বাড়িতেই তৈরী করুন শক্তিশালী তুলসী পাতার জৈব কীটনাশক

আজকের এই প্রতিবেদনে তুলসী পাতার জৈব কীটনাশক তৈরীর সম্পূর্ণ পদ্ধতি নিয়ে আপনাদের সাথে আলোচনা করব।তুলসী একটি ঔষধিগাছ। তুলসীর অর্থ যার কোন তুলনা নেই। তুলসী লামিয়াসি পরিবারের অন্তর্গত একটি সুগন্ধী গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম:–Ocimum sanctum। তুলসীর (ইংরেজি নাম:-holy basil বা tulasi) হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে এটি একটি পবিত্র উদ্ভিদ হিসাবে সমাদৃত। তুলসী গাছের নানা ঔষধি ব্যবহার রয়েছে। তুলসী গাছের পাতা, বীজ, বাকল ও শেকড় সবকিছুই অতি প্রয়োজনীয়।

এই প্রতিবেদন থেকে আপনি তুলসী পাতার জৈব কীটনাশক তৈরি পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারবেন। তুলসী পাতার এই জৈব কীটনাশক ফসলের পোকা দমনে যেমন কার্যকরী তেমনি পরিবেশের জন্য নিরাপদ। ভারতবর্ষ এবং বাংলাদেশের সর্বত্র তুলসী গাছ দেখতে পাওয়া যায়। বহু প্রচীনকাল থেকে ভারতবর্ষে ঔষধি উদ্ভিদ হিসাবে ও ভেষজ চিকিৎসায় তুলসী ব্যাবহাত হয়ে আসছে, বর্তমানে তুলসী বাণিজ‍্যিকভাবে চাষ আবাদ হয়।

বাড়িতেই তৈরী করুন শক্তিশালী তুলসী পাতার জৈব কীটনাশক

তুলসীর জৈব সার একটি সম্পূর্ণ দ্রবীভূত জৈব স্বাদ আছে. জৈব সার – একটি বিশুদ্ধ জৈব সার যা নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশ এবং জৈব কার্বন এর প্রাকৃতিক এবং জৈব আকারে সমৃদ্ধ এবং ৯০টি জৈব জীব থেকে প্রাপ্ত কপার, জিঙ্ক এবং কোবাল্টের মতো মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট রয়েছে।

তুলসী গাছ করবার সময়:

বর্ষার মরশুম অর্থাৎ জুন থেকে জুলাই মাস তুলসী চাষের আর্দশ সময়। বর্ষার পরে মঞ্জরীতে থাকা বীজ থেকে চারা গাছ তৈরী হয়। যে কোন মাটিতে তুলসী চাষ করা যায়। হিমালয়ের পাদদেশে প্রায় ছ’হাজার ফুট উচ্চতা পর্যন্ত তুলসী গাছ জন্মাতে পারে।

তুলসীর ব‍্যবহার:

বহু প্রচীনকাল থেকে তুলসী নানা ঔষধি ক্ষেত্রে ব‍্যবহার হয়ে আসছে। সর্দি, কাশি, ঠাণ্ডা লাগা ইত্যাদি নানা সমস্যায় তুলসী ব্যবহার করা হয়। ঔষধ হিসাবে এর ব‍্যবহৃত অংশ হল এর রস,পাতা এবং বীজ। আয়ুর্বেদ ও ভেষজ চিকিৎসায় তুলসীর ব‍্যাপক ব‍্যবহার রয়েছে বিশেষত: ভারতীয় উপমহাদেশে।

প্রয়োজনীয় উপকরণ ও প্রস্তুত পদ্ধতি:

একশ গ্রাম কাঁচা তুলসীপাতা, চার লিটার জল ও পাঁচগ্রাম গুঁড়ো সাবান বা তরল সাবান।

এক্ষেত্রে পুকুরের জল, কলের জল, কুয়োর জল, মিনারেল ওয়াটার, ডিস্টিল ওয়াটার, বৃষ্টির জল এগুলো সরাসরি ব‍্যবহার করা যাবে। কিন্তু কর্পোরেশনের পাইপ লাইনের জল ব‍্যবহার করতে হলে ওই জল উন্মুক্ত পাত্রে বারো ঘন্টা রেখে দিতে হবে। এর ফলে ওই জলের মধ‍্যে থাকা ক্লোরিন,ফ্লুরিন উবে যাবে। তারপর ওই জল ব‍্যবহার করা যাবে।

একশ গ্রাম কাঁচা তুলসী পাতা ভালো করে বেটে একটা মিহি পেস্ট তৈরী করে নিতে হবে এই পেস্ট চার লিটার জলের সাথে ভালো করে মিশিয়ে সারা রাত রেখে দিতে হবে। সন্ধ‍্যা ছটা থেকে সকাল ছটা এই বারো ঘন্টা রেখে দিতে হবে। বারো ঘন্টা পর এই মিশ্রণ ছেঁকে নিতে হবে। ছেঁকে নেওয়ার পর এর থেকে কিছুটা জল আলাদা পাত্রে নিয়ে ওর মধ‍্যে পাঁচ গ্রাম গুঁড়ো সাবান বা পাঁচ টেবিল চামচ তরল সাবান(শ্যাম্পু) মিশিয়ে নিতে হবে। গুঁড়ো সাবান মেশালে সেক্ষেত্রে পুনরায় মিশ্রণটি ছেঁকে নিতে হবে। কারণ গুঁড়ো সাবানে বেশ কিছু পদার্থ মিশে থাকতে পারে যেগুলো জলে দ্রবীভূত হয় না। এই মিশ্রণটি পুনরায় আগের জলের সাথে মিশিয়ে নিলেই তৈরী হল ব‍্যবহারোপযোগী জৈব কীটনাশক। এই কীটনাশক দিনের বেলা এক সপ্তাহ পর পর সমস্ত গাছে স্প্রে করতে হবে।

এই কীটনাশকটি একবারই ব‍্যবহার করা যাবে। কোনভাবেই রেখে দিয়ে ব‍্যবহার করা যাবে না।

পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ:

এই কীটনাশক ব‍্যবহারে ফলের মাছি, ল‍্যাদাপোকা লালমাকড় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

কার্যকারীতা:

তুলসী পাতার জৈব কীটনাশক ফল ছিদ্রকারী পোকা, লেদা পোকা ও লাল মাকড় দমনে বিশেষ কার্যকারী ভূমিকা পালন করে। প্রয়োজনে ৭ থেকে ১০-দিন পর আবার ব্যবহার করুন।

বিশেষ দ্রষ্টব্য:

  • কীটনাশকটি সকালে রৌদ্র ওঠার আগে গাছে স্প্রে করতে হবে।
  • তুলসী পাতার তৈরি কীটনাশক সংরক্ষণ করা যাবে না।
  • কীটনাশক তৈরির পর সেটি কাচ অথবা মাটির পাত্রে রাখতে হবে।
  • আক্রান্ত গাছগুলিকে ভালো করে ভিজিয়ে দিতে হবে।
আপনার মূল্যবান রেটিং দিয়ে উৎসাহিত করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *