নীল কৃষ্ণচূড়া, নীল জ্যাকারান্ডা নামেও পরিচিত। নীল কৃষ্ণচূড়ার বৈজ্ঞানিক নাম জ্যাকারান্ডা মিমোসিফোলিয়া (Jacaranda mimosifolia)। এটি ফাবাসিয়ি (Bignoniaceae)পরিবারের অন্তর্গত একটি বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ যা জ্যাকারান্ডা বা আকাশি কৃষ্ণচূড়া নামেও পরিচিত। এটি নীল বা আকাশি কৃষ্ণচূড়া বলে পরিচিত হলেও এর ফুলের রঙ বেগুনী বর্ণের।
গ্রীষ্মমন্ডলীয় , রৌদ্রোজ্জ্বল পরিবেশে কৃষ্ণচূড়া গাছ সহজে বৃদ্ধি পায়। উর্বর নিষ্কাশন সহ দোঁয়াশ, বেলে দোঁয়াশ অথবা কাঁকড় মিশ্রিত মাটিতে বৃদ্ধি পেতে পারে নীল কৃষ্ণচূড়া। সামান্য অম্লীয় মাটিতেও এই বেড়ে উঠতে সক্ষম প্রয়োজন সামঞ্জস্যপূর্ণ আর্দ্রতা। নীল কৃষ্ণচূড়া গাছ 25-30 ফুট উচ্চতায় বৃদ্ধি পায় এবং চকচকে সবুজ পাতা রয়েছে।
Blue Jacaranda | ভারতের মাটিতে নীল কৃষ্ণচূড়া গাছের যত্ন কিভাবে করবেন
নীল কৃষ্ণচূড়া গাছের আদি নিবাস দক্ষিণ আমেরিকা হলেও বর্তমানে গাছটি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, স্পেন, পর্তুগাল ও ইতালিত, আফ্রিকার কিছু অংশ যেমন জাম্বিয়া এবং কেনিয়ার মতো উপক্রান্তীয় জলবায়ুতে এই গাছ দেখতে পাওয়া যায়। ভারতের মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, কেরালা, কর্ণাটক এবং ঝাড়খন্ড রাজ্যে নীল কৃষ্ণচূড়া লাগানো হয়েছে।নীল কৃষ্ণচূড়া অপেক্ষাকৃত কম শীতের দেশগুলোতে ভালো জন্মায়।
নীল কৃষ্ণচূড়া পর্ণমোচী, বৃক্ষজাতীয় বহুবর্ষজীবি উদ্ভিদ। এটি খরা-সহনশীল তবে অতিবৃষ্টি এবং প্রচন্ড ঠান্ডা গাছের জন্য বিপদজনক। যাইহোক, নীল কৃষ্ণচূড়া গাছ শুধু সৌন্দর্য এবং ছায়া প্রদান করে না; এর সূক্ষ্ম, নলাকার বেগুনী বর্ণের ফুল স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড়কে আকর্ষণ করে।
মাটি প্রস্তুত:
নীল কৃষ্ণচূড়া বা জ্যাকারান্ডা গাছ উত্তম নিষ্কাশন করা মাটিতে সবচেয়ে ভালোভাবে বেড়ে উঠতে সক্ষম। এই গাছগুলি অত্যন্ত খরা-সহনশীল, যার কারনে প্রচন্ড গ্রীস্মেও গাছগুলি ফুল দিতে সক্ষম। যাইহোক, ছোট গাছ অতিরিক্ত জলাবদ্ধ কারনে শিকড় পচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
অল্পবয়সী গাছের ক্ষেত্রে উপযুক্ত যত্নের প্রয়োজন। গাছ প্রতিস্থাপনের পূর্বে মাটির সাথে পর্যাপ্ত পরিমানে জৈবসার- গোবর সার এবং পাতা পচা সার মিশিয়ে নিতে হবে। প্রতিস্থাপনের পরে শিকড় অনেক সময় ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হয়, ফলে গাছ মাড়া যায় অথবা গাছের গোড়ায় পোকা বা পিঁপড়ের আক্রমন ঘটে, এ থেকে নিস্তার পেতে মাটির সাথে কিছুটা ছত্রাকনাশক এবং পরিমান মত নিমাখাল মিশিয়ে নিতে হবে।
নীল কৃষ্ণচূড়া গাছের জন্য উর্বর দোঁয়াশ অথবা বেলে-দোঁয়াশ মাটি আদর্শ। এছাড়াও মাঝারি বালুকাময় মাটিতে সামান্য অম্লীয় pH স্তরের মাটিও এই গাছের জন্য উপযুক্ত। এটি হালকা কাদামাটি এবং দোআঁশ মাটির প্রতিও সহনশীল তবে ভারী, ভেজা বা ভালভাবে নিষ্কাশনযোগ্য নয় এমন মাটি কৃষ্ণচূড়া গাছের জন্য উপযুক্ত নয়। জলাবদ্ধতার কারনে শিকড় পচা এবং গাছের গোড়া পচে যাওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
জল প্রয়োগ
নীল কৃষ্ণচূড়া গাছে জলের চাহিদা নির্ভর করে জলবায়ুর উপর। ছোট গাছে নিয়মিত জলের সরবরাহ প্রয়োজন, বিশেষ করে ক্রমবর্ধমান মরসুমে।
যাইহোক, একবার স্থাপিত করবার পরে নিয়মিত গাছে জল দিতে হবে । নীল কৃষ্ণচূড়া যথেষ্ট খরা সহনশীল, গ্রীষ্মের চরম উত্তাপের সময়ে মাঝে মাঝে গভীর ভাবে জল দিতে হবে।
আপনার গাছে জল পর্যাপ্ত আছে কিনা তা পরিমাপ করতে, মাটিতে আঙুল ঢুকিয়ে জলের পরিমাপক করতে হবে। উপরের মাটি 3 থেকে 4 ইঞ্চি শুকিয়ে গেলে গাছে পর্যাপ্ত জল দিন। গাছের সুপ্ত অবস্থায় অর্থাৎ শীতের মাস গুলিতে জল কমিয়ে দিন।
[আরও পড়ুন: গ্রীষ্মের মোহনীয়তায় কৃষ্ণচূড়া ফুলের লাল রঙে রেঙেছে গোটা আকাশ]
আলো
নীল কৃষ্ণচূড়া গাছের সর্বোত্তম ফুল প্রস্ফুটিত হওয়ার জন্য এবং গাছের সঠিক বৃদ্ধির জন্য গাছটিতে পূর্ণ সূর্যের আলো প্রয়োজন। প্রতিদিন কমপক্ষে ছয় থেকে আট ঘন্টা সূর্যের আলো পায় তেমন স্থানে গাছটি প্রতিস্থাপন করতে হবে। ছোট নীল কৃষ্ণচূড়া গাছ প্রয়োজনে হালকা ছায়া সহ্য করতে পারে, তবে গাছের বৃদ্ধির জন্য সর্বোত্তম সূর্যালোক প্রয়োজন। কম মাত্রায় আলোর কারনে ফুলের পরিমাণ কমে যেতে পারে, ফুলের উৎজ্বলতা কমে যেতে পারে এবং প্রাণবন্ততাকে প্রভাবিত করতে পারে।
দক্ষিণ আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকার মতো বৈচিত্র্যময় জলবায়ুতে ফুলের বিশেষ তারতম্য লক্ষকরা যায় না কিন্তু একইভাবে অস্ট্রেলিয়ায় জলবায়ুর বেশি তারতম্যর কারণে উৎজ্বল বেগুনি ফুলের অভাব দেখা দিতে পারে।
তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা
নীল কৃষ্ণচূড়া বা জ্যাকারান্ডা (Jacaranda mimosifolia) দক্ষিণ আমেরিকা, বিশেষ করে আর্জেন্টিনা এবং দক্ষিণ আফ্রিকার স্থানীয় জলবায়ুতে ভালোভাবে বৃদ্ধি পায়। তারা অস্ট্রেলিয়া, হাওয়াই, ফ্লোরিডা এমনকি জাম্বিয়া, কেনিয়ার কিছু অংশের উষ্ণ জলবায়ু অঞ্চলেও ভালভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে, তবে ফুলের উৎজ্বলতা কমে যেতে পারে।
নীল কৃষ্ণচূড়া পর্ণমোচী এবং বেশ খরা-সহনশীল, তবে তারা ভাল-নিষ্কাশিত মাটি এবং দিনে কমপক্ষে 6 ঘন্টা সূর্যালোক পছন্দ করে।
কিছু প্রজাতি জ্যাকারান্ডা আছে যা মাঝে মাঝে ঠান্ডা আবহাওয়ার দিনগুলি সহ্য করতে পারে (6°C মতো), তবে এই প্রজাতির নীল কৃষ্ণচূড়া শীতল হিমায়িত জলবায়ুতে সঠিক ভাবে বেড়ে উঠতে সক্ষম নয়। এই উদ্ভিদ তাপ এবং আর্দ্রতা পছন্দ করে তবে ধ্রুবক উচ্চ তাপমাত্রা সহ অঞ্চলে ট্রাঙ্ক স্ক্যাল্ডের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
সার প্রয়োগ
নীল কৃষ্ণচূড়া গাছগুলিতে প্রতি বছর মার্চ মাসে একটি সুষম সার প্রয়োগ করতে হবে, তবে গাছগুলিতে খুব বেশি নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ সার বেশি না দেওয়া ভাল, বেশি সার প্রয়োগে ফুলের উপর প্রভাব পড়তে পারে। মরসুমের শুরুতে NPK ১০:২৬:২৬ (নাইট্রোজেন-ফসফরাস-পটাসিয়াম) পরিমাণ মত ব্যাবহার করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।