্ন শুরু করতে হবে, ক্রমবর্ধমান ঋতুতে মাসে একবার জৈব সারের সাথে অনুখাদ্য প্রয়োগ করতে হবে।

প্রয়োজনে গাছের শিকড়ে আঘাত না করে উপরের মাটি কিছুটা আলগা করে, একটি আদর্শ খাবার প্রস্তুত করে মাসে একবার করেপ্রয়োগ করতে হবে।

বংশবিস্তার:

ভুটান জুঁই গাছের বংশবিস্তার ঘটানো হয় কলম এবং কাটিং পদ্ধতির মাধ্যমে । কলম থেকে চারা তৈরীর আদর্শ সময় জুলাই – আগষ্ট এবং ফেব্রুয়ারী – মার্চ। যদি নার্সারী থেকে পলিথিনে রাখা চারা গাছ সংগ্রহ করেন, তাহলে শিকড় তৈরী হয়েছে কি না তা নিশ্চিৎ করবেন। চারা গাছ বাড়িতে রেখে ৩-৪ দিন পর প্রতিস্থাপন করবেন।

  1. ভুটান মল্লিকা বা ভুটান জুঁই বহিঃপ্রাঙ্গণ বা হাউসপ্ল্যান্টের করবার জন্য বড় টব নির্বাচন নির্বাচন করতে হবে।
  2. সীমিত স্থানে বা বাগানের অল্প জায়গায় ফুল গাছ করবার জন্য ভুটান মল্লিকা বা ভুটান জুঁই একদম আদর্শ।

প্রিয় পাঠক, এই প্রতিবেদনটি পঠন করবার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার মতো পাঠকের সহযোগিতা “ক্রিয়েটিভিটি গার্ডেনিং” সর্বদা কার্ম করে। গাছই আমাদের একমাত্র সম্পদ যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষিত করতে পারে, বাঁচিয়ে রাখতে পারে। নিঃস্বার্থে গাছ ভালবাসুন, সকলকে গাছ লাগাতে উৎসাহিত করুন।

আপনাদের যদি এই বিষয়ে কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সের মাধ্যমে আমাকে জানাতে জানাবেন। সেগুলোর সমাধান করাবার আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব। আপনার মূল্যবান রেটিং দিয়ে উৎসাহিত করুন, সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, সবাই খুব ভালো থেকো নমস্কার।

1/5 - (1 vote)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *