Hibiscus mutabilis: স্থলপদ্ম গাছের চারা তৈরি এখন আরো সহজ

Last updated on October 14th, 2023 at 02:13 pm

গ্রাম বাংলার অতীব পরিচিত ফুল স্থলপদ্ম। স্থলপদ্ম ফুলের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো সময়ের সাথে সাথে রঙ পরিবর্তন করা। ফুল ফোটার সময় উজ্জ্বল সাদা বর্ণের রং থাকলেও পরবর্তী সময়ে গাঢ় গোলাপি রঙ ধারণ করে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে ক্রমশ তা গোলাপী থেকে গাঢ় গোলাপি রঙে পরিণত হয়। রঙ পরিবর্তনের এই আশ্চর্য খেলার জন্যই স্থলপদ্ম ফুল সকলের এত প্রিয়। স্থলপদ্মের একটি মাল্টিপেটাল এবং অপরটি সিঙ্গেলপেটাল ভ্যারাইটি দেখতে পাওয়া যায়। মাল্টিপেটালের ফুলগুলি দিনের আলো বাড়ার সাথে সাথে ফুলের রঙের পরিবর্ত করে, আবার কোনটি করে না।

আজকের প্রতিবেদন থেকে আপনারা স্থলপদ্ম গাছের চারা তৈরীর নানা প্রদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারবেন। স্থলপদ্মের বৈজ্ঞানিক নাম Hibiscus mutabilis (হিবিশকাস মুতাবিলিস), এটি মালভেসি (Malvaceae) পরিবারের অর্ন্তভুক্ত ,ইংরেজি -Cotton Rose, Confederate Rose বা Changeable Rose অথবা Chinese Rose হিসেবে পরিচিত। স্থলপদ্ম বহুবর্ষজীবী এবং পর্ণমোচী প্রকৃতির গাছ।

Hibiscus mutabilis: স্থলপদ্ম গাছের চারা তৈরি এখন আরো সহজ

পাতাগুলি সবুজ বর্ণের ত্রিকোণাকৃতির বেশ বড় হয়। পাতার বোঁটাও বেশ বড়, লম্বায় ১০ থেকে ১২ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। কিনারা হালকা খাঁজকাটা থাকে, অগ্রভাগ সূচালো, পাতার শিরা-উপশিরা স্পষ্ট এবং সূক্ষ রোমবিশিষ্ট। সাধারণত গাছগুলি ১০ থেকে ১৫ ফুট পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে। গাছের কাণ্ড ও শাখা-প্রশাখা সোজা ওপরের দিকে বাড়তে থাকে। শাখা-প্রশাখা ও কাণ্ড নরম প্রকৃতির।

স্থলপদ্ম গাছটিতে বছরে দুবার ফুল ফোটে, শরৎ ঋতু থেকে এর ফোটার ব্যাপ্তি হেমন্তকাল অবধি ইংরেজি মাস (September to October) এবং বসন্ত ঋতুর আগমন ঘটলে স্থলপদ্ম গাছটিতে ফুল আসতে শুরু করে ইংরেজি মাস (March to April)। নমনীয় কোমল অসংখ্য পাপড়ির সমন্বয়ে গঠিত হয় স্থলপদ্ম ফুল। গন্ধহীন ফুল হলেও এর সৌন্দর্য অতুলনীয়। আকার-আকৃতিতে দেখতে অনেকটা ঝুমকো জবা ফুলের ন্যায়। বর্ধনশীল শাখা-প্রশাখার অগ্রভাগে পত্রকক্ষ থেকে বোঁটায় ফুল ধরে। ফুল ঊর্ধ্বমুখী এবং ফুল ফোটার পূর্ব সময় পর্যন্ত ফুলের কলিদ্বয় ঊর্ধ্বমুখী থাকে। প্রতিবছর মে মাসের শেষের দিকে স্থলপদ্মের ডালগুলি ছেঁটে দিতে হবে তাতে গাছ বেশি ঝেঁপের ন্যায় ধারণ করবে এবং গাছ থেকে আপনারা অনেক বেশি পরিমাণে ফুল পাবেন।

স্থলপদ্ম গাছের শাখা থেকে চারা তৈরি করা খুবই সহজ। এই শাখা থেকে দুটি প্রদ্ধতির মধ্যমে চারা তৈরী করা যায়। স্থলপদ্ম গাছের ডাল থেকে চারা তৈরীর ৬ থেকে ১২ মাস পারেই গাছে ফুল আসে।

স্থলপদ্ম গাছের কাটিং থেকে চারা তৈরির সহজ পদ্ধতি:

বর্ষাকাল হলো কাটিং বসানোর আদর্শ সময়। বর্ষাকালে কাটিং বসালে যতটা সাফল্য পাবেন, গরম অথবা খুব শীতকালে বসালে সেই হারে সাফল্য পাওয়া মুশকিল। কারণটা হলো বাতাসে আদ্রতা জন্য। গরমকাল বা খুব শীতকালে বাতাসে আদ্রতা খুব কম থাকে, তাই অধিকাংশ সময়ই কাটিং শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যায়।

স্থলপদ্ম গাছের চারা তৈরি

স্থলপদ্ম গাছের কাটিং করবার জন্য ডাল নির্বাচন এবং কাটিং করার সময়:

স্থলপদ্ম গাছের কাটিং থেকে চারা তরী করবার জন্য মোটা ও ধূসর বর্ণের ভাল ডাল নির্বাচন করতে হবে তবে কঁচি সবুজ রঙের ডাল নির্বাচন করলে শেকড় বার হওয়ার প্রবণতা অনেকটাই কমে যায়। স্থলপদ্ম গাছের কাটিং বসানোর আদর্শ সময় মার্চ এবং জুলাই থেকে আগস্ট মাস। মোটা ডালে অনেক বেশি আদ্রতা ধরে রাখতে পারে, ফলে সহজে শিকড় তৈরী হয়ে যায়।

ডাল সংগ্রহ করবার পর সাত থেকে আট ইঞ্চি মাপের কেটে নিতে হবে। এর থেকে ছোট কাটিং নিলে শাখা কম বেরোবে ,আর এর থেকে বড় নিলে শিকড় দেরিতে গজাবে।

শক্ত বা আধাশক্ত শাখা কাটিং এর জন্য ডাল নির্বাচনের শর্তাবলী

  • কাটিং এর জন্য ডাল নির্বাচনের সময় অবশ্যই সুস্থ্য, সবল, ডাল নির্বাচন করতে হবে।
  • পেন্সিলের থেকে মোটা ডাল নির্বাচন করতে হবে ( লম্বাই ২0 থেকে ২২ সেন্টিমিটার)। ধূসর বর্ণের রোগ মুক্ত ডাল নির্বাচন করতে হবে তবে কঁচি সবুজ রঙের ডাল নির্বাচন করলে শেকড় বার হওয়ার প্রবণতা অনেকটাই কমে যায়।
  • নির্বাচিত ডালের পাতাগুলো ধারালো সিকেচার দিয়ে কেটে ফেলতে হবে।
  • কাটিং এর জন্য ব্যবহৃত ডালে কমপক্ষে তিনটি গিট (Bud) থাকতে হবে।
  • গাছের দক্ষিন ও পূর্ব দিকের ডালে কাটিং ভাল হয, সফলতার হার বেশী। কারণ দক্ষিন ও পূর্ব দিকের ডালে সূর্যের আলো বেশী পড়ে এবং মজুদ খাদ্যের পরিমান বেশী থাকে।
  • কাটিং বসানোর জন্য বর্ষাকাল হলো আদর্শ সময় তবে তীব্র শীত এবং গরম বাদে ছাড়া সারা বছরই ডাল বসানো যেতে পারে।

স্থলপদ্ম গাছের ডাল থেকে চারা তৈরি করার জন্য আমরা দুই ধরনের মাধ্যম ব্যবহার করতে পারি..

স্থলপদ্ম গাছের চারা তৈরি
স্থলপদ্ম গাছের চারা তৈরির শর্তাবলী

1. সলিড মিডিয়া

সলিড মিডিয়া বলতে এখানে মাটিকে বোঝানো হয়েছে। মাটিতে স্থলপদ্ম গাছের কাটিং থেকে চারা গাছ তৈরি করা খুব সহজ। ডাল সংগ্রহ হয়ে গেলে সেগুলিকে ছায়াযুক্ত স্থানে আদ্র মাটিতে পুঁতে দিন। মাঝে মাঝে জল দিয়ে মাটি ভিজিয়ে দেবেন, যাতে মাটি সর্বদা আদ্র থাকে ।

এই ভাবে পরিচর্যা করলে দেখাবেন ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে শেকড় বার হতে শুরু করবে । বর্ষাকাল কাটিং বসানোর জন্য একদম আদর্শ সময় তাই চেষ্টা করবেন বর্ষাকালে কাটিং বসানোর । এছাড়াও কাটিং বসানোর সময় মাটিতে পুঁতে দেওয়া অংশটিতে রুট হরমোন পাউডার অথবা অ্যালোভেরা জেল লাগিয়ে ৫ মিনিট রোদে শুকিয়ে তার পরে মাটিতে বসিয়ে দিলে ৯৯% সফলতা পাওয়া যায়।

2. লিকুইড মিডিয়া

লিকুইট মিডিয়ার মাধ্যমে শেকড় তৈরী করা আরো সহজ।এর জন্য আমাদের প্রয়োজন একটি খালি পাত্র এবং কিছুটা পরিমান জল | 

প্রথমে পাত্রের মধ্যে কিছুটা পরিমান জল ঢেলে নিতে হবে এবং সেই জলের মধ্যে এক চামচ মধু ভালো করে মিশিয়ে, কাটা ডাল গুলিকে জলের মধ্যে ১০ থেকে ১৫ দিনের জন্য রেখে দিতে হবে আপনারা চাইলে সূর্যের আলোতে রাখতে পারেন অথবা সেড়ের নিচেও রাখতে পারে। দেখবেন ১৫ থেকে ২০ দিন পরে জলে ভেজানো ডালের অংশ থেকে শিকড় বার হতে শুরু করেছে। এভাবে একমাস রেখে দিলে দেখবেন সমস্ত ডালে শিকড় বেরিয়ে গেছে এবার আপনারা চাইলে ডালগুলোকে মাটিতে বসে দিতে পারেন।

স্থলপদ্ম গাছের ডালগুলোকে মাটিতে বসিয়ে দিলেই হবে না, প্রয়োজন সঠিক সময়ে গাছের পরিচর্যা করা। সময় মতো সার প্রয়োগ, জল প্রয়োগ, ডাল ছাটাই প্রভূতি প্রয়োজন, আসুন জেনে নেওয়া যাক স্থলপদ্ম গাছের প্রতিস্থাপন এবং পরিচর্যা সম্পর্কে।

আপনার মূল্যবান রেটিং দিয়ে উৎসাহিত করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *