Last updated on October 14th, 2023 at 02:10 pm
দোলনচাঁপা ভারতবর্ষের অতি পরিচিত ফুল হলেও, কিউবার জাতীয় ফুল হিসাবে অ্যাখ্যা পেয়েছে। বর্ষার মরসুম থেকে শরৎ প্রযন্ত বাগান ফুলে ভরিয়ে তুলতে অথবা ছাদ বাগান সাজাতে দোলনচাঁপা ফুলের জুড়ি মেলা ভার। দোলনচাঁপা ফুলের সুমিষ্টি গন্ধ আপনার বাড়িকে সুগন্ধে ভরিয়ে রাখবে। Hedychium গণের অন্তর্ভুক্ত ফুলগুলির মধ্য দোলনচাঁপা ফুলের মৃদুমন্দ সুমিষ্ট গন্ধের জন্য এই ফুলের জনপ্রিয়তা সব থেকে বেশি, দোলনচাঁপা ফুলের পাপড়ি হতে সুগন্ধি তেল নিষ্কাশিত করে বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রী তৈরীতে ব্যবহার করা হয়।
দোলনচাঁপার বৈজ্ঞানিক নাম Hedychium coronarium, এটি Zingiberaceae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত, নামের এর প্রথম অংশ Hedychium এসেছে গ্রীক দুটি শব্দ Hedys এবং Chios থেকে। Hedys অর্থ Sweet বা মিষ্টি এবং Chios অর্থ Snow বা তুষার। ফুলের সৌরভ আর বর্ণের কারণেই এই ধরনের নামকরণ। ইংরেজি প্রচলিত নাম বাটারফ্লাই জিঞ্জার লিলি (Butterfly Ginger Lily), White Ginger Lily।
ছাদ বাগানে সুগন্ধি দোলনচাঁপা ফুল গাছের পরিচর্যা
দোলনচাঁপা গুল্মজাতীয়, বহুবর্ষজীবী কন্দজ উদ্ভিদ। গাছের পাতার আকার-আকৃতি আদা গাছের সাদৃশ্যপূর্ণ, তবে দোলনচাঁপা গাছ ২-৩ ফুট ( ৬১- ৯০ সেন্টিমিটার) উঁচু হয় এবং পাতা বেশ লম্বা ও পুরু। পাতার মধ্য শিরা স্পষ্ট, রং গাঢ় সবুজ বর্নের। গাছ ঝোপালোভাবে একত্রে এক বা একাধিক ভাবে জন্মে।
দোলনচাঁপা ছায়াময় শীতল পরিবেশ ভালোবাসে সেটা তার ফুলের এবং গাছের মৌসুমের প্রকৃতি দেখেই বলে দেয়া যায়। বিকেলে বা সন্ধ্যার শেষভাগে ফুলগুলি ফোঁটে এবং সারারাত ধরে ফুলের সুগন্ধ চারদিকে মোহনীয় করে তোলে আবার সকাল হতে না হতে গাছ থেকে ঝড়ে পড়ে। বর্ষায় মাঝামাঝি সময় থেকে ফুল ফোটে শুরু হয় যা চলে শরৎ এর শেষ মৌসুম। শীতকালে গোড়ার অংশ শুকিয়ে যায় এবং গ্রীষ্ম ঋতুতে কন্দ হতে আবার নতুন গাছ জন্মে। নতুন করে জেগে ওঠে গাছ। বিশেষ করে গ্রীষ্মের দু এক পশলা বৃষ্টির পর মাটি ফুড়ে নতুন করে জন্ম হয় দোলনচাঁপা গাছের।
দোলনচাঁপার চার পাপড়ি বিশিষ্ট বিভিন্ন বর্ণের হতে পারে, দেখতে প্রজাপতির ন্যায়; তাই এর ইংরেজি নাম বাটারফ্লাই জিঞ্জার লিলি (butterfly ginger lily)। ফুলের গুচ্ছ ১৫ সেমি থেকে ৩০ সেমি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। দোলনচাঁপার মোট প্রজাতির সংখ্যা প্রায় ৪০টি। ফুটন্ত ফুল গাছে ২ থেকে ৩ দিন স্থায়ী হয় তার পরে-আপনিই ঝরে যায়। একটি গাছে একসঙ্গে ১ থেকে ৩টি ফুল ফোটে এবং বাকি ফুলের কলিগুলো পর্যায়ক্রমে ফোটে। এভাবে পর্যায় ক্রমে ফুল ফোঁটে।
সমগ্র ক্রান্তিয় এবং উপক্রান্তিয় গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে দোলনচাঁপার ফুলগুলি ফোঁটে। এই গাছের উপরিভাগে দন্ডের ন্যায় অংশে থোকায় থোকায় ফুল ফোটে। দোলনচাঁপার ফুল বিভিন্ন রঙের হতে পারে যেমন সাদা, হালকা হলুদ, লাল, গোলাপী। দোলনচাঁপা তীব্র সূর্যলোক পছন্দ করে না, ভীষণভাবে ছায়াময় শীতল পরিবেশ ভালোবাসে। উজ্জ্বল সাদা বর্ণের ফুলগুলি আমাদের দেশে সব জায়গায় দেখা যায়। এছাড়া বিভিন্ন দেশের অল্প ঠান্ডা আবহাওয়া যুক্ত অঞ্চলে হালকা হলুদ, কমলা বা লাল রঙের দোলনচাঁপাও দেখা যায় যা আমাদের দেশে সচরাচর চোখে পড়ে না।
দোলনচাঁপা মূলত ভারতবর্ষের ফুল হলেও পরবর্তী সময়ে পৃথিবীর অনেক স্থানে ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করেছে, যেমন – ফ্লোরিডা, গল্ফ কোস্ট, ক্যারিবিয়ান অঞ্চল সহ পৃথিবীর সমগ্র ক্রান্তিয় উপক্রান্তিয় অঞ্চল থেকে শুরু করে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার অল্প ঠান্ডা অঞ্চলে; তবে যেসব অঞ্চলে শীত তুলনামূলকভাবে বেশি, সেখানে শীতকালে গাছ মরে যায় এবং গ্রীষ্মে কান্ডের পুনর্জন্ম হয়।
দোলনচাঁপা গাছের স্থান এবং টব নির্বাচন:
দোলনচাঁপা হালকা ছায়াময় শীতল পরিবেশ পছন্দ করে। দিনে ৪ থেকে ৬ ঘটা সূর্যের আলো পাই তেমন সমতল অথবা ঢালু স্থানে কন্দগুলি প্রতিস্থাপন করা উচিত, এতে গাছের বাড়বাড়ন্ত ভালো হয় এবং রোগে আক্রান্ত কম হয়। তাপমাত্রা বাড়লে গাছগুলিকে বড় গাছের নীচে অথবা সেডের নীচে রাখবার ব্যাবস্থা করতে হবে। অন্যান্য গাছের ন্যায় দোলনচাঁপা গাছের শিকড় দ্রুত বৃদ্ধি পায়। নার্সারি থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে আসা গাছ প্রথমে আট অথবা দশ ইঞ্চির টবে বসাতে পারেন। তারপর গাছের বাড়বাড়ন্ত দেখে ১২ ইঞ্চি অথবা তার থেকে বড় টবে স্থান্তরিত করতে হবে। এই গাছ বহুদিন বেঁচে থাকে।
দোলনচাঁপা গাছের মাটি প্রস্তুত ও পরিচর্যা:
দোলনচাঁপা গাছের জন্য উচ্চ জল নিকাশীযুক্ত উর্বর মাটি প্রস্তুত করতে হবে, মাটি হালকা আদ্র থাকবে অথচ ভেজা ভাব থাকবে না এমন স্থান গাছের জন্য উত্তম, কিন্তু গাছের গোড়ায় জল জমলে তা গাছের মৃত্যুর কারন হতে পারে। বাগানের দোঁয়াশ মাটির সঙ্গে পরিমান মতো জৈব সার ভালো করে মিশিয়ে নিলেই তা গাছের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে।
দোলনচাঁপা গাছের Flower Season অগাস্ট মাসের শুরু থেকে নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় অব্ধি ( বর্ষার এর শুরু থেকে হেমন্ত অব্ধি), তাই গরমের মাঝামাঝি সময় থেকে গাছের পরিচর্যা শুরু করে দিতে হবে। নার্সারি থেকে গাছের চারা সংগ্রহ করবার পরে প্রথমে আট অথবা দশ ইঞ্চির টবে বসাবেন। পরবর্তী সময়ে ২০ ইঞ্চির একটি টবে স্থান্তরিত করবেন।
সরাসরি কন্দ প্রতিস্থাপন করলে ১ থেকে ২ মাসের মধ্য কোন রাসায়নিক সার ব্যাবহার করবেন না, কিছু মাস পর থেকে অল্প জৈব সার হিসাবে খোল পঁচানো জল ব্যাবহার করবেন। চারা গাছের বয়স ৫ থেকে ৬ মাস হয়ে গেলে, গাছের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করতে ও ফুলের পরিমান বৃদ্ধি করতে খোল পঁচানো জল দেবেন। মাসে একবার করে জৈব সার ব্যাবহার করবেন অথবা NPK 10:26:26 হাফ চামচ করে মাসে একবার দিতে পারেন এতে গাছের ফুল ও হবে এবং গাছের কান্ড পাতার বিকাশ ও সমপরিমানে হবে আর পটাসিয়াম নাইট্রেট ( 13:00:45) হাফ চামচ পরের মাসে একবার এতে গাছের রোগবালাই থেকে নিজেকে বাঁচানোর ক্ষমতা বাড়বে তার দরুন কুঁড়ি ঝরা রোধ হবে।
এই গাছের বংশ বিস্তার হয় মূলত অযৌন প্রজননের মাধ্যমে, মাটির নীচে থাকা আদার ন্যায় কন্দের বিভাজন প্রদ্ধতির মাধ্যমে বংশবিস্তার হয়। অনুকূল আবহাওয়াতে খুব দ্রুত ও ব্যাপক ভাবে বংশ বিস্তার করে ।
Name | Position | Scientific Name |
---|---|---|
দোলনচাঁপা | বাংলায় | Hedychium coronarium |
সুরুলি সুগন্ধি | আসামে | Hedychium coronarium |
Butterfly Ginger Lily, White Ginger Lily | ইংরেজি | Hedychium coronarium |
তখেল্লৈ অঙৌভা | মণিপুরি | Hedychium coronarium |
সোনটাকা | মারাঠি | Hedychium coronarium |
दोलन चम्पा | হিন্দি | Hedychium coronarium |