বন্ধুরা, বর্তমানে আমরা অধিক ফসল উৎপাদনের জন্য উচ্চ ফলনশীল ও হাইব্রিড জাতের চাষ করে থাকি। শুধু হাইব্রিড জাতের চাষ আবাদ করলেই হবে না, জানতে হবে সমস্ত রাসায়নিক সার এবং জৈব সারের গুনাগুন অর্থাৎ সারের উপকারীতা এবং অপউপকারীতা সম্পর্কে। আমার সবাই কমবেশি জমিতে অথবা ফুল বাগান করবার জন্য রাসায়নিক সার ব্যাবহার করে থাকি, তবে আজ আমরা টিএসপি সারের ব্যাবহার সম্পর্কে জানবো। টিএসপি সারের মধ্যে কী উপাদান আছে এবং এর কি কাজ, এটা প্রথমে আমাদের জানা প্রয়োজন৷
টিএসপি সার ট্রিপল সুপার ফসফেট নামে পরিচিত। এতে সর্বাধিক পরিমাণ ফসফেট পাওয়া বিদ্যমান থাকে। রক ফসফেট নামক খনিজ পদার্থের সঙ্গে ফসফরিক এসিডের বিক্রিয়ায় মাধ্যমে টিএসপি সার উৎপন্ন হয়। এতে ৪৬ শতাংশ ফসফেট, ১৩ শতাংশ ক্যালসিয়াম ও ১.৩ শতাংশ গন্ধক থাকে। এই টিএসপি, ডিএপি সারের পরিপুরক যার রং সাধারণত ধূসর থেকে গাঢ় ধূসর হয়। এটি অম্ল স্বাদযুক্ত হালকা থেকে মাঝারি ঝাঁজালো গন্ধযুক্ত হয়।
রাসায়নিক সার: টিএসপি সারের উপকারীতা ও ব্যাবহার
আসল টিএসপি সার চেনার উপায়:
টিএসপি সার জলের সংস্পশে সহজে গলবে না। আসল টিএসপি সার ৪ থেকে ৫ ঘন্টা পর জলের সাথে মিশে যায়। কিন্তু ভেজাল টিএসপি সার জলের সংস্পশে সহজে কিছুক্ষণের মধ্যেই গলে যাবে বা জলের সাথে মিশে যাবে। আসল টিএসপি দানাদারজাতীয় এই সার আকারে ডিম্বাকৃতি বা গোলাকার হয়।
টিএসপি সারের কাজগুলি কি কি?
গাছ তার মূল দ্বারা মাটি থেকে পুষ্টি উপাদান গ্রহন করে থাকে এবং সরাসরিকোষ বিভাজনে অংশগ্রহণ করে। এছাড়াও শর্করা উৎপাদন ও আত্তীকরণে সাহায্য করে। শিকড়ের বৃদ্ধি বিস্তার এবং গঠনে সাহায্য করে। গাছের কাঠামো শক্ত করে এবং গাছকে নেতিয়ে পড়া থেকে রক্ষা করে এবং রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ রোধ করে। ফুল, ফল ও বীজে গুণগতমান বাড়ায়। অধিক ফুল নিয়ে আসতে সাহায্য করে। ফুল ও ফল ধারণে টিএসপি সার দারুণ ভূমিকা পালন করে। গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
অজৈব কোন প্রকার সারই বেশি মাত্রায় বা গাছের গোড়ার খুব কাছে প্রয়োগ করা উচিত নয়।ছোট গাছের ক্ষেত্রে গোড়া থেকে ৩০ সেমি. এবং বড় গাছের ক্ষেত্রে গোড়া থেকে ৫০সেমি. দূর দিয়ে গাছের বিস্তৃতি বরাবর মাটির সাথে মিশিয়ে সার দিতে হয়।
ভরদুপুরে গাছের ছায়া যতদুর বিস্তৃত থাকে ঠিক ততটুকু জায়গাতেই সার প্রয়োগ করতে হয়। অজৈব সার সাধারণত এক থেকে দেড় মাস পর পর ব্যবহার করতে হয়। সব সার একত্রে মিশিয়ে টব/ড্রামের উপরের মাটি আলগা করে মিশিয়ে দেয়া ভালো।
টিএসপি অর্থাৎ ফসফরাসের অভাব জনিত লক্ষণ:
মাটিতে ফসফরাসের ঘাটতি হলে কাণ্ড এবং মূলের বৃদ্ধি হ্রাস পায়। গাছের বৃদ্ধি কু-লিকৃত বা পাকানো হয়। পুরাতন পাতা অকালে ঝরে যায়। পার্শ্বীয় কাণ্ড এবং কুড়ির বৃদ্ধি কমে যায়। ফুলের উৎপাদন কমে যায়। পাতার গোড়া রক্তবর্ণ অথবা ব্রোনজ রঙ ধারণ করে। পাতার পৃষ্ঠভাগ নীলাভ সবুজ বর্ণ ধারণ করে। পাতার কিনারে বাদামি বিবর্ণতা দেখা যায় এবং শুকিয়ে যায়। রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কমে যায়।
টি এস পি সার অধিক ব্যবহারে ইউরিয়া সারের মত ক্ষতি হবার সম্ভাবনা নাই। তবুও পরিমাণমতো ব্যবহার করাই উত্তম। টি এস পি সার মাত্রা অতিরিক্ত ব্যবহারে গাছের ফলন বৃদ্ধি কমে যেতে পারে।
Creativity Gardening
টিএসপি সরের ব্যবহার:
প্রথমত গাছের মাটি তৈরি সময় মাটির সঙ্গে বিভিন্ন উপাদানের পাশাপাশি টি এস পি সার মেশাতে পারেন। প্রতি মিশ্রণে ৪% টি এস পি সার রাখতে পারেন। এতে গাছ লাগানোর পর গাছটিতে ফসফরাসের অভাব হবে না। উল্লেখ্য, মাটিতে, টিএসপি পটাশ ও ডিএপি সার মেশাতে পারেন। তবে এই রাসায়নিক সার মাটিতে মেশানোর পর সেই মাটি তিন থেকে চার দিন পর ব্যবহার করা উত্তম। এতে করে আরকি সমস্ত মাটির সঙ্গে মিশে যেতে পারবে।
পাশাপাশি টপ এর চারপাশে 15 থেকে 20 দানা পরিমাণ সার ছড়িয়ে দিতে পারেন।
গাছের বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধান সম্পর্কে জানার জন্য, আমাদের WhatsApp চ্যানেলের সঙ্গে থাকুন। আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য, আমাদের WhatsApp এবং Telegram চ্যানেলটা অবশ্যই সাবস্ক্রাইব করতে হবে এবং বেল আইকনটি ক্লিক করতে হবে। এর পাশাপাশি লাইক, কমেন্ট এবং শেয়ার করতে হবে।
প্রিয় পাঠক, এই প্রতিবেদনটি পঠন করবার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার মতো পাঠকের সহযোগিতা “ক্রিয়েটিভিটি গার্ডেনিং” সর্বদা কাম্য করে। গাছই আমাদের একমাত্র সম্পদ যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষিত করতে পারে, বাঁচিয়ে রাখতে পারে। নিঃস্বার্থে গাছ ভালবাসুন, সকলকে গাছ লাগাতে উৎসাহিত করুন।
আপনাদের যদি এই বিষয়ে কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সের মাধ্যমে আমাকে জানাতে জানাবেন। সেগুলোর সমাধান করাবার আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব। আপনার মূল্যবান রেটিং দিয়ে উৎসাহিত করুন, সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, সবাই খুব ভালো থেকো নমস্কার।