নীল সিফন হিবিসকাস গাছের প্রতিস্থাপণ এবং পরিচর্যা | How To Grow And Care For Blue Chiffon Hibiscus

Last updated on November 26th, 2023 at 08:26 pm

জবা আমাদের অতি পরিচত একটি ফুল। সৌন্দর্য্যের বিচারে জবা যে গোলাপ ফুল কেও হার মানায়, সেই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। রূপে রঙে অপূর্ব সৌন্দর্য ফুলগুলি সবারই মন কেড়ে নেয়। আর সেই জবা যদি হয় নীল সিফন হিবিসকাস (Blue Chiffon Hibiscus) হয় তাহলে তো একটু অতিরিক্ত আকর্ষণ থাকবেই।

এই প্রতিবেদন থেকে আপনি নীল সিফন হিবিসকাস গাছের প্রতিস্থাপণ এবং পরিচর্যা | How To Grow And Care For Blue Chiffon Hibiscus গাছের প্রতিস্থাপণ এবং পরিচর্যা সম্পর্কে সম্পূর্ন তথ্য জানতে পারবেন।

নীল সিফন হিবিসকাসের বৈজ্ঞানিক নাম Hibiscus syriacus, ইংরেজি -Blue Chiffon, Rose of Sharon প্রভৃতি, এটি Malvaceae পরিবারের একটি গুল্ম জাতীয় ফুল গাছ। নীল সিফন হিবিসকাস পর্ণমোচী বা চিরহরিৎ ঝোপঝাড় প্রকৃতির গাছ, এটি বার্ষিক বা বহুবর্ষজীবীও হতে পারে, যার মধ্যে সরল বা পালমেটে লবড পাতা এবং বড়।

নীল সিফন হিবিসকাস গাছের প্রতিস্থাপণ এবং পরিচর্যা | How To Grow And Care For Blue Chiffon Hibiscus

নীল সিফন হিবিসকাসফুলের একটা অন্যরকম আকর্ষণ আছে, কারণ এর সুন্দর রঙের জন্য এবং অন্যান্য জবার থেকে এটি একটু আলাদার জন্য। নীল জবা ডাবল পেটাল এবং সিঙ্গেল পেটালের হয়ে থাকে। আমরা যখন নার্সারি থেকে চারা সংগ্রহ করি তখন ফুল দেখে, সুস্থ সবল এবং সতেজ চারা গাছটি নিই, কিন্তু বাড়িতে আনার কিছুদিন পর থেকে গাছে ফুল আসে না, কুঁড়ি গুলি ঝড়ে যায়, এবং আগার পাতা গুলি কুঁকড়ে যায় প্রভৃতি। বর্তমানে নীল জবা ছাড়াও কৃষি বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে অনেক ধরনের হাইব্রিড জবা ফুল গাছ আমরা দেখতে পায়, তার মধ্যে ভারতবর্ষের পুনে জবা এবং ব্যাঙ্গালোর জবা খুবই আকর্ষণীয় যা আমরা বিভিন্ন নার্সারি তে দেখতে পাই, এছাড়াও অস্ট্রেলিয়ান জবা , ক্রান্তীয় জবা ( Tropical Hibiscus ) আর সাথে আমাদের দেশী জবার বৈচিত্রও কম নয়।

স্থান নির্বাচন:-

দিনে মোটামুটি ৬ থেকে ৮ ঘটা রৌদ পাই তেমন স্থানে দেখে গাছ প্রতিস্থাপন করা উচিত, এতে গাছের বাড়বাড়ন্ত ভালো হয় এবং রোগে আক্রান্ত কম হয়। ঢালু, উর্বর দোঁয়াশ মাটি অথবা বেলে-দোঁয়াশ জাতীয় সুনিষ্কাশিত মাটিতে এই গাছ ভাল হয়।

মাটি প্রস্তুত:-

নীল জবা অন্য জবার তুলনায় একটু সুখী গাছ, তাই মাটি তৈরীর প্রক্রিয়াটি মনযোগ সহকারে পড়বেন। যে কোন গাছের বেঁচে থাকার জন্য প্রথম উপাদান মাটি। আর মাটির জল নিষ্কাশন ব্যাবস্থা যদি ভাল না হয় তাহলে নার্সারি থেকে চারা সংগ্রহ করে প্রতিস্থাপনের কিছু দিন পারে গাছটি মাড়া যাবে। নীল জবা গাছের জন্য বেলে দোঁয়াশ মাটি একদম আদর্শ, ভারীমাটি অর্থাৎ কাঁদামাটি বা যে মাটিতে কাদার ভাগ বেশি তেমন মাটিতে প্রতিস্থাপন না করাই ভাল। কারণ ভারীমাটিতে গাছ মড়ার প্রবনতা বেশি থাকে। অপরদিকে বালি মাটিতে জবার কুড়ি ঝরার প্রবনতা অনেক বেশি হয়, তবে সেক্ষেত্রে নিয়মিত গাছে জল প্রয়োগ করতে হবে।

নীল সিফন হিবিসকাস গাছের প্রতিস্থাপণ এবং পরিচর্যা | How To Grow And Care For Blue Chiffon Hibiscus
How To Grow And Care For Blue Chiffon Hibiscus

আমাদের হাতের কাছেই যে মাটি থাকে, সেই দোঁয়াশ মাটির সাথে একবছরের বা তারও বেশি পুরনো পচানো গোরব সার , অথবা ভার্মিকম্পোস্ট, বা পাতাপচা সার সমপরিমানে, সাথে পরিমান মতো হাড়গুড়ো, সিংকুচি এবং নিম খোল মিশিয়ে মাটি তৈরি করতে হবেI প্রতিস্থাপনের এক থেকে দেড় বছর পরে গাছটিকে আবার রিপট করার প্রোয়জন হয়। শীতের এবং বর্ষার মাঝামাঝি সময়ে ডালগুলি বেশি বড় হলে কাঁটাই- ছাঁটাই সম্পূর্ণ করে ফেলতে হবে এবং রিপট করতে হবে-এবার রিপট করার সময় নিতে হবে দু’ভাগ গার্ডেন সয়েল,দুভাগ নদীর সাদা বালি মাটি আর তার সঙ্গে দুভাগ কোকোপিট এবং দু চামচ হাড়গুড়ো, দু চামচ সিংকুচি এবং এক চামচ নিম ভালভাবে মিশিয়ে জবা গাছ রিপট করতে হবেI জবা ফুলের মাটি তৈরির ক্ষেত্রে কোকোপিট খুব ভালো ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে I জবা ভেজা মাটি পছন্দ করে আর কোকোপিট সবথেকে ভালো, মাটির আর্দতা ধরে রাখতে সাহায্য করে I

টব নির্বাচন:-

চারাগাছ প্রথমেই ছোট ৬ ইঞ্চি টবে প্রতিস্থাপন করবেন এক থেকে দেড় বছর পারে ৮ ইঞ্চি অথবা ১০ ইঞ্চি টবে স্থানন্তিরিত করতে হবে। তবে বড়ো পাত্র বা টব নিলেই যে প্রচুর ফুল হবে সে-রকম নয়। তার জন্য দরকার সঠিক যত্ন এবং সময় মতো কীটনাশক প্রয়োগI

Sunlight (আলো): –

গাছটি প্রতিস্থাপন হয়ে গেলে ৪ থেকে ৫ দিনের জন্য টবটি ছায়া স্থানে রেখে দিতে হবে। এক সপ্তাহ পর সকালের হালকা রোদে পায় তেমন স্থানে টবটি রাখতে হবে। তবে বর্ষাকালে প্রতিস্থাপন করলে ছায়া স্থানে রাখবার প্রয়োজন নেই। তবে নীল জবা মোটামুটি অল্প রোদ বা পর্যাপ্ত পরিমানে রোদ সব ক্ষেত্রেই এ বেশ ভালো ভাবে বেড়ে উঠতে পারে এবং প্রচুর ফুল দেয় । তবে একদম ছায়াতে নয়। তাহলে কুঁড়ি ঝরে যাবে । যেখানে পৃথিবীর সব ধরণের জবা ফুলেরই কুঁড়ি ঝরার প্রবল প্রবনতা আছে সে ক্ষেত্রে এর কিন্তু কুঁড়ি ঝরার প্রবনতা প্রায় নেই বললেই চলে।

খাবার প্রয়োগ:-

গাছ ভর্তি ফুল পেতে ১০ থেকে ১৫টা ডি.এ.পি/ টি. এস.পি দানা সার ব্যাবহারের ১৫ থেকে ২০ দিন পরে এক চামচ পটাশ ব্যাবহার করতে হবে। বর্ষাকালে গাছের গ্রোথ ভাল থাকলে ডি.এ.পি/ টি. এস.পি এবং পটাশ সারের পরিবর্তে NPK- ১০:২৬:২৬ ব্যাবহার করবেন। রাসায়নিক সার ব্যাবহারের ১৫- ২০ দিন পর যে কোন কম্পোস্ট সার মাটিতে দেওয়া যেতে পারে। আর অবশ্যই সার দেওয়ার আগে গাছের গোড়ার মাটি যেন ভেজা থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

তবে ব্যাক্তিগত ভাবে আমি রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার ব্যাবহারের পরামর্শ দেব। প্রতি ৪০ থেকে ৪৫দিন অন্তর ২ মুটো গোবর সার, হাফ চামচ সরিষার খোল,২ চামচ হাড় হাঁড় গুড়ো,২ চামচ শিং কুঁচিরসাথে ১ চামচ অনুখাদ্য বা Micronutrients ব্যাবহার করতে হবে। এর সাথে রক্ত সার ব্যাবহার করলে ভাল হয়। গাছের সঠিক পরিচর্যা করতে পারলে সারাবছর ফুল পাওয়া যাবে।

বর্ষাকালীন পরিচর্যা:-

বর্ষার সময় গাছের গোড়ায় প্রতি ১৫দিন অন্তর নিমখোল বা ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে এবং প্রয়োজনে টবের মাটি খুঁড়ে টব সমেত গাছটি রৌদে রাখতে হবে। এছাড়াও তি ১৫দিন অন্তর সমস্ত গাছে ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে।

প্রয়োজনীয় কীটনাশক:-

জবা গাছে নানা ধরনের পোকামাকড়ের পাশাপাশি মিলিবাগ এর আক্রমণ খুব হয়, তাই দেখা মাত্রই ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করতে হবে। ইমিডাক্লোরোপিড নামক মূল উপাদানের তৈরি কীটনাশক বাজারে পাওয়া যায়, ১ লিটার জলে পাঁচ ফোঁটা মিশিয়ে গাছে স্প্রে করবেন। মিলিবাগর আক্রমন হলে ৫ দিন অন্তর অন্তর মোট ৭ বার স্প্রে করতে হবে। এটি বাজারে মিডিয়া,কনসফিডার নামেও পাওয়া যায়। কনফিডার বাংলাদেশেও পাওয়া যায়।


প্রিয় পাঠক, এই প্রতিবেদনটি পঠন করবার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার মতো পাঠকের সহযোগিতা “ক্রিয়েটিভিটি গার্ডেনিং” সর্বদা কাম্য করে। গাছই আমাদের একমাত্র সম্পদ যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষিত করতে পারে, বাঁচিয়ে রাখতে পারে। নিঃস্বার্থে গাছ ভালবাসুন, সকলকে গাছ লাগাতে উৎসাহিত করুন।

আপনাদের যদি এই বিষয়ে কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সের মাধ্যমে আমাকে জানাতে জানাবেন। সেগুলোর সমাধান করাবার আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব। আপনার মূল্যবান রেটিং দিয়ে উৎসাহিত করুন, সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, সবাই খুব ভালো থেকো নমস্কার।

আপনার মূল্যবান রেটিং দিয়ে উৎসাহিত করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *