ধনিয়া বিরুৎ জাতীয় স্বল্প কালীন চাষযোগ্য এবং সুগন্ধি মসলা জাতীয় ফসল, এটি কম সময়ের মধ্যে মসলা জাতীয় ফসলের মধ্য উল্লেখযোগ্য। ধনিয়া রবি ফসল হলেও বর্তমানে প্রায় সারা বছর ধরেই এর চাষ করা যায়, তবে সারা বছর ধরে ধনিয়া পাতা চাষ করতে হলে অন্য প্রদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। ধনিয়ার কচি পুষ্পপদণ্ড একদিকে সবজি, সালাদ এবং অন্যদিকে মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া ধনিয়ার পরিপক্ক বীজ বেঁটে বা গুঁড়া করে তরকারিতে মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
ধনিয়া চাষ ভারতবর্ষ এবং বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্য অঞ্চলের অন্যতম লাভজনক অর্থকরী মসলা ফসল। ধনিয়া পাতা ও কচিকাণ্ড পাকস্থলীর প্রদাহরোধী এবং এনালজেসিক হিসেবে কাজ করে। এটি ক্ষুধা উদ্রেককারী, পাকস্থলীর ব্যাথা উপশম, হজমশক্তি বাড়ায়, ডাইরিয়া, শাস, কোলিক সমস্যা দূর করে এবং গ্যাস উদগীরন কমায়। এ ফসলটির পুষ্টি গুণাগুণ অত্যন্ত উচ্চমানের। শীতের মরসুমে ধনিয়া চাষ অধিক হয়, এর পাতা ও কাণ্ডে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ক্যারোটিন এবং রিবোফ্লাভিন রয়েছে যা শরীর এবং স্বাস্থের জন্য অত্যন্ত লাভদায়ী।
শীতের মরসুমে ধনিয়া পাতা চাষ প্রদ্ধতি
ধনিয়াতে যা আছে – ধনিয়া একটি পুষ্টিকর মসলা ফসল। প্রতি ১০০ গ্রাম ধনিয়া পাতায় ৩.৩ গ্রাম আমিষ, ৪.১ গ্রাম শর্করাসহ ক্যারোটিন (ভিটামিন ‘এ’) ৬ হাজার ৭২ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন-‘বি’ ১৩৫ মিলিগ্রাম, ভিটামিন ‘বি২’ বা রিবোফ্লাভিন ০.১৮ মিলিগ্রাম, আয়রন ২০.১ মিলিগ্রাম ও ক্যালসিয়াম ২৯০ মিলিগ্রাম পাওয়া যায়।
ধনিয়া বীজ সংগ্রহ:
ধনিয়া সাধারণত বীজ পবন প্রদ্ধতির মধ্যামে চাষা করা হয় । যেকোন বীজ ভান্ডার অথবা মুদী দোকানে অল্প টাকায় ধনিয়া বীজ পাওয়া যাবে । ধনিয়া বীজ সরাসরি মাটিতে বুনে দিয়ে চাষ করা যায়, তবে ভাল হয় আগের দিন সন্ধাবেলায় বীজ ভিজিয়ে রেখে পরের দিন বোনা। সরাসরি মাটিতে বীজ জার্মিনেট হতে অনেক দিন সময় লাগে – শীতের সময় ৭ থেকে ১২ দিনও লাগতে পারে । তাই প্রথমে বীজ জার্মিনেট করে নিয়ে পরে মাটিতে বুনে দিলে অল্প সময়ের মধ্যে ধনিয়া চাষ করা সম্ভব ।
বীজ জার্মিনেট প্রদ্ধতি:
১. ধনিয়া বীজ সাধারণত অর্ধ গোলাকার দুটি অংশ একত্রে থাকে, এইভাবে প্রত্যেক গোল অংশে দুইটি করে বীজ থাকে। প্রথমে এই গোল বীজ গুলো কিছু একটার সাহায্যে অল্প চাপে ভেঙ্গে দুই টুকরো করে নিলে জার্মিনেট দ্রুত হয়।
২. একটি পাত্রের মধ্য কিছু পরিমান জল নিয়ে বীজ গুলিকে এক রাত ( 12 ঘন্টা ) ভিজিয়ে রাখতে হবে।
৩. বীজ সম্পূর্ন জলে ভিজে যাবার পরে কিছু বীজ ভেসে উঠতে পারে, যে বীজগুলি ভেসে উঠবে সেগুলি জল থেকে তুলে নিয়ে ফেলে দিতে হবে।
৪. ১২ ঘন্টা পরে বীজগুলো জল থেকে তুলে জল ঝরিয়ে বীজগুলিকে টিসুপেপার অথবা শুকনো কাপড়ের উপরে রেখে দিতে হবে ।
ধনিয়া চাষের জন্য বেড তৈরী:
বাণিজ্যিক ভাবে ধনিয়া চাষ করতে হলে, প্রথমে আমাদের বীজ বপনের জন্য জল দাঁড়ায় না, এরূপ উঁচু স্থানে বেড তৈরি করতে হবে। বেডের উচ্চতা হবে ৬ থেকে ১০ ইঞ্চির মতো। চওড়া হবে ৩ ফুট এবং লম্বায় হবে ১০ফুট বা তারও অধিক।
ধনিয়া চাষের মাটি তৈরী:
ধনিয়া, দোঁয়াশ বা বেলে-দোঁয়াশ মাটিতে খুব ভাল হয়। বেডের মাটি যতটা সম্ভব ঝুরঝুরে ও আলগা করার চেষ্টা করবেন। ধনে বীজ ফেলার আগে, বেডের মাটির সাথে জৈব সার এবং নিমখোল মিশিয়ে অন্তত দু-সপ্তাহ রোদ খাওয়াবেন। এতে মাটির মধ্যে থাকা অপকারী ছত্রাক, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হবে এবং মাটির গুনগত মানও উন্ন্যত হবে।
ধনিয়া চাষে সার প্রয়োগ:
ধনে বীজ ফেলার পূর্বে বেডের মাটির সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণে জৈব সার এবং ফসফেট সার মিশিয়ে নেবেন৷ সার বেডের মাটিকে আলগা রাখবে এবং শেষ পর্যন্ত ধনে গাছকে খাবার প্রদান করবে।
জৈব সারের মধ্যে থাকে নাইট্রোজেন, ফসফেট, পটাশ এবং অনুখাদ্য যা ধনে গাছকে দ্রুত বাড়তে ও লকলকে রাখতে সাহায্য করবে, পাশাপাশি মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। ফসফেট ও গোবর সার দিয়ে বেডের মাটিকে ভালোভাবে মিশিয়ে দিন। যতটা সম্ভব মাটির ডেলাগুলোকে ভেঙে ফেলুন, পাশাপাশি মাটিকে আগাছা মুক্ত করে, হাত বুলিয়ে সুন্দর করে বেড প্রস্তুত করুন।
ধনিয়া বীজ বোনা:
ধনে বীজগুলোকে মাটিতে বোনার আগে, ১২ ঘণ্টা ভালভাবে ভিজিয়ে রাখবেন, যা পূর্বেই আলোচনা করা হয়েছে। তারপর বীজগুলোকে ছেঁকে নিয়ে জল ঝড়িয়ে মাটিতে বুনে দেবেন। বীজ ফেলা হয়ে গেলে কিছু পরিমান ঝুঁড়ঝুড়ে মাটি ছিটিয়ে দিতে পারেন। এবার হালকা ভাবে জল স্প্রেকরে দেবেন। প্রতিদিন ভালো করে লক্ষ্য করবেন বেড়ের আদ্রতা যেন বজায় থাকে।
ফসল তৈরী:
গাছ বেশি ঘন হলে চারা গজানোর ১০-১৫ দিন পর কিছু চারা তুলে বেড হালকা করে দিতে হবে। বীজ ফসলের ক্ষেত্রে প্রতি ১০ সেন্টিমিটার পর পর একটি চারা রাখতে হয়। বীজ বপনের ২৫ দিন পর থেকে ফসল তোলা যাবে।
ধনিয়ার রোগবালাই ও তার প্রতিকার:
ধনিয়া গাছে পোকার আক্রমণ হলে জৈব কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করা যাবে না
পাতায় বাদামী বা সাদা দাগ রোগ:-
এই ছত্রাকজনিত রোগ জীবাণু বাতাস দ্বারা বাহিত হয়ে ধনিয়া পাতাতে ছড়ায়। প্রথমে পাতায় হলুদ রঙের দাগ পড়ে, পরে তা সাদা হয়ে যায়। দাগগুলো একত্র হলে সম্পূর্ণ পাতাটি নষ্ট হয়, যা খাওয়ার আযাগ্য।
শিকড় পচা রোগ:-
বেডে অধিক জলের কারনে ধনিয়া মূল পচা রোগে আক্রান্ত হতে পারে, এর থেকে রক্ষা পেতে প্রতিরোধের ব্যবস্থা হিসাবে নিম কেক ৬০ গ্রাম/ একর জমিতে ব্যবহার করুন। এছাড়াও বীজ বোনার আগে ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি ৪ গ্রাম ১ কেজি বীজের সাথে মিশিয়ে বীজ শোধন করে নেবেন। পচা রোগের আক্রমণ থেকে নিয়ন্ত্রণের জন্যে, Carbendazim ৫ গ্রাম/লিটার পানিতে অথবা কপার অক্সি ক্লোরাইড ২ গ্রাম / লিটার পানিতে মিশিয়ে মাটিতে ঢালুন।