কিউই ফল গাছের প্রতিস্থাপন এবং সম্পূর্ন পরিচর্যা | How to grow & care kiwi fruit plant

Last updated on April 12th, 2024 at 09:31 pm

কিউই ফল আমাদের দেশে জনপ্রিয় হলেও খুব একটা বেশি পাওয়া যায় না। হাতে গোনা কিছু ফলের দোকানে বা মলে কিউই ফল দেখতে পাওয়া যায়, এটি মূলত ফলের বীজ থেকেই চারা তৈরি করতে হয়। এটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপক্রান্তীয় অঞ্চলে চাষের অযোগ্য এর জন্য দরকার শীতল আবহাওয়া যুক্ত স্থান।

এই প্রতিবেদন থেকে আপনি কিউই ফল গাছের প্রতিস্থাপন এবং সম্পূর্ন পরিচর্যা | How to grow & care kiwi fruit plant সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন। কিউয়ি (Kiwi Fruit) একটি লতানো প্রকৃতির, বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ, এই ফলে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন সি পাওয়া যায়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Actinidia deliciosa। কিউয়ি নিউজিল্যান্ডের ফল হিসেবে পরিচিত হলেও সব থেকে বেশি উৎপাদিত হয় চীনের দক্ষিণাংশে। উনিশ শতকের প্রথমের দিকে মিশনারিদের মাধ্যমে কিউয়ি চীন থেকে নিউজিল্যান্ডে আসে এবং সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়ে ইটালি, গ্রিস ও ফ্রান্সে। ১৯০৬ সাল থেকে কিউয়ি বহির্বিশ্বের সাথে পরিচিতি লাভ শুরু করলেও বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ করা শুরু হয় ১৯৩৭ সালে। নিউজিল্যান্ড ছাড়াও তুর্কি, ইরান, জাপান, আমেরিকা,দক্ষিণ- পূর্ব এশিয়ায় কিউয়ি ফল বানিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়।

হালকা গরমের দেশে কিউই ফল সব থেকে ভাল জন্মায় এবং কম তাপমাত্রায় উৎপাদন ভাল হয় না, তবে শীতপ্রধান স্থানে কিছু মাঝারি ধরনের কিউই জন্মায়। এটিকে চাইনিজ গুজবেরি ফলও বলা হয়ে থাকে। ভারতের উত্তর-পূর্ব হিমশীতল অঞ্চলে এই ফলের চাষ করা হয়, ভারতের হিমাচল প্রদেশ, উত্তর প্রদেশ, জম্মু এবং কাশ্মীর, সিকিম, কর্নাটক এবং কেরলে কিউই ফল চাষ হয়। কারণ এখানের শীতল আবহাওয়া কিউই চাষের জন্য বেশ অনুকূল।

কিউই ফল গাছের প্রতিস্থাপন এবং সম্পূর্ন পরিচর্যা | How to grow & care kiwi fruit plant

জাত নির্বাচন (types of kiwi fruit):-

কিউয়ি ফলের অনেক জাত আছে, তাদের মধ্যে কয়েকটি জাত হলো- ফুজি কিউয়ি,গোল্ডেন কিউয়ি, বেবি কিউয়ি, আর্কটিক কিউয়ি, রেড কিউয়ি, সিলভার ভাইন, পার্পল কিউয়ি ফল, কিউই গোল্ডেন (kiwi golden) এবং চাইনিজ গুজবেরী প্রভৃতি। এছাড়াও ভারতীয় কিছু জাত রয়েছে, যথা- হেওয়ার্ড, অ্যাবোট, ব্রুনো, অ্যালিসন, মন্টি ইত্যাদি। গাছ লাগানোর পর থেকে ফল আসতে সাধারণত ২-৩ বছর সময় লাগে। একবার ফলন শুরু হয়ে গেলে তেমন খরচ নেই।

কিউই ফল গাছের প্রতিস্থাপন এবং সম্পূর্ন পরিচর্যা | How to grow & care kiwi fruit plant
কিউই ফল গাছের সম্পূর্ন পরিচর্যা

রোপনের জন্য স্থান নির্বাচন:-

হালকা উষ্ম ও আর্দ্র আবহাওয়া যুক্ত উঁচু ঢালু স্থান বা পাহাড়ি ভূমিতে কিউয়ি গাছ রোপণ আদর্শ স্থান। যে স্থানে সহজে জল দাঁড়ায় না এমন উঁচু স্থান কিউয়ি গাছের জন্য নির্বাচন করতে হবে এবং দিনে কমপক্ষে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা সূর্যের আলো পায় তেমন স্থান গাছ বেড়ে ওঠবার জন্য এবং ফল দেওয়ার জন্যে উত্তম। এই ফল সমুদ্রতল থেকে কমপক্ষে ৪,০০০ থেকে ৬,০০০ ফুট উচ্চতায় এই গাছ ভাল জন্মে। গাছ বড় হওয়া থেকে গাছে ফুল আসা অব্দি বার্ষিক ১৫০-২০০ সেমি বৃষ্টিপাত প্রয়োজন, তবে গাছে ফুল থাকা অবস্থায় ঝড়হাওয়া ও তুষারপাত মারাক্তকভাবে গাছের ক্ষতি করে। প্রখর সূর্যতাপ এই গাছের জন্য ক্ষতিকর, গাছে ফল ধারনে ব্যাঘাত ঘটায়। ভালো ফলনের জন্য উপযোগী তাপমাত্রা ২৮-৩৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড প্রয়োজন।

উপযোগী মাটি ও আবহাওয়া:-

জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ ও সুনিষ্কাশিত বেলে-দোআঁশ মাটি কিউয়ি চাষের জন্য উপযোগী। মাটির উপযোগী PH মাত্রা ৬.৫ -৭.০ হতে হবে।

জমি তৈরি:-

যেই স্থানে কিউয়ি গাছ প্রতিস্থাপন করবেন, প্রথমে সেই স্থানের মাটি ভালভাবে কুঁপিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। তার পরে জমি ভালোভাবে আগাছামুক্ত করে নিতে হবে। তার পরে মাটির সাথে জৈব সার মিশিয়ে মাটি প্রস্তুত করে নিতে হবে সব শেষে চারা লাগানোর গর্ত তৈরি করে নিতে হবে।

চারা রোপণ ও সময়:-

কিউয়ি গাছ সারিবদ্ধভাবে লাগানো হয়। কিউয়ি স্ত্রী ও পুরুষ ফুল ভিন্ন ভিন্ন গাছে হয়। ১ টি পুরুষ গাছ দ্বারা ৯ টি স্ত্রী গাছের সফলভাবে পরাগায়ন সম্ভব। শীতের শেষ থেকে বসন্তের শুরু কিউয়ি গাছ প্রতিস্থাপন করবার আদর্শ সময় অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি থাকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত।

বংশবিস্তার:-

বীজের মাধ্যমে বংশবিস্তার করা সব থেকে সহজ, এই সংক্রান্ত একটি সম্পূর্ণ ভিডিও দেওয়া আছে। এছাড়া কাটিং ও গ্রাফটিং এর মাধ্যমেও সফলভাবে বংশবিস্তার করা যায়। টি বার ও পারগোলা ট্রিনিং সিস্টেমে কিউয়ি গাছের বাগান করা হয়।

সেচ ও সার ব্যবস্থাপনা:-

কম বয়েসের গাছ খুব সাবধানে পরিচর্যা করতে, পরিমান মতো জল এবং চারা গাছে জৈবসার প্রায়াগ এবং নিয়মিত কীটনাশক প্রয়োগ প্রভৃতি। গাছের বয়স ২ বছরের উর্ধে হলে প্রয়োজন মতো জল এবং কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে। অর্থাৎ প্রতি ১০-১২ দিন অন্তর অন্তর গাছে জল দিতে হবে। কিউই গাছের জন্য প্রয়োজন প্রচুর যত্ন এবং সেচের। তাই বাগানে নিয়মিত জল দেওয়া জরুরি। গাছে ফল ধরা শুরু হলে, ফলে পোকামাকড় হওয়ার বেশ ঝুঁকি থাকে।

[আরও পড়ুন: রুটি ফল (Bread Fruit) কি: রুটি বা ভাতের বিকল্প এই Bread Fruit এর পুষ্টিগুণ ও বৈশিষ্ট্য]

গাছের বয়স ১-৫ বছরের মধ্যে হলে বেসাল ডোজ হিসেবে ২৫ কেজি গোবর সার দিতে হবে। প্রতি গাছে ইউরিয়া ৫০০ গ্রাম, টিএসপি/ ডিএপি ৩৫০ গ্রাম এবং এমওপি ৫০০ গ্রাম দিতে হবে। গাছের বয়স ৫ বছরের পরে প্রতি গাছে ইউরিয়া ৯০০ গ্রাম টিএসপি/ ডিএপি ৬০০ গ্রাম এবং এমওপি ৯০০ গ্রাম করে প্রয়োগ করতে হবে। গাছের গোড়া থেকে এক থেকে এক ফুট দূরত্বে সার প্রয়োগ করতে হবে।

অন্যান্য পরিচর্যা:-

১| আগাছা দমন

সুস্থ গাছ ও ভালো ফলন পেতে নিয়মিত আগাছা দমন ও মালচিং করতে হবে। অতিরিক্ত আগাছা হলে প্রয়োজনে আগাছানাশক ব্যবহার করতে হবে।

২| প্রুনিং

গাছের পর্যাপ্ত বৃদ্ধির জন্য মাসে একবার প্রুনিং করতে হবে।

পোকামাকড় ও রোগ বালাই:-

কিউয়ি গাছে বেশ কিছু পোকার উপদ্রপ দেখতে পাওয়া যায়। যেমন-লিফ রোলার ক্যাটারপিলার, রুট নোড নেমাটোড, বক্স এল্ডার বাগ ইত্যাদি। এছাড়াও দেখা যায় যেমন- আর্মিলারিয়া রুট রট, ব্যাকটেরিয়াল ব্লাইট,ক্রাউন রট, ক্রাউন গোল, ক্যাঙ্কার ইত্যাদি। নিয়মিত ছত্রাকনাশক ও কীটনাশক প্রয়োগের মাধ্যমে উল্লিখিত রোগ বালাই ও পোকা-মাকড় দমন করা সম্ভব।

[আরও পড়ুন: ড্রাগন ফল গাছের সম্পূর্ণ চাষ পদ্ধতি | Dragon Fruit Cactus Planting & Care]

[ আরো দেখুন: জাফরান চাষ করে লক্ষ লক্ষ উপার্জন করতে পারবেন আপনিও ]

ফলন:-

জলবায়ু এবং পরিচর্যার উপর গাছের বা বাগানের ফলন নির্ভর করে থাকে। সঠিক পরিচর্যা করলে প্রতিটি ভাইন থেকে গড়ে ৫০-১০০ কেজি এবং ৭ বছরের বয়সের গাছ থাকে ২৫ টন/হেক্টর ফলন পাওয়া যেতে পারে।


প্রিয় পাঠক, এই প্রতিবেদনটি পঠন করবার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার মতো পাঠকের সহযোগিতা “ক্রিয়েটিভিটি গার্ডেনিং” সর্বদা কার্ম করে। গাছই আমাদের একমাত্র সম্পদ যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষিত করতে পারে, বাঁচিয়ে রাখতে পারে। নিঃস্বার্থে গাছ ভালবাসুন, সকলকে গাছ লাগাতে উৎসাহিত করুন।

আপনাদের যদি এই বিষয়ে কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সের মাধ্যমে আমাকে জানাতে জানাবেন। সেগুলোর সমাধান করাবার আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব। আপনার মূল্যবান রেটিং দিয়ে উৎসাহিত করুন, সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, সবাই খুব ভালো থেকো নমস্কার।

1/5 - (1 vote)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *