শীতের মরসুমে গ্যাজেনিয়া ফুল গাছের যত্ন কি ভাবে করবেন

Last updated on December 13th, 2023 at 03:08 pm

মরসুমী ফুলের মধ্য গ্যাজেনিয়া ফুলের প্রাণবন্ত রঙ এবং সৌন্দর্যের কারণে একে অন্য শীতকালীন ফুলের থেকে আলাদা করে। গ্যাজেনিয়া ফুলের আদি নিবাস দক্ষিণ আফ্রিকা হলেও বর্তমানে এটি শীতকালের জনপ্রিয় ফুলের মধ্য অন্যতম। ফেব্রুয়ারী- মার্চ অর্থাৎ শীতের সময় থেকে বর্ষা মৌসুম গ্যাজেনিয়া ফুল ফোটার আদর্শ সময় গ্যাজেনিয়া ফুল অনেকটা সূর্যমুখীর মতো দেখতে এবং ফুলগুলি লাল,সাদা কমলা, হলুদ প্রভৃতি রঙের হয়ে থাকে। শীতপ্রধান অঞ্চলে গ্যাজেনিয়া প্রায় সারা বছর ধরে ফুল দেয়।

গ্যাজেনিয়া ফুল তার ভিন্ন সৌন্দর্যের কারণে জনপ্রিয়, এর বোটানিক্যাল নাম Gazania rigens, এটি ডেইজি পরিবারের (Asteraceae) অন্তর্গত, গণের নাম Gazania, এই ফুল গাছের অনেক প্রজাতি রয়েছে। এটি দক্ষিণ আফ্রিকার স্থানীয় উদ্ভিদ এবং বিশ্বব্যাপী উষ্ণ জলবায়ু অঞ্চলেও শোভাময় ফুলের উদ্ভিদ হিসাবে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। গাজানিয়া একবর্ষ এবং হুবর্ষজীবী হতে পারে। এর পাতাগুলি দীর্ঘ এবং সরু যা সবুজ বা ধূসর-সবুজ এবং দৈর্ঘ্যে 3 ইঞ্চি (8 সেমি) পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। ফুলগুলি বড় এবং উজ্জ্বল বর্নের। গাছগুলি লোমযুক্ত, উচ্চতায় প্রায় ১ফুট পর্যন্ত বাড়তে পারে।

শীতের মরসুমে গ্যাজেনিয়া ফুল গাছের যত্ন কি ভাবে করবেন

গাজানিয়া যে কোনো বাগানীদের জন্য একটি পছন্দের উদ্ভিদ ,কারন এর নজরকাড়া ফুল এবং কম রক্ষণাবেক্ষণের জন্য। এটি পঞ্চদশ শতাব্দীর গ্রীক-ইতালীয় দার্শনিক, গাজার থিওডোরাস থেকে এর নাম উদ্ভব হয়েছে। গাজানিয়া গাছকে কখনও ট্রেজার ফুল আবার কখনও আফ্রিকান ডেইজি সহ অন্যান্য সাধারণ নামে ডাকা হয়। গাজানিয়া গাছগুলি একবর্ষজীবী বা বহুবর্ষজীবী হতে পারে। তবে এশিয়ার অন্তর্গত গ্রীষ্ম প্রধান অঞ্চল গুলিতে বসন্তের শেষের দিক থেকে গ্রীষ্মের শুরু পর্যন্ত ফুল ফোটে, তাদের ঝাঁকড়া পাতাগুলি দশ ইঞ্চি চওড়া, ছয় থেকে দশ ইঞ্চি লম্বা হয় এবং শোভাময়, ডেইজির মতো ফুল উৎপন্ন করে।

স্থান নির্বাচন:

গ্যাজেনিয়া ফুল গাছ প্রতিস্থাপনের জন্য পূর্ন সূর্যের আলো সহ আংশিক ছায়া এবং ভাল নিষ্কাশনকারী উর্বর মাটি উপযুক্ত। টবে চারা গাছ প্রতিস্থাপন করলে ৬ইঞ্চি টব নির্বাচন করবেন এবং সরাসরি মাটিতে প্রতিস্থাপন করলে উঁচু অথবা সমতল স্থান নির্বাচন করবেন, যেখানে জল সহজে জমতে না পারে।

গ্যাজেনিয়া ফুলের প্রকারভেদ:

গাজানিয়া রিজেনস (ট্রেজার ফ্লাওয়ার): এটি সবচেয়ে বেশি চাষ করা প্রজাতি, এবং গাজানিয়া রিজেনস প্রজাতির অন্তর্গত ফুলের বিভিন্ন রঙ বর্তমান যেমন কমলা, হলুদ, লাল এবং গোলাপী সহ বিভিন্ন ।

গাজানিয়া লিনিয়ারিস (ট্রেলিং গাজানিয়া): এই প্রজাতির উদ্ভিদ গুলি লতানো প্রকৃতির, এটি হ্যাঙ্গিন টবে ঝুলানোর জন্য বা বাগানের মাটিতে করবার জন্য উপযুক্ত। এটি প্রাণবন্ত ফুল উত্পাদন করে।

গাজানিয়া স্প্লেন্ডেন্স (গাজু সিরিজ): এই প্রজাতির ফুলগুলি বড় এবং উজ্জ্বল রঙের হয়। গাজু জাতগুলির প্রায়শই আরও অভিন্ন এবং পরিষ্কার চেহারা থাকে।

গাজানিয়া ক্রেবসিয়ানা (বুশম্যানের ঘড়ি): প্রজাতির ফুলগুলি আফ্রিকান গাজানিয়া নামেও পরিচিত, এই প্রজাতিটি দক্ষিণ আফ্রিকার স্থানীয় উদ্ভিদ। এই গাছের পাতাগুলি ধূসর-সবুজ বর্ণের এবং হলুদ বা কমলা ফুল উৎপন্ন করে।

গাজানিয়া পিন্নাটা: এই জাতটিতে সূক্ষ্মভাবে বিভক্ত, ফার্নের মতো পাতা রয়েছে এবং হলুদ থেকে কমলা ফুলের জন্ম দেয়। এটি গাজানিয়া গণের মধ্যে একটি স্বতন্ত্র প্রজাতি।

গাজানিয়া লংসিস্কাপা: এই প্রজাতিটি এর লম্বা, সরু কান্ড দ্বারা চিহ্নিত করা হয় এবং আকর্ষণীয় কমলা বা হলুদ ফুল দেয়।

শীতের মরসুমে গ্যাজেনিয়া ফুল গাছের যত্ন কি ভাবে করবেন

চারাগাছ সংগ্রহ:

নার্সারি থেকে গ্যাজেনিয়ার গাছ সংগ্রহ করার সময় কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে..

  • খনো রোগগ্রস্থ এবং পাতায় ছোঁপ-ছোঁপ কালো দাগ,পাতার কোনা পঁচা, পাতায় জলের মতো দাগ অথবা কোঁকড়ানো ছোট, বড়ো পাতা জাতীয় গাছ সংগ্রহ করবেন না।
  • পালিথানে থাকা চারার শিকড় তৈরী হয়েছে তা নিশ্চিৎ হতে হবে। শিকড় তৈরী না হলে সেই চারা সংগ্রহ করবেন না।
  • পরিচিত নার্সারী থেকে সর্বদা চারাগাছ সংগ্রহ করবেন।

টব নির্বাচন:

গ্যাজেনিয়া ফুল গাছের জন্য ছোট (6 ইঞ্চি) বা একটু মাঝারি আকারের মাটির পাত্র নির্বাচন করলেই হবে, বেশি বড় মাপের পাত্রের প্রয়োজন হয় না। চারা প্রতিস্থাপনের পূর্বে টবের নিচে এবং সাইডে ছিদ্র আছে কি- না তা নিশ্চিৎ করে নেবেন, তাহলে বাড়তি জল টবে জমতে পারবে না, ছিদ্র দিয়ে বেড়িয়ে যাবে।

মাটি তৈরী এবং প্রতিস্থাপন প্রদ্ধতি:

গ্যাজানিয়া গাছের জন্য ভাল নিষ্কাশনকারী উর্বর হালকা মাটি উপযুক্ত। তাই বাগানের মাটির সাথে বালি এবং অন্যান্য জৈব উপাদান ভালভাবে মিশিয়ে মাটি প্রস্তুত করতে হবে। মাটি তৈরীর ক্ষেত্রে উর্বর দোঁয়াশ মাটির সাথে জৈব সার: এক বছরের পুরনো গোবর সার / পাতা পঁচা / ভার্মিকপোষ্ট নিতে হবে। সাথে নিতে হবে হাফ মুঠো শিংকুচি, হাফ মুঠো হাড়গুড়ো এবং একমুঠো শুকনো নিমপাতা গুড়ো, যা মাটিতে থাকা জীবাণু ধ্বংস করে ও গাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে গাছকে রক্ষা করে, শুকনো নিমপাতা গুড়ো না পেলে তার পরিবর্তে নিমখোল ব্যাবহার করবেন, সবগুলো ভালো ভাবে মিশিয়ে হালকা ভাবে জল ছিটিয়ে ১০ থেকে ১২ দিনের জন্যপলিথিন দিয়ে ডেকে দেবেন, ১২ দিন পরে পলিথিন আলগা করে মাটি রৌদ্রে শুকোতে দিতে হবে তার পরে চারাপ্রতিস্থাপন করতে হবে।

আলো:

গ্যাজানিয়া ফুল গাছের জন্য প্রতিদিন গড়ে ৬/৮ ঘণ্টা রোদ প্রয়োজন, এমন স্থানে গাছ প্রতিস্থাপন করলে অথবা টব রাখলে গাছ অনেক বেশি ফুল দিতে সক্ষম। ফুলের গাছ ছাদে থাকলে পর্যাপ্ত রোদ পাবে আর বারান্দায় বা ঘরে থাকলে তা দক্ষিণ, পূর্ব দিকের বারান্দায় বা জানালার পাশে রাখতে হবে, কেননা দক্ষিণ আর পূর্ব মুখী বারান্দায় বা জানালায় দিনের বেশির ভাগ সময় রোদ থাকে।

শীতের মরসুমে গ্যাজেনিয়া ফুল গাছের যত্ন কি ভাবে করবেন
শীতের মরসুমে গ্যাজেনিয়া ফুল গাছের যত্ন কি ভাবে করবেন

গাছের খাবার প্রয়োগ:

চারা গাছ বসানোর ২০ দিন পর থেকে মাসে দুইবার ১ লিটার জলে ২৫০ গ্রাম সরিষার খোল ৭ থেকে ১০ দিনের জন্য ভিজিয়ে রেখে দিতে হবে, খোঁল জল গাছে দেওয়ার দিনে ঐ জলের সাথে আরো ৫ লিটার জল মিশিয়ে তা থিতাতে দিতে হবে, জল থিতিয়ে গেলে উপরের পাতলা হলুদ জল গাছে দিতে হবে। আর কোনো রাসায়নিক সার এর প্রয়জোন হবে না। এই ভাবে এক মাস খোল জল প্রয়োগ করবেন।

[আরও পড়ুন: হ্যাঙ্গিন পাত্রে বা মাটিতে পিটুনিয়া ফুল গাছের পরিচর্যা]

বেশি ফুল পাওয়ার জন্য:

গাছের গ্রোথে আপনি যখন সন্তুষ্ট তখন বেশি ফুল পাওয়ার জন্য ১৫ দিনে একবার ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি টবের ক্ষেত্রে ৬ থেকে ৮ র্টি DAP/TSP দানা টবের সাইড দিয়ে দিতে পারেন অথবা খোঁল জল গাছে দেওয়ার একদিন আগে একই পরিমানে DAP/TSP দানা জলের মধ্যে ভিজিয়ে রাখুন ,খোঁল জল গাছে দেওয়ার সময় DAP জল একত্রে ভাল ভাবে মিশিয়ে গাছের গোড়ায় ১৫ দিন অন্তর অন্তর প্রয়োগ করবেন তাতে গাছ আরো বেশি সতেজ থাকবে এবং প্রচুর ফুল দেবে।

দূরত্ব বজায় রাখা:

গাজানিয়া গাছগুলি স্বল্প জায়গার মধ্য ঝোঁপালো প্রকৃতির হয়, সুতরাং সঠিক বায়ু সঞ্চালনের জন্য গ্যাজানিয়া গাছগুলিকে এক ফুট দূরে প্রতিস্থাপন করতে হবে, প্রয়োজনে 6 ইঞ্চি পাত্রে একের অধিক চারা গাছ প্রতিস্থাপন না করা। অত্যধিক ভিড় গাছ পাউডারি মিলডিউ সমস্যা হতে পারে।

[আরও পড়ুন: বিদেশী এলিগেন্ট ক্লারকিয়া গাছের সম্পূর্ণ পরিচর্যা]

প্রিয় পাঠক, এই প্রতিবেদনটি পঠন করবার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার মতো পাঠকের সহযোগিতা “ক্রিয়েটিভিটি গার্ডেনিং” সর্বদা কাম্য করে। গাছই আমাদের একমাত্র সম্পদ যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষিত করতে পারে, বাঁচিয়ে রাখতে পারে। নিঃস্বার্থে গাছ ভালবাসুন, সকলকে গাছ লাগাতে উৎসাহিত করুন।

আপনাদের যদি এই বিষয়ে কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সের মাধ্যমে আমাকে জানাতে জানাবেন। সেগুলোর সমাধান করাবার আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব। আপনার মূল্যবান রেটিং দিয়ে উৎসাহিত করুন, সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, সবাই খুব ভালো থেকো নমস্কার।

আপনার মূল্যবান রেটিং দিয়ে উৎসাহিত করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *