বেগুনী টগর গাছের যত্ন

Last updated on October 14th, 2023 at 02:09 pm

টগর ফুলের অনেক প্রজাতি আছে, যার মধ্য কিছু প্রজাতির ফুল গুছকারে ফোঁটা আবার কিছু প্রজাতি আছে যেগুলি একক ভাবে ফোঁটে। টগর ফুল অনেক বর্ণের হয় যেমন- সাদা টগর, বেগুনি টগর, গোলাপী টগর প্রভৃতি। এই প্রতিবেদন থেকে আপনি পাঁচ-পাঁপড়ি বিশিষ্ট বেগুনি টগর গাছের প্রতিস্থাপন এবং পরিচর্যা সম্পকে সম্পূর্ন তথা জানতে পারবেন। অত্যন্ত অল্প পরিচর্যাতে ছাদবাগানে অথবা ব্যালকনিতে প্রায় সারা বছরই ফুল পাওয়া যায় , এই পাঁচ-বিশিষ্ট বেগুনি টগর ‘স্টার ফুল’ বা ‘তারা ফুল’ নামেও পরিচিত।

বেগুনী টগর গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Pseuderanthemum laxiflorum (সিউডেরান্থেমাম ল্যাক্সিফ্লোরাম), ইংরেজি -Shooting Star, Purple Star, Star Flower, Furple False Erantheum, Dazzler, Amethyst Stars প্রভৃতি, এটি Acanthaceae পরিবারের অন্তর্গত গুল্ম জাতীয় বহুবর্ষজীবি উদ্ভিদ। বেগুনী টগর গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপকূলীয় বাগানগুলির জন্য একটি পছন্দের ফুল গাছ।

বেগুনী টগর গাছের যত্ন

বেগুনী টগর বহুবর্ষজীবী গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। গাছটি সাধারনত ১ থেকে ৩ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। ফুলগুলি পাঁচ-পাঁপড়ি বিশিষ্ট গাঢ় বেগুনি রঙের ও তারার ন্যায় দেখতে, গাছের পাতা লম্বাটে আকৃতিরও হয়ে থাকে। শীতকাল ছাড়া প্রায় সারা বছর গাছে ফুল ফুটে , তবে গরমের শুরু থেকে শীতের আগে প্রযন্ত অধিক ফুল ফোঁটা । বেগুনী টগর সরাসরি মাটি অথবা টবে সুন্দর ভাবে বেড়ে ওঠে। ডাল কাটিং এর মাধ্যমে বেগুনী টগর গাছের বংশ বিস্তার সহজ।

বেগুনী টগর গাছের যত্ন

বেগুনী টগর গাছের স্থান নির্বাচন:-

বেগুনী টগর রৌদ ভীষন পছন্দ করে, তাই দিনে ৬ থেকে ৮ ঘটা সূর্যের আলো পাই তেমন স্থানে গাছ প্রতিস্থাপন করা উচিত, এতে গাছের বাড়বাড়ন্ত ভালো হয় এবং রোগে আক্রান্ত কম হয়। গাছ মাটিতে বা টবে প্রতিস্থাপন করবার প্রথম বছরেই ফুল আসে। ‘বেগুনী টগর গাছের জন্য’ সুনিষ্কাশিত যে কোনো ধরনের সমতল অথবা ঢালু স্থান প্রায়াজন, তবে খেঁয়াল রাখাতে হবে গরমকালে গাছের মাটি যেন শুঁকিয়ে না যায় কারন এই গাছ আর্দ্র মাটি পছন্দ করে।

বেগুনী টগর গাছের মাটি প্রস্তুত:-

যে কোন গাছে ফুলের বৃদ্ধি, উজ্জ্বলতা নির্ভর করে মাটির উর্বরতার উপর, মাটি গাছের জীবন। গাছ মাটিতে প্রতিস্থাপনের পূর্বে মাটির সাথে কিছু পরিমান জৈব সার- গোবর সার, এক চামচ সরিষার খোল, হাঁফ মুঠো হাঁড়গুড়ো, হাঁফ মুঠো শিংকুঁচি, এক চামচ নিমখোল এবং অল্প পরিমান অ্যামোনিয়াম সালফেট ভালকরে মিশিয়ে ১৫ থেকে ২০ দিনের জন্য ডেকে রেখে দিতে হবে, তার পরে গাছটিকে প্রতিস্থাপন করতে হবে।

বেগুনি টগর গাছ গোড়ায় জল জমা একদমই পছন্দ করে না, তেমনি শুকনো খটখটে মাটিও পছন্দ করে না, হালকা আদ্রতা বিশিষ্ট ভেজা মাটি পছন্দ করে। টবে গাছ বসানোর পূর্বে আমাদের সুনিষ্কাশিত উর্বর মাটি তৈরি করতে হবে, মাটি তৈরীর ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ দোঁয়াশ মাটি , ২৫ শতাংশ বালি, ২৫ শতাংশ ভার্মি কম্পোস্ট বা এক বছরের পুরনো গোবর সার অথবা পাতাপচা সার ভালোভাবে মেশাতে হবে। সাথে প্রতি টবের হিসেবে হাঁফ মুঠো নিমখোল, হাঁফ মুঠো হাড়গুঁড়ো, হাঁফ মুঠো শিংকুঁচি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে নিলে একেবারে আদর্শ মাটি তৈরি হয়ে যাবে।

বেগুনী টগর গাছে জল প্রয়োগ:

টবে বেগুনী টগর গাছ রোপণ করলে গ্রীষ্মের মরশুমে গাছে জলের চাহিদা প্রচুর থাকে। বেশি জলের অভাব হলেই গাছের ফুল শুকিয়ে যায় এবং পাতা গাছ থেকে ঝরে পড়তে থাকে। এজন্য গরমকালে প্রতিদিন দুবেলা করে গাছের গোড়ায় জল দিতে হবে। শীতকালে গাছে সপ্তাহে একদিন জল দেবেন এবং বর্ষার মরসুমে গাছগুলিকে সেডের নীচে রাখবার ব্যাবস্থা করবেন।

আলো :-

ফুলের মরসুমে গাছগুলিকে দিনে ৬ থেকে ৮ ঘন্টা সরাসরি সূর্যের আলো পাই তেমন স্থানে রাখত হবে। গরমকালে তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে হয়ে গেলে গাছে দুবেলা জল দেবেন এবং গাছটিকে সেডের নিচে রাখবার ব্যাবস্থা করবেন। এই গাছের জন্য উপযুক্ত তাপমাত্রা ২২ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

বেগুনি টগর গাছের পরিচর্যা:-

শীতের মরসুমে এই গাছে বিশেষ খাবারের প্রয়োজন হয় না কিন্তু গরমের সময় থেকে এদের খাবারের চাহিদা বেশি থাকে কারণ এ সময় গাছে প্রচুর কুঁড়ি আসতে শুরু করে। এর জন্য প্রতিমাসে একবার করে সার প্রয়োগ প্রয়োজন, সঠিক পরিচর্যা করলে শীতের আগে পর্যন্ত গাছ থেকে প্রচুর ফুল পাওয়া যায়। প্রতিনিয়ত গাছে ফুল পেতে চাইলে ৩০ দিনে একবার অল্প পরিমাণে সার প্রয়োগের পাশাপাশি জল প্রয়োগ করতে হবে।

বেগুনি টগর গাছে সার তুলনামূলক কম প্রয়োজন হয়। চারা গাছ প্রতিস্থাপনের কিছু মাসের মধ্য কোন ধরনের জৈব ও রাসায়নিক সার ব্যাবহার করবেন না। তিন থেকে চার মাস পরে জৈব সার ব্যাবহারে গাছে ফুল আসতে শুরু করে।

প্রচুর ফুল পেতে, ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি টবের গাছের জন্য পরিমাণ জৈব সার: ( এক বছরের পুরনো গোবর সার বা পাতাপচা সার বা ভার্মি কম্পোস্ট) সাথে হাঁড়গুড়ো, শিংকুঁচি, সরিষার খোল এবং অনুখাদ্য প্রভৃতি মিশিয়ে প্রতি এক মাস অন্তর মাটিতে ব্যাবহার করতে হবে। গাছের গোড়ায় সার প্রয়োগ করবার আগের দিন মাটিতে জল দেওয়া বন্ধ করে দিতে হবে। পরবর্তী দিন গোড়ার মাটি এক থেকে দেড় ইঞ্চি খুড়ে মিশ্রিত সার মাটিতে ব্যাবহার করবেন। অনুখাদ্য গাছের জন্য একটি প্রয়োজনীয় উপাদান বিস্তারিত জানতে দেখুন, অনুখাদ্যের প্রয়োজনীতা।

কীটনাশক প্রয়োগ ও পোকামাকড় দমন:-

বেগুনি টগর গাছে তেমন একটা পোকামাকড়ের আক্রমণ ঘটে না, তথাপি ১৫ দিন অন্তর নিম অয়েল জলের সাথে মিশিয়ে সন্ধাতে গাছে স্প্রে করবেন এবং পোকা-মাকড়ের উপদ্রব বেশি হলে রাসারনিক কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে এবং বর্ষাকালে প্রতি ১৫ দিন অন্তর যে কোন কোম্পানির ফাংগিসাইড জলের সাথে মিশিয়ে সমস্ত গাছে স্প্রে করতে হবে । এছাড়াও সমস্ত রকম রোগবালাই থেকে গাছকে রোগ মুক্ত রাখতে গাছের গোড়ায় শুকনো নিমপাতা অথবা নিম খোল দিলে অধিকাংশ কীটপতঙ্গ গাছ আক্রমণ করতে পারে না ।

বংশবিস্তার:-

বেগুনি টগর গাছের চারা তৈরী করা হয় বা বংশবিস্তার ঘটানো হয় কাটিং পদ্ধতির মাধ্যমে। কাটিং থেকে চারা তৈরীর আদর্শ সময় জুলাই থেকে আগষ্ট এবং ফেব্রুয়ারী থেকে মার্চ। চারা তৈরীর এক বছরের মধ্য গাছে ফুল আসে।

আপনার মূল্যবান রেটিং দিয়ে উৎসাহিত করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *