Last updated on August 24th, 2023 at 08:11 pm
অনেকেই ছাদ বাগানের বা শখে পদ্ম গাছ করতে চান, তাই অনেকে টাকা খরচা করে নার্সারি থেকে বড় টব সমেত পদ্ম গাছ সংগ্রহ করে থাকেন । তো চলুন জেনে নেওয়া যাক বাড়িতে কিভাবে আপনি পদ্ম চাষ করা করবেন। শুনে অবাক হচ্ছেন পুকুর ছাড়া পদ্ম ফুল চাষ হবে কি করে? কিন্তু কয়েকটি পদ্ধতি অনুসরণ করলেই আপনিও ছাদ বাগানে খুব সুন্দর করে পদ্ম চাষ করতে পারবেন । প্রথমেই কোন নার্সারি থেকে বা বীজ ভাণ্ডার থেকে অথবা দর্শকর্মার দোকানে অথবা Online থেকে বীজ সংগ্রহ করতে পারেন। বীজ কেনার সময় কালচে, ভারী মোটা বীজ সংগ্রহ করবেন।
পদ্ম ফুলের বিভিন্ন ভ্যারাইটি হয়ে থাকে-
- প্রথমটি পুকুরের পদ্ম (দেশী জাতীয়)
- দ্বিতীয়টি ম্যাক্রো জাতীয়
- তৃতীয়টি মাইক্রো জাতীয় এবং হাইব্রীড বোল ভ্যারাইটি
দেশী অর্থাৎ পুকুরের পদ্ম ছাড়া বাকি ভ্যারাইটি গুলোর বীজ হয়না তাই টিউবার গুলি কিনতে হয়। যেহেতু এই ভ্যারাইটি গুলি বাইরে থেকে আনা হয়, তাই এদের দাম একটু বেশীই হয়।
কিভাবে একটি পদ্ম গাছ জন্মাতে হয়:
পদ্ম গাছ দুটি উপায়ে জন্মানো যায়: প্রথমত পদ্মের বীজ থেকে চারা তৈরি, দ্বিতীয়ত কন্দ থেকে পদ্ম গাছ তৈরি।
পদ্ম চাষ করবার সময়:-
পদ্ম গাছ করবার জন্য সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সঠিক সময়ে চারা রোপণ না করলে কোন ভাবেই ভালো ফুল হবে না। তাই ফেব্রুয়ারী মাসের শেষে অথবা মার্চ মাসের প্রথমেই কোন নার্সারি থেকে অথবা বীজ ভাণ্ডার থেকে অথবা দর্শকর্মার দোকান থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। যদি কোথাও পদ্ম ফুলের বীজ না পান তাহলে অনলাইনে বীজ দেখতে পারেন। বীজ থেকে চারা করার জন্য কতগুলো পদ্ধতি আপনাকে অবলম্বন করতে হবে। বীজের দু’টি অংশ থাকে। একটি ছুঁচালো দিক বা Back Side এবং একটি গোল দিক বা Front Side বা সামনের দিক। উল্টো দিকের অংশটি (Back Side) না ঘষে Front Side বা সামনের দিকের অংশ কোন শিরিষ কাগজ বা সিমেন্টের দেওয়ালে ঘষতে হবে।
এবার একটি ছোট পাত্রের মধ্যে ভাল করে জল দিয়ে বীজ দিয়ে দিতে হবে। চারা বসানোর সঠিক সময় চৈত্র মাসের প্রথম সপ্তাহে বা দ্বিতীয় সপ্তাহ, তাহলে রৌদ্রজ্বল আবহাওয়া পেয়ে চারা ভালোভাবে বৃদ্ধিপাবে এবং70/75 দিনে ফুল দেবে। আমি নিজে পরীক্ষা করার জন্য আগস্ট মাসে চারা বসিয়ে দেখেছি বৃদ্ধি সেই অনুপাতে হয়নি। এই সময়ে নতুন গাছ না বসানোই ভালো হবে ।
উপরের ছবিটা লক্ষ করলে বুঝতে পারবেন কোন দিক টা কতটা ঘষতে হবে। বীজ ঘষার পর বীজ গুলিকে কোনো জল সমেত পাত্রের মধ্যে রেখেদিন। পাত্রটি এমন জায়গায় রাখবেন যেখানে যথেষ্ট পরিমান আলো আসে। পাত্রের মধ্যে বীজ দেওয়ার সাথে সাথে কিছু বীজ জলের ডুবে যাবে দুই একটা ভাসতে পারে ওগুলো যদি দুই দিনের মধ্যে না ডোবে তাহলে বুঝবেন ওগুলো নষ্ট বীজ। যে বীজ ডুবে যাচ্ছে সেই বীজ থেকে অঙ্কুরোদগম হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
পাত্রের জল প্রতিদিন পাল্টে দেবেন । চেষ্টা করবেন টিউবলের জল দেবার, কোন ক্লোরিনযুক্ত জল পাত্রে দেবেন না,যেহেতু ক্লোরিনযুক্ত জল পদ্ম বীজের অঙ্কুরোদগমের জন্য উপযুক্ত নয়। জলের তাপমাত্রা +20 থেকে +25 ডিগ্রি হওয়া উচিত। চতুর্থ বা পঞ্চম দিন পর থেকে বীজের অঙ্কুর বেরোনো শুরু হবে। বীজ অঙ্কুরিত হবার সপ্তম থেকে দশম দিনে বীজ গুলিকে একটা বড় কাঁচের গ্ল্যাসে বা একটু বেশী জল ধরে এমন কোনো পাত্রে দিতে হবে। বীজ গুলি বড় হওয়ার সাথে সাথে বীজমুখ থেকে শিকড় বের হওয়া শুরু হয়। দুইটি পাতা এবং পর্যাপ্ত শিকড় বের হলেই চারা গুলিকে পাত্রে লাগাতে হবে।
পাত্র নির্বাচন :-
সাধারণ ভাবে পদ্ম গাছের ক্ষেত্রে যত বড় জায়গা দিতে পারবেন ততই ভালো, টব বা পাত্র নির্বাচন করার সময় মনে রাখতে হবে বৃহৎ জলাশয়ের উদ্ভিদটিকে আমরা আমাদের বাড়িতে ছোট্ট জায়গায় করতে চলেছি। তাই যতটা সম্ভব বৃহৎ এবং গভীর পাত্র নির্বাচন করা উচিত। কম করে ১০ থেকে ২০ ইঞ্চি গভির এবং ১৮ থেকে ২৫ ইঞ্চি ডায়ার পাত্র নিতে হবে ।
মাটি তৈরি :-
পদ্ম গাছের জন্য প্রয়োজন এঁটেল মাটি। এঁটেল মাটির সঙ্গে ভালো করে জৈব সার মিশিয়ে মাটি প্রস্তুত করে শিকড় সমেত পদ্ম গাছ গুলিকে গভীর জলে রোপণ করতে হবে। তবে সব থেকে ভাল হয় পুকুরের পাক মাটি জোগাড় করতে পারলে, বড় গামলা বা মাটির বড় চারিতে গাছ পটিং করার সময় গামলার নিচে ২৫০ গ্রাম হাড়গুড়ো, ২৫০ গ্রাম সিংকুচি, ৫০ গ্রাম নিমখোল, গামলার ৩০% গোবরসার ( কম পক্ষে ৪ মাসের পুরনো) তার ওপরে ৬০% মাটি দিয়ে মোটামুটি ১০ দিন ভিজিয়ে রেখে দিতে হবে। এক্ষেত্রে বলে রাখি মাটি চটকে কাদা করে নেবেন, দেখবেন কিছু দিন পরেই পাত্রের জল স্বচ্ছ হয়ে গেছে। পাতা বৃদ্ধি পেতে শুরু করলে শিকড় সমেত পদ্ম গাছ গুলিকে গভীর জলে রোপণ করতে হবে। এঁটেল,পুকুরের পাঁক, এঁটেল দোয়াস, দোয়াস মাটি পদ্মের জন্য ভাল তবে এঁটেল মাটি এবং পুকুরের পাঁক মাটি সব থেকে ভাল। মাটি ব্যবহার করার আগে মাটিতে থাকা আগাছা পরিষ্কার করে নেবেন । পাত্রটিকে ৫ থেকে ৬ দিনের জন্য অর্ধ্য ছায়াযুক্ত স্থানে রেখে দেবেন।
রৌদ্র:-
৭ দিন পরে পাত্রটিকে সরাসরি সূর্যের আলো পাই তেমন স্থানে রাখতে হবে । নিয়মিত পচা পাতা আর পুরানোপাতা পরিস্কার রাখতে হবে। সারা দিনে কম পক্ষে চার-ছয় ঘন্টার রোদ পাই তেমন স্থানে পাত্রটি রাখতে হবে। সারাদিন রোদ পাওয়া গেলে আরও ভালো। প্রত্যক দিন জল পাল্টানোর কোন প্রয়োজন নেই। জল ওভার-ফ্লো করে দেবেন। মনে রাখতে হবে প্রকৃতির কোলে এই ভাবেই পদ্ম ফুল তার শোভাবর্ধন করে।
গাছের খাবার:-
মনে রাখা প্রয়োজন পদ্ম গাছ বৃদ্ধির প্রাথমিক অবস্থায় অতিরিক্ত মাত্রায় সার প্রয়োগ করা চলবে না, দিলে over fertilization এর ফলে গাছ নষ্ট হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে। tuber বসানোর পর runner বেড়িয়ে অন্তত ৮- ১০ টা পদ্ম পাতার স্ট্যান্ড পাতা বেরোলে বা বীজ থেকে তৈরী গাছে যে দিন মোটা অনেক পাতা বেরোতে দেখা যাবে। সেই সময়ে প্রথম পর্যায়ের সার প্রয়োগ করা যেতে পারে।
জৈব হলে গ্রানুলার দানা আর রাসায়নিক হলে NPK (19:19:19 বা 20:20:20) এবং “sea weed”/ “humic acid” (গাছের শিকড় বৃদ্ধি করে এবং গাছের খিদে বাড়ায় ) এর দানা সম পরিমাণে মিশিয়ে চা চামচের 1/4 ভাগ (বা দুটোরই 8 -10 টা দানা)প্রতি বর্গ ফুট ক্ষেত্রে। সাথে ব্যাবহার করতে পারেন ইকো ম্যাক্স জি এর 6-8 টা দানা, খুব ভালো কাজ হয়। সার প্রয়োগের পর খেয়াল রাখতে হবে, গাছের বৃদ্ধির পরিবর্তন কেমন হচ্ছে। যদি দেখা যায় পাতার উজ্বলতা এবং সবুজ ভাব বেড়েছে তা হলে ১৫ দিন পর আবার ওই সার ই ব্যাবহার করবেন তবে এবার আগের বারের থেকে পরিমাণে দ্বিগুণ।সার গুলি দুটি কাগজে ভাগ করে গামলার দুদিকে , মাটির মধ্যে ২- ৩ ইঞ্চি গভীরতায় পুঁতে দিতে হবে। তবে সাবধান দেবেন যেন সারের কাগজ দেওয়ার সময় runner বা গাছের কোন অংশে সংস্পর্শে আসে, তা হল runner বা গাছ জ্বলে যাবে।
জল প্রয়োগ:-
পদ্ম গাছের পাত্রে জল পরিবর্তন করবার প্রয়োজন হয় না, পাত্রের জল ওভার ফ্লো করে দিয়েই হবে। তবে লক্ষ রাখবেন গরমকালে পাত্রে জল যেন বেশি গরম না হয়।
ঠিকমতো যত্ন করলে টিউবার থেকে, বোল ভ্যারাইটির পদ্মে ৫০ দিনে এবং বীজ থেকে ৬০ দিনে ফুল পাওয়া যায়। মশার জন্য গাপ্পি মাছ ছাড়তে হবে।
[আরও পড়ুন: ড্রাগন ফল গাছের সম্পূর্ণ চাষ পদ্ধতি | Dragon Fruit Cactus Planting & Care]
পদ্ম গাছের প্রচলিত নাম
Name | Position |
---|---|
[আরও পড়ুন: লন্ঠন জবা গাছের পরিচর্যা | How to grow and care Lanthan jaba]