Last updated on September 4th, 2022 at 01:54 pm
মধুমালতী ফুল গাছ মানুষ বাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে বাড়ির প্রবেশ দ্বারে, ছাদে, ফুল বাগানে প্রভৃতি স্থানে লাগিয়ে থাকে। গাছটির ডালপালা লম্বা হয়ে চারিদিক ছড়িয়ে যায় এবং ঝোপঝাড়ে পরিণত হয়। দির্ঘাদিনের গাছ হলে ধীরে ধীরে মূল লতাটি বেশ মোটা হয়ে যায় এবং মাটিতে বহু দূর পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে। এই লাল এবং সাদা মিষ্টি সুবাসের ফুলগুলি যেকোন মানুষকে মুগ্ধ করবে।
ধুমঞ্জরি বা মধুমালতী এর ইংরেজি নাম Chinese honeysuckle বা Rangoon creeper) লতানো গাছ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Quisqualis indica যা Combretaceae পরিবারের অন্তর্গত। মাধুরীলতার হিন্দি নাম রঙ্গন-কা-বেল, বোম্বে অঞ্চলে বারমাসী, লাল চামেলী।
বাড়ির টবে মধুমালতি চাষ পদ্ধতি | Easy To Grow Madhumalti plant
মাধবীলতা বলতে আমরা সকলে লাল এবং সাদা মিষ্টি সুবাসের ফুল গুলিকে চিনে থাকি, কিন্তু বাস্তবে সেগুলি মধুমালতী বা মধুমঞ্জুরি। মধুমালতী আর মাধবীলতা দুটো সম্পূর্ণ আলাদা গাছ ও ফুল। মধুমালতী বা মধুমঞ্জুরি আমাদের গ্রামে,শহরে বাড়ির আঙিনা বা উদ্যানে লাল-সাদা ফুলের যে অপূর্ব সমারোহ আমরা সারাবছর দেখে থাকি, সেই ফুলটিই আসলে মধুমালতী। কবিগুরু নাম দিয়েছেন মধুমঞ্জুরি।
মধুমঞ্জরি/মধুমালতি (Quisqualis indica), Combretaceae পরিবারের বনেদি সদস্য। ইংরেজ সাহেবরা মধুমালতি গাছটিকে ভালবেসে নাম দিয়েছিলেন রেংগুনক্রিপার। মালয়েশীয় প্রজাতি এটি। কোথাও কোথাও মধুমালতী নামেও পরিচিত। এটি প্রায় সারাদেশেই সহজলভ্য। মধুমালতি সাধারণত বৃক্ষারোহী লতানো প্রকৃতির গাছ যা দীর্ঘজীবী ও বহুবর্ষী অর্থাৎ অনেক দিন বাঁচে থাকে এবং ফুল দেয়। গ্রামে এই গাছগুলি অযত্নে জঙ্গলে পড়ে থাকতে দেখা যায় কিন্তু অনেকেই আছেন যারা শখে গাছগুলি টবে বসান।
মধুমালতি জন্য তেমন একটা যত্নের প্রয়োজন হয় না, এরা অযত্নেই জন্মে, অযত্নেই বাড়ে। কিন্তু আপনি যদি গাছগুলিতে টবে করতে চান তাহলে বিশেষ যত্ন এবং পরিচর্যার প্রয়োজন আছে তো এবার জেনে নেওয়া যাক এই গাছগুলোকে টবে প্রতিস্থাপন করতে গেলে গেলে কি ধরনের টব আমাদের নির্বাচন করতে হবে।
মধুমালতি জন্য স্থান নির্বাচন:-
বাড়ির টবে মধুমালতি চাষ পদ্ধতি | Easy To Grow Madhumalti plant: মধুমালতি গাছে সারা গ্রীষ্ম এবং বর্ষাকাল ধরে প্রচুর ফুল পেতে, চারা গাছ রোপণের পূর্বে সঠিক জায়গা, পাত্র ও মাটি নির্বাচন করা উচিত। প্রতিদিন ৬ থেকে ৮ ঘন্টা সূর্যের আলো পায় তেমন স্থান নির্বাচন করতে হবে। মাটিতে বসালে গ্রীষ্ম কালে গাছের গোড়ার মাটি সর্বদা ভেঁজা থাকে তেমন স্থান নির্বাচন করতে হবে।
এই গাছটি টবে করবার জন্য বেশি জায়গার প্রয়োজন হয় না আপনি আপনার বাগানের ছোট্ট একটি টবের মধ্যে ছোট আকারে খুব সহজেই মধুমালতি গাছ পরিচর্যা করতে পারেন। এর জন্য একটু বড় মাপের টব নির্বাচন করতে হবে। ১২ ইঞ্চি বা তার অধিক উপরে হলেও অসুবিধা নেই। স্থান নির্বাচন হয়ে গেলে আপনাকে কাছাকাছি কোন ভালো নার্সারি থেকে ভালো জাতের গাছের চারা কিনে আনতে হবে।
[আরও পড়ুন: গাছ ভর্তি প্রচুর ফুল পেতে কামিনী গাছের বিশেষ পরিচর্যা | Kamini Flower]
মধুমালতি গাছের জন্য মাটি তৈরি:-
মধুমালতি একটি Permanent Plants সুতরাৎ চারা গাছ প্রতিস্থাপনের পূর্বে মাটি প্রস্তুত করাটা ভীষন প্রয়োজন যে উপাদান নিতে হবে- উর্বর দোআঁশ মাটি ৫০% তার সঙ্গে নিতে হবে ২০% কোকো পিট ,৩০% এক বছরের পুরনো গোবর সার অথবা ভার্মি কম্পোস্ট এবং নিতে হবে চা চামচের তিন চামচ হাড়গুড়ো, তিন চামচ সিংকুচি এবং পরিমাণমতো নিম খোল হবে।
মধুমালতি গাছের খাবার:-
টবে রোপণ বা প্রতিস্থাপন করবার ৩০ থেকে ৪৫ দিন পর থেকে প্রতি সপ্তাহে টবের মাটি খুঁচিয়ে আলগা করে দিতে হবে এতে গাছের শিকড় সহজে বাড়বে।
শীতকালে এই গাছের বিশেষ খাবারের প্রয়োজন হয় না কিন্তু গরমের শুরুতে এদের সারের প্রয়োজনীয়তা বেশি থাকে কারণ এ সময় গাছে প্রচুর কুঁড়ি আসতে শুরু কর। সঠিক যত্ন এবং পরিচর্যা করলে বর্ষার পরেও অথ্যাৎ শরৎ কাল পর্যন্ত এই গাছ থেকে ফুল পাওয়া যায়। প্রতিনিয়ত গাছে ফুল পেতে চাইলে প্রতি ১৫ দিনে একবার করে গাছে অল্প পরিমাণে সার প্রয়োগ করতে হবে।প্রাথমিক অবস্থায় প্রত্যেক মাসে একবার করে দুমুঠো গোবর সার অথবা ভার্মি কম্পোস্ট এবং এক চামচ সরষের খোল এবং ১ চামচ করে Micronutrients: Top Gold, Agromin Gold, Agromin Max ব্যাবহার করবেন।
গাছের বয়স কয়েক মাস হওয়ার পার ১৫ দিনে একবার করে ১ চামচ পরিমাণ NPK (10:26:26) সার গাছের গোড়া থেকে কিছুটা দূরে প্রয়োগ.করতে হবে। গাছের গ্রোথে আপনি যখন সন্তুষ্ট তখন বেশি ফুল পাওয়ার জন্য 15 দিনে একবার ১২ ইঞ্চি টবের ক্ষেত্রে ১২ থেকে ১৫ র্টি DAP দানা এবং ১.৫ চামচ করে পটাশ সার টবের সাইড দিতে দিতে পারেন। এভাবে সার প্রয়োগ করলে টানা বর্ষা পর্যন্ত উন্নত মানের ফুল সরবরাহ অব্যাহত থাকে।
[আরও পড়ুন: টবে জবা গাছ করবার সহজ কিছু টিপস্ | How To Grow Joba Flower Plant In Pots]
আলো:-
এই গাছকে সাত-আট ঘণ্টা রোদের মধ্যে রাখতে হবে। তবে গ্রীষ্মকালের অতিরিক্ত গরমের সময় একটু ছায়াতে যেখানে আলো কম আসে এমন জায়গায় রাখতে পারলে ভালো হয়। এই গাছ ময়েশ্চার ভালবাসে, সেইজন্যই মাটির সঙ্গে কোকোপিট মেশানো হয়েছে।
ডালপালা কাঁটাই- ছাঁটাই:-
সাধারনত শীতের পরপরই গাছের ডালপালা কাঁটাই- ছাঁটাই সম্পূর্ণ করে ফেলতে হবে। কেননা গরমের মাঝামাঝি সময় থেকে গাছে কুঁড়ি আশা শুরু হয়। যদি টবের মাটি পরিবর্তনের দরকার পড়ে তবে ডালপালা কাঁটাই- ছাঁটাই করবার সময় করে নিন। এই গাছ খুবই তাড়াতাড়ি বেড়ে ওঠে তাই টবের মধ্যে বেশি বেড়ে উঠলে অসুবিধা হতে পারে সুতরাং গাছ একটু বড় হলেই ওপরের ডগা গুলিকে ছেঁটে দিন সম্ভব হলে (hard pruning) করে দিন। ফলে গাছটি লতানো না হয়ে বেশ বুঁশি বা গুল্ম আকার ধারণ করবে। এইভাবে স্টেপ বাই স্টেপ গাছের যত্ন করতে পারলে আপনার ছাদবাগানেও খুব সুন্দরভাবে মধুমালতি ফুলের শোভা বৃদ্ধি করে উঠতে পারবেন।
পোকা-মাকড় দমন:-
এই গাছে প্রাথমিক অবস্থায় তেমন একটা পোকামাকড়ের আক্রমণ ঘটে না। তথাপি ১৫ দিন অন্তর নিম অয়েল জলের সাথে মিশিয়ে সন্ধাতে গাছে স্প্রে করবেন এবং পোকা-মাকড়ের উপদ্রব বেশি হলে রাসারনিক কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে বয়স্ক পাতার নিচে পোকামাকড় বেশি দিন আশ্রয় নেয় এর জন্য পাতা হলুদ হওয়া মাত্রই পাতার বোটা থেকে ছেঁটে ফেলে দিতে হবে। এছাড়াও সমস্ত রকম রোগবালাই থেকে গাছকে রোগ মুক্ত রাখতে গাছের গোড়ায় শুকনো নিমপাতা অথবা নিম খোল ছিঁটিয়ে দিলে অধিকাংশ কীট পতঙ্গের হাত থেকে গাছকে রক্ষা করা সম্ভব।
[আরও পড়ুন: মাধবীলতা গাছের বিশেষ পরিচর্যা | How to care Madhavilata Plant ??]
Name | Position | Kingdom |
---|---|---|
মধুমালতী | Bengali | Plantae |
রঙ্গন-কা-বেল, রমাসী, লাল চামেলী | Hindi | Plantae |
Chinese honeysuckle, Rangoon creeper | English | Plantae |
প্রিয় পাঠক, এই প্রতিবেদনটি পঠন করবার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার মতো পাঠকের সহযোগিতা “ক্রিয়েটিভিটি গার্ডেনিং” সর্বদা কার্ম করে। গাছই আমাদের একমাত্র সম্পদ যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষিত করতে পারে, বাঁচিয়ে রাখতে পারে। নিঃস্বার্থে গাছ ভালবাসুন, সকলকে গাছ লাগাতে উৎসাহিত করুন।
আপনাদের যদি এই বিষয়ে কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সের মাধ্যমে আমাকে জানাতে জানাবেন। সেগুলোর সমাধান করাবার আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব। আপনার মূল্যবান রেটিং দিয়ে উৎসাহিত করুন, সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, সবাই খুব ভালো থেকো নমস্কার।