বাড়ির টবে হলুদ গন্ধরাজ ফুল গাছের সম্পূর্ণ পরিচর্যা | How To Care For Golden Gardenia Flower In Pots

সুগন্ধি ফুলের মধ্যে অন্যতম সেরা ফুল গন্ধরাজ। এর মৃদুমন্দ সুমিষ্ট গন্ধের জন্য এই ফুলের কদর এত বেশি, এটি পুজোর নৈবেদ্য থেকে শুরু করে অনুষ্ঠান বাড়ি সাজানোর কাজেও ব্যববহৃত হয়ে থাকে। বাজারে সুগন্ধি ফুলের মধ্য বেলি, জুঁই, গন্ধরাজের চাহিদা থাকায়, এই ফুল চাষ করে চাষিরা ভালো আয়ের সন্ধান পাচ্ছেন।

এই প্রতিবেদন থেকে বাড়ির টবে হলুদ গন্ধরাজ ফুল গাছের সম্পূর্ণ পরিচর্যা | How To Care For Golden Gardenia Flower In Pots সম্পর্কে সম্পূর্ণ বিবরণ দেওয়া হলো। গন্ধরাজ আমাদের কাছে খুবই পরিচিত একটা ফুল, যদিও এর আদি নিবাস হল চীন ও জাপান। গন্ধরাজের বৈজ্ঞানিক নাম Gardenia jasminoides, এটি রুবিয়েসি পরিবারের অন্তর্গত, গণ গার্ডেনিয়া (Gardenia) এবং প্রজাতি G. jasminoides অন্তর্ভূক্ত একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ। আমেরিকান প্রকৃতিবিদ ড: আলেকজেন্ডার গার্ডেন এর নাম অনুসারে এই গাছের ইংরেজি নামকরণ করা হয়েছে। এই ফুলের ইংরাজি নাম Yellow Gardenia, Cape jasmine।

বাড়ির টবে হলুদ গন্ধরাজ ফুল গাছের সম্পূর্ণ পরিচর্যা | How To Care For Golden Gardenia Flower In Pots

এই গাছের পরিচর্যা এবং বংশবৃদ্ধির কৌশল অত‍্যন্ত সহজ। পরিপক্ক ডাল কেটে পুঁতে দিলেই চারা তৈরী যায়। চারা গাছ তৈরী হওয়ার দু একবছর পরই দিব‍্যি ফুল ধরতে শুরু করে। এভাবেই গাছটির বিস্তার ঘটে সব জায়গায়। এ ফুলের সুমিষ্ট গন্ধ একেবারেই স্বতন্ত্র। গ্রীষ্মের মরসুমে এই গন্ধরাজ ফুল গাছে ভরে যায়, তবে শীতের আগে থেকেই এই গাছের পরিচর্যা করতে পারলে সারা গরমকাল ধরে গাছে ফুল পাওয়া যায়। গ্রীষ্মের রাতের অন্ধকারে গন্ধের তীব্রতা আরো বেড়ে যায়। সহজলভ‍্য,পুষ্পপ্রাচুর্য‍্য এবং অনেকদিন ধরে গন্ধ ছড়ানো কারণে গন্ধরাজ ফুল গ্রামে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। গাছটি গঠন বিন‍্যাস ও ফুলের সুগন্ধের জন‍্য সব জায়গাতেই সমাদৃত। সঠিক পদ্ধতিতে যদি পরিচর্যা করা যায় তাহলে বাড়িতেই হলুদ গন্ধরাজের চাষ করা সম্ভব। বাড়িতে টবে কি ভাবে হলুদ গন্ধরাজ ফুল চাষ করতে হয় সেই সম্পর্কে সম্পূর্ণ বিবরণ দেওয়া হলো।

বাড়ির টবে হলুদ গন্ধরাজ ফুল গাছের সম্পূর্ণ পরিচর্যা | How To Care For Golden Gardenia Flower In Pots

বৈশিষ্ট‍্য :–

হলুদ গন্ধরাজের প্রধান বৈশিষ্ট‍্য এর একটি ফুলের মধ্যে তিনটি রঙ পরিবর্তন লক্ষ‍্য করা যায়। এই গন্ধরাজ ফুল যখন সন্ধ‍্যায় ফোটার সেই সময় সাদা বর্ণের হয়, সকালে হলুদ ও বিকালে গেরুয়া বর্ণের রঙ ধারণ করে। সাদা গন্ধরাজ ফুল শুকিয়ে যাওয়ার পর ও এর সুগন্ধ থেকে যায় অনেকদিন। হলুদ গন্ধরাজ ও সাদা গন্ধরাজের মতো অত‍্যন্ত সুগন্ধযুক্ত, প্রচুর পরিমানে ফোটে তবে সাদা গন্ধরাজের মতো এই গন্ধরাজের কুঁড়ি ঝরে যাওয়ার কোন সমস‍্যা দেখা যায় না।

হলুদ গন্ধরাজ গুল্ম জাতীয় বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। উচ্চতায় ১০-১২ ফুট উঁচু হতে দেখা যায়। পাতাগুলো লম্বা ও চকচকে সবুজ বর্নের। ফুলে বহু পাপড়ি হয়।

স্থান নির্বাচন:-

দিনে মোটামুটি ৬ থেকে ৮ ঘটা রৌদ পাই তেমন স্থানে গাছটি প্রতিস্থাপন করা উচিত, এতে গাছের বাড়বাড়ন্ত ভালো হয় এবং রোগে আক্রান্ত কম হয়। হলুদ গন্ধরাজের জন্য ঢালু অথবা সুনিষ্কাশিত মাটি তৈরী করতে হবে। যে কোনও মাটিতেই গন্ধরাজ গাছ জন্মায়, তবে দোঁয়াশ ও বেলে মাটিতে গন্ধরাজ গাছ ভাল হয়।

টব নির্বাচন :–

গন্ধরাজ গাছের জন্য বড় টব বাছাই করা ভীষন জরুরী। ১২ ইঞ্চি বা তার থেকে বড় টব নির্বাচন করলে ভাল হয়। এই গাছ রোদ ভীষণ ভালবাসে তাই বসন্তের শুরুতে গাছ প্রতিস্থাপন করুন এবং কড়া রোদ এই গাছকে দিন।

মাটি প্রস্তুত:-

হলুদ গন্ধরাজ গাছের জন্য সুনিষ্কাশিত মাটি তৈরী করতে হবে। মাটির জল নিষ্কাশন ব্যাবস্থা যদি ভাল না হয় তাহলে নার্সারি থেকে চারা সংগ্রহ করে প্রতিস্থাপনের কিছু দিন পারে গাছটি মাড়া যাবে। এই গাছের জন্য বেলে দোঁয়াশ মাটি একদম আদর্শ, ভারীমাটি অর্থাৎ কাঁদামাটি বা যে মাটিতে কাদার ভাগ বেশি তেমন মাটিতে প্রতিস্থাপন না করাই ভাল। কারণ ভারীমাটিতে গাছ মড়ার প্রবনতা বেশি থাকে।

দুভাগ দোঁয়াশ মাটির সাথে একভাগ একবছরের বা তারও বেশি পুরনো পচানো গোরব সার, অথবা ভার্মিকম্পোস্ট, বা পাতাপচা সার নিতে হবে, তার সঙ্গে একভাগ কোকোপিট সাথে হাঁফমুঠো হাড়গুড়ো, হাঁফমুঠো সিংকুচি এবং দু চামচ নিমখোল মিশিয়ে মাটি তৈরি করতে হবে।

প্রতিস্থাপনের দেড় থেকে দুবছর পরে গাছটিকে আবার রিপট করার প্রোয়জন হয়। শীতের এবং বর্ষার মাঝামাঝি সময়ে ডালগুলি বেশি বড় হলে কাঁটাই- ছাঁটাই সম্পূর্ণ করে ফেলতে হবে এবং রিপট করতে হবে। গন্ধরাজ গাছের মাটি তৈরির ক্ষেত্রে কোকোপিট খুব ভালো ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে। এই গাছটি হালকা ভেজা মাটি পছন্দ করে আর কোকোপিট সবথেকে ভালো, মাটির আর্দতা ধরে রাখতে সাহায্য করে I

গাছটি প্রতিস্থাপন হয়ে গেলে ৪ থেকে ৫ দিনের জন্য টবটি ছায়া স্থানে রেখে দিতে হবে। ৫ থেকে ৬দিন পর সকালের হালকা রোদে পায় তেমন স্থানে টবটি রাখতে হবে। তবে বর্ষাকালে প্রতিস্থাপন করলে ছায়া স্থানে রাখবার প্রয়োজন নেই।

[আরও পড়ুন: Micro Nutrients বা অনুখাদ্য গাছের জন্য কতটা প্রয়োজনীয়]

আলোর ব্যবস্থাপনা :–

বসন্ত থেকে টানা বর্ষাকাল পর্যন্ত ফুল দেয় এই গাছ। এই গাছ রোদ খুব ভালোবাসে। তাই দিনে ৬ থেকে ৮ ঘটা সূর্যের আলো পাই তেমন স্থানে গাছটি রাখতে হবে। তাহলে গাছে ফুলের পরিমানে বৃদ্ধি পাবে, চাইলে এই গাছটা সরাসরি রোদ পাই তেমন স্থানে প্রতিস্থাপন করতে পারেন। তবে তীব্র গরমে টবের গাছ হাল্কা ছায়ায় স্থানে রাখতে হবে।

জলের ব্যবস্থাপনা :–

এই গাছ ময়েশ্চার পছন্দ করে। তাই এমনভাবে জল দিতে হবে যাতে সবসময় মাটির ময়েশ্চার বজায় থাকে। মাটি যেন কখনই ভিজে চুপচুপে না হয়ে থাকে। নয়ত অতিরিক্ত জল বসে গাছ মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মাসে দুবার মাটি খুঁচিয়ে দিতে হবে। মাটি যদি কোনো কারণে স্যাঁতস্যাঁতে হয়, তাহলে কলি ঝরে যাবে, পাতা ঝরে যাবে।

খাবারের ব্যবস্থাপনা :–

প্রতিস্থাপনের দেড় দুমাস পর থেকে, প্রত‍্যেক মাসে বা কুড়িদিন অন্তর খোলপচা জল ও সাথে এক চামচ ফসফেট দিতে হবে প্রথম তিনমাস। কিছু মাস পার থেকে NPK- ১৯:১৯:১৯ সার এক চামচ গোড়ার থেকে দূরে টবের ধারে মাটিতে দিয়ে দিতে পারেন। ফুলের মরসুমে ডি.এ.পি/ টি. এস.পি সার ব্যাবহারের ১৫ থেকে ২০ দিন পরে এক চামচ পটাশ ব্যাবহার করবেন। রাসায়নিক সার ব্যাবহারের ১৫ থেকে ২০ দিন পর যে কোন কম্পোস্ট সার মাটিতে দেওয়া যেতে পারে। রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার ব্যাবহারেও ভাল ফল পাওয়া যায়। প্রতি ৪০ থেকে ৪৫দিন অন্তর ২ মুটো গোবর সার, হাফ চামচ সরিষার খোল,২ চামচ হাড়গুড়ো ২ চামচ শিংকুঁচির সাথে ১ চামচ অনুখাদ্য বা Micronutrients ব্যাবহার করতে হবে। মনে রাখবেন, অতিরিক্ত রাসায়নিক সার গাছের জন্য বিপদজনক।

[আরও পড়ুন: গাছ ভর্তি প্রচুর ফুল পেতে কামিনী গাছের বিশেষ পরিচর্যা | Kamini Flower]

ডাল ছাঁটাই:-

একটি সতেজ গাছ তৈরির প্রক্রিয়াটি হল গাছটি বড় হলে ডগাটি ছেটে দিতে হবে। এরপর কয়েকদিন পর কান্ডের পাশ থেকে শাখা বের হবে, তাদের মধ্যে কয়েকটি শাখা রেখে বাকীগুলি ছিড়ে ফেলুন। এরপর গাছের গোড়ায় মাটি দিন। সতেজ গাছ রাখতে হলে একটি সোজা শাখা ও ৪-৫ টি পার্শ্ব শাখা রাখতে হবে। বেশী ফুল পেতে হলে গাছের আগা ভেঙ্গে দিন। এতে ঝাকড়ানো গাছ হবে। বছরে একবার ডাল ছাঁটতে হবে। শুধু তাই নয়। বছরে একবার শিকর ছাঁটতে হবে।

প্রয়োজনীয় কীটনাশক:-

এই গাছে তেমন একটা রোগপোকার আক্রমণ দেখা যায় না। তবে গাছের গোড়ায় ক্রমাগত জল জমলে গাছ মারা যেতে পারে। তেমন হলে প্রতি 7 দিন অন্তর অন্তর বাগানের অন্যান্য সমস্ত গাছের জন্য যে কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক আমরা ব্যবহার করে থাকি তা অন্য গাছগুলোকে স্প্রে করার সময় রুটিনমাফিক এই গাছে স্প্রে করলে কখনোই রোগ ও পোকার আক্রমণ হবে না, বর্ষাকালে কিছু পরিমান ছত্রাকনাশক গাছের গোড়ায় ছিটিয়ে দেবেন।

FAQ [Frequently Asked Questions]

হলুদ গন্ধরাজ ফুলকে ইংরেজিতে কী বলা হয় ?

ইংরেজিতে হলুদ গন্ধরাজ ফুলকে বলা হয় Yellow Gardenia, Cape jasmine। ​​। এর বৈজ্ঞানিক নাম হল গার্ডেনিয়া জাসমিনিড (Gardenia jasminoides)।

কিভাবে আপনি গন্ধরাজ গাছের পরিচর্যা করবেন ?

গাছটি সরাসরি সূর্যের আলো এবং হালকা ছায়া দু ভাবেই বেড়ে ওঠে, যদিও এটি আর্দ্র এবং শীতল আবহাওয়াতে অথবা সরাসরি সূর্যের আলোও সহ্য করতে পারে। সকালের হালকা রৌদ এবং বিকেলের হালকা রৌদ পছন্দ করে এই গাছটি। এই গার্ডেনিয়া ধারাবাহিক ভাবে আর্দ্র, অম্লীয়, জৈবভাবে সমৃদ্ধ সুনিষ্কাশিত মাটিতে সবচেয়ে ভাল হয়।

হলুদ গন্ধরাজ একবর্ষজীবী না বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ ?

হলুদ গন্ধরাজ (Golden Gardenia) হল একটি বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ যা আপনি কাটিং থেকে সহজেই চারা গাছ তৈরী করতে পারবেন। এটি গাছটি তার ফুলের আকৃতি এবং সুগন্ধের জন্য জনপ্রিয়, এটি তার সহজ-বর্ধনশীল প্রকৃতির জন্য।

আপনার মূল্যবান রেটিং দিয়ে উৎসাহিত করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *