আফ্রিকান ডেইজি ফুল গাছের প্রতিস্থাপন ও সম্পূর্ন পরিচর্যা | Easy to Grow and Care African Daisy Flower Plant

Last updated on November 26th, 2023 at 08:23 pm

প্রথম বার দেখে, আফ্রিকান ডেইজি (অস্টিওস্পার্মাম) সাধারণ ডেইজির মতো দেখতে মনে হতে পারে, প্রতিসাম্য পাপড়িগুলির সাথে যা কেন্দ্রীয় চোখ থেকে বিকিরণ করে তা মনোমুগ্ধকর। ফুলগুলি সাদা থেকে গভীর বেগুনি পর্যন্ত অনেক রঙে আসে যেমন সাদা, খয়েরী, হলুদ, গোলাপী প্রভৃতি, একক বা বহু-রঙের কেন্দ্র এবং পাপড়িগুলি দ্বিগুণ, ঝালরযুক্ত বা চামচ আকৃতির হতে পারে। গাছগুলি ছোট আকৃতির প্রায় 60 সেন্টিমিটার (১- ২ ফুট পর্যন্ত লম্বা) ও ঝোপালো প্রকৃতির হয়।

এই প্রতিবেদন থেকে আপনি আফ্রিকান ডেইজি (অস্টিওস্পার্মাম) গাছের প্রতিস্থাপণ এবং পরিচর্যা | Easy to care African Daisy flower plant সম্পর্কে সম্পূর্ন তথ্য জানতে পারবেন। আফ্রিকান ডেইজির বৈজ্ঞানিক নাম Osteospermum,ইংরেজি -African daisy, cape daisy, osteospermum। Trailing African Daisy বা Shrubby Daisybush, Osteospermum fruticosum প্রভৃতি, গাছটি আরকোটিস নামেও পরিচিত। এটি Asteraceae পরিবারের একটি গুল্ম জাতীয়, চিরসবুজ, বহুবর্ষজীবী বা বার্ষিক উদ্ভিদ।

আফ্রিকান ডেইজি ফুল গাছের প্রতিস্থাপন ও সম্পূর্ন পরিচর্যা | Easy to Grow and Care African Daisy Flower Plant

শীত এবং বসন্তের সবথেকে আকর্ষণীয় ফুল আফ্রিকান ডেইজি (অস্টিওস্পার্মাম), আফ্রিকান ডেইজি (অস্টিওস্পার্মাম) বিভিন্ন রঙের হয় যেমন, Purple, Pink, Yellow, Orange, White প্রভৃতি। আফ্রিকান ডেইজি, দক্ষিণ আফ্রিকার স্থানীয় একটি ফুল। বিদেশী ফুল হওয়া সত্বেও এই ফুলের সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবেই। এই ডেইজি ফুলের চোখ বা কেন্দ্র বিভিন্ন রঙের হতে পারে Purple, Pink, Yellow, Orange, White প্রভৃতি। যদিও আফ্রিকান ডেইজির বেশিরভাগই শক্ত রঙে আসে, কিছু প্রায় টাই-ডাই প্রভাবের জন্য ফুলের কেন্দ্রের দিকে অন্য রঙে বিবর্ণ হয়ে যায়। বিভিন্ন রঙের ফুল পেতে অনেকগুলি গাছ আপনাকে সংগ্রহ করতে হবে, এই ডেইজি ফুলগাছ বাগানে প্রতিস্থাপন না করলে, এই ফুলের সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।

দক্ষিণ আফ্রিকায় বসন্তের মরসুমে যখন বৃষ্টি আসে তখন আফ্রিকান ডেইজি ফুল ফোটে। শীত এবং বসন্তকালে এ ফুল প্রস্ফুটিত হয়। এটি বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ কিন্তু শুষ্ক অবস্থায় গাছগুলি বাঁচানো কঠিন, তাই এটি বার্ষিক হিসাবে জন্মে।

আফ্রিকান ডেইজির স্থান নির্বাচন:-

আফ্রিকান ডেইজি চারা গাছ প্রতিস্থাপনের পূর্বে সঠিক স্থান নির্বাচন করা ভীষন প্রয়োজন। এই গাছটি রৌদ্র ভীষণ ভালবাসে তাই দিনে মোটামুটি ৬ থেকে ৮ ঘটা সূর্যের আলো পাই তেমন স্থানে গাছ প্রতিস্থাপন করা উচিত, এতে গাছের বাড়বাড়ন্ত ভালো হয় এবং রোগে আক্রান্ত কম হয়। ঢালু, উর্বর দোঁয়াশ মাটি অথবা বেলে-দোঁয়াশ জাতীয় সুনিষ্কাশিত মাটিতে এই গাছ প্রতিস্থাপন করতে হবে।

আফ্রিকান ডেইজির চারা গাছ সংগ্রহ:-

চারা গাছ সংগ্রহের সময় আপনাকে গুরুত্ব দিতে হবে ভালো ও সুস্থ সবল চারা নির্বাচনের জন্য। যেকোনো নার্সারি থেকে আপনি চারা সংগ্রহ করতে পারেন, স্বল্প টাকার বিনিময়ে আপনি উন্ন্যত মানের ভালো চারা পেয়ে যাবেন। আফ্রিকান ডেইজির চারা ডিসেম্বর- জানুয়ারী মাসে নার্সারিতে পাওয়া যায়।

আফ্রিকান ডেইজির মাটি প্রস্তুত এবং প্রতিস্থাপন পদ্ধতি:–

আফ্রিকান ডেইজি বালুকাময় /বেলে /হালকা দোঁয়াশ মাটি পছন্দ করে, ঘন, ভেজা কাদামাটি মাটি বা এঁটেল মাটি একেবারেই পছন্দ করে না অর্থাৎ গাছের জন্য এমন মাটি তৈরি করতে হবে যাতে আর্দতাও থাকবে অথচ মাটিতে জল ও দাঁড়াবে না, মাটি বেশি মাত্রায় আর্দ্র থাকলে গাছটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়, এটি ভুলে যাবেন না । তাই এর জন‍্য দরকার একভাগ গার্ডেন সয়েল(দোঁয়াশ মাটি),দুভাগ নদীর সাদা বালি ( বেলে-দোঁয়াশ মাটি ব্যাবহার করলে বালির প্রয়োজন নেই )ও একভাগ ভার্মিকম্পোস্ট বা এক বছরের পুরোনো পাতা পচা সার বা পচানো গোবর সার । এর সাথে আট ইঞ্চি টবের জন‍্য হাঁফমুঠো শিংকুঁচি, হাঁফমুঠো হাঁড়গুড়ো, হাফমুঠো নিমখোল মিশিয়ে নিতে হবে। এই ভাবে হালকা উন্ন্যত মানের উর্বর মাটি প্রস্তুত করে নিতে হবে।

মাটির পি এইচ মান ৪.৫ থেকে ৫.৫ এর মধ্যে হওয়া দরকার অর্থাৎ আফ্রিকান ডেইজি গোলাপ, অ্যাজেলিয়া ন্যায় অ্যাসিটিক মাটি পছন্দ করে। প্রচুর ফুল পেতে টবে/জমিতে প্রচুর জৈব সার দেওয়া দরকার এজন্য প্রচুর পরিমানে গোবর সার, পাতাপচা সার ইত্যাদি প্রয়োগ করতে হবে।

মাটিতে প্রতিস্থাপন করলে একে অপরের থেকে 20-25 সেমি দূরত্বে অগভীর গর্ত খনন করে চারা গাছ স্থাপন করতে হবে। সবথেকে থেকে ভাল হয়, গর্ত খনন করবার পূর্বে মাটিতে কিছুটা হাঁড়গুড়ো, শিংকুঁচি,নিমখোল,ভার্মিকম্পোস্ট এবং অল্প পরিমান সরিষার খোল মাটির সাথে মিশিয়ে, কিছুটা জল ছিঁটিয়ে দিয়ে ১৫ থেকে ২০ দিনের জন্য ঢেকে হিতে হবে। ১৫ দিন পর চারা গাছ প্রতিস্থাপন করতে হবে। যেহেতু উদ্ভিদের মূল ব্যবস্থা খুব সংবেদনশীল, তাই আপনাকে খুব সাবধানে কাজ করা উচিত। চারাগাছ রোপণের পরে, মাটি কিছুটা আর্দ্র করবার জন্য জল ছিঁটিয়ে দিতে হবে। প্রতিস্থাপনের ১৫ থেকে ২০দিন পর চারাগাছের নতুন মূল মাটির গভীরে ধীরে ধীরে প্রবেশ করতে থাকে।

গাছে কুঁড়ি আসা শুরু হলে NPK ০০: ৫২:৩৪ এক চামচ করে মাসে একবার, অথবা ১০ ইঞ্চি থেকে ১২ ইঞ্চি টবের জন্য ১৫ থেকে ২০টি DAP/TSP দানা ব্যাবহারের ১৫ দিন পর এক চামচ পটাশ ব্যাবহার করতে হবে। অতিরিক্ত রাসায়নিক সার গাছের জন্য বিপদজনক। গাছের সঠিক পরিচর্যা করতে পারলে মরসুমে গাছ ফুলে ভরে যাবে।

[আরও পড়ুন: টব ভর্তি প্রচুর ফুল পেতে হাইড্রেনজিয়া গাছের পরিচর্যা]

সূর্যালোক:-

আপনি যদি আফ্রিকান ডেইজি গাছ টবে করতে চান, তবে এটিকে এমন জায়গায় রাখবেন যাতে পূর্ন আলো পায়। আফ্রিকান ডেইজি গাছের জন্য পূর্ন এবং ঝলমলে সূর্যের আলো প্রয়োজন।

তাপমাত্রা:-

৮ থেকে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস আপমাত্রা আফ্রিকান ডেইজি গাছের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। যদি তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রী বা তার বেশি হতে থাকে, তাহলে পাতাগুলি রোদে পোড়া পোড়া ক্ষতের সৃষ্টি হবে এবং বাদামী দাগ দিয়ে আচ্ছাদিত হয় এবং অঙ্কুরগুলি শুকিয়ে যেতে শুরু করে। গাছটি সহ্য করার ক্ষমতা আছে তাপমাত্রা – ৭º সেলসিয়াস।

জলের প্রয়োজনীতা :–

আফ্রিকান ডেইজি গাছের জন্য মাঝারী পরিমাণে জলের প্রয়োজন,এপ্রিল মাসে তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রী বা তার বেশি হলে, পাতা এবং অঙ্কুরগুলি শুকিয়ে যেতে শুরু করে, তাই মাটির আর্দ্রভাব বজায় রাখতে পর্যাপ্ত পরিমানে জল দিতে হবে।

এই গাছ ময়েশ্চার ভালোবাসে, তাই বলে ভেঁজা বা স্যাঁতস্যাঁতে মাটি একদমই পছন্দ করে না, লক্ষ‍্য রাখতে হবে মাটি যেন খুব বেশি ভেজা ভেজা না থাকে, গাছে কুঁড়ি তৈরী হওয়ার সময়ে মাটি ময়েশ্চার রাখতে হবে। বেশি জল দেওয়ার ফলে শিকড় পচা , গোঁড়া পচা প্রভৃতির সমস্যা তৈরী হতে পারে। তাই টবের মাটি ওপর থেকে এক-দু ইঞ্চি শুকিয়ে গেলে তখন আবার ভরপুর জল দিতে হবে।

সার প্রয়োগ:-

গাছের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য এবং ফুলের আকার বড় করতে মাসে দুবার সার প্রয়োগ করতে হবে। শীতে, একটি উচ্চ নাইট্রোজেন সামগ্রী সহ সারের প্রয়োজন হয়, এবং বসন্তে ফুলের জন্য – ফসফরাস সহ সার প্রয়োগ করতে হবে।

রোগ ও পোকা মাকড় ব্যবস্থাপনা:-

আফ্রিকান ডেইজি
আফ্রিকান ডেইজি

মুল পচা রোগ

গাছে বেশি জল দেওয়ার ফলে অথবা মাটি বাহিত এক প্রকার ছত্রাকের আক্রমণে মুলে পচন রোগ দেখা যায়। এরোগে আক্রান্ত হলে গাছের বৃদ্ধি থমকে যায় ,গাছের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয় এবং অবশেষে সম্পূর্ণ গাছটি শুকিয়ে মাড়া যায়। তাই চারাগাছ প্রতিস্থাপনের পূর্বে মাটি জীবাণুমুক্ত করে চারা লাগালে এরোগ কম হয়।

গোড়া পঁচা রোগ

আফ্রিকান ডেইজি গাছের গোড়া পঁচা রোগ অনেকটা মূল পঁচা এর ন্যায়, মাটি বাহিত রোগ। এ রোগের ফলে গাছের কেন্দ্রীয় অংশ প্রথমে কালো রং ধারণ করে এবং পরবর্তীতে গাছ পচে যায়।

প্রতিকার:-

১. রিডোমিল অথবা ডায়থেন এম-৪৫ ছত্রাকনাশক ০.২% হারে ৭-১০ দিন অন্তর স্প্রে করলে ভাল সুফল পাওয়া যায়।

২.স্ট্রেপ্টোসাইক্লিন সালফেট একটি অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল অ্যান্টিবায়োটিক ফর্মুলেশন যা উদ্ভিদের ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ নিয়ন্ত্রণ করে এবং কার্বেন্ডাজিম ও ম্যানকোজেব ছত্রাকনাশক হিসাবে ব্যাবহার হয়। এই দুটি কম্পজিশনের দুটি কীটনাশক আপনি ব্যাবহার করবেন।

৩. টপসিন ০.০৫% হারে ৭-১০ দিন অন্তর স্প্রে করেও এরোগ দমন করা সম্ভব। এছাড়াও গাছে জাবপোকা, মাকড় প্রভৃতি পোকামাকড়ের আক্রমণ ঘটে। পোকা-মাকড়ের উপদ্রব বেশি হলে রাসারনিক কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।

প্রিয় পাঠক, এই প্রতিবেদনটি পঠন করবার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার মতো পাঠকের সহযোগিতা “ক্রিয়েটিভিটি গার্ডেনিং” সর্বদা কাম্য করে। গাছই আমাদের একমাত্র সম্পদ যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষিত করতে পারে, বাঁচিয়ে রাখতে পারে। নিঃস্বার্থে গাছ ভালবাসুন, সকলকে গাছ লাগাতে উৎসাহিত করুন।

আপনাদের যদি এই বিষয়ে কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সের মাধ্যমে আমাকে জানাতে জানাবেন। সেগুলোর সমাধান করাবার আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব। আপনার মূল্যবান রেটিং দিয়ে উৎসাহিত করুন, সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, সবাই খুব ভালো থেকো নমস্কার।

আপনার মূল্যবান রেটিং দিয়ে উৎসাহিত করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *