Last updated on August 24th, 2023 at 09:11 pm
যারা ফুল ভালবাসেন, তারা জানেন সত্যিকারের নীল ফুল গাছ পাওয়া খুবই কঠিন কাজ। আজ এই প্রতিবেদন থেকে আপনি ভারতবর্ষ সহ প্রতিবেশি দেশে পাওয়া যায় এমন কিছু নীল ফুল গাছ সম্পর্কে জানতে পারবেন। সারা বিশ্বে অনেক ধরনের নীল ফুল পাওয়া যায় সেগুলি সম্পর্কে আমরা অন্য দিন জানব, আজ আমরা দেখব আমাদের দেশে সহজে পাওয়া যায় এমন কিছু নীল ফুল গাছ সম্পর্কে।
এই মরসুমে খুব সহজে ১০ ধরনের নীল ফুলের চাষ করুন | TOP 10 BEAUTIFUL BLUE FLOWERS CARE WITH NAMES
Blue Cluster Vine (নীল ক্লাস্টার ভাইন):
যারা সত্যিকারের নীল ফুল গাছ খুঁজছেন,এটি বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর সত্যিকারের নীল ফুল গাছ নাম Blue Cluster Vine (নীল ক্লাস্টার ভাইন)।পরিষ্কার ঝলমলে সুন্দর আবহাওয়াতেই গাছে ফুল ফোঁটে। শীতের শেষ অর্থাৎ বসন্তের শুরুতে গাছে একবার ফুল ফোঁটা , দ্বিতীয় বার ফুল ফোঁটে শরৎ এর মরসুমে। সাধারণত বছরে দু-বার গাছে ফুল ফোঁটে, তবে বর্ষার মরসুমে আকাশ পরিষ্কার থাকলে গাছে ফুল ফুঁটতে দেখা যায়। ব্লু ক্লাস্টারভাইন(Blue Cluster Vine)| Jacquemontia- উজ্জ্বল ছোট্ট নীল ফুল! সরু কান্ডের উপর সারি সারি সবুজ পাতাগুলি মাঝে থাকা ছোট চকচকে নীল রঙের ফুল গুলি দেখতে সুন্দর লাগে।
উদ্ভিদটি ‘মর্নিং গ্লোরি’-এর মতোই Convolvulaceae পরিবারের অন্তর্গত। ফুলগুলো একই পরিবারের অন্যান্য ফুলের মত বড় নয় কিন্তু তবুও সুন্দর। ফুল দিনে ফোটে এবং সন্ধ্যায় বন্ধ হয়। গাছটি পূর্ণ রোদে বা আংশিক সূর্যের জায়গায় জন্মানো যেতে পারে। ডালপালা বেশ সূক্ষ্ম এবং সহজেই ভেঙ্গে যায় তাই গাছকে যথাযথ সমর্থন দিতে হবে। বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করার জন্য মরা ডালপালা এবং পাতা অপসারণ করা উচিত। এটি একটি দ্রুত বর্ধনশীল বহুবর্ষজীবী এবং মাঝারি জল এবং ভাল-নিষ্কাশিত মাটি প্রয়োজন। একজনকে নিয়মিত গাছটি ছাঁটাই করতে হবে বা এটি সমস্ত জায়গায় বাড়তে পারে।
[আরও পড়ুন: How To Grow & Care Blue Cluster Vine – Jacquemontia Pentantha]
Blue Aparajita (নীল অপরাজিতার ):
গাঢ় নীল ফুলের তালিকায় আছে আমার আপনার সকলের পরিচিত নীল অপরাজিতা। আজকে এই প্রতিবেদন থেকে আপনি নীল অপরাজিতা ফুল গাছ প্রতিস্থাপন পদ্ধতি ও পরিচর্যা সম্পর্কে জানতে পারবেন।
অপরাজিতা ফুলের ইংরেজি নাম বাটারফ্লাই পি , এটি Popilionaceae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত, বোটানিক্যাল নাম Clitoria ternatea। অপরাজিতা ছাড়াও ইংরেজিতে এর অনেক নাম আছে যেমন- Blue Pea, Butterfly Pea, Asian pigeonwings, Darwin Pea, Gokarna প্রভৃতি। বাংলাতে একে নীলকণ্ঠ নামেও ডাকা হয়। কেরালায় একে বলে শঙ্খপুষ্পী। এই ফুল এসেছে মালাক্কা দ্বীপ থেকে। টারনেটি বা মালাক্কা থেকে এসেছে বলে অপরাজিতার বৈজ্ঞানিক নাম ক্লিটোরিয়া টারনেটিকা। ক্লিটোরিয়া অর্থ যোনীপুষ্প।
বৈশিষ্ট্য(Characteristics):
এই মরসুমে খুব সহজে ১০ ধরনের নীল ফুলের চাষ করুন | TOP 10 BEAUTIFUL BLUE FLOWERS CARE WITH NAMES
অপরাজিতা ফুল নীল ছাড়াও সাদা, হালকা গোলাপী ও হালকা বেগুনি রঙের হয়ে থাকে। অপরাজিতা লতানো ঝোঁপের ন্যায়, বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ এবং সবুজ পাতা বিশিষ্ট গাছে সুন্দর দেখতে সিঙ্গেল এবং ডাবল পেটালের ফুল হয়ে থাকে। তবে ফুলে কোনো গন্ধ নেই, তবুও রঙের বাহারে এবং সোন্দর্যে ফুলটি অনন্য। বহুবর্ষজীবী এ লতানো প্রকৃতির গাছ ২০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়।
Thunbergia erecta (নীলঘন্টা):
গাঢ় নীল ফুলের তালিকায় আছে আমাদের সকলের পরিচিত নীলমণি বা নীলঘন্টা। নীলঘন্টা নীল রঙের এবং অনেকটা ঘন্টা আকৃতির ন্যায় বলেই এর নাম নীলঘন্টা। তবে যে শুধু নীল রঙের হয় সেরকম নয়,সাদা, নীল, বেগুনী রঙের হয়ে থাকে। তবে আমাদের এই গ্রীষ্মমন্ডলীয় স্থানে নীল ও বেগুনি রঙটাই বেশি দেখা যায়। তাই তো বাংলায় এর নাম – নীলঘন্টা।
নীলঘন্টা Acanthaceae পরিবারের অন্তর্গত, এর বৈজ্ঞানিক নাম-Thunbergia erecta .অন্যান্য নামের মধ্যে bush clock vine, king’s mantle উল্লেখযোগ্য। নীলঘন্টা ছাড়াও নীলকান্ত, নীলঘন্টি প্রভৃতি নামে পরিচিত।
বৈশিষ্ট্য(Characteristics):
গাছটি বহুবর্ষজীবী অর্ধ লতানো বা আরোহী উদ্ভিদ। গাছটি সাধারনত ৪-৬ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়, গ্রীষ্মমন্ডলীয় স্থানে দ্রুত বৃদ্ধি পায়। প্রতিদিন ৪ থেকে ৬ ঘন্টা সূর্যের আলো পায় তেমন স্থান নির্বাচন করতে হবে। এটি দোঁয়াশ মাটিতেই সুন্দর ভাবে বেড়ে ওঠে। ফুলের ভিতরের অংশ হালকা হলুদাভ , গাছের পাতা গাঢ় সবুজ রঙের ও ত্রিকোনাকৃতি বিশিষ্ট, তবে বেশ কিছু গাছের পাতা লম্বাটে আকৃতিরও হয়ে থাকে । শীতকাল ছাড়া প্রায় সারা বছর গাছে ফুল ফুটে । নীলঘন্টা সরাসরি মাটিতে বা টবে সুন্দর ভাবে বেড়ে ওঠে। ডাল কাটিং এর মাধ্যমে নীল ঘন্টা ফুলের বংশ বিস্তার ঘটে থাকে।
[আরও পড়ুন: নীলঘন্টা গাছের সম্পূর্ন পরিচর্যা | How To Care Thunbergia Erecta Flower Plant]
Blue Chiffon Hibiscus (নীল জবা):
জবা আমাদের অতি পরিচত একটি ফুল। সৌন্দর্য্যের বিচারে জবা যে গোলাপ ফুল কেও হার মানায়, সেই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। রূপে রঙে অপূর্ব সৌন্দর্য ফুলগুলি সবারই মন কেড়ে নেয়। আর সেই জবা যদি হয় ব্লু সিফন ডাবল পেটাল হিবিসকাস ( নীল জবা ) হয় তাহলে তো একটু অতিরিক্ত আকর্ষণ থাকবেই। এই ফুলের একটা অন্যরকম আকর্ষণ আছে, কারণ এর সুন্দর রঙের জন্য এবং অন্য জবার থেকে এটি একটু আলাদা।
(নীল জবা) ফুলের ইংরেজি নাম “নীল সিফন ডাবল পেটাল হিবিসকাস” , এটি Malvaceae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত, বোটানিক্যাল নাম Clitoria ternatea। Blue Chiffon Hibiscus ছাড়াও ইংরেজিতে এর অনেক নাম আছে যেমন- Blue Chiffon’ Rose of Sharon, shrub althaea প্রভৃতি। বাংলাতে একে নীল জবা নামেও ডাকা হয়। নেটিভ এলাকা চীন, ভারত।
[আরও পড়ুন: টবে জবা গাছ করবার সহজ কিছু টিপস্ | How To Grow Joba Flower Plant In Pots]
Hydrangea (হাইড্রেনজিয়া):
হাইড্রেনজিয়া ফুলের গন্ধ নেই। এর চমৎকার একটি বৈশিষ্ট্য হলো এটি রঙ বদলায়। ফোটার সময় গাঢ় হলুদ তারপর সাদা ও শেষে তারা তীব্রতা হারিয়ে নীল বা বেগুনি রঙ ধারণ করে অবশেষে গাছ থেকে ফুল ঝরে পড়ে। হাইড্রেঞ্জা গাছ দুই থেকে তিন ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট হয়। টবে ও মাটিতে দু ভাবেই গাছ সুন্দর ভাবে বেড়ে ওঠে। ছায়াযুক্ত ও স্যাঁতসেঁতে জায়গায় গাছটি বেঁচে থাকার জন্য আদর্শ।
হাইড্রেনজিয়া(বৈজ্ঞানিক নাম-Hydrangea macrophylla, ইংরেজি -big leaf hydrangea, french hydrangea, lacecap -hydrangea , mophead hydrangea, penny mac এবং hortensia) হচ্ছে Hydrangeaceae পরিবারের Hydrangea (হাইড্রেঞ্জা) গণের একটি গুল্ম জাতীয় ফুল গাছ। হাইড্রেনজিয়া একটি আশ্চর্যজনক ফুল যার প্রায় ৯০ টি প্রজাতি রয়েছে। এই গাছের আদি নিবাস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার চীন,জাপান,কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা।
[আরও পড়ুন: গাছ ভর্তি প্রচুর ফুল পেতে কামিনী গাছের বিশেষ পরিচর্যা | Kamini Flower]
বৈশিষ্ট্য(Characteristics):
হাইড্রেনজিয়া ফুলের চমৎকার একটি বৈশিষ্ট্য হল এর রঙ বদলানোর স্বভাব। ফুলটি ফোটার সময় যে রঙের থাকে ক দিনের মধ্যেই সে রঙ বদলে ফেলে। মঞ্জরি গুচ্ছবদ্ধ, বেশ বড়, আয়তাকার। পাপড়ির সংখ্যা চার বা ততোধিক, মসৃণ,পুরু, দীর্ঘস্হায়ী। হাইড্রেনজিয়া মূলত সাদা রঙের হয়। এছাড়াও গোলাপী,নীল,হালকা সবুজ, বেগুনি, লাল, ঘিয়ে এবং মিশ্র রঙের হয়ে থাকে। বড় খোঁপার মতো থোকা ধরে ফুটে থাকা সাদা, ঘিয়া বা হালকা গোলাপী কোনটাই দেখতে কম সুন্দর নয়।
টবে ও মাটিতে দু ভাবেই এই ফুলের চাষ করা যায়। ছায়াযুক্ত ও স্যাঁতসেঁতে জায়গায় ও গাছটি বেঁচে থাকে। আমাদের দেশে সাদা-গোলাপী মেশানো হাইড্রেনজিয়া হর্টেনসিস ভ্যারাইটি জাতটি সহজলভ্য। এটি জাপানের Hydrangea macrophylla জাতের সংকর। হাইড্রেনজিয়ার প্রায় আশিটি জাতের অধিকাংশই শীতপ্রধান দেশে সহজলভ্য। এ ফুল ফোটার সময় বসন্ত ও গ্রীষ্ম। আমাদের দেশে বসন্তের শেষভাগ থেকেই ফুটতে শুরু করে ফুলটি। নজরকাড়া সৌন্দর্য্যের কারণে কদর বাড়ছে চিত্তাকর্ষক হাইড্রেনজিয়ার।
Plumbago (নীলচিত্রক/নীলচিতা):
নীল চিত্রক বা নীল চিতা নাম নামে পরিচিত ফুলের সাম্রাজ্যের এক সুন্দরীতমার স্থানে বসে আছে ফুলটি। এর ইংরেজি নাম blue plumbago, Plumbago capensis, Cape plumbago বা Cape leadwort এবং বৈজ্ঞানিক নাম: Plumbago auriculata। আর এটি Plumbaginaceae পরিবারের অন্তর্গত। আর বাংলায় নীল চিতা।
বৈশিষ্ট্য(Characteristics):
নীল চিতা ফুল গাছটির আদি নিবাস মূলত দক্ষিণ আফ্রিকায়। গাছটির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ, নীল রঙের ফুল,আর তাই সৌন্দর্যবর্ধনের জন্যই তাকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এখন লাগানো হয়। গাছটি একটি ঝোপের মত আকৃতি সৃষ্টি করে বড় হয়,আর লম্বায় প্রায় ৬ ফুট পর্যন্ত তো হয়ই। চিতা ফুল কিন্তু শুধু নীলেই নয়,সাদা রঙ্গেও আছে তার সমান রাজত্ব। সাদা চিতা ফুলের আবার ঔষধি গুণাগুণও পরীক্ষিত হয়েছে।
[আরও পড়ুন: এলামুন্ডা গাছের সম্পূর্ণ পরিচর্যা | Complete Care Of Allamanda Plant]
গাছটি ঝেপের ন্যায় দেখতে হয় এবং উচ্চাতায় ১.৮ মিটার লম্বা হয়| এর ফুল সারা বছর ফোটে রোদে ফুল ফোটে সবচেয়ে বেশি। তবে কম আলোতেও এর ফুল ফোটে।থোকায় থোকায় ফুল ফোটে।এবং এ ফুলের সৌন্দর্য সকলকেই মুগ্ধ করে।
Delphiniums (ডেলফিনিয়াম ফুল):
Delphiniums তাদের নীল ফুলের জন্য বিখ্যাত এবং বীজ থেকে চারা তৈরীর আদর্শ সময় মার্চ থেকে এপ্রিল মাস অথবা আগস্ট মাসে ডেলফিনিয়ামের বীজ বপন করুন। বীজ থেকে চারা গাছ তৈরী হবার এক বছর পরে ফুল আসে, যা একটি বিরল রঙ। জুন থেকে সেপ্টম্বর এই গাছের flower season, এই ফুলগুলি বিভিন্ন শেডের এবং বিভিন্ন আকারে আসতে পারে। প্রতিটি ফুলের মধ্যে একটি সাদা কেন্দ্র রয়েছে, যা গভীর, সমৃদ্ধ নীলের সাথে উজ্জ্বল বৈসাদৃশ্য যোগ করে। বেশিরভাগ ডেলফিনিয়ামগুলি নীল এবং বেগুনি পরিসরে থাকে তবে তারা গোলাপী এবং লাল রঙেও পাওয়া যায়। কিছু অত্যাশ্চর্য প্রবাল-রঙের জাত রয়েছে, এমনকি হলুদ রঙের কিছু বিরলও রয়েছে। এই গাছগুলির একটি আনন্দদায়ক সবুজে আকর্ষণীয় পাতা রয়েছে, একটি ফার্নের মতো পাম-আকৃতির পাতা রয়েছে। গাছগুলি উচ্চতায় ৬ ফুঁট হতে।
ডেলফিনিয়াম গাছের জন্য হালকা. ঝুঁড়ঝুঁড়ে এবং উর্বর মাটি প্রস্তুত করতে হবে, যে মাটিতে জল একেবারেই দাঁড়ায় না। এটি টবে ও মাটিতে দু ভাবেই এই ফুলের চাষ করা যায়। শীতকালে পূর্ণ ঝলমলে রৌদে এবং গরমে ছায়াযুক্ত স্থানে এই গাছগুলি রাখবার ব্যাবস্থা করতে হবে সম্ভব হলে গরমকালে মাটিতে আর্দ্রতা ধরে রাখতে এবং শিকড় ঠাণ্ডা রাখতে মালচ করতে হবে।
[আরও পড়ুন: লন্ঠন জবা গাছের পরিচর্যা | How to grow and care Lanthan jaba]
Begum Bahar (বেগম বাহার):
প্রথমেই জানিয়ে রাখি বেগম বাহারের দুটি প্রজাতি রয়েছে, প্রথমটির বৈজ্ঞানিক নাম -Melastoma malabathricum এবং দ্বিতীয়টির বৈজ্ঞানিক নাম -Tibouchina semidecandra। ইংরেজিতে এর অনেক নাম আছে যেমন- Malabar Melastome, Indian rhododendron, Singapore rhododendron, Planter’s rhododendron, Senduduk,princess flower, lasiandra ,glory bush প্রভৃতি। বাংলাতে একে বেগম বাহার নামেও ডাকা হয়। এছাড়াও বেগমবাহারের অনেক আঞ্চলিক নাম আছে যেমন-লুটকি, বন তেজপাতা, বেগম বাহার,টিপু চায়না ।
বৈশিষ্ট্য(Characteristics):
বেগম বাহার গুল্মজাতীয় এবং ঝোপালো প্রকৃতির হয়। এট বহুবর্ষজীবি উদ্ভিদ বটে, এই গাছটির উচ্চতা ১ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকলেও কখনো কখনো ৩ মিটার উচ্চতার গাছও চোখে পড়ে। বেগম বাহারের দুটি প্রজাতি আছে একটি প্রজাতির পাতা তেজপাতার ন্যায় দেখতে এর পাতার দৈর্ঘ্য ৪ হতে ১১ সেন্টিমিটার, প্রস্থে ১.৩ সেন্টিমিটার যাতে ৫ হতে ৭ টি শিরা থাকে। এদের ফুল হালকা বেগুনি বর্ণের, এটির বৈজ্ঞানিক নাম-Melastoma malabathricum । অপর প্রজাতির পাতা তুলনামূলক সরু এবং ছোট হয়, তবে ফুলের রঙ গাঢ় বেগুনি বর্ণের হয়। পাতা ডিম্ব-আয়তকার। ডালের আগায় কয়েকটি ফুল গুচ্ছবদ্ধ থাকে। মাঝারি আকৃতির এ ফুলটি ৫ থেকে ৬ সেন্টিমিটার পর্যন্ত চওড়া হয়। মাঝখানে হলুদ ও বেগুনি রঙের অসমান কয়েকটি পুংকেশর রয়েছে, এটির বৈজ্ঞানিক নাম-Tibouchina semidecandra। ফুল ফোটা শেষ হলে কারো রঙের ফল আসে। অনেকটা জামের মতো। তবে ছোট। গ্রামের বাচ্চারা মাঝে মধ্যে ফলটি খায়। পাকলে খেতে মিষ্টি লাগে। খাবার পর মুখ বেগুনি রঙের হয়ে যায়। তবে ফুলটি গন্ধহীন।
বড়নখা (Arrow Leaf Pondweed):
বড়নখা বা বোরোনোখা একটি জলজ আগাছা জাতীয় উদ্ভিদ। প্রভাতের সূর্যের আলোতে গায়ে মেখে হালকা নীল আভার ফুলগুলো ফুটে ওঠে আবার দুপুরের পরে ধীরে ধীরে বুজে যায়। পুরোনো ফুলগুলো শুকিয়ে গেলে বা ফুটন্ত অস্থাতে কুঁড়ি বা ফুলের ওপরের দিকে পাকানো নখের মতো শক্ত ভাবে লেগে থাকে বলে হয়ত এর নামকরণ করা হয়েছে বড়নখা। আজকাল অনেক ফুল প্রেমীরা এর চোখ জুড়ানো রূপ লাবণ্যের জন্য ফুলবাগানে পরিচর্যা করে।
বড়নখার (বৈজ্ঞানিক নাম-Monochoria hastata, ইংরেজি – Arrow Leaf Pondweed, arrow-leaf monochoria, hastate-leaf pondweed, monochoria) প্রভৃতি , এটি Pickerel weed পরিবারের এবং Monochoria গণের বীরুৎ শ্রেণীর উদ্ভিদ। এই গাছের আদি নিবাস ব্রাজিল। অসমীয়াতে ভাট মেটেকা বিহ-মেটেকা, ভাট-মেটেকা, পানি-মেটেকা, জুনাকি-ফুল জোনাকি ফুল বলা হয়। বাংলাতে বলা হয় নুখা বা বোরোনোখা, হিন্দিতে বলা হয় लौंकिया Launkia।
বৈশিষ্ট্য(Characteristics):
বড়নখা বা ছোটপানা ফুলের গন্ধ নেই। এর চমৎকার একটি বৈশিষ্ট্য হলো এটির অপূর্ব রঙের কারনে। ফুলগুলি হালকা নীল রঙ ধারণ করে । বড়নখা মূলত বায়বীয় রসালো কাণ্ডের জলজ বীরুৎ শ্রেণীর উদ্ভিদ। সাধারণত বসন্তের শুরুতে এবং বর্ষার শেষে ধান ক্ষেতে দেখতে পাওয়া যায়। ৫০ সেমি থেকে ১৫০ সেমি পর্যন্ত বড় হয়। এটি বর্ষজীবী। জল শুঁকিয়ে গেলে গাছগুলি মাড়া যায় কিন্তু জলাশয়ে বা জমিতে জলের আগমন ঘটলে গাছগুলি পুঃজীবিত হয়ে ওঠে। এদের পাতা বর্শাকৃতির এবং তা থেকেই ইংরেজি নামটি এসেছে বলে মনে করা হয়।
Cornflower (কর্নফ্লাওয়ার):
কর্নফ্লাওয়ার ফুলগুলি ছোট তবে অবিশ্বাস্য সুন্দর দেখতে, গাঢ় নীল বর্নের যা দেখতে খুবই সুন্দর। আপনি গাছটি একটি বড় পাত্রে রাখতে পারেন এবং এটি পুরো মরসুমে উপভোগ করতে পারেন যা বাগানে একটি দর্শনীয় ফুলের গালিচা তৈরি করে।
কর্নফ্লাওয়ারের বৈজ্ঞানিক নাম(Scientific Name): Centaurea cyanus (সেন্টোরিয়া সায়ানুস) এসেছে Centaur শব্দটি থেকে এটি Asteraceae পরিবারের ভেষজ উদ্ভিদের অন্তর্গত। গ্রীক পুরাণ অনুসারে, Centaur হল সামনের দিক মানব আকৃতির এবং পেছনের দিক অশ্বাকৃতির অর্ধ-মানব অর্ধ-অশ্বাকৃতির প্রাণী। এর বোটানিক্যাল নাম সেন্টোরিয়া। ইংরেজি নাম : Cornflower, Blue cornflower, Bachelor’s button, hairworm, blavat, weasel, blue-flowered, cyanosis।
এর পরিচর্যা এবং চাষাবাদটি সত্যই সহজ, কর্নফ্লাওয়ার বর্ষজীবী বন্য প্রজাতি বীরুৎ শ্রেণীর উদ্ভিদ। এরা ৪০ থেকে ৯০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বাহতে পারে। এদের সরু ধূসর-সবুজ পাতা গুলি ৫ মিলিমিটারের মত প্রশস্ত হয়। কর্নফ্লাওয়ার বিভিন্ন রঙের হয়, যেমন- সাদা, নীল, হলুদ, গোলাপী, বেগুনি, নীল, লাল প্রভৃতি।
প্রিয় পাঠক, এই প্রতিবেদনটি পঠন করবার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার মতো পাঠকের সহযোগিতা “ক্রিয়েটিভিটি গার্ডেনিং” সর্বদা কার্ম করে। গাছই আমাদের একমাত্র সম্পদ যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষিত করতে পারে, বাঁচিয়ে রাখতে পারে। নিঃস্বার্থে গাছ ভালবাসুন, সকলকে গাছ লাগাতে উৎসাহিত করুন।
আপনাদের যদি এই বিষয়ে কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সের মাধ্যমে আমাকে জানাতে জানাবেন। সেগুলোর সমাধান করাবার আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব। আপনার মূল্যবান রেটিং দিয়ে উৎসাহিত করুন, সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, সবাই খুব ভালো থেকো নমস্কার।?