সালভিয়া ফুল শীতের মরসুমের জনপ্রিয় শোভাময় গাছ যা বিশ্বব্যাপী প্রায় 1,000 প্রজাতি রয়েছে। দৃষ্টিনন্দন পাপড়ির অনন্য বিন্যাস ও বর্ণ বৈচিত্র্যের জন্য সালভিয়া সবার কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। প্রজাতির বিভিন্নতার উপর নির্ভর করে ফুল শীতের শুরু থেকে শরৎ পর্যন্ত বেগুনি, নীল, লাল, গোলাপী, প্রবাল বা সাদা রঙের সুগন্ধযুক্ত পাতা এবং আকর্ষণীয় ফুলে তৈরি করে। সালভিয়া চারাগাছ প্রতিস্থাপনের আদর্শ সময় নভেম্বর মাস।
সালভিয়া ফুল গাছ ভেষজ, একবর্ষজীবী উদ্ভিদ। ভূমধ্যসাগর, এশিয়া, মধ্য এবং দক্ষিণ আমেরিকার উষ্ণ, শুষ্ক জলবায়ুর অঞ্চলে সালভিয়া গাছ দেখতে পাওয়া যায়। সালভিয়া তাপ এবং খরা সহনশীল এবং কম রক্ষণাবেক্ষণ উদ্ভিদ। সালভিয়া শীত মৌসুমের মনমাতানো ফুল যার বৈজ্ঞানিক নাম Salvia Splendens. সালভিয়া ও তুলসী একই গোত্র Labiatae সদস্য। এই নির্দেশিকা আপনাকে সালভিয়া ফুলের যত্ন এবং প্রতিস্থাপন সম্পর্কে মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করবে।
কি ভাবে টবে সালভিয়া ফুল গাছের পরিচর্যা করবেন
সালভিয়া দুই ফুট পর্যন্ত লম্বা হয় সুতরাৎ এই গাছগুলিকে আপনি আপনার ফ্ল্যাটের বারান্দায় বা ছাদে অল্প স্থানে পরিচর্যা করতে পারেন। এই ফুল খুব অল্প সময়ে, নার্সারি থেকে ভালো জাতের চারা এনে টবে রোপন করে সঠিক যত্ন নিলে মাস খানেক মধ্য ফুল ফুটতে শুরু করবে। জোড়ায় জোড়ায় লম্বা ডালের অগ্রভাগ হৃদয়াকৃতির ফুল ফোঁটে, এবং ফুলগুলি ১২ থেকে ১৭ দিন প্রযন্ত স্থায়ী হয়। কিছু প্রজাতির পুষ্পমঞ্জরি গাছের চেয়েও বড় হয়। পাতাহীন পুষ্পমঞ্জরি ফুলকলিতে ভরা থাকে। Gladiolus ফুলের ন্যায় নিচের দিক থেকে ফুল ফুটতে ফুটতে ওপরের দিকে ওঠে।
সালভিয়া ফুল গাছের জন্য স্থান নির্বাচন:
শীতের শুরু থেকে সালভিয়া গাছে ফুল ফোঁটা শুরু, তবে গাছ রোপণের পূর্বে সঠিক জায়গা ও উর্বর মাটি প্রস্তুত একান্ত প্রয়োজন। সারা দিন সূর্যের আলো পায় তেমন স্থানসহ ঢালু এবং সমতল জায়গা সালভিয়া গাছের জন্য নির্বাচন করতে হবে।
সালভিয়া ফুল গাছের জন্য আলো:
পর্যাপ্ত সূর্যালোক পায় এমন স্থানে সালভিয়া চারা গাছ প্রতিস্থাপন করতে হবে অর্থাৎ প্রতিদিন কমপক্ষে 6 থেকে 8 ঘন্টা রোদ পায় এরকম জায়গাতেই সালভিয়া চাষ উত্তম এতে ফুলের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। পূর্ণ সূর্যের চেয়ে কম আলো গাছের বৃদ্ধিতে বাধাপ্রাপ্ত হয় ফলে গাছ দুর্বল ও লম্বা হয়, ফুলের আকার ছোট হয়, গাছে ফুল কম হয় এবং রঙের ঔজ্জ্বল্য হ্রাস পায়। সালভিয়া রোপণের জন্য লম্বা সারি তৈরী করে এক ফুঁট দূরত্ব রেখে চারা গাছ প্রতিস্থাপন করতে হবে।
মাটি প্রস্তুত এবং জল প্রয়োগ:
মাটির উর্বরতা এবং জল নিষ্কাশন ব্যাবস্থা উন্ন্যত করতে মাটির সাথে জৈব পদার্থ, যেমন ভার্মিকম্পোস্ট, গোবর সার অথবা পাতা পচা অন্তর্ভুক্ত করে মাটি প্রস্তুত করতে হবে। একটি সামান্য অম্লীয় থেকে নিরপেক্ষ pH স্তর (5.5 থেকে 6.5) বেশিরভাগ সালভিয়া প্রজাতির জন্য আদর্শ। যদি মাটি ভারী এবং কাদামাটি হয়, তবে বায়ুচলাচল উন্নত করতে বালি বা পার্লাইট যোগ করার কথা বিবেচনা করতে হবে।
এই গাছে বেশি জলের প্রয়োজন হয় না সুতরাং কোনভাবেই গাছের গোড়ায় জল না জমে। গাছের গোড়ায় জল জমলে গাছ মারা যেতে পারে। তাই জল দেওয়ার সময় সতর্কতা অবলম্বণ করা প্রয়োজন। টবে গাছ প্রতিস্থাপনের পূর্বে অবশ্য টবের নিচে ছিদ্র রাখতে হবে জল নিষ্কাশনের জন্য।
তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা:
তাপমাত্রার প্রয়োজনীয়তা বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে সামান্য পরিবর্তিত হবে, তবে বেশিরভাগ একবর্ষজীবী সালভিয়া ৪ থেকে ১২ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার ভাল জন্মায়, তবে তারা শুষ্ক জলবায়ুও পছন্দ করে এবং আর্দ্র অবস্থায় শিকড় পচা এবং পাউডারি মিলডিউ সমস্যা তৈরি করতে পারে-বিশেষ করে যদি পর্যাপ্ত বায়ু সঞ্চালন না করা হয়।
সার প্রয়োগ:
সালভিয়ায় গাছে বেশি সারের প্রয়োজন হয় না, তবে একটি হালকা, ধীর-নিঃসৃত সার আর পর্যাপ্ত সূর্যের আলো সহ সামান্য যত্নে গাছ থেকে প্রচুর ফুল পাওয়া যায়। প্রতিস্থাপনের পূর্বে মাটির সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণে জৈব সার মিশিয়ে চারা গাছ প্রতিস্থাপন করতে হবে।
কীটপতঙ্গ এবং রোগ ব্যবস্থাপনা:
এই গাছ তেমন একটা কীটপতঙ্গ এবং রোগের দ্বারা আক্রান্ত হয় না। পাউডারি মিলডিউ এবং শিকড় পচা সাধারণ-বিশেষ করে আর্দ্র আবহাওয়ায় হয়। গাছপালা একসাথে খুব কাছাকাছি স্থাপন করা হলে বোট্রাইটিসও ঘটতে পারে। এই সমস্যাগুলি এড়াতে, জল দেওয়ার মধ্যে মাটি শুকিয়ে যেতে দিন এবং নিশ্চিত করুন যে আপনার সমস্ত সালভিয়া গাছগুলিতে যথেষ্ট বায়ু সঞ্চালন রয়েছে।
[আরও পড়ুন: নীলমণি লতা গাছের সম্পূর্ণ পরিচর্যা | Easy to Grow & Care Petrea Volubilis]
এছাড়াও বেশি জল প্রয়োগের ফলে পাতা পচা ও পাতায় দাগ দেখতে পাওয়া যায়। এর জন্য প্রতি ১৫ দিন অন্তর যে কোন কোম্পানির ফাংগিসাইড জলের সাথে মিশিয়ে সমস্ত গাছে স্প্রে করতে হবে। বেশি জল দেওয়ার ফলে শিকড় পচা, গোঁড়া পচা প্রভৃতির সমস্যা তৈরী হতে পারে, এর জন্য কিছু পরিমান ফাংগিসাইড গাছের গোড়ায় ছিঁটিয়ে দিতে হবে। এছাড়াও সমস্ত রকম রোগবালাই থেকে গাছকে রোগ মুক্ত রাখতে গাছের গোড়ায় শুকনো নিমপাতা অথবা নিম খোল দিলে অধিকাংশ কীটপতঙ্গ গাছ আক্রমণ করতে পারে না।
প্রিয় পাঠক, এই প্রতিবেদনটি পঠন করবার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার মতো পাঠকের সহযোগিতা “ক্রিয়েটিভিটি গার্ডেনিং” সর্বদা কাম্য করে। গাছই আমাদের একমাত্র সম্পদ যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষিত করতে পারে, বাঁচিয়ে রাখতে পারে। নিঃস্বার্থে গাছ ভালবাসুন, সকলকে গাছ লাগাতে উৎসাহিত করুন।
আপনাদের যদি এই বিষয়ে কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সের মাধ্যমে আমাকে জানাতে জানাবেন। সেগুলোর সমাধান করাবার আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব। আপনার মূল্যবান রেটিং দিয়ে উৎসাহিত করুন, সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, সবাই খুব ভালো থেকো নমস্কার।