কালো হলুদ চাষ পদ্ধতি | বীজ বপনের সময় এবং কীটনাশক প্রয়োগের নিয়ম

কালো হলুদের চাষ কৃষকদের জন্য একটি লাভজনক ঔষধী ফসল হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে। কালো হলুদ বহু ঔষধি গুণের অধিকারী, কালো হলুদ অনেক রোগের নিরাময়, রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে, প্রসাধনী সামগ্রী প্রস্তুত করতে ব্যাবহৃত হয়। পাশাপাশি এটি মশলা হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। বহু প্রাচীন কাল থেকে ভারতীয় রান্নায় স্বাদ এবং রঙ আনতে এই হলুদ ব্যাবহৃত হয়ে আসছে। গুঁড়ো হলুদের তুলনায় কাঁচা হলুদের গুনাগুন আরও অনেক বেশি।

আজকের প্রতিবেদন থেকে আপনারা কালো হলুদ চাষ এবং তার পরিচর্যা সম্পর্কে তথ্য জানতে পারবেন। বর্তমানে কৃষকরা আধুনিক পদ্ধতিতে মশলা জাতীয় ফসল যেমন কালো হলুদ চাষ, একাঙ্গী চাষ, গোলমরিচ চাষ, ধনিয়া চাষ, গোলমরিচ চাষ, অশ্বগন্ধা এবং ব্রোকলি প্রভৃতি চাষ করে অধিক মুনাফা অর্জন করছেন। কালো হলুদের ঔষধি গুণ, প্রসাধনী সামগ্রী প্রস্তুত এবং আরো অনেক গুণাগুণের কারনে এর বাজার চাহিদা রয়েছে প্রচুর।

কালো হলুদ চাষ পদ্ধতি | বীজ বপনের সময় এবং কীটনাশক প্রয়োগের নিয়ম

লাভজনক কালো হলুদ চাষ পদ্ধতি:

কালো হলুদের ফসল প্রস্তুত হতে প্রায় ৯ মাস সময় লাগে। এতে অনেক অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান রয়েছে। উদ্ভিদের উচ্চতা এক থেকে দেড় সেন্টিমিটার। যদি আপনি কালো হলুদ চাষ করতে চান, তাহলে এখান থেকে তথ্য নিন।

ঔষধি গুণের ভরপুর এমনই একটি হলুদের প্রজাতি কালো হলুদ। এই হলুদের বৈজ্ঞানিক নাম Curcuma caesia ( কিরকামাকেশিয়া), এটি Zingiberaceae পরিবারের অন্তর্গত।কালো হলুদ একটি দীর্ঘ-মূলযুক্ত চিরহরিৎ উদ্ভিদ, যার উচ্চতা প্রায় ৪০-৫০ ইঞ্চি। গাছের মূল স্বাভাবিক রঙের হলেও কালো হলুদের ভেতরের অংশ কালচে নীল রঙের। কালো হলুদের ফসল প্রায় ৯ মাসে পূর্ণতা লাভ করে এবং বাজারে প্রতি কেজির দাম ₹ ৫০০ থেকে ₹ ৪০০ পর্যন্ত বিক্রি হয়।

কালো হলুদ চাষ পদ্ধতি

তাই আসুন কালো হলুদ চাষ সম্বন্ধে সব কিছু জেনে নেওয়া যাক, কোন মাসে কালো হলুদ রোপন করতে হয়, কিভাবে জমি প্রস্তুত করতে হবে, পরিচর্যা কেমন প্রয়োজন প্রভৃতি। কালো হলুদের চাষ রান্নাতে দেওয়া হলুদের মতো। এটি দোঁয়াশ মাটিতে ভাল জন্মায়।

কালো হলুদ চাষ কোথায় হয়:

কালো হলুদ উত্তর-পূর্ব এবং মধ্য ভারতের বিস্তৃর্ণ অঞ্চলে চাষ করা হয়, অন্বপ্রদেশ, আসাম, জলপাইগুড়ি অঞ্চলে কালো হলুদের চাষ বেশি। বাংলাদেশের বেশ কিছু অঞ্চলে চাষ আবাদ শুরু হয়েছে। উত্তর দিনাজপুরের কৃষি দফতরে কালো হলুদেব চাষ শুরু হয়েছে, এছাড়াও কালিয়াগঞ্জের সিএডিসিতে পরীক্ষামূলক ভাবে এই কালো হলুদের চাষ শুরু হয়েছে। নদিয়ার মোহনপুর বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (BCKV) এই কালো হলুদের চাষ শুরু হয়েছে।

কালো হলুদ চাষের উপযুক্ত স্থান:

কালো হলুদের জন্য উঁচু অথবা ঢালু জমি একদম আদর্শ। পূর্ন সূর্যের আলো সহ আংশিক ছায়াযুক্ত স্থানে কালো হলুদ রোপন করা আদর্শ, যেখনে মাটি সর্বদা আদ্র থাকবে অথচ জমিতে জল জমবে না। কালো হলুদ চাষের জন্য প্রথমিক অবস্থায় জমিতে প্রচুর খাবার প্রয়োগ করতে হবে।

মে-জুন মাসে এর চাষের জন্য উত্তম মনে করা হয়, কারণ এর সময়ে বৃষ্টিপাত হয় না ফলে, ফসল নষ্ট হবার সম্ভবনা থাকে না। কালো হলুদে বেশি সেচের প্রয়োজন নেই, কালো হলুদের চাষ খুব বেশি ব্যয়বহুল নয়, এটিতে ঔষধি গুণাগুণ থাকায় সহজে কীটপতঙ্গ দ্বারা প্রভাবিত হয় না, তাই এটিতে কীটনাশক স্প্রে করার প্রয়োজন নেই।

কালো হলুদ চাষের মাটি (Soil):

প্রায় সব ধরণের মাটিতে কালো হলুদ চাষ করা গেলেও উর্বর দোঁয়াশ বা বেলে দোঁয়া মাটি উত্তম। যে কোন ফলের বাগান যেমন পেয়ারা, লিচু, আম প্রভৃতি চাষের শুরুতে সাথী ফসল হিসেবে কালো হলুদে চাষ করা যেতে পারে। পূর্ন সূর্যের আলো পায় তেমন স্থানের তুলনায় অর্ধেক ছায়া অর্ধেক আলো এমন স্থানে চাষ করালে ভালো ফল পাওয়া যাবে।

কন্দ রোপনের পূর্বে হেক্টর প্রতি ১০ থেকে ১৫ টন গোবর সার ছিটিয়ে প্রথম সেচ দিয়ে দিতে হবে। মাটিতে জো আসার পর দ্বিতীয় বার বিঘা প্রতি দুই বস্তা ফসফেট এবং এক বস্তা NPK ১০.২৬.২৬ (পরশ) এবং ৩০ কেজি চুন দিয়ে আড়াআড়ি চাষ দিতে হবে।

তৃতীয় চাষের পূর্বে আগাছা পরিষ্কার করে নিতে হবে। মাটিবাহিত রোগ থেকে ফসলকে রক্ষা করবার জন্য শেষ চাষের আগে ব্যাকটেরিয়া নাশক সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স এবং কার্বোমিন দানা দিয়ে চাষ দিতে হবে। জমি জো হলে কালো হলুদ ভেঙে ঠুকরো ঠুকরো করে মাটির দুই ইঞ্চি গভীরে প্রতিস্থাপন করতে হবে।

কালো হলুদের কন্দ বসানোর সময়:

ফাল্গুন-চৈত্র মাসে হলুদ তোলার পরে কন্দ লাগানোর উপযুক্ত সময় জোষ্ঠ- আষাঢ়। সাধারণত, ১৫ থেকে ২০ গ্রাম ওজনের ১-২টি ঝুঁড়ি বিশিষ্ট কন্দ মাটির ২ থেকে ৩ হঞ্চি গভীরে প্রতিস্থাপন করতে হবে। ৫০ সেন্টিমিটার দূরে লম্বা সারি করে ২৫ সেন্টিমিটার দূরে দূরে কন্দ লাগাতে হয়। প্রতি বিঘাতে এক থেকে দেড়কুইন্টাল (১০০-১৫০ কেজি) কন্দ প্রয়োজন। প্রতিস্থাপনের পূর্বে অবশ্যই কন্দ শোধন করে শুকিয়ে নেওয়া উচিত।

কন্দ প্রতিস্থাপনের ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে অঙ্কুরিত হয়। আরও একটি বিষয় উল্লেখ্য যে, গাছের বয়স ৬৫ দিন পার হলে পূনরায় জৈব সার যোগ করুন।

ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কালো হলুদের অবস্থান

কালো হলুদে রাইজোমে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সাধারন হলুদের চেয়ে কালো হলুদে ঔষধি গুণ রয়েছে অনেক বেশি। কালো হলুদে থাকা কারকিউমিন এবংএর নীলচে কালো রঙ ক্যান্সার কোষগুলির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।এটি ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করে, যা ক্যান্সার রোগ নিরাময় করে।এটি রান্না বাদেও পাইলস, লিভার পরিষ্কার, শ্বাসযন্ত্রের রোগ নিরাময়, হাঁপানি এবং টিউমারের প্রতিশেধিক হিসাবে ব্যাবহাত হয়।

আরো দেখুন লাভজনক অর্থকারী ফসলের চাষ

[ আরো দেখুন: লাভজনক একাঙ্গী চাষ পদ্ধতি, বিঘায় আয় দেড় লাখ টাকা ]

[ আরো দেখুন: জাফরান চাষ করে লক্ষ লক্ষ উপার্জন করতে পারবেন আপনিও ]

কালো হলুদের গুনাগুন:

কালো হলুদ চাষ করে যেমন অনেক অর্থ উপার্যন করা যায়। তেমনি এর মধ্য আছে অনেক ঔষধি গুণ,এর রাইজোমে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। রান্নাতে ব্যাবহৃত হলুদের ঔষধিগুণ সম্পর্কে আপনারা সবাই অবগত আছেন কিন্তু সাধারন হলুদের চেয়ে কালো হলুদে ঔষধি গুণ রয়েছে অনেক বেশি।কালো হলুদ মস্তিষ্ক ও হার্টের জন্য টোনার হিসেবে কাজ করে। এটি পাইলস, লিভার পরিষ্কার, শ্বাসযন্ত্রের রোগ, হাঁপানি এবং টিউমারের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি অনেক রোগের জন্য উপকারী, এর গুণাগুণের কারণে এটি অনেক রোগকে ধ্বংস করে, যার কারণে রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে না, করোনার সময়ে ফুসফুস সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, কালো হলুদ ফুসফুসকে সুস্থ রাখার জন্য একটি মহৌষধ, কারণ কালো হলুদে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বর্তমান। এতে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণাগুণ, এর ক্রমাগত সেবন সর্দি, কাশি এবং শ্বাস-প্রশ্বাস সংক্রান্ত যাবতীয় সমস্যা থেকে দূরে রাখে। মাইগ্রেন যাঁর হয় তিনিই কেবল প্রকাশ করতে পারেন। এতে মাথার যে কোনো একটি অংশে ব্যথা হয়। অসহ্য যন্ত্রণা হয়,এমন অবস্থায় কালো হলুদের পেস্ট কপালে লাগালে এই ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, শুনলে অবাক হবেন কালো হলুদেও রয়েছে অ্যান্টি-অ্যান্টি। ক্যান্সারের গুণাগুণ, এটি ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করে, যা ক্যান্সার রোগ নিরাময় করে। সেই সঙ্গে অনেক মহিলাই পিরিয়ডের সময় পেটে বা পিঠে প্রচণ্ড ব্যথায় ভোগেন, এমন পরিস্থিতিতে এক গ্লাস গরম দুধে এক চামচ কালো হলুদ মিশিয়ে খাওয়ালে তারা এ থেকে আরাম পায়। আপনি যদি এই সমস্ত রোগে ভুগছেন তবে অবশ্যই কালো হলুদ খান, আপনি অবশ্যই এর অলৌকিক গুণাবলীর উপকার পাবেন।এই হলুদ লিভার পরিষ্কার করে।

কালো হলুদ চাষের কত দিন পর ফসল তোলা যায়?

কন্দ রোপণ করবার পর নির্দিষ্ট সময় অন্তর জমির আলাছা পরিষ্কার করতে হবে। কন্দ রোপণের প্রায় ২৫০ দিন পরে ফসল তোলার জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়।

এক বিঘা জমিতে কত পরিমান কালো হলুদ পাওয়া যায়?

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এক বিঘা জমি থেকে প্রায় ১২ থেকে ১৫ কুইন্টাল কালো হলুদ পাওয়া যায়। বর্তমান সময়ে চাহিদা থাকায় এই হলুদ প্রতি কেজিতে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্তও বিক্রি হয়।

কালো হলুদ কোন ক্ষেত্রে ব্যাবহার হয় ?

কালো হলুদে রাইজোমে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সাধারন হলুদের চেয়ে কালো হলুদে ঔষধি গুণ রয়েছে অনেক বেশি।এটি ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করে, যা ক্যান্সার রোগ নিরাময় করে।এটি রান্না বাদেও পাইলস, লিভার পরিষ্কার, শ্বাসযন্ত্রের রোগ নিরাময়, হাঁপানি এবং টিউমারের প্রতিশেধিক হিসাবে ব্যাবহাত হয়।

আপনার মূল্যবান রেটিং দিয়ে উৎসাহিত করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *