নীলমণি লতা গাছের সম্পূর্ণ পরিচর্যা | Easy to Grow & Care Petrea Volubilis

Last updated on April 19th, 2024 at 10:43 am

বসন্তের মরসুমে জনপ্রিয় এবং শোভাময় ফুলর নাম নীলমণিলতা। গাছটি বহুবর্ষজীবী এবং লতানো প্রকৃতির হয়, গাছটি উচ্চতায় প্রায় ৫ থেকে ৬ মিটার (১৫- ২০ ফুঁট) পর্যন্ত হতে পারে। ফুলের পাপড়ি গুলি দুই স্তরে সাজানো থাকে, নিচের স্তর হালকা বেগুনি রঙের এবং উপরের স্তর গাঢ় বেগুনি রঙের চওড়া পাঁপড়ি হয়ে থাক। মাটিতে প্রতিস্থাপন করলে বিশেষ রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয় না।

এই প্রতিবেদন থেকে আপনি নীলমণি লতা গাছের সম্পূর্ণ পরিচর্যা | How to Grow & Care Petrea Volubilis সম্পর্কে জানতে পারবেন। নীলমণিলতা গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Petrea volubilis। গাছটির অন্যান্য ইংরেজি নাম Blue Bird Vine, Purple Wreath, Sand paper Vine,Queen’s Wreath, Sandpaper Vine, এটি Verbenaceae পরিবারের Petrea গণের অন্তর্ভুক্ত একটি গুল্ম জাতীয়, পর্ণমোচী, বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। তবে মজার ব্যাপারটা হল Queen’s Wreath নামক এই গাছটির বাংলায় নামকরণ করেন স্বয়ং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর “নীলমনি লতা”। ফুল গাছটির নামকরণ করা হয়েছিল আঠার শতকের বিশিষ্ট উদ্ভিদবিদ্ সংগ্রাহক রবার্ট জেমস পিটারের নাম থেকে। গাছটির আদি নিবাস মধ্য আমেরিকার মেক্সিকোতে।

নীলমণি লতা গাছের সম্পূর্ণ পরিচর্যা | How to Grow & Care Petrea Volubilis

Blue Bird Vine মেক্সিকো থেকে বলিভিয়া, ব্রাজিল এবং প্যারাগুয়ে পর্যন্ত অ্যান্টিলেস এবং ভেনেজুয়েলায় নদী ও সমুদ্রের তীরে দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু বর্তমানে সমস্ত দেশে বিভিন্ন্য প্রজাতির Blue Bird Vine গাছ চোখে পড়ে। গাছটি জলবায়ুর উপর নির্ভর করে, এটি বছরে দুটি পর্যন্ত ফুল হতে পারে।

নীলমণি লতার প্রতিটি ফুলে পাঁচটি করে পাপড়ি থাকে। প্রতিটি পুষ্পমঞ্জরিতে ১০ থেকে ৩০ বা তারও বেশি ফুল থাকে। গাছের প্রতিটি ডালের শীর্ষে গুচ্ছ আকারে প্রচুর ফুল ফোটে। শীতের শেষ এবং বসন্তের শুরু থেকে গাছে ফুল ফোটা শুরু হয় এবং পরবর্তী শীত আসতে আসতে গাছে ফুল কমে যেতে দেখা যায় অর্থাৎ মার্চ-এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর অক্টোবর মাস গাছের Flowering Season। গাছের প্রতিটি ফুল ৪-৫ দিন স্থায়া হয় এবং ফুল গুলি গাছ থেকে ঝড়ে পড়ে গেলেও হালকা নীল রং এর বৃন্তগুলো অনেক দিন থাকে। সারা বিশ্বে ১৩০ প্রজাতিরও বেশি নীলমণি লতা রয়েছে।

স্থান নির্বাচন:-

গাছটি মোটামুটি দিনে ৪ থেকে ৬ ঘটা রৌদ পাই তেমন প্রতিস্থাপন করা উচিত, এতে গাছের বাড়বাড়ন্ত ভালো হয় এবং রোগে আক্রান্ত কম হয়। গাছটি কে মাটিতে বসানোর ৭-৮ মাস পরেই ফুল আসা শুরু হয়। ‘নীলমণি লতা’ বর্ধনশীল কাষ্টল উদ্ভিদ। সুনিষ্কাশিত যে কোনো ধরনের মাটিতেই এই উদ্ভিদ জন্মায়।.

অন্যান্য গাছের মতোই এই গাছটি যদি সরাসরি মাটিতে বসানো যায় তবে তার জন্য নূন্যতম পরিচর্যার প্রয়োজন হয়I গাছটিকে মাটিতে বসানোর পূর্বে জায়গাটি কে ভালো করে জৈবসার দিয়ে প্রস্তুত করে নিতে হবেI পরবর্তী সময়ে গাছটি নিজেই তার চাহিদা অনুযায়ী পুষ্টিমৌল মাটি থেকে শোষণ করে বেড়ে উঠবে । তবে বছরে একবার হলেও গাছের গোড়ায় সার প্রয়োগ করা প্রয়োজন, তবে গাছটি যদি টবে প্রতিস্থাপন করতে চান, তাহলে গাছটির চাহিদা অনুযায়ী খাবার,আলো,জল, কীটনাশাক এর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলি খেয়াল করতে হবেI আর সেই সম্পূর্ণ ব্যবস্থাপনা নিম্নে বর্ণিত হলো।

টব নির্বাচন ও মাটি প্রস্তুত:-

নীলমণিলতা একটি বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ তাই ভালো হয় বড় গামলা জাতীয় টব নির্বাচন করলেI টবে প্রতিস্থাপন করলে ১০  ইঞ্চি অথবা ১২ ইঞ্চি টব নির্বাচন করতে হবে। গাছটি টবের তুলনায় মাটিতে খুব ভালো হয় প্রথমেই বলেছিলাম, তাই গাছটি টবে বড় হওয়ার জন্য প্রচুর পরিমাণে খাদ্যের প্রয়োজন হয়। নীলমনিলতা একটু ভারী ধরণের মাটি অর্থাৎ এটেঁল মাটি পছন্দ করে। এই গাছটি প্রতিস্থাপনের পূর্বে দু ভাগ মাটি নিতে হবে আর নিতে হবে একভাগ জৈব সার (এক বছরের পুরনো গোবর সার/ পাতা পঁচা/ভার্মিকম্পোস্ট), আর নিতে হবে হাঁড় গুড়ো, শিং কুঁচি এবং পরিমাণ মতো নিম খোল দ্বারা মাটি প্রস্তুত করে গাছটি টবে প্রতিস্থাপন করতে হবে । টবে প্রতিস্থাপন করলে মাটির ময়েশ্চার ধরে রাখার জন্য ব্যবহার করতে হবে কোকোপিট অথবা কাঠের গুঁড়ো ।

প্রতিস্থাপন পদ্ধতি :-

প্রথমে টবের ছিদ্র গুলোকে ইটের টুকরো/ টব ভাঙা টুকরো দিয়ে আটকে দিতে হবে, ছিদ্র গুলোকে আটকে দেওয়ার পর কিছু বালি-নুড়ি টবের মধ্যে বিছিয়ে দিয়ে এক ইঞ্চি বেড তৈরি করতে হবে যাতে অতিরিক্ত জল ড্রেনেজ সিস্টেম থেকে টবের বাইরে বেরিয়ে যায়। এর পর অল্প পরিমাণ মাটি দিয়ে গাছটি টবের ঠিক মাঝ বরাবর বসাতে হবে। এরপর প্রয়োজনানুযায়ী মাটি ভালোকরে ঠেসে ঠেসে দিতে হবে কারণ ঠেসে দিলে মাটির মধ‍্যে থাকা বাতাস বেরিয়ে যায় ফলে গাছের শিকড় পচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। প্রতিস্থাপন হয়ে গেলে প্রায়াজন মতো জল দিয়ে দিতে হবে।

নীলমণি লতা গাছের সম্পূর্ণ পরিচর্যা
নীলমণি লতার পরিচর্যা

বি:দ্র:—টবে মাটি দেওয়ার সময় অবশ‍্যই খেয়াল রাখতে হবে যাতে টবের ওপর 2 ইঞ্চি ফাঁকা জায়গা থাকে।

creativitygardening

[আরও পড়ুন: তরল সার- গরমকালে সমস্ত গাছের জন্য অমৃত এই জৈব তরল সার]

নীলমণি গাছের পরিচর্যা:-

অন্য সময়ে গাছের বিশেষ পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না, কিন্তু শীতকালে গাছের সঠিক পরিচর্যা করতে হবে। প্রথমত, গাছ টবে থাকলে পূর্ন সূর্যের আলোতে রাখতে হবে এবং নিয়মিত গাছে খাবার প্রয়োগ করতে হবে। নীলমণি গাছে ফুল ফোঁটার আদর্শ সময় মার্চ মাস থেকে, সুতরাৎ শীতের মাঝামাঝি সময় থেকে নিয়মিত গাছে খাবার দিতে হবে। গাছে ফুলের পরিমান বৃদ্ধি করতে এবং কোষকে মজবুত করতে , ফসফরাস এবং পটাশ সম্বৃদ্ধ সার ব্যাবহার করতে হবে (মাঝারি পরিমান)। গরমকালে দুপুরের তীব্র আলো না পায় তেমন স্থানে টবের গাছ গুলি রাখবেন, চেষ্টা করবেন সকালের সূর্যের আলো পায় এবং বিকালে সূর্যের আলো পায় এমন স্থানে গাছগুলি রাখবার। শীতকালে নীলমণি গাছে কম মাত্রায় জল প্রয়োগ করতে হবে, যাতে মাটিতে আদ্রতা বজায় থাকে। তবে গরমকালে টবের গাছে দিন দু বেলা জল দেওয়া খুবই প্রায়াজন। বর্ষাকালে একটু খেয়াল রাখবেন টানা বৃষ্টি হলে টবটিকে গাছসুদ্ধু কাত করেও রেখে দিতে পারেন অথবা সেডের নিচে রেখে দিতে পারেন। বৃষ্টির কিছুদিন পর পর টবের মাটি একটু খুঁড়ে দিয়ে ফাঙ্গিসাইট ছিঁটিয়ে দেবেন এবং গাছটিকে রৌদ্রে রেখে দেবেন। বর্ষাকালের টবের গাছগুলোতে ১০ থেকে ১২ দিন অন্তর অন্তর ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে।

[আরও পড়ুন: শীতের মরসুমে জারবেরা গাছের পরিচর্যা কি ভাবে করবেন ?]

কীটপতঙ্গ এবং রোগ দমন :-

নীলমণি গাছে তুলনামূলক ভাবে কীটপতঙ্গের আক্রমন কম হয়, তবে তারা এফিড বা জাবপোকার জন্য সংবেদনশীল হতে পারে। গাছে যদি পিপড়ে বা জাবপোকার উপদ্রব লক্ষ্য করেন, তাহলে কীটনাশক সাবান বা নিম তেল দিয়ে গাছগুলিকে সপ্তাহে একবার স্প্রে করতে হবে এছাড়াও কীটপতঙ্গে নানা ধরনের পোকামাকড়ের, ল্যাদাপোকার আক্রমন থেকে নিস্তার পেতে ডারসবান (Dursban) প্রতি ১০ দিন অন্তর দুই বার স্প্রে করতে হবে

এই গাছগুলি খারাপভাবে নিষ্কাশন করা মাটিতে শিকড় পচা এবং ছত্রাকজনিত রোগের জন্যও সংবেদনশীল হতে পারে। এটি প্রতিরোধ করার জন্য, ভাল নিষ্কাশন করা মাটিতে আপনার নীলমণি লতা লাগাতে ভুলবেন না এবং অতিরিক্ত জল এড়ান।

নীলমণি লতার বংশ বিস্তার :-

নীলমণি লতা গাছের চারা তৈরী অথবা বংশবিস্তারের জন্য তিনটি প্রধান পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে, যেমন স্টেম কাটিং, লেয়ারিং এবং বীজ বপন পদ্ধতি।। কলম পদ্ধতির দ্বারা চারা তৈরী করলে গাছের মতৃগুনাগুন বজায় থাকে , এর জন্য আপনাকে জোড় কলম পদ্ধতির মাধ্যমে চারা তৈরী করা উচিত। এই গাছে অল্প পরিমাণ জল দিলেই যথেষ্ট। গাছ লাগানোর পর অল্প করে নিয়মিত জল দিতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে জল যেন বেশি না হয়ে যায়। কলম থেকে চারা তৈরীর আদর্শ সময় জুলাই থেকে আগষ্ট এবং ফেব্রুয়ারী থেকে মার্চ।

নীলমণি লতার গাছের প্রচলিত নাম:

NamePositionScientific Name
নীলমণি লতাবাংলায়Petrea volubilis
नीलमणि लताহিন্দিPetrea volubilis
Kudirai valuppuTamilPetrea volubilis
Petrea arborea, Petrea racemosa,
Petrea mexicana, Petrea erecta
USAPetrea volubilis
Purple Wreath, Queen’s Wreath, Sandpaper VineCommon NamePetrea volubilis

FAQ [Frequently Asked Questions]

নীলমণি লতা কি একটি বহুবর্ষজীবী বা বার্ষিক উদ্ভিদ?

নীলমণি লতা একটি বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ, সঠিক যত্ন এবং পরিচর্যা করলে বহু বছর ধরে গাছটিকে বাঁচিয়ে রাখা যেতে পারে।

নীলমণি লতা কি টবে বেড়ে উঠতে পারে?

হ্যাঁ, নীলমণি লতা একটি পাত্রে সহজে বৃদ্ধি করা যেতে পারে। ছোট গাছ প্রতিস্থাপনের পূর্বে 10″ থেকে 14″ ব্যাসের পাত্র নির্বাচন করা প্রায়াজন এবং উদ্ভিদের ব্যাপক রুট সিস্টেম মিটমাট করার জন্য অথবা বড় জাতগুলির বৃদ্ধির জন্য একটি বড় ধারক নির্বাচন করা বিশেষ প্রায়াজন।

কিভাবে আপনি নীলমণি লতা যত্ন নেবেন?

যে কোন বহুবর্ষজীবি ফুল গাছের ন্যায়, নীলমণি লতা গাছে ফুলের জন্য পূর্ণ সূর্যালোকের প্রয়োজন হয়। গাছটি আধা-ছায়াযুক্ত সূর্যালোকও সহ্য করতে পারে, তবে আপনি গাছটিকে সম্পূর্ণ ছায়ায় রাখবেন না। সামগ্রিকভাবে, আপনার লতাটি 5-6 ঘন্টা সরাসরি সূর্যালোক পেলে গাছের ভালভাবে বৃদ্ধি ঘটবে এবং রোগে আক্রান্ত কম হবে।

কিভাবে আপনি নীলমণি লতার বংশবিস্তার ঘটাবেন?

নীলমণি লতার বংশ বিস্তারের জন্য, স্টেম কাটিং, লেয়ারিং এবং বীজ বপন তিনটি প্রধান পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে।

আপনার মূল্যবান রেটিং দিয়ে উৎসাহিত করুন