বসন্তের শুরুতে দেখা মেলে আশোক ফুল, শিমুল ফুল এবং অরণ্যের অগ্নিশিখা পলাশ ফুল, এই পলাশ ফুলের সুন্দর্য্য দেখে মানুষ অভিভূত হয়ে পড়ে। এর থেকেও দেখতে সুন্দর আফ্রিকান রুদ্র পলাশ, এর আদিনিবাস পশ্চিম আফ্রিকা হলেও আমাদের দেশে রুদ্র পলাশ গাছ দেখতে পাওয়া যায়। দূর থেকে দেখে মনে হয় থোকা থোকা টিউলিপ ফুলের সদৃশ , সেই কারণে এর ইংরাজি নাম আফ্রিকান টিউলিপ।
আজকের প্রতিবেদন থেকে আমরা রুদ্র পলাশ গাছ সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো, আফ্রিকান টিউলিপ নামে পরিচিত রুদ্র পলাশ, এছাড়াও ফাউন্টেন ট্রি, ফ্লেম অফ দি ফরেস্ট, স্কুয়ার্ট ট্রি, নীল শিখা, নন্দী শিখা, উগান্ডা শিখা, আফ্রিকান টিউলিপ ট্রি প্রভৃতি নামে পরিচিত। রুদ্র পলাশের বৈজ্ঞানিক নাম Spathodea campanulata, এটি Bignoniaceae পরিবারের সদস্য। ৬০ থেকে ৭০ ফুট উচ্চতাসম্পন্ন একটি চিরসবুজ গাছ।
বসন্তের ফুল রুদ্র পলাশ | Rudra Palash
রুদ্র পালাশ (আফ্রিকান টিউলিপ) বৃক্ষ জাতীয়, গাঢ় সবুজ পাতা সহ চিরসবুজ উদ্ভিদ। পাতা আকারে ছোট, লম্বাটে আকৃতির পেটিওল থাকে। প্রতিটি ছোট লিফলেট গভীরভাবে একটি ঢেউতোলা টেক্সচার তৈরি করে এবং আকারে বিস্তৃতভাবে ডিম্বাকৃতি বা পবৃত্তাকার ।
রুদ্র পালাশ তিন থেকে চার বছর হলেই গাছে ফুল ধরে, এই ফুলের কুঁড়ির ভেতরে জল থাকে, যা পাখিরা খায়। ছোট অবস্থাতে গাছগুলি বেশ নিচু থাকে বলে আফ্রিকার ছেলেমেয়েরা এই কুঁড়ি নিয়ে খেলার সুযোগ পায়। ফুলের অগ্রভাগে সামান্য টিপে দিলে তীরবেগে বেরিয়ে আসে জল, খেলনা হিসাবে‘ ওয়াটার-গান” হিসেবে ছেলেমেয়েরা খেলা করে।
উপকূলীয় অঞ্চলে রুদ্র পালাশ গাছ বেশ দেখতে পাওয়া যায়। রুদ্র পলাশ নামটি পশ্চিমবঙ্গে প্রচলিত, মনে করা হয় নামটি দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ভারতবর্ষ থেকেই গাছটি প্রথম বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। কলকাতার রাস্তাঘাটে এ গাছ অনেক দেখাত পাওয়া যায়। বাংলাদেশে রমনা পার্কে হাতে গোনা তিন থেকে চারটি, চারুকলা অনুষদ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনে একটি, বাংলাদেশে হাতে গোনা কয়েকটি স্থানে রুদ্র পালাশ গাছ দেখাতে পাওয়া যায়।
আফ্রিকান টিউলিপ এই গাছটিকে প্রথম সনাক্ত করেন প্রকৃতিবিদ্। আফ্রিকার ইথিওপিয়া, সুদান, কেনিয়া, জাম্বিয়া দেশের নেটিভ গাছ হলেও ন্যাচারালাইজড্ বা পরিবেশানুগ হয়েছে রুদ্র পলাশের আদি বাসস্থান আফ্রিকা হলেও ভারত, শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়া, ফিজি, কোষ্টারিকা, পাপুয়া নিউগিনি স্থালে এদের দেখা মেলে। বর্তমানে রুদ্রপলাশ গাছ খুব একটা দেখা যায় না। বসন্তের মরসুমে রুদ্র পলাশ গাছের ফুল দেখতে অসাধারন লাগে। অস্ট্রেলিয়া এবং হাওয়াইতে এদের উইড বা স্লিপার উইড (Sleeper Weed) হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। ‘স্লিপার উইড’ বলতে বোঝায় সেই সব গাছকে বোঝায় যে অনেক বছর সুপ্ত অবস্থায় থাকার পর বন্যা ক্ষরা অগ্নিকাণ্ড প্লাবন ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরে হটাৎ অকস্মাৎ আত্মপ্রকাশ পায়।
প্রিয় পাঠক, এই প্রতিবেদনটি পঠন করবার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার মতো পাঠকের সহযোগিতা “ক্রিয়েটিভিটি গার্ডেনিং” সর্বদা কাম্য করে। গাছই আমাদের একমাত্র সম্পদ যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষিত করতে পারে, বাঁচিয়ে রাখতে পারে। নিঃস্বার্থে গাছ ভালবাসুন, সকলকে গাছ লাগাতে উৎসাহিত করুন।
আপনাদের যদি এই বিষয়ে কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সের মাধ্যমে আমাকে জানাতে জানাবেন। সেগুলোর সমাধান করাবার আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব। আপনার মূল্যবান রেটিং দিয়ে উৎসাহিত করুন, সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, সবাই খুব ভালো থেকো নমস্কার।