লাল জামরুল: টবে জামরুল গাছের পরিচর্যা এবং মাটি তৈরি

Last updated on October 14th, 2023 at 02:51 pm

জামরুল মিষ্টি স্বাদযুক্ত একটি রসালো গ্রীষ্ম কালীন ফল। এশিয়া মহাদেশের গ্রীষ্মকালীন অঞ্চলে সারা গরমকাল ধরে বাড়ির আশেপাশে বা পুকুরের ধারে বিক্ষিপ্তভাবে এ জামরুল গাছ দেখা যায়। জামরুল গাছের যত্ন এবং পরিচর্যা খুবই সহজ, অনেকে জায়গার অভাবে বাড়ির ছাদে হাফ ড্রামেও জামরুল গাছ করে থাকে। এটি ভিটামিন বি-২ সমৃদ্ধ একটি রসালো ফল। জামরুল ফলে প্রচুর পরিমাণে জল থাকায় ডায়াবেটিস রোগীর তৃষ্ণা নিবারণে উপকারী। জামরুলে আমিষ, খনিজ লবণ, ভিটামিন সি, লৌহ ও ক্যারোটিন রয়েছে।

জামরুলের বৈজ্ঞানিক নাম ‘Syzygium samarangense‘, ইংরেজি নাম: Champoo (থাই ভাষা), জামরুলের অন্যান্য নাম ove apple, royal apple, java apple, bell fruit, jamaican apple, water apple, rose apple.এটি Myrtaceae পরিবারের syzygium গণের অন্তর্ভূক্ত ফলের গাছ। এটি ভারত, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, সামোয়া, শ্রীলঙ্কা, থাইল‍্যান্ড ইত‍্যাদি দেশে জন্মায়। ক্রান্তীয় অঞ্চলেও জামরুলের ব‍্যাপক চাষ হয়।

লাল জামরুল: টবে জামরুল গাছের পরিচর্যা এবং মাটি তৈরি

জামরুলের পুষ্টিমান :–

প্রতি একশ গ্রাম জামরুলে 56 ক‍্যালোরি শক্তি, 0.5-0.7 গ্রাম প্রোটিন, 14.2গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, 0.2-0.3গ্রাম ফ‍্যাট, 29-45.2 মিলিগ্রাম ক‍্যালসিয়াম, 4 মিলিগ্রাম ম‍্যাগনেসিয়াম ও 11.7-30 মিলিগ্রাম ফসফরাস থাকে। এছাড়া জামরুলে সামান‍্য পরিমাণে ক‍্যারোটিন, থায়ামিন ও অ‍্যাসকরবিক অ‍্যাসিড বর্তমান।

ক্যালরি শক্তি থাকে ১০০ গ্রাম থেকে ৫৬ গ্রাম, প্রোটিন ০.৫ থেকে ০.৭ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ১৪.২ গ্রাম, খাদ্যআঁশ ১.১ থেকে ১.৯ গ্রাম, ফ্যাট ০.২ থেকে ০.৩ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৯ থেকে ৪৫.২ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ৪ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ১১.৭ থেকে ৩০ মিলিগ্রাম, আয়রন ০.৪৫ থেকে ১.২ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ৩৪.১ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৩৪.১ মিলিগ্রাম, কপার ০.০১ মিলিগ্রাম, সালফার ১৩ মিলিগ্রাম, ক্লোরিন ৪ মিলিগ্রাম এবং পানি ৪৫.৫ থেকে ৮৯.১ গ্রাম। এছাড়াও জামরুলে সামান্য পরিমাণে পাবেন ক্যারোটিন, থায়ামিন, নাইয়াসিন, এ্যাসকোরবিক এসিড।

জামরুলের উপকারিতা:–

জামরুল ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে ও ক‍্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। জামরুলে আছে ভিটামিন সি, আয়রন, ক্যালসিয়াম, সালফার,পটাশিয়াম এবং ফাইবার যা হজমশক্তি বাড়াতে সাহায‍্য করে। ডায়াবেটিক রোগীর জন্য জামরুল খুবই উপকারী। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে এবং ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষায় জামরুল খুব ভালো কাজ করে থাকে। বাত নিরাময় এবং চোখের নিচের কালো দাগ দূর করতেও জামরুল গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে: জামরুলে আছে প্রচুর পরিমাণের ফাইবার যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও শরীরের দূষিত পদার্থ বর্জন এবং মেদ নিয়ন্ত্রণ করে।

ক্যানসার প্রতিরোধ করে: এই ফলটিতে আছে ভিটামিন সি ও ফ্লাবিনয়েড যা ক্যানসার ও হৃদরোগের ক্ষেত্রে কোষের ধ্বংস করতে সহায়তা করে। শরীরের দূষিত পদার্থ দূর করে জামরুলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।

রোগ প্রতিরোধে কাজ করে: দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে জামরুল বেশ কার্যকর। এই ফলটিতে আছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি। এছাড়াও জামরুল ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা সমাধানেও কাজ করে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: জামরুলে অ্যান্টিহাইপারগ্লিসেমিক নামক একটি উপাদান আছে যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

লিভার সুস্থ রাখে: জামরুল অত্যন্ত উপকারি একটি ফল যা লিভার ও মস্তিষ্কের সুরক্ষায় কাজ করে। এছাড়া হেপাটোপ্রটেক্টিভ নামক একটি উপাদান আছে যা লিভার কোষ ধ্বংস থেকে রক্ষা করে।

কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়: জামরুল বেশ উপকারি একটি ফল যা কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে। জামরুলে থাকা নিয়াসিন কোলেস্টেরল মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে।

[আরও পড়ুন: সোনালী কিউই (Golden Kiwi) গাছের পরিচর্যা এবং কিউ ফলের ১০টি উপকারিতা]

জলবায়ু (Climate):

উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু অঞ্চল জামরুল চাষের জন্য অধিক উপযোগী। অতি ঠান্ডা বা গরম উভয়ই জামরুল গাছের জন্য ক্ষতি কর।

মাটির ব্যবস্থাপনা :–

সুনিকাশিত উর্বর দোঁয়াশ মাটি জামরুল চাষের জন্য বেশি উপযোগী। তবে সব ধরনের মাটিতেই জামরুল চাষ করা যায়। জল জমে না এমন ধরনের উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি নির্বাচন করতে হবে জামরুল চাষের জন্য। চাষ দিয়ে অথবা কোদাল দিয়ে মাটি কুপিয়ে সমতল ও আগাছামুক্ত করতে হবে তার পরে চারা গাছ রোপন করতে হবে।

জমিতে রোপণ পদ্ধতি:

সমতল ভূমিতে বর্গাকারে বা ষড়ভূজী এবং পাহাড়ী এলাকায় কণ্টুর পদ্ধতিতে চারা/ কমল রোপণ করা হয়। এপ্রিল থেকে আগস্ট, সেপ্টেম্বর মধ্য জামরুলের চারা/ কলম রোপণ করবার উপযুক্ত সময়। তবে জমিতে জল সেচের সুবিধা থাকলে তীব্র গরমে জামরুলের চারা রোপণ করা যায়।

গর্ত তৈরী:

চার গাছ রোপণের ১৫ থেকে ২০ দিন আগে ৬ মিটার দূরত্বে ১ মিটার গভীর গর্ত করতে হবে। গর্তের ওপরের মাটির সাথে ১৫ থেকে ২০ কেজি জৈব সার, ২৫০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০ গ্রাম এমওপি ও ১০০ গ্রাম জিপসাম সার ভালভাবে মিশিয়ে গর্তটি ভরাট করে তাতে পানি দিতে হবে।

গর্তে চারা/ কলম রোপণ ও পরিচর্যা:

গর্তে সার প্রয়োগের ১০ থেকে ১৫ দিন পর নির্বাচিত কলম/চার গাছটি গর্তের মাঝখানে খাড়াভাবে রোপণ করে প্রয়োজন মতো জল, খুঁটি ও বেড়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

টবে প্রতিস্থাপন প্রদ্ধতি:

জামরুল গাছের জন‍্য দশ বা বারো ইঞ্চি টব ব‍্যবহারই উপযুক্ত। এই গাছের জন‍্য ভারী ধরণের মাটির প্রয়োজন। এর জন‍্য দরকার দু ভাগ গার্ডেন সয়েল(হাতের কাছে যে ধরণের মাটি আছে), একভাগ ভার্মিকম্পোস্ট বা একবছরের পুরোনো পচানো গোবর সার বা পাতাপচা সার,ও একভাগ কোকোপিট(মাটির ময়েশ্চার ধরে রাখার জন‍্য)।

জামরুল গাছের জন্য আলোর ব্যবস্থাপনা :–

জামরুল গাছের জন‍্য তীব্র রোদের প্রয়োজন। হালকা ছায়া বা সম্পূর্ন ছায়াযুক্ত জায়গায় গাছ প্রতিস্থাপন করলে প্রচুর পাতা আসবে কিন্তু কখনই ফল আসবে না। তাই পূর্ণ সূর্যালোকে, যেখানে আট ঘন্টা রোদ পায় এমন জায়গায় গাছটিকে প্রতিস্থাপন হবে।

জামরুল গাছের জন্য জলের ব্যবস্থাপনা :–

গ্রীষ্মের মরসুমে মাটি ময়েশ্চার রাখতে হবে। তাই জল এমনভাবে দিতে হবে যাতে মাটি স্যাঁতস্যাঁতে ভেজা না থাকে আবার মাটির ময়েশ্চার ও যেন সবসময় বজায় থাকে। গরমের মরসুমে টবের গাছে বা ড্রামের গাছে দু বেলা জল দিতে হবে।

জামরুল গাছের জন্য খাবারের ব্যবস্থাপনা :–

গাছ বসানোর এক মাস পরে গাছে প্রয়োজনীয় পরিমাণ মতো সার প্রয়োগ করতে হবে। গোবর ইউরিয়া , টিএসপি/ ডিএপি ,এমওপি উপযুক্ত পপরিমাণে ব্যবহার করতে হবে।

প্রতিবার সার দেয়ার পর প্রয়োজনে সেচ দিতে হবে। গাছ বসানোর এক মাস পর গাছের সব পাতা কেটে দিয়ে দশ/বারো ইঞ্চি টবের জন‍্য এক চা চামচ টিএসপি/ ডিএপি ও হাফ ড্রামের জন‍্য এক মুঠো টিএসপি/ ডিএপি চারিদিকে ছড়িয়ে জল ঢেলে দিতে হবে। এটা দশ ও বারো ইঞ্চি টবের জন‍্য এক মুঠো করে প্রতিমাসে একবার দিয়ে জল ঢেলে দিতে হবে।

যারা রাসায়নিক সার ব্যাবহার করবেন না তারা একমুঠো সরিষার গুঁড়ো খোল, একমুঠো গোবর সার, দু চা চামচ হাড়গুঁড়ো ও এক চা চামচ পটাশ ভালো করে মিশিয়ে টবের চারিদিকে দিয়ে জল দিয়ে দিতে হবে।

[আরও পড়ুন: Rosella Fruit | সুস্বাদু চুকাই ফলের চাষ প্রদ্ধতি]

বংশ বিস্তার:

গুটি কলম ও শাখা কলমের মাধ্যমে বংশ বিস্তার কারা যায়। সাধারণত ফল সংগ্রহের পর গাছে নতুন পাতা গজাতে শুরু করলে কলম করা উচিত। শাখা কলমের জন্য এক বছর বয়সী গাছ নির্বাচন করে মে-জুন মাসে কমল করতে হবে। শাখা কলমের জন্য বর্ষা মৌসুমে ৪ থেকে ৫টি পর্ব সহকারে ডাল কেটে বেডে বা পলিব্যাগে রাখাতে হবে। রোপণকৃত ডাল থেকে নতুন কুঁড়ি বের হলে তা পরবর্তী বছরে মূল জমিতে বা তৈরীকৃত মাদায় রোপণ করতে হবে।

ছাঁটাই:

বসন্তের প্রথম দিকে বা শীতের শেষের দিকে জল আপেল গাছ ছাঁটাই করার সেরা সময়। পরিপক্ক অবস্থায়, গাছটি 12 থেকে 15 মিটারের মধ্যে উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে। গাছ ছাঁটাই করা, তবে, উচ্চতা 4 থেকে 5 মিটারের মধ্যে সামঞ্জস্য করে একটি ভাল কাঠামো স্থাপন করতে পারে। এটি সুপারিশ করা হয় যে আপনি আপনার গাছগুলিকে বার্ষিকভাবে ছেঁটে ফেলুন ফসল কাটার পরে বা উৎপাদনের সময়কালের আগে তাদের পছন্দসই উচ্চতায় রাখতে।

আপনার মূল্যবান রেটিং দিয়ে উৎসাহিত করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *