কুঞ্জলতা গাছের সম্পূর্ণ পরিচর্যা

Last updated on October 14th, 2023 at 02:06 pm

কুঞ্জলতা গ্রাম বাংলার পরিচিত লতাজাতীয় ফুল গাছ। আপনি যদি দ্রুত বর্ধনশীল, কম রক্ষণাবেক্ষণের লতাজাতীয় উদ্ভিদ খুঁজছেন যা আপনার বাগানে রঙিন এবং সুন্দর করে তুলবে, তবে কুঞ্জলতা (Ipomoea quamoclit) আপনার জন্য আদর্শ। এই গাছগুলি লম্বাই ৬ থেকে ১১ ফুট পর্যন্ত হতে পারে, এগুলিকে বাড়ির ছাদে, ব্যালকুনিতে এবং বেড়া এবং দেয়ালের মতো স্থানে বেড়ে উঠতে সক্ষম।

এই প্রতিবদন থেকে আপনি কুঞ্জলতা গাছের প্রতিস্থাপন এবং পরিচর্যা সম্পর্কে জানতে পারবেন। কুঞ্জলতা এর বিজ্ঞানসম্মত নাম Ipomoea quamoclit, এটি Convolvulaceae পারিবারের অন্তর্গত, আদি নিবাস North America। কুঞ্জলতা গাছ ইংরেজিতে যেমন cypress vine, cypressvine morning glory, cardinal creeper, cardinal climber, hummingbird vine ইত্যাদি নামে পরিচিত। বর্তমানে ভারতবর্ষ সহ পৃথিবীর গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠে বহুবর্ষজীবী কুঞ্জলতা উদ্ভিদ। বাংলায় অন্যান্য পরিচিত নাম- তরুলতা, কামলতা, জয়ন্তী, তারালতা, গেইট ফুল, গেইট লতা, সূর্যকান্তি ফুল ইত্যাদি।। কুঞ্জলতা কীভাবে বাড়তে এবং যত্ন নেওয়া যায় সে সম্পর্কে এখানে একটি বিস্তৃত নির্দেশিকা রয়েছে।

কুঞ্জলতা গাছের সম্পূর্ণ পরিচর্যা

পৃথিবীর প্রায় সকল ক্রান্তীয় অঞ্চলে কুঞ্জলতা গাছ দেখতে .পাওয়া যায়। এর ফুল গুলো সকালে ফোটে বলে এর অপর নাম সূর্যকান্তি। পাঁচকোণা বিশিষ্ট তারকাকৃতি ফুলের গঠনের জন্য একে তারালতা। এই উদ্ভিদের কান্ড নরম সবুজ, সহজেই ভেঙে যায় তবে পরিনত হলে বাদামি রঙের ও তুলনায় পোক্ত হয়ে থাকে। এর কান্ড বল্লী ধরনের অর্থাৎ কুঞ্জলতা কোন অলম্বাকে অবলম্বন করে ওপরে ওঠে। এর পাতাগুলি গাঢ় সবুজ বর্ণের হয় এবং পাতাগুলি সরল, একান্তর ভাবে সজ্জিত থাকে। পাতাগুলি ৫ – ৭.৫ সেমি লম্বা। পত্রকিনারা পালকের মতো গভীরভাবে খন্ডিত, পাতার প্রত্যেক পাশে ৯-১৯টি করে খন্ড থাকে। এরূপ খন্ডনের কারনে পাতাগুলিকে দেখতে লাগে অনেকটা ফার্ণের মত। গাছ বেশি ঘন বা ঝোঁপালো হলে কুঞ্জলতার পাতাও আলাদা সৌন্দর্যের প্রকাশ ঘটায়।

কুঞ্জলতা বর্ষজীবী লতা জাতীয় উদ্ভিদ। এর আদি নিবাস ক্রান্তীয় আমেরিকা হলেও এটি দুনিয়ার প্রায় সকল ক্রান্তীয় অঞ্চলে পাওয়া যায়। অস্ট্রেলিয়া, ফিজি, ভিয়েতনাম, মেক্সিকো এবং আমাদের দেশেও ব্যাপক ভাবে এর দেখা মেলে। কুঞ্জলতা সাধারণত ১-৩ মিটার লম্বা হয়। কান্ড নরম সবুজ, সহজেই ভেঙে যায় তবে পরিনত হলে বাদামি রঙের ও তুলনায় পোক্ত হয়ে থাকে। এর কান্ড বল্লী ধরনের অর্থাৎ কুঞ্জলতা কোন অবলম্বন কে অবলম্বন করে ওপরে ওঠে।

কুঞ্জলতা গাছের সম্পূর্ণ পরিচর্যা

সাধারণত গ্রীষ্মের শুরু থেকে কুঞ্জলতায় ফুল ফুটতে শুরু করে যা প্রায় শীতকাল পর্যন্ত ফোটে। ফুলগুলি গন্ধহীন, ৩-৪ সেমি লম্বা এবং ২ সেমি ব্যাসবিশিষ্ট। দল ও বৃতি একসাথে যুক্ত হয়ে নল বা মাইকের মত আকার নেয়। ফুলে ৫টি সূচালো অগ্রভাগ বিশিষ্ট পাঁপড়ি থাকে। পাঁচকোণা বিশিষ্ট তারকাকৃতি ফুল হয় বলে একে তারালতা নামেও ডাকা হয়। পাঁপড়ির মাঝে থাকে ৫ টি সাদা পুংকেশর। পুষ্পদন্ডে ১-৩ টি ফুল ফোটে। ফুলের রঙ সাধারণত লাল তবে গোলাপি বা সাদা রঙের ফুলও দেখা যায়।

ফুল ঝরে গিয়ে ছোট ছোট ডিম্বাকার ফল হয়। ফলগুলি ৫-৮ মিমি লম্বা। কচি অবস্থায় সবুজ থাকলেও পরে বাদামি বর্ণ ধারন করে। ফল শুষ্ক প্রকৃতির এবং ওপরের অংশ পাতলা খোসা আবৃত। ফলের ভেতর থাকে ছোট ছোট কালো রঙের বীজ। প্রতি ফলে ৪টি করে বীজ থাকে। সাধারনত বীজ থেকে এর বংশ বিস্তার হয়।

কুঞ্জলতা সুন্দর ফুল ও পাতার কারনে সৌন্দর্যবর্ধক লতা হিসাবেই ব্যবহার করা হয় তবে এর ভেষজ গুণও রয়েছে। আয়ুর্বেদীয় চিকিৎসায় একে অতিশয় স্নিগ্ধকর উদ্ভিদ হিসাবে গণ্য করা হয়। পাতার গুঁড়ো, রস বা পাতার প্রলেপ অর্শ রোগের উপশম করে। কার্বাঙ্কলে পাতা বাটার প্রলেপ লাগালে আরাম বোধ হয়। এছাড়া শারীরিক দৌর্বল্য, রক্ত আমাশয়, বুকের ব্যথা ও কর্কট রোগেও এর ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

মাটি প্রস্তুত:

মাটি একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সরাসরি মাটিতে প্রতিস্থাপন করলে মাটি প্রস্তুতের প্রয়োজন হয় না, কিন্তু টবে প্রতিস্থাপন করলে মাটি প্রস্তুতের প্রয়োজন হয়। আপনার গাছ কেমন হবে তার অনেকটা নির্ভর করে মাটির উপড়ে। যে কোন গাছ টবের তুলনায় মাটিতে খুবই ভালো হয়। গাছটি টবে প্রতিস্থাপনের পূর্বে মাটির সাথে কিছু পরিমান এক বছরের পুরানো গোবর সার, সাথে একমুঠো নিমখোল ভালকরে মিশিয়ে গাছটিকে প্রতিস্থাপন করতে হবে।

পরিচর্যা:

শীতের মরসুম গাছের ডরম‍্যান্সি পিরিয়ড, এই সময়ে গাছের খাবার সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে হবে। শুধু জল দিয়ে গাছ বাঁচিয়ে রাখতে হবে এবং প্রয়োজনমতো কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। ডরম‍্যান্সি পিরিয়ড শেষ হবার কিছু দিন পরে গাছটির শুকনো ডাল-গুলি ছেটে দিতে হবে, দেখবেন গরমের মাঝামাঝি সময় থেকে কুঁসি বার হতে শুরু করেছে। গ্রীষ্মের পরে বর্ষার জল পেয়ে ডালপালা বৃদ্ধির পাশাপাশি ফুল আসতে শুরু করে। প্রয়োজনে গরমের সময়ে টবের মাটি পরিবর্তন করে ফেলতে পারেন।

কুঞ্জলতা গাছের জন্য সব থেকে ভাল খাবার জৈব সার, এটি ব্যাবহারে গাছের কোন ক্ষতি হয় না, গাছে ফুলের পরিমান বৃদ্ধি পায়। জৈব সার গাছের জন্য একটি প্রয়োজনীয় উপাদান বিস্তারিত জানতে নিচের দেওয়া লিঙ্কে ক্লিক করুন।

ব্যালকনিতে মোটামুটি উচ্চ আলো যুক্ত জায়গায় রেখে দিলেই খুব সুন্দর ভাবে বেড়ে উঠবে। শীতের শেষের দিকে রোপণ করতে পারলে গ্রীষ্মের পরে বর্ষার জল পেয়ে ডালপালা বার করে বেড়ে ঊঠবে।

এটি দুনিয়ার প্রায় সকল ক্রান্তীয় অঞ্চলে পাওয়া যায়। ভারতের তামিল ভাষায় এর নাম ‘mayil manikkam’ (তামিল: மயில் மாணிக்கம்) এবং মালায়ালাম ভাষায় একে বলে ākāśamulla। নেপালী ভাষায় এর নাম ‘জয়ন্তী ফুল’।

5/5 - (1 vote)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *