Last updated on November 22nd, 2023 at 07:09 pm
বাড়িতে বিশেষ যত্ন ছাড়ায় গাছ ভর্তি প্রচুর ফুল পেতে আপনি রসুন লতা বা গার্লিক ভাইন গাছটি বসাতে পারেন। এটি একটি লতানো গাছ, আসলে এটি ট্রপিক্যাল এলাকাতে ভালো হয়। গাছ টি লম্বাই ৩০ থেকে ৬০ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। গাছের কান্ড কাষ্ঠল লোমযুক্ত, ছাল ধুসরবর্ণ, কাঠ পীতাভ ধুসরবর্ণ এবং ঘন পাতায় সজ্জিত ১২ থেকে ১৮ ইঞ্চি লম্বা হয়। গাছটিতে বসন্তের শুরুতে বড় বড় থোকায় হালকা-বেগুনী বর্ণের ফুল ফোটে,ফুলের পাপড়ি ৫ টি, পুষ্পাধার ঘন্টার মত।
পাতার প্রতিমুখ দেখতে তির্যক আকৃতির। দ্বি বা ত্রি-পক্ষল, পত্রাক্ষ প্রায় ১.৫ সেমি লম্বা হয়। বৃন্ত ১.৫ সেমি লম্বা, পত্রক উপবৃত্তাকার,দীর্ঘায়ত বা দীর্ঘায়ত-উপবৃত্তাকার হতে পারে, ১৩ x ৭ সেমি, অখন্ড, প্রশস্ত দীর্ঘাত্র, মূলীয় অংশ প্রশস্ত স্কুল থেকে ক্রমশ সরু, চর্মবৎ, কখনও শীর্ষীয় পত্রক সরল আকর্ষীতে রূপান্তরিত ।
রসুন লতা (গার্লিক ভাইন) টবে বা মাটিতে পরিচর্যা | Garlic Vine Care
গছিটির প্রথম সন্ধান পাওয়া যায় উত্তর দক্ষিণ আমেরিকা ও এবং মধ্য আমেরিকা ও ব্রাজিলে। এই গাছের পাতা এবং পাপড়ি হাতে ঘসলে রসুনের মত গন্ধ বের হয় যার জন্য গাছটির নাম রসুন লতা। এটি অ্যাজো সাচা হিসাবে উল্লেখ করা হয়, একটি স্প্যানিশ-কেচুয়া শব্দ যার অর্থ “বন রসুন” বা “বন্য রসুন”, আমাজন জঙ্গলের মেস্টিজোসদের মধ্যে। গার্লিক ভাইন কলমের মাধ্যমে ও শিকড় থেকে সহজে চারাগাছ তৈরী করা যায়।
বৈজ্ঞনিক নাম: Mansoa alliacea
ইংরেজি নাম: Garlic Vine
স্থানীয় নাম: রসুন লতা, লতা-পারুল বা নীল-পারুল বা রসুন্ধি বা পারুল লতা
গাছটি পারুল লতা নামেও পরিচিত। এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন বাগানের মাচাতে অথবা বাড়ির ছাঁদে বা গাছ তুলে দেওয়া হয়। পারুল লতা ফুল যাই হোক এখনো দেখা নেই আসল পারুলের! বাংলাদেশে স্থানিয় নাম কামসোনালু, ভাতসিল প্রভৃতি এছাড়াও অন্যান্য স্থানে পারুল লতা, কামসোনালু, ভাতসিল, Garlic Vine,রসুন লতা নামে পরিচিত।
এটি Bignoniaceae পরিবারে গ্রীষ্মমন্ডলীয় লিয়ানার একটি প্রজাতিকে বলা হয় মানসোয়া অ্যালিয়াসিয়া। গাছটির বিজ্ঞানসম্মত নাম Mansoa alliacea, মাদাগাস্কার, আফ্রিকা, আরব, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ এবং ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থানে এই প্রজাতির গাছগুলি দেখতে পাওয়া যায়। গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং আর্দ্র আবহাওয়া এই গাছের জন্য অনুকূল ।
স্থান নির্বাচন:
গাছটিকে মোটামুটি দিনে ৪ থেকে ৬ ঘটা রৌদ পাই তেমন স্থান নির্বাচন করা উচিত, এতে গাছের বাড়বাড়ন্ত ভালো হয় এবং রোগে আক্রান্ত কম হয়। গাছ টবে বসানোর ৭-৮ মাস পরেই ফুল আসা শুরু হয়।
টব নির্বাচন ও মাটি প্রস্তুত:
গাছটি টবের তুলনায় মাটিতে খুব ভালো হয় এবং বড় হওয়ার জন্য প্রচুর পরিমাণে খাদ্যের প্রয়োজন হয়। তাই এই গাছটি প্রতিস্থাপনের পূর্বে মাটিতে বেশি পরিমানে জৈব সার, শিং কুঁচি, হাঁড় গুড়ো এবং পরিমাণ মতো নিম খোল দ্বারা মাটি প্রস্তুত করে গাছটি প্রতিস্থাপন করতে হবে । টবে প্রতিস্থাপন করলে মাটির ময়েশ্চার ধরে রাখার জন্য ব্যবহার করতে হবে কোকোপিট অথবা কাঠের গুঁড়ো এবং এর সাথে নিতে হবে একভাগ লাল বালি। টবে প্রতিস্থাপন করলে ১০ ইঞ্চি অথবা ১২ ইঞ্চি টব নির্বাচন করতে হবে।
গাছ টবে প্রতিস্থাপনের পূর্বে দেখ নিতে হবে টবে কোন ছিদ্র আছে কি না! ছিদ্র না থাকলে কোন কিছুর দ্বারা টবের নীচে একটি এবং সাইডে ২ থেকে ৩ টি ছিদ্র করে নিতে হবে।
আলো :
রসুন লতা গাছ যেহেতু রৌদ খুব ভালোবাসে তাই জানুয়ারী মাস থেকে সরাসরি সূর্যের আলো পাই তেমন স্থানে টবটি রাখতে হবে, তা হলে বসন্তের মরসুমে গাছ ভর্তি প্রচুর ফুল পাওয়া যাবে। ব্যালকনিতে ও করা যায় তবে যে স্থানে আলো আসে সেখানে গাছটি রাখতে হবে। এতে যতটুকু রোদ পাবে তাতেই গাছটি সুন্দর ভাবে বেড়ে উঠতে পারবে। রসুন লতা গাছের জন্য উপযুক্ত তাপমাত্রা ২২ থেকে ৩৫।
আর্দ্রতা:
মাঝারি আর্দ্রতা এবং উচ্চ আর্দ্রতা যুক্ত স্থানে গাছটি সব থেকে ভাল বাড়ে।
জল :
গরমকালে এই গাছে জলের চাহিদা ভীষনভাবে থাকে, কারণ ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এই গাছে ফুল ফোঁটা শুরু হয়, তাই গরমের মরসুমে গাছের গোড়া সর্বদা ভেঁজা রাখতে হবে। শুধু লক্ষ্য রাখতে হবে বর্ষাকালে গাছের গোড়ায় যেন জল না জমে। শীতকালে গাছে খুব বেশি জলের প্রায়াজন হয় না। বর্ষাকালে গাছটিকে একটু সাবধানে রাখবেন ।
সার প্রয়োগ:
গাছে ২০ দিন অন্তর অন্তর সরষের খোল পচা জল এবং সাথে DAP দিয়ে যেতে হবে। এই গাছটিতে february মাস থেকে ফুল ফোঁটা শুরু হয়, তবে নভেম্বর থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত কোন রকম ফুল হয় না। তাই এই সময়টা গাছকে কোন রকম খাবার দেওয়ার প্রয়োজন নেই। january মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে প্রতিমাসে অন্তত দুবার করে গাছে খাবার দিতে হবে। এছাড়াও বছরে দু থেকে তিনবার পরিমানে জৈব সার, হাঁড় গুড়ো, শিং কুঁচি এবং পরিমাণ মতো নিম খোল গাছের গোড়ায় দিতে হবে। অন্যান্য গাছের মতো এই গাছেও মাসে দুবার করে নিম তেল স্প্রে করতে হবে। এতে পোকামাকড়ের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। গাছ টবে থাকলে বর্ষাকালে গাছটি সেডের নিচে রাখবার ব্যাবস্থা করতে হবে।
[আরও পড়ুন: লন্ঠন জবা গাছের পরিচর্যা | How to grow and care Lanthan jaba ??]
রসুন লতার (Garlic Vine) রক্ষণাবেক্ষণ:
সুনিষ্কাশিত বেঁলে- দোঁয়াশ মাটিতে গাছের বৃদ্ধি বা রসুন লতার যত্ন নেওয়া সবচেয়ে সহজ করে তোলে। এই উদ্ভিদ সঙ্গে, জল উপর skimp না. শিকড় ঠাণ্ডা ও ভেজা রাখতে গোড়ায় মালচ হিসেবে কম্পোস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। পূর্ণ রোদ থেকে আংশিক ছায়া স্থানে গাছটি বেড়ে উড়তে পারে, তবে অধিক ফুল পেতে গাছটিকে পূর্ণ রোদে রাখতে হবে। এটি ভাল নিষ্কাশন এবং মাঝারি জলের সাথে মাটিতে বৃদ্ধি পায়। জল দেওয়া পুঙ্খানুপুঙ্খ এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া প্রয়োজন। গরম, শুষ্ক ঋতুতে দিনে দুবার জল দেওয়ার প্রয়োজন। প্রতিটি ফুলের মরসুমের পরে, গাছটি কাঁটাই-ছাঁটাই করতে হবে। কাটার কয়েকদিন পর নতুন পাতা গজাতে শুরু করবে।
[আরও পড়ুন: জারবেরা গাছের সম্পূর্ণ পরিচর্যা ]
প্রিয় পাঠক, এই প্রতিবেদনটি পঠন করবার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার মতো পাঠকের সহযোগিতা “ক্রিয়েটিভিটি গার্ডেনিং” সর্বদা কার্ম করে। গাছই আমাদের একমাত্র সম্পদ যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষিত করতে পারে, বাঁচিয়ে রাখতে পারে। নিঃস্বার্থে গাছ ভালবাসুন, সকলকে গাছ লাগাতে উৎসাহিত করুন।
আপনাদের যদি এই বিষয়ে কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সের মাধ্যমে আমাকে জানাতে জানাবেন। সেগুলোর সমাধান করাবার আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব। আপনার মূল্যবান রেটিং দিয়ে উৎসাহিত করুন, সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, সবাই খুব ভালো থেকো নমস্কার।