গ্রীষ্মের মোহনীয়তায় কৃষ্ণচূড়া ফুলের লাল রঙে রেঙেছে গোটা আকাশ

Last updated on April 30th, 2024 at 01:30 pm

গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে সুন্দর ফুলের উদ্ভিদের মধ্যে একটি হল কৃষ্ণচূড়া গাছ । কৃষ্ণচূড় বৃক্ষ জাতীয় , প্রস্ফুটিত, পর্ণমোচী উদ্ভিদ যার বৈজ্ঞানিক নাম ডেলোনিক্স রেজিয়া (Delonix regia)। এটি ফাবাসিয়ি (Fabaceae)পরিবারের অন্তর্গত একটি বৃক্ষ যা গুলমোহর নামেও পরিচিত।বসন্তের সময় থেকে কৃষ্ণচূড়া গাছগুলিতে পাতা ঝাড়তে শুরু করে এবং গ্রীষ্মের মরসুমে আগুনলাল কৃষ্ণচূড়া ফুলে সমগ্র গাছ ভরে যায়। গ্রীষ্মমন্ডলীয় পরিবেশের সবচেয়ে দুর্দান্ত ফুল গাছগুলির মধ্যে কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, জারুল, নীল কৃষ্ণচূড়া উল্লেখযোগ্য , প্রতিটি ফুলের সৌন্দর্য মৌসুমে প্রতিফলিত হয়।

গরমের মরসুমে কৃষ্ণচূড়া গাছের দিকে তাকালে যেন চোখ জুড়িয়ে যায়। এ গাছের আদিনিবাস পূর্ব আফ্রিকার মাদাগাস্কারে হলেও সমগ্র এশিয়া জুড়ে কৃষ্ণচূড়ার গাছ দেখা যায়। ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে কৃষ্ণচূড়া গুলমোহর নামেই পরিচিত। বাংলাদেশে কৃষ্ণচূড়ার গাছে ফুলের আর্বিভাব ঘটে চৈত্রের শুরুুর দিকে কিন্তু ভারতবর্ষে বৈশাখ মাসের প্রথম থেকে কৃষ্ণচূড়ার ফুল দেখা মেলে। গরমের মধ্যেও চারিদিকে ছড়িয়ে দেয় তার রক্তরাঙা রূপ। কেবল গ্রামেই নয়, নগর জীবনেও মানুষের দৃষ্টির সীমানায় স্থান করে নিয়েছে কৃষ্ণচূড়া।

গ্রীষ্মের মোহনীয়তায় কৃষ্ণচূড়া ফুলের লাল রঙে রেঙেছে গোটা আকাশ

কৃষ্ণচূড়া গাছে জন্মানোর জন্য উষ্ণ আবহাওয়ার প্রয়োজন। এই বৃক্ষ লবণাক্ত ও শুষ্ক অবস্থা সহ্য করতে পারে। ক্যারাবিয়ান অঞ্চল, আফ্রিকা, হংকং, তাইওয়ান, দক্ষিণ চীন, বাংলাদেশ, ভারতবর্ষ সহ বিশ্বের অনেক দেশে কৃষ্ণচূড়া গাছ জন্মে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শুধু মাত্র দক্ষিণ ফ্লোরিডা, দক্ষিণ পশ্চিম ফ্লোরিডা, টেক্সাসের রিও গ্রান্ড উপত্যকায় কৃষ্ণচূড়া দেখতে পাওয়া যায়।

ভারতবর্ষে সাধারণত এপ্রিল থেকে জুন সময়কালে কৃষ্ণচূড়া ফুল ফোটে। বাংলাদেশে কৃষ্ণচূড়া গাছে ফুল ফোটে মার্চ মাসে, তবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আবহাওয়ার উপর ভিত্তি করে কৃষ্ণচূড়ার ফুল ফোটার সময় ভিন্ন হয়।

গ্রীষ্মকালে মনে প্রশান্তি এনে দেয় যে সমস্ত ফুল তার মধ্য কৃষ্ণচূড়া অন্যতম, এই ফুলের সৌন্দর্য মৌসুমে প্রতিফলিত হয়। কৃষ্ণচূড়া ২০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। নিম্নাংশ প্রায়শ অধিমূল যুক্ত। বৈশাখের খরাদীর্ন আকাশের নিচে পত্রহীন শাখায় প্রথম মুকুল ধরার অল্পদিনের মধ্যেই সারা গাছ ফুলে ফুলে ভরে যায়। এত উজ্জ্বল রঙ এত অক্লান্ত প্রস্ফুটন তরুরাজ্যে দুর্লভ। কৃষ্ণচূড়া ফুলের বর্ণবৈচিত্র্য লক্ষণীয়। রাস্তার ধারে ধারে কৃষ্ণচূড়া ফুলের নজরকাড়া দৃশ্য দেখে মন জুড়িয়ে যায়। সবুজ চিকন পাতার ফাঁকে ফাঁকে লাল লকৃষ্ণচূড়ার ফুল দেখেই যেন চোখ জুড়িয়ে যায়। কৃষ্ণচূড়া একটি বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ। এ গাছ চমৎকার পত্রপল্লব এবং আগুনলাল কৃষ্ণচূড়া ফুলের জন্য বিখ্যাত।

বসন্তের আগমনের শুরুতে গাছে নতুন পাতা গজায়। পাতাগুলি ক্ষুদ্র, যৌগিক ও চিরুনির মতো সাজানো থাকে। ফুল শেষ হয়ে যাওয়ার পরে গাছে ফল ধরে। ফলের আকার চ্যাপ্টা লম্বা, দেখতে তলোয়ার শিমের আকৃতির, ফলের রঙ প্রথমে সবুজ ও পরিপক্ক হলে তা কালচে রঙ ধারন করে। কৃষ্ণচূড়া গাছের বংশবিস্তার সাধারনত বীজের মাধ্যমে হয়। এই গাছ দ্রত বর্ধনশীল, সাধারণত বীজ থেকে তৈরী চারা গাছ রোপনের ৫ থেকে ৬ বছরের মধ্য গাছে ফুল ফুটে। গাছের কাঠ মাঝারি শক্ত হবার জন্য জ্বালানির হিসেবে ব্যবহার ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ অন্য কাজে তেমন ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়না। উঁচু ভূমি কৃষ্ণচূড়া গাছ উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত স্থান।

যে কোন পরিবেশে টিকে থাকতে পারে কৃষ্ণচূড়া গাছ , যদিও এটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলবায়ু পছন্দ করে। এটি জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ বালুকাময়, কাঁকড়, দোআঁশ, উন্মুক্ত, নিষ্কাশনযোগ্য মাটিতে ভাল জন্মায়। গাছটি অপেক্ষাকৃত আর্দ্র পরিবেশ পছন্দ করে এবং ভারী বা কাদামাটি মাটিতে ভালভাবে বৃদ্ধি পাবে না।

[আরও পড়ুন: Blue Jacaranda|ভারতের মাটিতে নীল কৃষ্ণচূড়া গাছের যত্ন কিভাবে করবেন]

মাটি

কৃষ্ণচূড়া গাছ পর্যাপ্ত নিষ্কাশন সহ দোঁয়াশ, বেলে দোঁয়াশ অথবা কাঁকড় মিশ্রিত মাটিতে বৃদ্ধি পেতে পারে। গ্রীষ্মের সময়ে গাছের চারপাশের মাটিতে মালচের একটি 2-ইঞ্চি স্তর তৈরী করতে হবে।

আলো

কৃষ্ণচূড়া গাছের সঠিক বৃদ্ধির জন্য পূর্ণ সূর্যালোক সহ আংশিক, অর্থাৎ প্রতিদিন কমপক্ষে ছয় ঘন্টা সূর্যের আলো পাওয়া প্রয়োজন। পর্যাপ্ত আলো না পেলে গাছের বৃদ্ধি থমকে যাবে এবং ফুলের রঙ উজ্বলের পরিবর্তে বিবর্ণ হবে।

জল

বসন্ত, গ্রীষ্ম এবং শরতের প্রথম দিকে কৃষ্ণচূড়া গাছে নিয়মিত জল দেওয়া প্রয়োজন । যতক্ষণ না শিকড় ধরে যায়, মাটি অবশ্যই আর্দ্র রাখতে হবে কিন্তু স্যাঁতস্যাঁতে হতে দেওয়া যাবে না। শরৎ এর শেষের দিকে ধীরে ধীরে জল প্রয়োগ কমিয়ে দিতে হবে, তারপর গাছ সুপ্ত হয়ে গেলে শীতকালে সম্পূরক জল দেওয়া বন্ধ করতে হবে।

তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা

কৃষ্ণচূড়া গাছ গরম, আর্দ্র জলবায়ুতে ভাল বৃদ্ধি পায় কারণ এটি গ্রীষ্মমন্ডলী অঞ্চলের স্থানীয় উদ্ভিদ। যাইহোক, 45 ডিগ্রি ফারেনহাইটের নিচে তাপমাত্রা এটি অসহনীয়। ফ্লোরিডা, টেক্সাস, এবং কিছু জায়গায় হাওয়াই, এটি অসুবিধা ছাড়াই বাইরে জন্মানো যেতে পারে, তবে গাছটিকে গ্রিনহাউস, সংরক্ষণাগারের মধ্যে বা ঠান্ডা রাজ্যে একটি আচ্ছাদিত বারান্দায় রাখা উচিত।

সার

রোপণের চার থেকে ছয় সপ্তাহ পর এবং তারপর বছরে দুই বা তিনবার সুষম তরল সার বা জৈব সার দিলেই হবে। প্রথম তিন বছর কৃষ্ণচূড়া গাছকে জৈব অথবা তরল সার দিতে হয়। তারপর, প্রারম্ভিক বসন্তের শুরুতে একবার করে সার প্রয়োগ করলেই হবে। মাটিতে সার দেওয়ার পর গাছে সঠিকভাবে জল দিতে হবে।

বীজ

কৃষ্ণচূড়া গাছের বংশ বিস্তার কাটিং এবং বীজের মাধ্যমে হয়ে থাকে। বীজগুলি সংগ্রহ করার পরে, জৈব পদার্থ সহ ঝড়ঝুড়ে আর্দ্র মাটি এবং ছায়াযুক্ত জায়গায় রোপণ করতে হবে, রোপণের আগে বীজগুলিকে কমপক্ষে 24 ঘন্টার জন্য গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। বীজগুলিকে “নিক করা” বা চিমটি করা যায় এবং ভিজানোর জায়গায় অবিলম্বে বড় করা যায়। এই কৌশলগুলি আর্দ্রতাকে শক্ত বাহ্যিক অংশের মধ্য দিয়ে পেতে এবং অঙ্কুরোদগমকে উন্নীত করতে সক্ষম করে। অনুকূল পরিস্থিতিতে, বীজ থেকে চারা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে 30 সেমি (12 ইঞ্চি) বৃদ্ধি পায়।

কাটিং

কৃষ্ণচূড়া গাছের কাটিং থেকে চারা তরী করবার জন্য মোটা ও ধূসর বর্ণের ভাল ডাল নির্বাচন করতে হবে তবে কঁচি সবুজ রঙের ডাল নির্বাচন করলে শেকড় বার হওয়ার প্রবণতা অনেকটাই কমে যায়। কৃষ্ণচূড়া গাছের কাটিং করার সময় মার্চ এবং জুলাই থেকে আগস্ট মাস। মোটা ডালে অনেক বেশি আদ্রতা ধরে রাখতে পারে।

ডাল সংগ্রহ করবার পর ১০ থেকে ১২ ইঞ্চি মাপের কেটে নিতে হবে। এর থেকে ছোট কাটিং নিলে শাখা কম বেরোবে ,আর এর থেকে বড় নিলে শিকড় দেরিতে গজাবে ।

কৃষ্ণচূড়া ফুল কোন সময়ে ফোটে?

গ্রীষ্মের মরসুমে আগুনলাল কৃষ্ণচূড়া ফুলে সমগ্র গাছ ভরে যায়। গ্রীষ্মমন্ডলীয় পরিবেশের সবচেয়ে সুন্দর ফুল গাছগুলির মধ্যে কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, জারুল উল্লেখযোগ্য , প্রতিটি ফুলের সৌন্দর্য মৌসুমে প্রতিফলিত হয়।

কৃষ্ণচূড়া ফুল কোন মাসে ফোটে?

ভারতবর্ষ এবং বাংলাদেশে কৃষ্ণচূড়া ফুল এপ্রিল থেকে জুন মাসের সময়কালে ফোটে। তবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আবহাওয়ার উপর ভিত্তি করে কৃষ্ণচূড়ার ফুল ফোটার সময় ভিন্ন হয়।

কৃষ্ণচূড়া গাছের ডাল থেকে চারা তৈরী সম্ভব?

হ্যা, কৃষ্ণচূড়া গাছের কাটিং থেকে চারা তৈরী করা সম্ভব তবে বছরের নির্দিষ্ট সময় তা সম্পূর্ণ করতে হবে তা নাহলে সফলতা সম্ভব নয়। ডাল থেকে চারা তৈরী সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে

কৃষ্ণচূড়া ফুল নীল রঙের হয়?

কৃষ্ণচূড়া ফুল নীল রঙের হয় যার ইংরেজ নাম নীল জ্যাকারান্ডা যা দক্ষিণ-মধ্যও দক্ষিণ আমেরিকার গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায়। নীল কৃষ্ণচূড়া ভারতের মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটক, কেরালা এবং ঝাড়খন্ড রাজ্যে লাগানো হয়েছে।

কৃষ্ণচূড়া গাছের চারা তৈরীর সহজ প্রদ্ধতি কি?

কৃষ্ণচূড়া গাছের চারা তৈরীর সবথেকে সহজ প্রদ্ধতি বীজ দ্বারা বংশবিস্তার। এছাড়াও গাছের ডাল কাটিং করে বর্ষার মরসুমে প্রতিস্থাপন করেও চারা তৈরী সম্ভব।


আপনার মূল্যবান রেটিং দিয়ে উৎসাহিত করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *