সিনেরারিয়া গাছের সম্পূর্ণ পরিচর্যা | Easy to care cineraria flower plant

Last updated on November 21st, 2023 at 07:14 pm

শীত এবং বসন্তের সবথেকে আকর্ষণীয় ফুল সিনেরারিয়া, সিনেরারিয়া বিভিন্ন রঙের হয় যেমন, সাদা, বেগুনি, নীল, লাল, গোলাপী, বাদামি প্রভৃতি। প্রতিটি মঞ্জুরির মাথায় একাধিক ফুল হয় এবং ফুলগুলি একবারই হয়। গাছ ছোট আকৃতির (১-৩ ফুট পর্যন্ত লম্বা) ও ঝোপালো প্রকৃতির হয়। সিনেরারিয়া হচ্ছে Asteraceae পরিবারের অন্তর্গত।

এই প্রতিবেদন থেকে আপনি সিনেরারিয়া গাছের সম্পূর্ণ পরিচর্যা | Easy to care cineraria flower plant সম্পর্কে সম্পূর্ন তথ্য জানতে পারবেন। সিনেরারিয়ার বৈজ্ঞানিক নাম “Pericallis × hybrida“, এটি Asteraceae পরিবারের একটি গুল্ম জাতীয়, চিরসবুজ, বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ।

সিনেরারিয়া গাছের সম্পূর্ণ পরিচর্যা | Easy to care cineraria flower plant

সিনেরারিয়া ইউরোপ মহাদেশের স্থানীয় একটি ফুল। বিদেশী ফুল হওয়া সত্বেও এই ফুলের সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবেই। এই ফুলের চোখ বা কেন্দ্র বিভিন্ন রঙের হতে পারে, সাধারণত বাদামী, সোনালী, গোলাপী বা কালো বর্ণের। সিনেরারিয়ার বেশিরভাগই শক্ত রঙে আসে, কিছু প্রজাতির ফুল বাই কালারের হয়। বিভিন্ন রঙের ফুল পেতে অনেকগুলি গাছ আপনাকে সংগ্রহ করতে হবে, এই ফুলের সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।

সিনেরারিয়া গাছের সম্পূর্ণ পরিচর্যা

সিনেরারিয়া গাছের জন্য স্থান নির্বাচন: –

সিনেরারিয়ার চারা গাছ প্রতিস্থাপনের পূর্বে সঠিক স্থান নির্বাচন করা ভীষন প্রয়োজন। যে স্থানে চারা প্রতিস্থাপন করবেন সেখানে ভাল আলো থাকা উচিত, কিন্তু দুপুরের সময় সরাসরি সূর্যের আলো থেকে রক্ষা করা ভাল। যদি এই অবস্থা বজায় না থাকে, তাহলে পাতাগুলি রোদে পোড়া পোড়া ক্ষতের সৃষ্টি হবে এবং বাদামী দাগ দিয়ে আচ্ছাদিত হবে।

সিনেরারিয়ার মাটি প্রস্তুত এবং প্রতিস্থাপন পদ্ধতি: –

সিনাররিয়া বালুকাময় মাটি/হালকা দোঁয়াশ মাটি/বেলে মাটি পছন্দ করে, ঘন, ভেজা কাদামাটি মাটি বা এঁটেল মাটি একেবারেই পছন্দ করে না। তাই এর জন‍্য দরকার একভাগ গার্ডেন সয়েল(দোঁয়াশ মাটি),দুভাগ নদীর সাদা বালি ( বেলে-দোঁয়াশ মাটি ব্যাবহার করলে বালির প্রয়োজন নেই )ও একভাগ ভার্মিকম্পোস্ট বা এক বছরের পুরোনো পাতা পচা সার বা পচানো গোবর সার । এর সাথে আট ইঞ্চি টবের জন‍্য হাঁফমুঠো হাঁড়গুড়ো, হাঁফমুঠো শিংকুঁচি, হাফমুঠো নিমখোল মিশিয়ে নিতে হবে। এই ভাবে হালকা উন্ন্যত মানের উর্বর মাটি প্রস্তুত করে নিতে হবে।

মাটিতে প্রতিস্থাপন করলে একে অপরের থেকে 20-25 সেমি দূরত্বে অগভীর গর্ত খনন করে চারা গাছ স্থাপন করতে হবে। সবথেকে থেকে ভাল হয়, গর্ত খনন করবার পূর্বে মাটি কিছুটা হাঁড়গুড়ো,শিংকুঁচি, নিমখোল, ভার্মিকম্পোস্ট এবং অল্প পরিমান সরিষার খোল মাটির সাথে মিশিয়ে, কিছুটা জল ছিঁটিয়ে পলিথিন দিয়ে ১৫দিন ঢেকে হিতে হবে। ১৫ দিন পর চারা গাছ প্রতিস্থাপন করতে হবে। যেহেতু উদ্ভিদের মূল ব্যবস্থা খুব সংবেদনশীল, তাই আপনাকে খুব সাবধানে কাজ করা উচিত। চারাগাছ রোপণের পরে, মাটি কিছুটা আর্দ্র করবার জন্য ল ছিঁটিয়ে দিতে হবে। প্রতিস্থাপনের ১৫ থেকে ২০দিন পর চারাগাছের নতুন মূল মাটির গভীরে ধীরে ধীরে প্রবেশ করতে থাকে।

সিনেরারিয়া গাছের জন্য সূর্যালোক: –

আপনি যদি সিনারিয়ার গাছ টবে রাখেন তবে এটিকে এমন জায়গায় রাখবেন যাতে গাছগুলি আংশিক ছায়া পায়। সিনারিয়া গাছের জন্য আংশিক এবং ঝলমলে সূর্যের আলো প্রয়োজন।

সিনেরারিয়া গাছের জন্য তাপমাত্রা: –

১২ থেকে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস আপমাত্রা সিনারিয়া গাছের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। যদি তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রী বা তার বেশি হলে, পাতা এবং কুঁড়িগুলি শুকিয়ে যেতে শুরু করে। রাতে, “অ্যাশট্রে” থার্মোমিটার কলামটি ৫ ইউনিটে কমিয়ে দিলে ভাল হয়।

সিনেরারিয়া গাছের জন্য জলের প্রয়োজনীতা : –

সিনারিয়ার গাছে প্রচুর পরিমাণে জলের প্রয়োজন হয়, এপ্রিল মাসে তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রী বা তার বেশি হলে, পাতা এবং কুঁড়িগুলি শুকিয়ে যেতে শুরু করে, তাই মাটির আর্দ্রভাব বজায় রাখতে পর্যাপ্ত পরিমানে জল দিতে হবে।

এই গাছ ময়েশ্চার ভালোবাসে, তাই বলে ভেঁজা বা স্যাঁতস্যাঁতে মাটি একদমই পছন্দ করে না। তাই লক্ষ‍্য রাখতে হবে যেন মাটি খুব বেশি ভেজা ভেজা না থাকে, গাছে কুঁড়ি তৈরী হওয়ার সময়ে মাটি ময়েশ্চার রাখতে হবে। বেশি জল দেওয়ার ফলে শিকড় পচা , গোঁড়া পচা প্রভৃতির সমস্যা তৈরী হতে পারে। তাই টবের মাটি ওপর থেকে এক-দু ইঞ্চি শুকিয়ে গেলে তখন আবার ভরপুর জল দিতে হবে।

সিনেরারিয়া গাছের জন্য সার প্রয়োগ: –

গাছের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য এবং ফুলের আকার বড় করতে মাসে দুবার সার প্রয়োগ করতে হবে। শীতে, একটি উচ্চ নাইট্রোজেন সামগ্রী সহ সারের প্রয়োজন হয়, এবং বসন্তে ফুলের জন্য – ফসফরাস সহ সার প্রয়োগ করতে হবে।

[আরও পড়ুন: টব ভর্তি প্রচুর ফুল পেতে হাইড্রেনজিয়া গাছের পরিচর্যা]

রোগপোকা নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি :–

এই গাছে জাবপোকা, মাকড় প্রভৃতি পোকামাকড়ের আক্রমণ ঘটে। পোকা-মাকড়ের উপদ্রব বেশি হলে রাসারনিক কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।

এছাড়াও বেশি জল প্রয়োগের ফলে পাতা পচা ও পাতায় দাগ দেখতে পাওয়া যায়। এর জন‍্য প্রতি ১৫ দিন অন্তর যে কোন কোম্পানির ফাংগিসাইড জলের সাথে মিশিয়ে সমস্ত গাছে স্প্রে করতে হবে। বেশি জল দেওয়ার ফলে শিকড় পচা, গোঁড়া পচা প্রভৃতির সমস্যা তৈরী হতে পারে, এর জন্য কিছু পরিমান ফাংগিসাইড গাছের গোড়ায় ছিঁটিয়ে দিতে হবে। এছাড়াও সমস্ত রকম রোগবালাই থেকে গাছকে রোগ মুক্ত রাখতে গাছের গোড়ায় শুকনো নিমপাতা অথবা নিম খোল দিলে অধিকাংশ কীটপতঙ্গ গাছ আক্রমণ করতে পারে না।

[আরও পড়ুন: শীতকালের সেরা ১৮টি বিদেশী ফুল]

[আরও পড়ুন: অ্যালিসাম ফুল গাছের প্রতিস্থাপন এবং যত্ন]

প্রিয় পাঠক, এই প্রতিবেদনটি পঠন করবার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার মতো পাঠকের সহযোগিতা “ক্রিয়েটিভিটি গার্ডেনিং” সর্বদা কার্ম করে। গাছই আমাদের একমাত্র সম্পদ যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষিত করতে পারে, বাঁচিয়ে রাখতে পারে। নিঃস্বার্থে গাছ ভালবাসুন, সকলকে গাছ লাগাতে উৎসাহিত করুন।

আপনাদের যদি এই বিষয়ে কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সের মাধ্যমে আমাকে জানাতে জানাবেন। সেগুলোর সমাধান করাবার আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব। আপনার মূল্যবান রেটিং দিয়ে উৎসাহিত করুন, সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, সবাই খুব ভালো থেকো নমস্কার।

4/5 - (1 vote)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *