অল্প যত্নে সারা বছর ধরে ফুল দেবে নয়নতারা গাছ

Last updated on July 2nd, 2024 at 05:19 pm

নয়নতারা ফুল গাছের যত্ন বা পরিচর্যা খুবই সহজ, আমাদের দেশের আবহাওায় এই গাছ সারা বছর প্রতিস্থাপন করা যায় এবং সারা বছর ধরে ফুল পাওয়া যায় । নয়নতারা বীরুৎ জাতীয়, ভেষজ ফুল গাছ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Catharanthus roseus। ভারতবর্ষ এবং বাংলাদেশে সর্বত্য নয়ন তারা ফুল গাছ দেখতে পাওয়া যায়। পাঁচ পাপড়ির বিশিষ্ট দেশি ফুল গাছে তিন প্রকার রঙের (গোলাপী, সাদা, হালকা গোলাপী) ফুল ফোটে। সারা বছর ধরে প্রচুর ফুল পেতে মাসে একবার জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে।

আজকের প্রতিবেদন থেকে আপনি নয়নতারা ফুল গাছের যত্ন সম্পর্কে জানবেন। কোন মাসে নয়নতারা গাছ প্রতিস্থাপান করা উচিত। কোন সময়ে গাছে সার প্রয়োগ করা উচিত? প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আজকের এই প্রতিবেদন।

অল্প যত্নে সারা বছর ধরে ফুল দেবে নয়নতারা গাছ

নয়নতারা গাছের আদি নিবাস মাদাগাস্কার তবে গাছগুলি ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফ্রিকা মহাদেশসহ আরও বেশ কয়েকটি দেশে দেখা যায়। নয়নতারা বর্ষজীবী হলেও বেশকয়েক বছর বেঁচে থাকতেও দেখা যায় এবং সারা বছর ধরেই ফুল ফোটে।

বৈশিষ্ট্য(Characteristics):-

নয়নতারা Apocynaceae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত সপুষ্পক উদ্ভিদের একটি প্রজাতি। গাছের উচ্চতায় প্রায় দুই থেকে তিন সেন্টি মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। পাতাগুলি গাঢ় সবুজ কিছুটা ডিম্বাকার ও লম্বাটে হয়। পাতার মধ্য শিরা মোটা ও উজ্জ্বল বর্ণের। ফুলগুলি গাছ ২ দিন সতেজ থাকে। একটি গাছে সারা বছর ধরে অসংখ্য ফুল ফোটে।

আদর্শ অবস্থান নির্বাচন করা:-

নয়নতারা গাছের স্বাস্থ্য এবং সঠিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য সঠিক স্থান নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নয়নতারা আংশিক ছায়া থেকে পূর্ণ সূর্যের আলো পায় তেমন স্থান নির্বাচন করতে হবে। জলাবদ্ধতা রোধ করতে উর্বর ভাল-নিষ্কাশিত মাটি প্রস্তুত করতে হবেন, কারণ অতিরিক্ত আর্দ্রতা শিকড় পচে যেতে পারে। উপরন্তু, নয়নতারা গাছগুলি সাধারণত বিভিন্ন ধরনের মাটি সহনশীল, তবে তারা ৬.০ থেকে ৭.৫ পর্যন্ত পিএইচ সহ নিরপেক্ষ মাটির থেকে সামান্য অম্লীয় মাটি পছন্দ করে।

মাটি প্রস্তুত ও জলবায়ু (Soil and climate):

গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলের যে কোনো মাটিতে নয়নতারা (Vinca) চাষ করা যায়, তবে দোঁয়াশ, বেলে-দোঁয়াশ মাটি নয়নতারা গাছের জন্য আদর্শ। গাছের গোড়ায় জল জমলে গাছ মারা যাবে। সুতরাং জল দাঁড়ায় না এমন উঁচু জায়গায় নয়নতারা গাছের চারা প্রতিস্থাপন করা উচিত।

নয়নতারা ফুল গাছের যত্ন

নয়নতারা ৫.০ এবং ৬.৫ এর মধ্যে pH সহ সামান্য অম্লীয় মাটি পছন্দ করে। মাটি বেশিক্ষারীয় হলে, আপনি pH কমাতে সালফার যোগ করতে পারেন।

নয়নতারা গাছ টবে প্রতিস্থাপন করলে ৫০% মাটি , জৈব বা কম্পোস্ট ৩০% এবং ২০% কোকো পিট সাথে হাঁফ মুঠো নিমখোল, হাঁফ মুঠো হাঁড়গুড়ো প্রভূতি মিশিয়ে মাটি প্রস্তুত করতে হবে।

মাটির মিশ্রণ তৈরি হলে টবের ছিদ্র গুলতে ইট বা খোরাম কুঁচি দিয়ে ভরাট করতে হবে। সেক্ষেত্রে টবটি উপরে ১ ইঞ্চি খালি রেখে মাটি ভরাট করতে হবে।

তারপর টবের মাঝ বরাবর রোপণ করে জলদিয়ে দিতে হবে। প্রথম তিন থেকে চার দিন টবগুলিকে ছায়া স্থানে রেখে দিতে হবে, পরবর্তীতে টবগুলি হালকা রোদ পায় এমন স্থানে রাখতে হবে।

টব নির্বাচন:

প্রতিটি সিঙ্গেল নয়নতারা গাছের জন্য সর্বনিম্ন ৮ ইঞ্চি সাইজের টব নির্বাচন করতে হবে। টব যত বড় হবে টবে তত বেশি পরিমাণ মাটি ধরবে এবং মাটি যত বেশি ধরবে গাছ তত বেশি খাবার পাবে ও শিকড় বৃদ্ধির যায়গা পাবে, সুতরাং টব যত বড় হবে গাছ ও ফুল তত ভালো হবে।

জল প্রয়োগ

গরমের মরসুম বাদে সর্বদা কম পরিমান জল দেওয়া উচিত। মাটির উপরের ১ থেকে ২ ইঞ্চি শুকিয়ে গেলে তবে জল দিন। শীতের সময়ে সাপ্তাহিক জল দেওয়া উচিত, তবে নিয়মিত বৃষ্টিপাত হলে মোটেও জল দেবেন না। গরমের সময়ে টবের গাছে সকাল, সন্ধা দুই বেলা জল দেওয়া প্রয়োজন।

সার প্রয়োগ:

নয়নতারা গাছে ভারী সার বাদে সব ধরনের সার দেওয়া যাবে, গাছের বয়স ৩০ থেকে ৪৫ দিন হলে তবেই সার প্রয়োগ করা যাবে তার আগে না। নয়নতারা গাছের জন্য জৈব সার আদর্শ জৈব সারের মধ্যে সরিষা খৈল, হাড়ের গুড়া , শিংকুঁচি , পাতা পচা সার, ভার্মি কম্পোষ্ট, গোবর সার অথবা তরল সার ব্যাবহার করা যেতে পারে ইত্যাদি। রাসায়নিক সারের ভেতর DAP, MOP, Uria, NPK,TSP ইত্যাদি ব্যাবহার করতে পারেন, তবে গরমের মরসুম বাদে। রাসায়নিক সার প্রয়োজনের চেয়ে বেশি দিলে গাছের ক্ষতি হবে। কোন সার কতটুকু কিভাবে ব্যাহার করতে হয় তা আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ এবং টেলিগ্রাম চ্যানেল এ পাবেন।

নয়নতারা ফুল গাছের যত্ন

ডাল ছাঁটাই:

অত্যধিক বেড়ে ওঠা ডালপালা ছেঁটে ফেলার জন্য ধারালো কাঁচি অথবা চাকু ব্যবহার করুন, তবে নয়নতারা গাছে ফুল শেষ হবার পরে ডাল ছাঁটাই করবেন। গাছের বয়স এক বছর হলে ছাঁটাই করার প্রয়োজন নেই, তবে ছোট বাগানের বিছানায় নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন হতে পারে।

কীটপতঙ্গ, রোগ এবং সাধারণ পরিচর্যা:

পাতায় বাদামী দাগ

বার্ষিক, ভিনকা অসংখ্য ছত্রাকজনিত রোগে আক্রান্ত হতে পারে, যেমন পাতার দাগ, বোট্রাইটিস ব্লাইট , এমনকি শিকড় পচা। এই ধরনের সমস্যা স্যাঁতসেঁতে এবং বায়ুপ্রবাহের অভাবের কারণে ঘটে। গাছপালা পাতলা করে-একটি পরিষ্কার, ধারালো বাগানের শিয়ার দিয়ে সমস্ত আক্রান্ত পাতা ছাঁটাই করে-এবং একটি ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করে এই সমস্যাটি সহজেই সমাধান করা যায়।

[আরও পড়ুন: গাছের শত্রু মিলিবাগের বংশ ধ্বংস | Control White Insects or Mealybug]

হলুদ, ঝরঝরে পাতা

যদি আপনার বার্ষিক ভিনকার পাতাগুলি হলুদ হয়ে যায় এবং শুকিয়ে যায় তবে সম্ভবত আপনার গাছটি খুব বেশি জল পাচ্ছে। মাটিতে আপনার আঙুল আটকে দিন: এটা কি ভিজে গেছে? হলুদ হয়ে যাওয়া, শুকনো পাতা অত্যধিক আর্দ্রতার লক্ষণ, যা প্রতিকার করা সহজ।

4/5 - (1 vote)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *